রিপন হালদারের গল্প: পাখি গ্রাম

কাকভেজা শরীর নিয়ে ঘরে ঢুকতেই মা বলল স্নান সেরে নিতে। স্নানের পর মনে হল শরীরটা যেন অবশ হয়ে আসছে। গা-হাত-পায়ে কেমন যেন অসাড় ভাব।

না খেয়েই একটা পাতলা কম্বল নিয়ে উঠে গেলাম উপরে। আমার প্রিয় চিলেকোঠার বিছানায় ঢেলে দিলাম ব্যথাতুর দেহ। মা স্কুলে যাওয়ার জন্যতৈরি হচ্ছে বলে মনে হল। বাড়িটা এবার সারাটা দিনের জন্য আমার মনের মত ফাঁকা হয়ে যাবে। সঙ্গে থাকবে আমার বাবা। অবশ্য ছবিতে। বাবার ছবিটা মাঝে মাঝে আমার কাছে খুব জীবন্ত বলে মনে হয়। মা প্রতিদিন স্কুলে যাবার আগে অনেকক্ষণ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। কী দেখে কে জানে! বাবা যখন এই পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ ‘নেই’ হয়ে গেল আমি নাকি তখন খুব ছোটো। 

-“কিরে, কী করছিস উপরে?” নিচ থেকে মায়ের কথায় আমার চমক ভাঙল। 

-“শরীরটা ঠিক ভালো লাগছে না। শুয়ে আছি।“

-“শুধু শুধু ভিজতে গেলি কেন? অপেক্ষা করতে পারতিস! বৃষ্টির জল তো তোর একদম সহ্য হয় না! শোন, খুব খারাপ লাগলে আমাকে ফোন করিস। আর রান্না ঘরে খাবার ঢাকা দেওয়া আছে। খেয়ে নিস সময়মত।“ 

মায়ের কথাগুলো সিঁড়ি, দেয়াল, কংক্রিটে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে আমার কানের পর্দায় এমন ভাবে এসে পৌঁছল যে, মনে হল কেউ বড়ো বড়ো ঢিলছুঁড়ছে আমার দিকে। একটু পর লোহার গেট আটকানোর শব্দ শুনতে পেলাম। বোধ হয় মা বেরিয়ে গেল।

আমি কোনো মতে “আচ্ছা ঠিক আছে” বলে মাথাটা বালিশে ডুবিয়ে দিয়ে ঘুম আর ব্যথার নিচে ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকলাম।

মাকে আমি সত্যিটা বলিনি। আজ সকালে তাড়াতাড়ি টিউশন শেষ করে বাড়ির দিকে ফেরার সময় মাঠ পেরিয়ে যখন আমি আসছিলাম, দেখলাম দিগন্ত থেকে একটা সাদা জীবন্ত পর্দা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আমার সামনে। একদম সামনে আসতেই দেখি মুষল ধারার বৃষ্টি। আমাকে একদম গ্রাস করে নিল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম একটা গাছের নিচে। তাতে মনে হল আরো বেশি করে জল আমার সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিয়ে মাটিতে গড়ানো জলধারার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। অনেক দিন পর আমার বন্য ইচ্ছাটা গা ঝাড়া দিয়ে উঠল। সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম অভিযানে। নির্জন ঝিলপাড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকলাম। পকেটের মোবাইল আর সাইকেলটাও ভিজল আমার সাথে।তাই একটু চিন্তাও হচ্ছিল। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। ততক্ষণে আমার মাথা আর শরীর তীব্র বেগে গ্রহণ করছিল বল্লমের মতো বৃষ্টির ফোঁটা। 

আমাদের এই ছোট গ্রামটা বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপের মত। আর ভালোলাগার বিষয় হল চারদিক পিচের রাস্তা দিয়ে ঘেরা। বাঁদিকে ঝিল, ডানে মাঠ তারপর বাজার। আর উত্তরে মাঠ তারপর ন্যাশনাল হাইওয়ে। দক্ষিণে আবার মাঠ। দ্রুত গতিতে বাঁদিকের রাস্তা দিয়ে পেরিয়ে এলাম আমাদের লম্বা আকৃতির গ্রামটাকে। তারপর ঝিলের পাড় ধরে মাটির রাস্তায়হাঁটলাম অনেকক্ষণ। বৃষ্টির অবিশ্রান্ত জল আমার জামা-প্যান্ট-শরীর আর সাইকেলের লোহাদের ভিজিয়ে চলেছে। আর গতির আনন্দে আমার চোখও হয়ত আর্দ্র হয়ে উঠেছিল। গতি বা বেগের সাথে আবেগেরও নিকট সম্পর্ক আছে, অনুভব করলাম। 

ঘুম ভাঙল দুটোর পর। জানলা দিয়ে লেপা-পোছা পরিষ্কার আকাশ দেখা যাচ্ছে। সকালের পর থেকে আর বৃষ্টি হয়নি। আমি উঠে বসলাম। খিদে খিদে পাচ্ছে। কিন্তু বিছানা থেকে উঠে নিচে যেতে ইচ্ছা করছে না। দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রইলাম বিছানার উপর। 

মোবাইলটা ছিল হাতের কাছেই। বৃষ্টিতে ভিজে ওরও মনে হয় কাহিল অবস্থা। জীবিত আছে কিনা কে জানে! একটু হাতড়াতেই আমার আঙুল ওর স্পর্শ পেল। অভ্যাস মত ইন্টারনেট অন করলাম। ধীর গতির অন্তর্জাল বিস্তার পেতে পেতে আমি নেমে এলাম নিচে, রান্না ঘরে। খাবারটা নিয়ে চিলেকোঠায় উঠে এসে খেতে খেতে বুঝতে পারলাম জ্বর আসছে। জ্বর হলে জিভের স্বাদ বদলে যায়। তার মানে জ্বরেরও নিজস্ব স্বাদ আছে। আমি মনে মনে খুশি হলাম এই ভেবে যে, আমার প্রিয়অনুভূতির দিনগুলো ফিরে আসছে। সত্যি, জ্বরের চেয়ে প্রিয় অনুভূতি আমি আর কোনো কিছুতেই খুঁজে পাই না। তিন-চার দিনের জন্য আমি আক্ষরিক অর্থেই অন্য জগতে চলে যাই। 

হাত-মুখ ধুয়ে এসে দেখি ম্যাসেঞ্জারে নোটিফিকেশন। এই জিনিসটা সাধারণত আমি অফ রাখি। তবু মাঝে মাঝেই এর লাল অবাধ্য আগমন সংকেত বেরিয়ে পড়ে। পড়াশুনার জন্য কিছু জরুরি তথ্য খোঁজার সময় এগুলো খুবই বিরক্ত করে। এখন অবশ্য ইচ্ছা করল খুলে দেখতে।

-“আপনি পাখি গ্রামে থাকেন?” পরিষ্কার বাংলায় আমার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড জানতে চেয়েছে। জানি, উত্তর দিলেই শুরু হয়ে যাবে রসালাপের বন্যা। শেষ প্রশ্নটা সম্ভবত করা হবে, “আপনি আজ সকালে কীখেয়েছেন?” সঙ্গে বিচিত্র উদ্ভাবনী ইমোজি বর্ষিত হবে ডজন ডজন।

কিন্তু ছেলেটার প্রোফাইল ঘেঁটে বেশ সিরিয়াস গোছের মনে হল। আর এর বয়স হবে আমারই মত। তা সত্ত্বেও ‘আপনি’ সম্বোধন ভদ্রতার পরিচায়ক। এ কবে আমার বন্ধু তালিকায় যোগ দিয়েছিল মনে নেই। প্রতিদিন তো কত রিকোয়েস্টই আসে!

যাই হোক, এই নিরীহ প্রশ্নটার উত্তর দিতে এখন আমার ইচ্ছা করল। পেটে খাবার যাওয়ার পর বেশ চনমনে লাগছে। লিখলাম, ‘হ্যাঁ’। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পরের প্রশ্ন এসে হাজির, “আপনি কি জানেন আপনার গ্রামের নামের ইতিহাস?”

সেকি! এই ছেলেটা কি আমার গ্রামের নাম নিয়ে রিসার্চ করছে নাকি! সব নামের কি আর ইতিহাস থাকে! আমি সহজ ভাবেই উত্তর দিলাম ,”না”। 

-“ওকে। তাহলে এই ছবিটা দেখুন!” ছবিটা লোড হচ্ছে। লোড শেষে আমি লক্ষ্য করলাম ওটা একটা স্ক্রিন শট। সম্ভবত গুগল ম্যাপের। ছবিটা জুম্‌ করে দেখতে দেখতে আমি অবাক হয়ে গেলাম। এই জিনিসটা আমি আগে জানতাম না তো! কখনো জানার চেষ্টাও করিনি। দিনরাত শুধু চাকরির পরীক্ষার জন্য পড়াশুনা করে যাচ্ছি। তিন বছর হলো কলেজ ছেড়েছি। বিষয় ছিল ইতিহাস। এম এ তে ভর্তি না হয়ে শুরু করলাম চাকরির পড়া। এই তিন বছরে দুই একটা প্রিলিতে উত্তীর্ণ হলেও পরের ধাপে এখনো উঠতে পারিনি। 

প্রসারিত দুই বৃহৎ ডানা সমেত পাখির মতই আমাদের গ্রামের মানচিত্র। কোনোদিন কারো মুখে শুনিওনি ব্যাপারটা। আসলে এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই কৃষিজীবী। পড়াশুনা বা সংস্কৃতি চর্চা দুই-একটা বাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গ্রামে মাত্র দুইজন সরকারী চাকুরে। আমার মা আর প্রতিবেশী শংকর কাকু। আমার মা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে আর শংকর কাকু পঞ্চায়েত অফিসে, ব্যাস। আর সবাই খুবি গরীব। অধিকাংশই কৃষিমজুর। দুএকজন ভ্যান রিক্সা চালায়। কেউ কেউ পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান দিয়ে বসেছে গ্রামেই। দুটো ঘুমটির মত মুদির দোকানও আছে। সস্তা জিনিসে ঠাসা। 

আমার মা ভূগোল নিয়ে পড়েছে। তার থেকেও এই চমৎকার তথ্যটি জানতে পারিনি। অবশ্য এইসব অতীব আঞ্চলিক, গ্রাম্যতা দোষে দুষ্ট বিষয় পাঠ্য বইয়ে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে! মাকে আর এবিষয়ে কিছু জানাইনি। ছেলেটির প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ করলাম। লিখে জানালামও সেটা।

কিন্তু ‘পাখি গ্রাম’ নামটা কীভাবে এল ভেবে কূলকিনারা করতে পারলাম না। গ্রামের কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলাম। কেউ কোনো সদুত্তর দিতে পারল না। একজন বলল,”তোমার বাবা বেঁচে থাইকলে বলতি পারত। আমরা কি অতোশতো জানি!” তা অবশ্য এরা জানেন না। কিন্তু বছর বছর সন্তানের জনক হয়ে সংসারকে দারিদ্র্যের অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে অধিক সন্তানের স্রষ্টা হবার অশ্লীল আনন্দ পাবার কলাকৌশল এদের ভালোই জানা আছে। বিগড়ে গেল মেজাজ। কার কাছে গেলে এর উত্তর পাবো!

একজনের পরামর্শ মত পাশের গ্রামে মাধব নামে এক অশীতিপরনিঃসঙ্গ বৃদ্ধের ডেরায় এখন বসে আছি। নাম ধাম বংশ পরিচয় জিজ্ঞাসা করার পর কালো কালো তেঁতুলের বীজের মত বিরল দন্তরাশি বিকশিত করে বললেন, ”উত্তর তো আফনের ঘরেই আছে!”

‘উত্তর ঘরে আছে’, মানে?

এর আগেও একজন বলেছিল আমার বাবা বেঁচে থাকলে নাকি বলতে পারত।

-“আফনের বাবার বাবা, মানে শম্ভুনাথ...” বৃদ্ধ একটু থামার পর বলে উঠলেন, “আছিল এক পক্ষি প্রেমিক।“ ‘প্রেমিক’ শব্দটা বেশ অদ্ভুত পরিচ্ছন্ন লাগল বৃদ্ধের কন্ঠে। 

-“তারপর?” 

-“জগতের ব্যাবাক পক্ষি নাকি তার লগে কথা কইত! ময়না-টিয়া কতা কয় হেইডা তো আমরা জানিই। কিন্তু আফনের দাদার লগে নাহি শালিক কাক চিল শকুন হগলডে কতা কইত। এমন কি হাস মোরোগও। হারা দিন মাঠে ঘাটে ঘুইরা বেরাইত। গ্রামের লোক দ্যাখত আর হাইসত। ভাইব্‌তো পাগলের কারবার।“

-“সেকি! সত্যি নাকি!”

-“হাচা না মিছা তা জানি না। আমিও লোকের মুহে মুহে হুনছি। নিজে দেহি নাই। লোকের মুহে অন্য একখান কতাও হুনছি।“, “কী?” আমি জানতে চাইলাম। বৃদ্ধ এবার চুপ করে গেলেন। আমিও চুপচাপ অপেক্ষা করছিলাম। কখন কথা ফোটে কে জানে! কিন্তু খানিক পরে অবাক হয়ে দেখি উনি বসে বসেই দুই হাঁটুর মাঝে মাথা রেখে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছেন। 

অনেক কষ্টে হাঁক-ডাকের পর মাথা তুললেন। দুই চোখ তখনো বোজা। চোখের কোনায় সাদা পিচুটি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তারপর, তারপর?”

কোনো উত্তর নেই। মনেহয় আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন। না। একটু ফিসফিসানি যেন টের পেলাম। ওনার মুখের কাছে কান নিয়ে শুনতে পেলাম, “শত শত বছর আগে আপনাগো গ্রামের হগলডিই নাহি পক্ষি আছিল। আফনের দাদা তাগো মানুষ বানাইছে। অনেক জাদু মন্তোর জানত।“

-“এইসব আপনাকে কে বলেছে?” বিরক্তির সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম। 

কাঁপা কাঁপা গলা থেকে উত্তর এলো,”হরেরাম।“ 

হরেরামকে আবার কোথায় পাই! বৃদ্ধের মাটির বারান্দা থেকে নেমেযাওয়ার উদ্যোগ করতেই বৃদ্ধের ক্ষীণ কন্ঠের আবেদন ভেসে এল,”দুইডা টাহা দিবেন! মুড়ি খামু। হকাল থিকা প্যাটে কিছু পড়ে নাই।“ 

আমি ফিরে বৃদ্ধের হাড় সর্বস্ব হাতের ভাঁজ পড়া চামড়ার উপর পঞ্চাশ টাকার একটা সদা হাস্যময় গান্ধী নোট রেখে সাইকেল নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়লাম। 

অনেক খোঁজাখুঁজির পর ঐ গ্রামেরই শেষ প্রান্তে হরেরাম মন্ডলের বাড়ির সন্ধান পেয়েছিলাম। প্রায় আমারই বয়সী হরেরামের নাতি জানালো বছর তিনেক আগে তিনি মারা গেছেন। 

নামের ইতিহাস উদ্ধারে আমি আর গা করিনি। এরপর পুরোপুরি চাকরিরপড়াশুনায় ডুবে গেলাম।

বছর খানেক পর বিসিএসে ছিঁকে ছিঁড়ল। পোস্টিং মধ্যমগ্রামে। নামে গ্রাম থাকলেও এই জায়গাটা মোটেও গ্রাম নয়। কোলকাতার ছোট ভাই। শহরের প্রায় সব সুযোগ-সুবিধাই এখানে বর্তমান। আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় সত্তর কিলোমিটার দূরে। মাকে আরো একা করে দিয়ে আমি একদিনচাকরিতে চলে এলাম। প্রথম প্রথম প্রতিদিন যাওয়া-আসা করলেও পরে সাইকেল, দুবার ট্রেন বদল, শেষে অটো মিলিয়ে বেশ কষ্টের পথ হয়ে দাঁড়াল। মা-ই জোর করল ঘর ভাড়া নিতে। সপ্তাহে সপ্তাহে বাড়ি যেতাম। শনিবার বিকেলে রওনা দিয়ে রবিবার থেকে সোমবার কাজে যোগ দিতাম। এই জার্নিটা আমার ভালোই লাগত। 

একদিন হঠাত চাকরি ছেড়ে দিয়ে মা চলে আসে আমার কাছে। একা একা নাকি আর থাকতে পারছে না। গ্রামের সাথে আমার সম্পর্কটা প্রায় ছিঁড়ে যাবার যোগাড়। 

মা বাড়িটা বিক্রি করতে চাইলে আমি অবাক হলাম। 

-“থাক না আছে পড়ে! কেউ তো আর নিয়ে যাচ্ছে না! তাছাড়া বাবার স্মৃতি...”

-“কী দরকার মায়া বাড়িয়ে? সব স্মৃতি সহ্য করা যায় না।“ মায়ের গলা ভারি হয়ে উঠল। আমি আর কথা বাড়ালাম না। বুঝতে পারছিলাম মায়ের কষ্টটা। 

গ্রামের বাড়ি বিক্রি করে কয়েক মাসের মধ্যেই মধ্যমগ্রামে ছোট একটা ফ্ল্যাটের দরজার পাশে মায়ের সোনালী রঙের নামটা জ্বল জ্বল করতে লাগল। 

বেশ কিছু মাস কেটে গেল। এক সময় দেখলাম পাখি গ্রামের নামটাও আমরা কেউ আর উল্লেখ করছি না। মার কথা নাহয় আলাদা, আমার তো ওটা জন্মভূমি! এমন কি আমার অতি প্রিয় চিলেকোঠাটার কথাও আজকাল আর আমার মনে পড়ে না! রাত জাগা আমার কত কত অসমাপ্ত ঘুম এখনো হয়ত ঐ ঘরে বিছানো আছে। তীব্র আবেগের মুহূর্তগুলির মুখ এখনো হয়ত জীবন্ত ঐ ঘরের দেয়ালে দেয়ালে। 

সেদিন অফিসে ডেস্ক-টপে এফবির উপর চোখ বোলাতে বোলাতে টিফিন করছিলাম। অনেকদিন পর অন হলাম। যথারীতি একগাদা নোটিফিকেশন। ইনবক্সে মাউস পয়েন্ট ওঠানামা করছিল। 

সেই বন্ধুর নামের পাশে লাল রঙে ইংরেজিতে ‘দুই’ লেখা। এতোদিন আমরা কেউ কারো খবর জানতে চেষ্টা করিনি। আজ হঠাত। কী অদ্ভুত! ক্লিক করলাম। এবার দুটো ছবি। দুটোই আমাদের গ্রামের মানচিত্রের মনে হল। 

এবারের ছবি আরো স্পষ্ট। ‘গুগল আর্থ’ লেখা দেখলাম ছবির নিচে। চারদিকে সবুজ মাঠের মাঝে আমাদের পাখিগ্রাম যেন ডানা ছড়িয়ে উড়ছে। মাঝে মাঝে জেগে আছে বাড়ি ঘরের অস্পষ্ট চিহ্ন। আমাদের দোতলা বাড়িটাকে দেখতে পেলাম। গ্রামের একদম সামনের দিকেই যার অবস্থান। দেখতে লাগছে ঐ পাখিটার মাথার মতো। আর চিলেকোঠা্টাকে মনে হচ্ছে ওর চঞ্চু যেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার দেখতে লাগলাম। 

কিন্তু দ্বিতীয় ছবিতে কিছু একটা পার্থক্য রয়েছে বলে মনে হল। জুম্‌ করলাম।

পাখির মাথাটি নেই। 
















একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ