আমি খুব ছোট থেকেই গল্প পড়ি।
ছোটবেলায় প্রচুর পড়তাম, ছোটদের বই যাকে বলে, সেইরকম বইই। কিন্তু আমার মন ভরতো না। কেবলই মনে হত, ছোটদের মনের মতো গল্প এগুলো নয়। আমি বড় হয়ে ছোটদের গল্প লিখবো।
কিন্তু এটা কি সম্ভব? প্রত্যেক ব্যক্তিমানুষ তো তার স্থান -কাল -পাত্রে এক একটি পৃথক অস্তিত্ব। সেই সবার কথা গল্পকার জানবেন কী করে?
জানবেন, কারণ সবকালের সব মানুষের মধ্যে কিছু না কিছু মিল থাকেই।
মানুষ তার নিজস্ব পরিবেশের সীমায় আবদ্ধ। সে সীমার কাহিনীই চায়। সে অনেকক্ষেত্রেই অসহায় —সামাজিক, পারিবারিক নিয়মকানুন ও পরিস্থিতির দ্বারা। সে সেই পরিস্থিতির আনন্দ ও যন্ত্রণার ইতিকাব্য গল্পে শুনতে চায়। আবার তার থেকে বের হওয়ার যে আগ্রহ, সে অতি গোপনে বুকের মধ্যে জমা করে রেখেছে, যা সে নিশ্চিত জানে তা কখনও ঘটবে না, তার প্রতিফলনও সে গল্পে পেলে উচ্ছ্বসিত হয়।
অনেক অভিযান, সে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিতেই হোক, আর অচেনা পরিবেশই হোক, সেই তথ্যও পাঠক পড়তে চায়, যদি পন্ডিতির পোষাক ছেড়ে লেখক স্বপ্নের উজানে তাকে সে জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন।
গল্পের মধ্যে শুধু লেখকের মনসঞ্জাত দর্শন পরিবেশন আমার মতো পাঠককে টানে না। পাঠককে টেনে রাখার জন্য গল্পের বিষয়কে লেখক স্বাদু বিশ্লেষণের দ্বারা ,চেনা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে ঠেলে নিয়ে যান। এভাবে অপ্রাকৃতও প্রকৃত হয়ে ওঠে স্বাদু পরিবেশনার গুণে। গভীর দর্শনও সরল হয়ে পাঠককে ভাবুক করে তোলে।
গল্পের পাঠককে শেষপর্যন্ত আনন্দ পেতে হয়। তৃপ্তি পেতে হয়। ক্যাথারসিস তার প্রয়োজন। যে লেখক যত অভিজ্ঞ, জীবনের খোলনলচে যিনি যত বেশি উল্টেপাল্টে দেখেছেন, তিনি পাঠককে তত বেশি তৃপ্তি দিতে পারেন। অতি চেনা, অথচ দেখার গুণে চিরঅচেনা অভিজ্ঞতার জন্য অপেক্ষা করে পাঠক। সেই গল্পপাঠের অভিজ্ঞতা তখন তার স্মরণীয় হয়। সে ক্ষেত্রে এক গল্প বারবার পঠিত হয়।
3 মন্তব্যসমূহ
পন্ডিতি পোষাক ছেড়ে স্বপ্নের উজানে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া-কথাটি ভালো লেগেছে।
উত্তরমুছুনখোলামেলা মনোভাব । খুব ভালো অনুভূতি হলো ।
উত্তরমুছুনপন্ডিতির পোষাক ছাড়ার মধ্যেই আছে গল্পের প্রকৃত রস।
উত্তরমুছুন