আহমেদ খান হীরক : গল্পের কাছে কী চাই?



শুরুটা হয়েছিল নানার কাছে। আমরা বলতাম 'কাহানি'। শীতের রাত। সন্ধ্যা গড়াতেই খাওয়া দাওয়া শেষ। নানার ছোট একটা ঘর। টালিতে শিশির পড়ছে। আমি পৌষের শীতে নানার লেপে ঢুকে ঘন হয়ে শুই। বলি, নানা, কাহানি বলেন... 

নানা শুরু করেন 'টিপটিপ্যার কাহানি'। এক বাঘের গল্প। এমন এক বাঘ যে গৃহস্থকে খেতে এসে নিজেই ভয় পেয়ে যায়। টিপটিপার ভয়। অসীম সাহসী, হিংস্র বাঘ নিজেই যখন ভয় পেয়ে যায় তখন কাহানিটা, মানে গল্পটা, হয়ে ওঠে স্মরণীয়। বৈপরীত্য আগ্রহী করে তোলে। চমকও ছিল আকর্ষণীয়। 

শৈশবের বৈপরীত্য বা চমকের চাওয়া এখন অনেকটাই পালটে গেছে। গল্পের কাছে কী চাই ভাবতে বসে দেখতে পাচ্ছি আসলে গল্পকে আমি স্রেফ দুইটা ভাগেই ভাগ করতে চাই--ভালো গল্প এবং খারাপ গল্প। আর এ দুটোই কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে নেই। বরং পাঠ ও পাঠ পরবর্তী বোধই আমাকে ভালো ও খারাপ অনুভূতির দিকে ধাবিত করে। অর্থাৎ আমার কাছে উভয়ই এখন গুরুত্বপূর্ণ--পাঠের সময়টুকু; যখন গল্পের সাথে আমি একটা ভ্রমণে বেরিয়েছি; গল্পকার আমাকে একের পর এক বাক্যে বেঁধে চলেছেন চরিত্র ও আখ্যানে, চিত্রে ও বৈচিত্রে, বাস্তব ও অধ্যাসে; অন্যদিকে পাঠের পরবর্তী সময়ে আমি চাই গল্পের স্থায়িত্ব বাড়ুক। ওই সময়ে গল্পটি আমাকে ভাবিত করুক, তাড়িত করুক, কখনো কখনো এমনকি নতুনভাবে ধরা দিক। পাঠের সময়ের পাওয়া উপাত্ত আমাকে আরো অনন্য কিছু আবিষ্কার করাক যা আপাতদৃষ্টিতে ছিল না গল্পের মধ্যে। 

গল্পের স্থায়িত্ব আমি পাঠের পরেও চাই। দীর্ঘ সময় চাই। আমি চাই গল্পটি শেষ করার পর আমিও যেন পাঠক আর না থাকি, গল্পটি পূরণ করতে একজন গল্পকার হয়ে উঠি। অর্থাৎ গল্প তৈরি করতে গল্পকারের সাথে ভূমিকা রাখতে পারি। 

আমি মনে করি, ভালো গল্প আসলে শেষের পরই, শুরু হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ