পৃথিবী একটা অপূ্র্ব জায়গা, এখানে মানুষ মানুষকে কামনা করে, মানুষ মানুষের সঙ্গ ভালবাসে, কানাডায় অটোম, জাপানে চেরিফুল ফোটার দিন স্কুল ছুটি হয়ে যায়। এখানে ধান উঠলে কিষানী ঘনিষ্ট হয় কিষানের সাথে, এখানে কাদার ভেতর থেকে তুলে আনা কৈ মাছ ধরে দৌঁড় দেয় ন্যাংটা কিশোর, পৃথিবী তার নানার কোণ নানান রঙে সাজায়।
পৃথিবী একটা কুৎসিততম জায়গা, এখানে শিশুহত্যা হয়, শিশুশ্রম হয়, শিশু ধর্ষন হয়। এক সন্তান নীতির ফলে এখন পর্যন্ত দেড় কোটির অধিক শিশুকন্যা নিখোঁজ হয় চীনে, এক সন্তানের অধিক গর্ভবতী হলে শিশুর পিতাকে জেলে পুরে দেয়া হয় যতদিন না গর্ভপাত ঘটায় মা, ব্যাগে ভরে কন্যা শিশুকে রাস্তায় ফেলে যায় পিতামাতা, প্রতি পাঁচজনে একজন মারা যায় কেয়ারহোমে, কন্যাশিশু হত্যার হারে ভারত দ্বিতীয়, কেবল কন্যাশিশু হত্যা হয় প্রতিদিন কয়েক হাজার! এখানে মৃত্যুর মুখে একবিন্দু জল পায়না মানুষ কিন্তু মেয়াদউত্তীর্ন খাবার সমুদ্রে ডাম্প করে অন্যপাশের মানুষ।
এই যে অপূর্ব আর কুৎসিতের পাতা খাদ, প্রায়ই এই খাদে পড়ে যাই আমি। পড়ে আমি তলিয়ে যেতে থাকি, কেবলই আতান্তর, অনিঃশেষ আতান্তর। তখন আমি হৃদয় জ্বালাই, ৪/৫দিনের জন্য তলিয়ে যেতে যেতে আমি গল্প লিখি, গল্প লিখি দিনরাত, গল্প লিখি ঘুমের ভেতর, গল্প লিখি ঘরের ছাদে, দেয়ালে, ফ্রিজের ভেতর, কফির কাপে। গল্পের জন্য আমার কোনো হাহাকার করতে হয়না, আমি শব্দ ধরি, যে কোনো ভাষার শব্দ, যে কোনো দেশের শব্দ, শব্দরা নিজেরাও আসে আমার কাছে, সুন্দর, নিঁখুত, দুখী, উচ্ছল শব্দ গেঁথে গেঁথে রোদে শুকাই, বয়ামে তুলে রাখি, আমার গল্পেরা এভাবেই আমাকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করে রাখে, আমি আশা করি পৃথিবীর কোণে কোণে মধুবৃক্ষ হয়ে তারা জন্ম নিবে একদিন, আমার সাধের শব্দরা...
একটা পাতা, একটা নদী, মানুষ, একটা পাহাড়, বিপর্যয়, প্রেম, দারিদ্র, বিপ্লব, একটা অনুভব, বৈশ্বিক সমস্যা এইসব নিয়ে আমাদের জীবন, সুতরাং সাহিত্যে, বিশেষ করে গল্পে এই সবগুলো বা একটি বিষয় অবশ্যই যেহেতু বিদ্যমান, আমি চাই তা তীব্রভাবে উপস্থিত থাকুক। তীব্র, ঝাঁঝালো, ধাক্কার মত, যেনো গল্পটি শুধু আমার মনেই নয়, কয়েকটি বৎসর ধরে আমার শরীরেও বহন করতে পারি, যেমন যে কোনো ভাল অনুভূতি আমাদের শরীরকেও জাগিয়ে দিয়ে যায় মানসিক অনুভূতির মত...
1 মন্তব্যসমূহ
চমৎকার বলেছেন আপা, মনে নয় শুধু শরীরেও বহন করার মতো গল্প চাই...
উত্তরমুছুন