তানভীর মোকাম্মেল'এর গল্প : স্বর্ণঋণ




শীতের এক সকালে বেনাপোল সীমান্তের কাছেই বনগাঁর এক শরণার্থী শিবির থেকে বহু মানুষের সঙ্গে একটা ট্রাকে ঠাসাঠাসি করে চেপে ওদের পরিবারটি দেশের পথে রওয়ানা হয়েছিল। বিকেলে খুলনা শহরের ডাক বাংলোর মোড়ে পৌঁছে ট্রাকটা সবাইকে নামিয়ে দিল। স্বদেশে ফিরে আসা ওই শরণার্থীদের ভীড়ে রয়েছে সুভাষদের পরিবারের ওরা চারজন--মা, বাবা, দিদি আর সুভাষ। বাকীরা অপরিচিত। দিদি কলেজে পড়েন, সুভাষ ক্লাস টেনে। ট্রাক থেকে নেমেই মা আর দেরী করতে চাইলেন না। তক্ষুণি খুলনা শহরের দক্ষিণে দোলখোলায় ওদের বাড়ীতে যেতে চাইলেন। মা-দিদি এক রিক্সায় আর সুভাষ ওর বাবার সঙ্গে আরেক রিক্সায় উঠল। একটা সুবিধা ছিল যে ওদের সঙ্গে জিনিষপত্র তেমন বেশী কিছু ছিল না। ওর মায়ের হাতে গোল মতো একটা পোঁটলা, তাতে কাপড়চোপড়সহ সংসারের টুকিটাকি কিছু জিনিষ, দিদির হাতে লালচে রঙের ছোট পুরনো একটা চামড়ার সুটকেস, যুদ্ধ আর এত ওলটপালটের মাঝেও দিদি ওই সুটকেসটা বাঁচাতে পেরেছিল। এছাড়া ওর বাবার টিনের একটা বাক্স আর সুভাষের নিজের কাঁধে একটা ঝোলা, যার ভেতরে ওর দু’চারটে জামা-কাপড় আর গামছা। বনগাঁ থেকে দেশে ফেরার পথে অবশ্য ওদের জামা-কাপড় কয়েকটা বেড়েছে। কারণ বনগাঁর যে শরণার্থী শিবিরে ওরা ছিল সেই শিবিরের কর্তৃপক্ষ ক্যাম্প ছেড়ে শরণার্থীরা বিদায় নিয়ে বাংলাদেশে ফেরার সময় প্রত্যেক মহিলাকে মাথা পিছু একটা করে নতুন শাড়ী ও গামছা এবং পুরুষদেরকে একটা করে লুঙ্গি অথবা ধুতি আর একটা করে গামছা দিয়েছিলেন। 

দীর্ঘ প্রায় নয় মাস পর বাড়ী ফেরার আনন্দ ও উত্তেজনা তখন সবার ভেতরেই। এত দিনের চেনা খুলনা শহরকে শীতের এই বিকেলে যেন কিছুটা অন্য রকম লাগছে। যা দেখছে সেটাই ভাল লাগছে সুভাষের। সিটি কলেজের মোড়টায় এসে উচ্ছ্বসিত হয়ে সুভাষ বলল; “বাবা দেখ, দেখ, নারায়ণকার সেলুনটা ঠিকই চলছে। ...মনেই হয় না যেন এখানে কোনো যুদ্ধ হয়েছে!” সদ্য দেশে ফেরা সুভাষের অবশ্য জানার কথা নয় যে “মডার্ন হেয়ার কাটিং” নামে নারায়ণ শীলের সেলুনটার নাম আগের মতো থাকলেও যুদ্ধের দিনগুলোতে এ সেলুনের মালিকানা পাল্টে গেছে। নারায়ণ এখনও ভারতে। আর সেলুনটার নতুন মালিক এখন হাবিবুর রহমান হাবিব নামে এ পাড়ারই এক মুসলিম যুবক। 

ওর মা ও দিদিকে বহন করা রিক্সাটা একবার সুভাষদের রিক্সাটাকে ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে গেল। দিদি ওদের রিক্সাটা থেকে মুখ বাড়িয়ে হেসে সুভাষকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাল। দিদির মুখটা হাসিখুশীতে ভরা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সুভাষদের রিক্সাটাও এক সময় ওর মা-দিদির রিক্সাটাকে ছাপিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। তখন সুভাষও দিদির দিকে চেয়ে জিভ বের করে ভেংচি কাটল। ওর মুখও হাসিতে ভরা তখন। 

রিক্সা দু’টো যখন ওদের বাসাটার সামনে থামল শীতের বিকেল তখন আরো নরম হয়ে এসেছে। ওর বাবা গম্ভীর মুখে দুই রিক্সার ভাড়া মেটালেন। কিন্তু মা ও দিদি রিক্সা থেকে নেমেই ছুটে বাসার ভেতরে ঢুকলেন। অবশ্য বাসা বলতে এখন আর কিছুই নেই। জিনিষপত্তর সবই লুট হয়ে গেছে এ খবরটা ওরা বর্ডারের ওপার থেকেই পেয়েছিল। কিন্তু এখন দেখল দরজা-জানালার চৌকাঠগুলোও পর্যন্ত কেউ খুলে নিয়ে গেছে। সুভাষরা সেই জানালা-দরজাবিহীন ঘরে ঢোকা মাত্রই সুভাষের মা ওকে প্রথম যে কথাটা বললেন তা হচ্ছে; “যা তো আবুলদের বাড়ীতে। হরলিক্সের কৌটাটা নিয়ে আয়।” 

দীর্ঘ নয় মাস পর নিজেদের বাসায় ফিরেই বের হবার তেমন ইচ্ছা ছিল না সুভাষের। কিন্তু মা বলাতে বের হতেই হো’ল। ওর বন্ধু আবুলদের বাড়ী পাশের পাড়াতেই--মৌলভীপাড়ায়। আবুল আর ও একই ক্লাসে পড়ে। তবে সুভাষ পড়ে সেন্ট যোশেফস স্কুলে আর আবুল পড়ে বি.কে স্কুলে। তবুও দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব আছে। আবুলদের পরিবারটি তেমন শিক্ষিত না। খুলনার দক্ষিণাঞ্চলে ওদের অনেক ধানী জমি আছে। মূলতঃ সেই আয়েই খুলনা শহরে থাকে ওরা। তবে মৌলভীপাড়ায় ওদের নিজস্ব বাড়ী আছে। আর বাড়ীর পেছনে গাছপালায় ঘেরা বেশ খানিকটা জমিও আছে। এ দুই পাড়ায় ওদের সমবয়সী আরো কয়েকজন বন্ধু আছে সুভাষের--নয়ন, আফরোজ, হেলাল, বকুল, মিন্টু। তো ঘটনাটা হো’ল, মার্চ মাসের শেষের দিকে যখন খুলনা শহরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী খুন-খারাবী শুরু করল, এবং বোঝা যাচ্ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা ওদের এক বিশেষ লক্ষ্যবস্তু, তখন অনেক হিন্দু পরিবারই খুলনা শহর ত্যাগ করে প্রথমে গ্রামের দিকে, ও পরে সীমান্ত পার হয়ে, ভারতে চলে যেতে থাকে। 

সুভাষদের গ্রামে কোনো বাড়ী নেই। ওর বাবা-ঠাকুরদা কয়েক পুরুষ ধরেই শহরের চাকুরেজীবী। বাগেরহাটের মূলঘরে ওদের পূর্বপুরুষদের যেসব জায়গাজমি, বসতবাটি ছিল, তা কয়েক পুরুষ ধরেই হাতছাড়া। বলতে গেলে, পুরোপুরিই শহুরে মানুষ ওরা। তাই শহর ছেড়ে চট করে কোনো গ্রামে চলে যাবার সুযোগও ওদের তেমন ছিল না। তাছাড়া ওর বাবা বোধহয় আশা করছিলেন এই খারাপ সময়টা এক সময় পার হয়ে যাবে। প্রাথমিক ঝামেলাটা মিটলে ওরা নিরাপদেই ওদের বাড়ীতে থাকতে পারবেন। কিন্তু এপ্রিলের প্রথম দিক থেকে শহরের অবস্থা ক্রমেই বিপজ্জনক হতে থাকল। বিশেষ করে যখন ফেরীঘাটের বিহারীরা শহরে খুন-জখম-লুটতরাজে নেমে পড়ল। দেখা যাচ্ছিল ওদেরও লক্ষ্য মূলতঃ হিন্দু পরিবারগুলো আর তাদের ঘরবাড়ী। আর সবচে’ খারাপ অবস্থা শুরু হো’ল যখন রাজাকার বাহিনীর সৃষ্টি হো’ল। ওদের দোলখোলার পাশেই বানিয়াখামারে ছিল রাজাকারদের এক বিরাট ক্যাম্প। ওরা প্রায়ই এবাড়ী ওবাড়ী হামলা করত, টাকা-পয়সা সোনার গহনা ও বাড়ীর দামী জিনিষপত্র লুট করত, বাড়ীর তরুণী মেয়েদের তুলে নিয়ে যেত। অনেক সময় লোকজনকে ধরে খুলনা শহরের পেছনের বিলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে মারত কিম্বা তাদের ধরে সার্কিট হাউজে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিত। মা জেদ ধরলেন এক্ষুনি খুলনা শহর ছাড়তে হবে। বাবার যে খুব আপত্তি ছিল তা’ নয়। কিন্তু দেশ ছেড়ে অনির্দেশের পথে বেরিয়ে পড়তে হাতে তো কিছু নগদ টাকা প্রয়োজন। অথচ দেশে গোলমাল বলে বাবার স্কুল বন্ধ। দু’মাস ধরে বেতন পান না। শেষমেষ এক রাতে বাড়ী থেকে লুকিয়ে বের হয়ে কিছুটা দূরে ফরাজী পাড়াতে স্কুল কমিটির চেয়ারম্যান সিদ্দীক সাহেবের বাসায় যেয়ে উঠলেন বাবা। সুভাষকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। সব শুনে সিদ্দীক সাহেব ঘরের ভেতর থেকে দেড়শ’ টাকা এনে দিয়ে বললেন; “স্কুল খাতের টাকা তো সব ব্যাঙ্কে। এখন তো তোলার উপায় নেই। বাড়ীতে এটাই ছিল। এর বেশী তো আর দিতে পারলাম না অনন্তবাবু !” বাবা যে খুব অখুশী হলেন তা’ নয়। দেড়শ’ টাকা তখন অনেক টাকা। বাবার প্রায় এক মাসের বেতনের কাছাকাছি। ঠিক হো’ল পরশু ভোরেই ওরা খুলনা শহর ছেড়ে সীমান্তের পথে রওনা দেবে। 

যাবার আগের দিন সন্ধ্যার কিছু আগে সুভাষের মা সুভাষকে আড়ালে ডেকে ওর হাতে হরলিক্সের একটা পুরনো বয়াম দিয়ে বললেন; “এটা আবুলদের বাড়ীতে রেখে আসতে পারবি ?” সুভাষের জিজ্ঞাসু চাহনি দেখে বলেছিলেন; “তোর দিদির বিয়ের গয়না। ..এত দামী জিনিষ নিয়ে পথে বের হব না। .. পথে যে ভাবে লুটপাট হয় শুনিছি !” 

হরলিক্সের বয়ামটা বেশ ভারী। একটা পাতলা সাদা প্লাসটিক দিয়ে বয়ামটা যত্ন করে মোড়ানো। তবে ভেতরে যে ভারী সোনার গহনা আছে তা বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না। সুভাষ জানে ওদের অভাবের সংসারে ওর মা কত কষ্ট করে ওর দিদির বিয়ের জন্যে একটার পর একটা এসব গহনা বানিয়ে বানিয়ে জমিয়েছে। 

রাত আটটা থেকে কার্ফিউ শুরু হবে, বা এত দামী একটা জিনিষ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে, ওদের বাসার এত কাছে মৌলভীপাড়ায় যেতেও রিক্সা নেয়াটাই শ্রেয় মনে করল সুভাষ। হয়তো ও একটু নার্ভাস বোধ করছিল সন্ধ্যার এই আলো আঁধারিতে ওর চির পরিচিত এই সামান্য দূরত্বের পথটুকুও হেঁটে যেতে। আসলে একাত্তর সালের সে সময়ে চারিদিকে জমাটবাঁধা এমন এক গা হিম করা আতঙ্ক বিরাজ করত, পথে ঘাটে আর মানুষের মনে, যে মনে হোত সে আতঙ্ক যেন চামচে কুরে তোলা যায়। তবে আবুলদের বাড়ী পর্যন্ত নিরাপদেই পৌঁছল সুভাষ। আর আবুলকে গহনার কৌটার কথাটা বলাতে ও সহজভাবেই বলল; “ঠিক আছে। দাঁড়া।” বাড়ীর ভেতর থেকে একটা শাবল নিয়ে এল আবুল। তখন সন্ধ্যার অন্ধকার বেশ কিছুটা ঘনিয়ে আসছে। আবুলদের বাড়ীর পেছনের দিকে পাঁচিলের প্রায় গায়ে রয়েছে বেশ পুরনো একটা আমগাছ। ওই আমগাছটা আর পাঁচিলের মাঝের জায়গাটা খোঁড়া শুরু করল আবুল। গর্তটা হাতখানেক গভীর হলে হরলিক্সের বয়ামটা দু’জনে মিলে সে গর্তের মধ্যে রাখল। তারপর মাটি চাপা দিয়ে গর্তটা আবার ভরাট করল দু’জনে। গর্তের মুখটায় আবুল কিছু ঘাসও ছিটিয়ে দিল। বলল; “কেউ বুঝতেই পারবে না, দেখিস।” 

এপ্রিল মাসের শেষের দিকে এক কাকডাকা ভোরে ঘরবাড়ীতে তালা লাগিয়ে সুভাষদের পরিবারটি পথে বেরিয়ে পড়ল। কিছুটা পথ রিক্সায়, কিছুটা নৌকায় ও অনেকখানি পায়ে হেঁটে এবং শেষে ভ্যানগাড়ীতে চেপে ওরা ঝাউডাঙ্গা হয়ে নানা ঝামেলার মধ্য দিয়ে শেষমেষ সাতক্ষীরা সীমান্তের কাছে ইছামতী পার হয়ে ভারতের টাকিতে যেয়ে উঠল। এরপর বশিরহাট ও বারাসাতে নানা আত্মীয় ও পরিচিতদের বাড়ী কিছু দিন ধরে থেকে, এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপেক্ষা ও অপমান সয়ে, শেষে বনগাঁর কাছে গাইঘাটার এক শরণার্থী শিবিরে এসে আশ্রয় নিল ওদের পরিবারটি। ওরা বেশ বুঝতে পারছিল যে নিঃস্ব হলে কাছের আত্মীয়রাও অনেক দূরের মানুষ হয়ে যায়। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত তাই ওই ক্যাম্পটাতেই ছিল ওদের পরিবারটি। 

আর আজ ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের এক ধোঁয়াশা সন্ধ্যায় সদ্য স্বাধীন দেশে সুভাষ আবার এসে দাঁড়াল আবুলদের বাড়ীর সামনে। সন্ধ্যার ঘন অন্ধকার নেমে আসছে ক্রমশঃ। ওর ডাকে আবুল বেরিয়ে এল। “কখন এলি?” জিজ্ঞেস করল আবুল। তবে ওর গলায় উচ্ছ্বাসটা কী কিছু কম শোনাল ? 

- “এই তো, আজ।.. হরলিক্সের বয়ামটা”? বলল সুভাষ। 

- “আয়।” বলে আবুল ওদের বাড়ীর পেছনের বাগানের দিকে চলল। সুভাষ ওর পেছনে। এবার শাবলটা আবুল আর বাড়ীর ভেতর থেকে আনল না। ওদের বাগানের এক কোণায় ওদের যে বড় একটা ধানের গোলাটা আছে তার তলা থেকে টেনে বের করল শাবলটা। 

আমগাছ আর পাঁচিলের মাঝের জায়গাটায় এসে দাঁড়াল ওরা। চারপাশে ঘন ঘাস। কিন্তু যে জায়গাটায় ওরা একদিন গর্ত খুঁড়ে বয়ামটা রেখেছিল সে জায়গার ঘাস যেন কিছুটা ফাঁকা। কিছু ঘাস যেন ও জায়গাটা থেকে তুলে ফেলা হয়েছে বলে মনে হো’ল সুভাষের। শাবলটা দিয়ে আবুল গর্তটা খোঁড়া শুরু করল। কিছুটা খুঁড়তেই ঠং করে একটা আওয়াজ উঠল। হরলিক্সের কাঁচের বয়ামটায় শাবল লাগার শব্দ। আশ্বস্ত বোধ করল সুভাষ। ও জানে ওর মায়ের, ওর দিদির, ওদের পরিবারের কত স্বপ্ন ওই বয়ামটার ভেতরের গহনাগুলোকে ঘিরে রয়েছে। মাটিমাখানো বয়ামটা গর্ত থেকে টেনে বের করল আবুল। দু’জনে হাত দিয়ে বয়ামটার গা থেকে কালো মাটিগুলো মুছল। মাটিগুলো পরিস্কার হতেই মহাআতঙ্কে সুভাষ হঠাৎ লক্ষ্য করল বয়ামটার ভেতরটা ফাঁকা। একেবারেই শূন্য। 

- “কী হো’ল ? ..গয়না কই গেল !” একটা আতঙ্ক মিশ্রিত শব্দ বেরিয়ে এল সুভাষের মুখ থেকে। 

- “বুঝতিছি না। ...কী যে হো’ল ?” আবুলের গলাটা কী একটু কাঁপা কাঁপা শোনাল। এরপর আবুল বলল; “তুই আর আমি তো এক সঙ্গেই মাটি খুঁড়ে বয়ামটা রাখলাম। ...গয়নাগুলো গেল কই ?” 

সুভাষ কাঁচের বয়ামটা ওর মুখের সামনে নিয়ে ভাল করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। না, কিছুই নেই ভেতরে। একবার ঝাড়াও দিল বয়ামটা। না, কোনো শব্দ নেই ভেতরে। ওর মুখের সামনে ধরা কাঁচের বয়ামটার ভেতর থেকে ওপাশে দাঁড়ানো আবুলের মুখটা যেন কিছুটা বাঁকাত্যাড়া দেখাল। সন্ধ্যার অন্ধকার ঘন হয়ে নেমে আসছে। সে কারণে আবুলের মুখটাও দেখাচ্ছে যেন কিছুটা ঝাপসা ও কালচে। 

খালি বয়ামটা নিয়ে সুভাষ যখন আবুলদের বাড়ীর গেটটা থেকে উদ্ভ্রান্তের মতো বের হচ্ছে পেছন থেকে আবুল আস্তে করে ওকে বলল; “তুই ফিরেছিস খুব ভাল হয়েছে। ...আগামী রোববার আমার মেজবুর বিয়ে। ...তুই আসবি কিন্তু।”



লেখক পরিচিতি
তানভীর মোকাম্মেল
জন্ম ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে।
বাংলাদেশের খুলনায়।
চলচ্চিত্রকার। কবি। গল্পকার। প্রবন্ধ।কার। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। 

শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে।
তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর নাম--  নদীর নাম মধুমতি, চিত্রা নদীর পাড়ে, লালসালু, লালন, রাবেয়া, এবং জীবনঢুলি। 
 উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্যচিত্র হলো দ্য গার্মেন্ট গার্ল অব বাংলাদেশ, দ্য আননোওন ব্যার্ড টিয়ারড্রপস অব কর্ণফুলী, রাইডার্স টু সুন্দরবনস, এ টেল অব দ্য যমুনা রিভার, 'দ্য প্রমিসড ল্যান্ড তাজউদ্দীন আহমেদ: অ্যান আনসাং হিরো, দ্য জাপানিজ ওয়াইফ, স্বপ্নভূমি এবং "১৯৭১।

প্রকাশিত বই-- 
এ ব্রিফ হিস্টোরি অব ওয়ার্ল্ড সিনেমা, দ্য আর্ট অব সিনেমা, চার্লি চ্যাপলিন: কনকোয়েস্টস বাই এ ট্র্যাম্প, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, সিসিফাস অ্যান্ড কোয়েস্ট অব ট্রেডিশন ইন নভেল (সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক একটি কাজ), গ্রান্ডভিগ অ্যান্ড ফোক এডুকেশন (বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থার ধারনা বিষয়ক বই), এবং ম্যাক্সিম গোর্কির দ্য লোয়ার ডেফথস নাটকের অনুবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ