
কিন্তু কোনো ঘোষিত সত্যিকে প্রথমটা মেনে নিতে যেমন অনেকেরই আপত্তি থাকে, তেমন আকাট সত্যির প্রতিবিধান করার জন্য অনেকেরই প্রবল উৎসাহ থাকে। এক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটল। ভগীরথকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে উচিৎ শাস্তি দেবার জন্য কেউ কেউ প্রস্তুত হলো। এই প্রেক্ষাপটে মঞ্চে বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকা যেমন কোনো বাহাদুরির ব্যাপার নয়, তেমন কোনো বুদ্ধির কাজও নয়। ভগীরথ কতটা বাহাদুর তা সবার জানা না থাকলেও, সে যে নির্বুদ্ধির মানুষ নয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং ভগীরথ পালালো।
কিন্তু যাকে জড়িয়ে এত কান্ড, সেই মণিমালা একদিকে যেমন ভগীরথকে কাঠগড়ায় তুলল না, অন্যদিকে নিজের সমর্থনেও কোনো বক্তব্য রাখল না। সে মনে মনে কিছুতেই সমাধান খুঁজে পাচ্ছিল না, একজন নারী যদি অন্য কোনো নারীর সঙ্গে রাত্রিবাস করে, তখন তো কোনো সন্দেহ বা প্রশ্ন বা বিবাদ তৈরি হয় না! তাহলে একজন নারী একজন পুরুষের সঙ্গে রাত্রিবাস করলে কেন এত সন্দেহ, প্রশ্ন ও বিবাদ? আবার কোনো নারীর সঙ্গে কোনো পুরুষের যেমন যৌনসম্পর্ক থাকতে পারে, অনুরূপে এক নারীর সঙ্গে অন্য নারীরও তো যৌনসম্পর্ক থাকতেও পারে! তাহলে!
ভগীরথ গণপ্রহারের আশঙ্কায় পালাতে বাধ্য না হলে, তারও কিছু অবধারিত জিজ্ঞাসা ছিল এই প্রাসঙ্গিকতায়। মণিমালা বিবাহিতা, ভগীরথও বিবাহিত। অর্থাৎ প্রথম রিপুর তাড়নায় তারা অনভিজ্ঞ নয়, বরং যথেষ্ট অভিজ্ঞ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে রাত্রিবাস করা মানে তাদের যৌনসংসর্গ ঘটেছে, এই ভাবনার অধিকার কে কাকে দিয়েছে? এবং যৌনসংসর্গ আদৌ ঘটেছে অথবা ঘটেনি, তারই বা সাক্ষীপ্রমাণ কে দেবে? এবং সবথেকে বড় প্রশ্ন, যদি রাত্রিবাসে এক পুরুষের সঙ্গে এক নারীর তা ঘটেও থাকে, তাতেই বাধা দেবার অধিকার কারও আছে কি? বিশেষত তারা দুজনেই যথেষ্ট সাবালক, যদিও মণিমালা সম্প্রতি ডিভোর্সি ও ভগীরথ বিপত্নীক।
মণিমালাই ডেকে পাঠিয়েছিল ভগীরথকে। খুবই জরুরি আলোচনা ছিল। একান্তই ব্যক্তিগত। সারাদিন ভগীরথ ব্যস্ত থাকে তার কর্মক্ষেত্রে। মণিমালাকেও কাজের সূত্রে যেতে হয় অনেক দূরে। ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত নেমে আসে। তাই রাতেই ভগীরথকে দেখা করতে বলেছিল মণিমালা। ভগীরথ গেছিল। সারারাত মণিমালার ঘরেই ছিল। যখন নিজের ঘরে ফিরে এলো, তখন নতুন ভোর। একটু একটু করে ঘুম ভাঙছে প্রকৃতির। আর ঠিক তখনই কোনো প্রাতঃভ্রমণকারীর নজরে পড়েছিল মণিমালার ঘর থেকে ভগীরথের বেরিয়ে আসার দৃশ্যটা।
0 মন্তব্যসমূহ