একটি গল্প দিয়ে শুরু করছি। জোসেফ স্কভোরেকির বরাত দিয়ে গল্পটি আমাদের শোনান মিলান কুন্ডেরা তাঁর ‘আর্ট অব নভেল’ বইয়ের ‘সামহোয়্যার বিহাইন্ড’ অংশে।
প্রাগের একজন ইঞ্জিনিয়ার আমন্ত্রিত হয়েছিলেন লন্ডনের এক আলোচনা সভায়। তিনি প্রাগে ফিরে আসার পর একটি খবরের কাগজে পড়লেন তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে: লন্ডনের একটি আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত এক চেক ইঞ্জিনিয়ার, পশ্চিমের সংবাদমাধ্যমের সামনে তার সমাজতান্ত্রিক স্বদেশ সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করে পশ্চিমেই থেকে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
ইঞ্জিনিয়ার ছুটে গেলেন পত্রিকার অফিসে। সম্পাদক ক্ষমা চেয়ে বললেন, তার কিছু করার নেই, লেখাটা তিনি পেয়েছিলেন অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় থেকে। ইঞ্জিনিয়ার এবার মন্ত্রণালয়ে গেলে তাকে বলা হলো, ভুল হয়ে গেছে, কিন্তু তাদেরও কিছু করার নেই। কারণ, প্রকৌশলবিদ সম্পর্কে এ রকমই রিপোর্ট পাঠিয়েছেন লন্ডন দূতাবাসের গোয়েন্দা বিভাগ। খবরটি প্রত্যাহার করার নিয়ম নেই বলে তারা জানালেন, ইঞ্জিনিয়ারের এতে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হঠাৎ বুঝতে পারলেন যে তাকে নজরে রাখা হচ্ছে, তার টেলিফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। তিনি দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। অবশেষে আর চাপ না নিতে পেরে, অনেক ঝুঁকি নিয়ে বেআইনিভাবে দেশত্যাগ করলেন এবং সত্যি সত্যিই রাজনৈতিক কারণে অবৈধ অভিবাসী হতে বাধ্য হলেন।
গল্পের এই পলাতক ভদ্রলোক কোনো দিনই জানতে পারবেন না তার সম্পর্কে কে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা দিয়েছিলেন। তার পরিস্থিতি যেন আদালতের সামনে জোসেফ কে কিংবা ‘ক্যাসেল’-এর সামনে জমির জরিপকারী কে-এর মতোই। এদের তিনজনই একটা গোলকধাঁধার মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্দী। এই গোলকধাঁধাটা আরও অসহনীয় ও ভয়ংকর হয়ে ওঠে, যখন ব্যক্তি ও সমাজ জানে অপরাধ তার ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য যে অপরাধীকে খুঁজে নিয়েছে, সে আসলে নির্দোষ। সবাই সবকিছু জানলেও কতগুলো আইনি প্রক্রিয়া কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে নির্দোষ ব্যক্তি দায়মুক্ত হতে পারছে না।
এবার আমরা কাফকার ‘কে’ কিংবা কুন্ডেরার ওই ইঞ্জিনিয়ারের গল্প থেকে সরে আসছি বাংলাদেশে, এই গল্পগুলোর ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক নয়, বাস্তব।
ঘটনা-১: তারা মিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ, তিনি চাপাতি, হকিস্টিক ও লোহার রড় হাতে নিয়ে আক্রমণ করেছেন পুলিশের ওপর। অথচ জন্মগতভাবে তার হাত দুটি নিষ্ক্রিয়। ভিক্ষা করে জীবন যাপন করা তারা মিয়া উচ্চ আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আশায় ঘুরছেন। সে যে নির্দোষ, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু খাতাকলমে সেটা এখন প্রমাণিত হতে হবে। একটা ভুল মামলায় ফেঁসে গিয়ে তারা মিয়া বলতে পারছে না আমি এই মামলা মানি না। তাকে অভিযোগ মেনে নিয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে নির্দোষ কি না।
ঘটনা-২: সোনালী ব্যাংক থেকে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পালিয়ে গেছেন আবু সালেক নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু দুদকের মামলায় সালেকের পরিবর্তে বিনা অপরাধে কারাভোগ করছেন পাটকলশ্রমিক জাহালম। যার নিজের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, দুদক তাকে ভয়ংকর ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে ৩৩টি মামলা দিয়েছে। তাকে জেলে ঢুকিয়ে বলা হয়েছে, তুমিই অপরাধী। অশিক্ষিত জাহালম কাগজে–কলমে নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। শুনানিতে দুদকের আইনজীবী স্বীকার করছেন, জাহালম ঋণগ্রহীতা নন। কিন্তু এরপরও তাকে জেলে থাকতে হয়েছে।
ঘটনা-৩: অপরাধ না করেও ভারতের আদালত হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফরাজিকে। বেনাপোলে ইমিগ্রেশন শেষ করে ভারতের সীমান্তে প্রবেশের পরপরই বাদলকে আটক করে বিএসএফ১ অপরাধী না হয়েও সে বোঝাতে পারেনি, খুনের অভিযোগ যে বাদলকে খোঁজা হচ্ছে, সে আসলে অন্য কেউ। ১০ বছর জেলজীবন অতিবাহিত হওয়ার পর তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশে এসেও তাকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে। কিন্তু কেন? কারণ, ভারতীয় আদালত তাকে দণ্ড থেকে রেহাই দেয়নি। নিয়ম অনুযায়ী দণ্ডের বাকি মেয়াদ সে বাংলাদেশের কারাগারে ভোগ করবে। চাইলে সে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারবে। যে অপরাধ সে করেনি, সেই অপরাধের জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। অর্থাৎ প্রকারান্তরে অপরাধ মেনে নেওয়ার ভেতর দিয়ে তার মুক্তি।
এবার আসছি কাফকার ‘ট্রায়াল’ উপন্যাসে। সকালে ঘুম থেকে উঠে জনৈক জোসেফ কে দেখল তার দরজায় পুলিশ, তাকে গ্রেপ্তার করতে এসেছে। কে–এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ‘কে’ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কথা জানতে চাইলে পুলিশ জানায়, সেটা তারা জানে না। এমনকি দারোগাও অবগত নন।
এই রহস্যময় মামলায় ফেঁসে যাওয়ার পর ‘কে’-কে সবাই সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। কেউ কেউ তার মধ্যে অপরাধীকে দেখতে পায়। ‘কে’-এর কথা কেউ শোনে না। তার বিচারকাজ শুরু হওয়ার আগেই তার দোষ খুঁজে বের করে আশপাশের মানুষেরা। যে ঘটনা ‘কে’-র জীবন শেষ করে দিচ্ছে, তা অন্যদের কাছে তামাশার মতো। ‘কে’র উকিলও মনে করে, এই মামলায় তার জেল হবে, তাই দেরিতে বিচারকাজ হলে তারই ভালো। অথচ মজার ব্যাপার কেউই জানে না ‘কে’র অপরাধ কী! কে যখন জানতে পারছে না তার অপরাধ, তখন সে কীভাবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবে?
অন্য ঔপন্যাসিকেরা যেখানে প্রতিষ্ঠানের মুখোশ উন্মোচন করেন এমনভাবে যেন এইগুলো আসলে বিভিন্ন ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে কাফকা দেখালেন, প্রতিষ্ঠান একটা স্বতন্ত্র নিয়মে চলে, কেউ জানে না কে এই নিয়মগুলোর চালক বা এগুলো কবে চালু হয়েছিল, কিন্তু নিয়মগুলো আর কেউ পরিবর্তন করতে আসে না। ফলে খুব সাধারণ একজন মানুষের অতিসাধারণ একটা গল্প ভয়ংকর মিথে রূপান্তরিত হয়। মিথটা তৈরিই, চরিত্র সেখানে পা দিচ্ছে সিস্টেমের অংশ হিসেবে। তাই তাত্ত্বিকেরা এ ধরনের গল্প কিংবা ঘটনাকে চিহ্নিত করছেন ‘কাফকা-সদৃশ’ হিসেবে।
কাফকা-সদৃশ (kafkaesque) আসলে কী?
কাফকা দেখিয়েছেন, একজন ব্যক্তির ফাইল বা নথিপত্র ওই ব্যক্তির জায়গা জুড়ে নিয়েছে—ফাইলটাই হলো আসল, ব্যক্তি তার ছায়াবিশেষ। এর অন্য একটা অপরিহার্য দিক হলো: অপরাধীর অপরাধ খুঁজে নেওয়া। একজনকে অত্যাচার করা হচ্ছে, কাজেই মুক্তি পেতে হলে তাকে স্বীকার করতে হবে যে সে অপরাধী। সমস্যাটা শুধুমাত্র সামাজিক বা রাজনৈতিক না, মনস্তাত্ত্বিকও বটে। কখনো কখনো অভিযুক্ত একসময় সত্যি সত্যি মেনে নেয় যে সে অপরাধী। মেনে নেওয়ার ভেতর দিয়ে সে নিজেই তার শাস্তির যথার্থতা খুঁজে নেয়। যেমন, জোসেফ কে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ জানতে না পেরে, তার অতীতটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবে বলে ঠিক করে। অর্থাৎ সে তার অপরাধ খুঁজতে শুরু করে।
কাফকার সাহিত্যে এই সমস্ত পরিস্থিতিকে মনে হবে যেন উপহাস, শুধুমাত্র উপহাসের ওই চরিত্রগুলোর কাছে মনে হবে এটা একটা দুঃস্বপ্নের মতো। (এই উপহাসকে কুন্দেরা দেখছেন এইভাবে, ‘আমাদেরকে মানুষের মহত্ত্বের সুন্দর ইল্যুশন দেখিয়ে দুঃখবোধ সান্ত্বনা জানায়। কমিক বড়ই নিষ্ঠুর, এটা নির্মমভাবে আমাদের বেঁচে থাকার অর্থহীনতার ওপরই অর্থারোপ করে।’) কাফকা যে জগৎটা চিহ্নিত করছেন সেই জগৎটা অফিস-আদালত ও আমলা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কুন্দেরা বলছেন, কাফকা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভেবে লেখেননি। তাঁর কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল না। সিস্টেমের কারণেই যেন কাফকার গল্পগুলো আজ সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে। অন্যত্র বলছেন, ‘কাফকা আমলাতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে উঠিয়ে এনেছেন তাঁর উপন্যাসের কাব্যে। তিনি যেভাবে খুব সাধারণ একজন মানুষের অতি সাধারণ একটা গল্পকে মিথে রূপান্তরিত করেন, তা আগে দেখা যায়নি।’
এই রূপান্তরের ঘটনাটি কাফকা আরো দুঃসহ করে দেখিয়েছেন তাঁর ‘মেটারমফোসিস’ গল্পে। গ্রেগর সামসা এক সকালে ঘুম ভেঙে দেখল যে সে পোকা হয়ে গেছে। আশেপাশের আর সব মানুষ ঠিক আছে। কাফকার ‘কে’ কিংবা সামসার মতোই ইঞ্জিনিয়ার বিদেশ সফর শেষ করে দেশে পা দিয়েই জানতে পারলেন তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী; বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো পা দেওয়ার পরপরই বাদল গ্রেফতার হচ্ছে সে দেশে খুনের দায়ে, তারা মিয়া কিংবা জাহালম ঘুম ভেঙে দেখল তার উঠোনে পুলিশ গ্রেফতার পরোয়ানা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। এরা প্রত্যেকে তখন এক ধরনের রূপান্তরের ভেতর দিয়ে সামসার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
কে এই সামসা?
‘মেটামরফোসিস’ গল্পের শুরুতেই কাফকা বলছেন: ‘অ্যাজ গ্রেগর সামসা অ্যা’ওক ওয়ান মর্নিং ফ্রম আনইজি ড্রিমস হি ফাউন্ড হিমসেলফ ট্রান্সফোরমড্ ইন হিজ বেড ইনটু অ্যা জায়গানটিক ইন ইনসেক্ট।’ আধুনিক সাহিত্যে এর চেয়ে ভয়ংকর বাক্য দ্বিতীয়টি নেই বলে স্বীকার করে নিয়েছেন সমালোচকরা।
শিরোনাম থেকে বোঝা যায় গল্পের কোথাও-না-কোথাও রূপান্তরের ঘটনা আছে। সেই রূপান্তরের বিষয়টি ঘটে যায় গল্পের শুরুতেই। ফলে সেটি আর গল্পের মূল বিষয় থাকে না। মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে অন্য কিছু। গ্রেগর সামসার পোকা-পূর্ব জীবনে থেকে তাদের সামাজিক অবস্থানটা যতটা না বোঝা যায় তার চেয়েও বেশি বোঝা যায় তার পরিবর্তন-পরবর্তী সময়ে। তলস্তয় ইভান ইলিচের জীবন সম্পর্কে যেমনটি বলেছেন, [...] ‘মোস্ট সিম্পল অ্যান্ড মোস্ট অর্ডিনারি অ্যান্ড দেয়ারফর মোস্ট টেরিবল।’ [‘ডেথ অব ইভান ইলিচ’, তলস্তয়] সামসার ক্ষেত্রেও সেটা খাটে। সেলসম্যানের চাকরি করে সে। যদিও চাকরিটা তার মোটেও ভালো লাগে না, পরিবারের কথা ভেবে ছাড়তেও পারে না। প্রতিনিয়ত নিজের মনের সঙ্গে আপস করে বেঁচে থাকতে হয় সামসাকে। আপস করতে হয় অফিসের বস, পরিবার ও সমাজের সঙ্গেও। আপস করতে করতে একসময় সামসা হারিয়ে ফেলে তার মানবিক সত্তাকে। তার দৈহিক পরিবর্তনটা তারই চূড়ান্ত প্রতিফলন। সামসা পোকা হয়ে যাওয়ার পর পরিবার বা সমাজের আর কোনো কাজে লাগে না সে। ফলে সে পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আপাতদৃষ্টিতে সামসা পোকা হয়ে যায় বটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে মনুষ্য গুণাবলি হারায় না; বরং আশপাশের মানুষরাই আপাতদৃষ্টিতে ঠিক থাকলেও তারাই মনুষ্য গুণাবলি হারিয়ে পোকা হয়ে যায়। এটাই আপাত বাস্তবতার চরম আয়রনি।
‘মেটামরফোসিস’-এর প্রথম বাক্যেই সামসার মৃত্যু ঘোষিত হয় এবং গল্পজুড়ে সে ক্রমেই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। সমালোচক মার্টিন গ্রিনবার্গের সঙ্গে নিজের মত যুক্ত করে বলতে চাই, ইভান ইলিচের মৃত্যু ঘটে শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে পুনর্জন্ম ঘটে। কিন্তু গ্রেগর সামসার মৃত্যু হয় মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে তার যে পোকায় রূপান্তর সেটা অনস্তিত্ত্বের চেয়ে সাংঘাতিক। দ্বিতীয়টা বেশি ভয়ংকর।
আমরা তো পোকা হয়নি?
শেষ করার আগে আরও একবার ফিরে আসছি বাদল, তারা মিয়া এবং জাহালমের কাছে। না, আক্ষরিকভাবে তারা কেউ পোকা হয়ে যায়নি। কিন্তু তাদের রূপান্তরটা গ্রেগর সামসার চেয়ে কোনো অংশে কম কষ্টের না। সামসার মানুষ থেকে পোকায় রূপান্তর হওয়ার মতো একজন নিঃস্ব মজুরের হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপির দায়ে অভিযুক্ত হওয়া, হাত না থাকা এক ভিক্ষুকের বিরুদ্ধে পুলিশকে পেটানোর অভিযোগ এবং ভিনদেশে বেড়াতে গিয়ে খুনের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনাগুলো আমাদের কাছে রসিকতা বলে মনে হয়। আমরা হয়তো কিঞ্চিৎ হেসেও ফেলি। কিন্তু একটু পরেই জানতে পারি ‘দ্য ক্যাসেল’-এর ‘কে’-র মতো তারা একটা আমতান্ত্রিক জটিলতার ভেতর ফেঁসে গেছে। ‘দ্য ট্রায়াল’-এর জোসেফ কে-র মতো (সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কিংবা না হয়ে) হয়তো স্মৃতি ঘেঁটে উদ্ধার করার চেষ্টা করছে তারা আসলেই কোনো অপরাধ করেছে কি না।
শেষ করছি ডব্লিউ. এইচ. অডেনের একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে। কাফকার সাহিত্যের চরিত্র নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অডেন বলছেন: যুদ্ধকালীন সময়ে একবার পেন্টাগনে আমাকে এক দীর্ঘ আর ক্লান্তিকর দিন কাটাতে হয়েছিল। আমার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার তাড়া নিয়ে আমি দ্রুত নেমে আসতে থাকি দীর্ঘ কয়েকটি করিডোর পেরিয়ে এবং চলে আসি একটি ঘোরানো-দরজার কাছে যার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল একজন প্রহরী। প্রহরী আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ আমি জবাব দেই, ‘বেরোবার চেষ্টা করছি?’ ‘আপনি তো বাইরেই আছেন’ সে বলে। এক মুহূর্তের জন্য আমি অনুভব করি, আমিই ‘কে’।
[নার্সিসাসের কুয়ো : এক সত্তাশূন্য আমি, অনুবাদ: রায়হান রাইন]
প্রবন্ধ
----------------
কাফকার সাহিত্য এবং আমাদের 'কে' ও 'সামসা'দের গল্প
1 মন্তব্যসমূহ
কাফকাকে নিয়ে পড়া প্রবন্ধগুলোর মধ্যে এটি সুন্দর এবং সহজ।
উত্তরমুছুন