সুমী সিকানদার : গল্পের কাছে কি চাই



গল্পের কাছে কি চাই লিখতে গিয়ে আরেক গল্পের জন্ম হলো । যে ভাবে লিখবো ভেবেছিলাম সেই ছক কিংবা চা সব জুড়িয়ে গেছে। কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে আছে তো কিছু খোয়া গেছে। কিছু যোগ কিছু বিয়োগ । গল্পের স্বভাব এমনই। 

গল্পের কাছে হাত জোর করে ''না গল্প'' চাই। আপসে আসুক সহজিয়া কেউ। নাটুকে নয়, সত্যিকারের ঝগড়া কিন্তু ভালোবাসারই নাম। মৃদুভাবে চরিত্রদের সামনে আনে চোখাচোখি ঘোলাটে আনকাট । 

ধরা যাক কিছু বাস্তব তা পুরো বাস্তব নয়। আবার যা কিছু অবাস্তব তা পুরোপুরি অবাস্তব নয়। গল্পের চরিত্রদের সৃষ্টি করা হয় গল্প করার জন্য। কথপোকথনের মাধ্যমে কিংবা দৃশ্যের মধ্য দিয়ে পেরিয়ে আসে কোলাহল অথবা নির্জন সেরেনাড । 

আমি গল্পের সাথে গল্প করতে করতে হারিয়ে ফেলা মানুষকে ফের ফিরাই । আগের ঘটা ঘটনাগুলো ইরেজ করতে করতে এগোই। তাকে নিয়ে ট্রলি ভরে গ্রোসারি করি। ঘর বোঝাই খেলনা গিজগিজ করে। বাররার ইমালশান দিয়ে রং করে ফেলি ননডাস্ট ক্রিম কালার। কেন না , জানি না ছেলে না মেয়ে কোন শিশু আসছে। 

গল্পেই সন্ধ্যা নেমে এলে দুজন হাঁটতে বেরিয়ে লেকের ধারে হাঁসগুলোকে দেখতে থাকি। ইচ্ছে , এই বেলা নিজেদের টং ঘরে যাব, যা আগে ঘটেনি। পান্ডুলিপি পুড়ে গেছে অগোচরে। 

হঠাৎ কি হলো, গল্পে ফিরে পাওয়া তাকে কে বা কারা পর পর দুই রাউন্ড গুলি করে রাস্তায় ফেলে রেখে গেল । আমি গল্পের সত্য নাকি সত্যের মধ্যে বানানো কোনও গল্প তা বুঝলাম না। সে যে মাটিতে তে পড়ে রক্তে ভাসছে, তার দিকে একবার মাত্র চেয়ে নির্বিকার পানিতে ভাসা হাঁসের দিকে তাকিয়ে আছি। জগতের সবাচাইতে সুন্দর সাদাহাঁস তার প্রেমিকাকে আলগোছে চুমু করে দিচ্ছে। এই দৃশ্য আমি কোন ভাবেই মিস করতে চাই না। ফলে এবারের গল্পেও পাশ থেকে সরিয়ে নেয়া হয় গুলি খাওয়া লাশ , রক্ত , আইডিকার্ড, মানিব্যাগ । উধাও হয়ে যায় পুরো বায়োস্কোপটাই। 

লেকের পাশে একরোখা বর্তমান। উদাস পাতাঝরা বাতাসে বসি। মনে করার চেষ্টা করি কোন ঋতুতে যেন ক্রমাগত শুকনো পাতা ঝরে। কি যেন নাম ছিলো তার রাশিচক্রের। 

গল্পের চরিত্ররা আমার কাছে ব্রাঞ্চেস অফ ব্রাশ, যেগুলো বিভিন্ন সাইজের এবং শেপের। কিছু খুব শার্প এবং কিছু ভোঁতা করা আমাদের জীবনের নানা রঙ আঁকার সুবিধার জন্য। 

চরিত্রগুলোকে হাইলাইট করবো সবাই ঘুমিয়ে গেলে। কাউকে কাউকে হিপনোটাইজ করা লাগতে পারে ঐ গোল চেইন ওয়ালা ঘড়িটাকে মুখের সামনে নাড়িয়ে নাড়িয়ে। কেননা সামনা সামনি সকলেই ভদ্র এবং অক্লান্ত অভিনেতা। আখেরে আধাজাগরণ অবস্থাতেই কিছু অসত্য রং আঠা খুলে দেয়াল থেকে পড়ে যেতে পারে । 

থিমগুলো অনেক সময় একত্রে আসে। তারা একসাথে হুড়োহুড়ি করে ।কিউ দিতে জানে না। গল্প সাজাতে তাদের পর পর ভাবনায় রাখি ভাঁজ করে।বোধকে শানিয়ে তুলি ভালভাবে ব্লেন্ড করে , এতে যবনিকার ব্রাশ আপ পারফেক্ট হয়। 

গল্পের কাছে কি না চাই ! চাই দেশমাতৃকা , চাই ভোর, কিচিরমিচির, কচুরিপানাফুল , মাটিয়া রং মেয়ে কিংবা কাঁকড়া সমুদ্র। গল্পেরা বালিয়াড়ি, লেপাঘর , পিছে ঘুমন্ত শিশুসহ জুমচাষী মা । কিছু হাড়ের গহনায় ম্রো কিশোরীর চাপা হাসি। চাই চাপকল, জল রঙ্গে মিহি জল। সবুজের কচি ডগা ,বেতের টেবিলে সাদা কাপে মশলা মায়া -চা এবং সল্টেড আস্থা ।গল্পে এসেছে তিনটা অলস বাচ্চা দেয়া অলস মা বিড়াল। তাদের নাম দিতে হবে কুচকুচে মনিতে। 

কাচ চশমার কালো ফ্রেম এবং তুমি মিশে থাকো গল্পে , থাকুক টার্কিশ দোসর , শ্রাবণ নামুক। মাঝারাতের চাপা আওয়াজে সব্জিওয়ালার সাথে চারসন্তানের অসুখী জননী । তাদের হাতে সময় কম। ভোরের আগেই ফিরতে হবে বস্তির চটচটে জীবনে। গল্পে তারা সুখী হোক। 

গল্পের ঝিরি হাওয়ায় বেরিয়ে আসুক হিজাবি মেয়ের অবাধ্য চুল । ভেঙ্গেছে সে বয়সী প্রথা । কাল ব্রেকাপের পর আজ রাতে না আসুক সুইসাইড নোট। সে বাঁচুক গল্পের বাঁকে। 

গল্পে হেঁটে যাক স্বচ্ছ শার্সি নারী তার ভারি বুকের ঈষৎ চমকিত ক্লিভেজের দাপটে। এই সম্পদ তাকে মানুষ কিংবা অমানুষ চিনিয়েছে। 

গল্পে চাই ভাংচুর, এক গাল প্রেম, জেল্লা, এক পাতায় চড়ুই অপেক্ষা। একবার চাই পরজন্ম , যা কেবল গল্পেই হয়। এবারের গল্পে আমি ফের ব্যার্থ আমাকেই চাই না মাননীয়। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4 মন্তব্যসমূহ

  1. খুব ভাল লিখেছেন আপা। সত্যি গল্পের কাছে কী না চাই।

    উত্তরমুছুন
  2. ‘আমি গল্পের সঙ্গে গল্প করতে করতে হারিয়ে ফেলা মানুষকে ফের ফিরাই’ - সব বলা হয়ে গেল যেন।

    উত্তরমুছুন
  3. রঞ্জণা আর আমার চোখ এক জায়গায় আঁটকালো কি করে তাই ভাবছি। হারিয়ে যাওয়াকে ফিরে পাওয়াইতো গল্প। খুব ভাল লাগলো, সুমী। শুভকামনা রইল।

    উত্তরমুছুন