কায়েস আহমেদ'এর গল্প : অন্ধ তীরন্দাজ



ক’ দিনের পচানে বৃষ্টির পর আজকাল রোজ চাঁদ উঠছে। সারারাত ফিনফিনে জ্যোৎস্না, দিনের বেলা রোদ, হাওয়াও আছে-বেশ, ভারী চমৎকার সময় যাচ্ছে। রিঁ রিঁ রিঁ ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে, ক্রু ক্রু ক্রু উচ্‌ চিংড়ে, পুকুর পাড়ের গাছ-গাছালির ডাল-পাতার ফাঁক-ফোকর দিয়ে হাজার হাজার চাঁদ, পায়ের নীচে, পুকুর পাড়ের ঢালুটার পরেই জাম গাছ, তারপর বেবাহা মাঠ-খালি ধানগাছ আর ধান গাছ। সদ্য দুধ আসা, ঈষৎ নুয়ে থাকা ধানের ছড়ার ওপর, পাতার ডর চাঁদের আলো, তার ওপর, একটু একটু কুয়াশার ভেতর দিয়ে আশ্বিনের বাতাস- ছোট খাটো দলটা সবের কিছু দেখছিলো না। 

‘-পটলা শালা যে রেটে মালে পানি মেশাতে শুরু করেছে...' কথাটা শেষ না করেই পচা গ্লাসটা ঘাসের ওপর রাখতে রাখতে আউ করে ঢেকুর তোলে। 

সণ্ড ঝালবড়া চিবুতে চিবুতে পচার দিকে তাকায়: 'পটলার বুনটাকে দেকিচিস? শালা জিনিস একখানা। মাগীর এক একটা চু’ চি আধ সের তিন পো। আর পাছা! উ-হ’ - চোখ বুজে ঝাল বড়ায় কামড় দেয়। 

এ কথায় সগু পটলার পানি মেশানোর অপরাধ মাফ করে দিতে চায় কিনা বোঝা গেলো না। পচা বললো: তাই তো রে শালা, মাল তো খাস না, মনে মনে পটলার বুনের মুত গিলিস! 

সগু কোন জবাব দেয় না। 

নাড়ু অনেকক্ষণ ধরে পুকুরের পানির ওপর ভাসতে থাকা দলামোচা কাগজের টুকরোটার দিকে চেয়েছিলো। হাওয়া লেগে এক টুকরো জমাট জ্যোৎস্না যেনো একবার সামনে এগোয়, একবার পেছন হাঁটে। একবার বাঁ পাশ ফেরে, থির হয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকে কখনো, কখনো ডান পাশ ফিরে বোঁ বোঁ করে ক’ পাক ঘুরে গিয়ে ফের সামনে এগিয়ে যায় হাঁসের মতো। তারপর পুকুরের তলা থেকে গুগলি তোলবার জন্যে ডুব দেয়। 

না, তা-ও নয়; বহুদিন আগে মল্লিকদের পুকুর পাড়ে প্রকাণ্ড একটা চন্দ্রবোড়া সাপকে শাদা মুরগী ছানা গিলতে দেখেছিলো-সেই কথা মনে পড়লো। 

নাড়ুর বয়স কম। মেয়েলী ধরনের দেখতে। হাফ প্যান্ট পরা নাড়ুর শাদা উরু চকচক করছে। সেদিকে চেয়ে সগু খুব জড়ানো গলায় ডাকে: 'নাড়ু।' নাড়ু উত্তর দেয় না। 

সগু নাড়ুর গায়ের কাছে ঘেঁষে আসে। কাঁধে হাত রেখে মুখ বাড়িয়ে দেয় নাড়ুর গালের কাছে। নাড়ুর গালে নিঃশ্বাস লাগে। মদের গন্ধ আসে। 

সগুর চোখ গোলা হয়ে এসেছে, গলায় ভাদ্রমাসের কুকুরের শব্দ। সগুর হাত সরিয়ে দেয় কাঁধ থেকে। 

-‘রাগ করচিস?’ 

নাড়ু কোনো কথা বলে না। স’রে সে। তখন মনিরামপুর রেল-পোলের ওপর গাড়ি উঠে আসছে, গুম গুম শব্দ হচ্ছে। 

মুরগীর মতো কান পাতলো নিতাই। চার জনেই শুনলো শব্দটা। পচা বলে: 'মালগাড়ি।' 

এসব ব্যাপারে পচার কান খুব পরিষ্কার। টেনের শব্দ শুনলে ঠিক ঠিক বলে দিতে পারে প্যাসেঞ্জার্স না গুডস্‌ টেন। 

নিতাই বললে: 'কী চাঁদ মাইরি। সব কাজ গুবলেট হচ্ছে।’ 

তা বটে, ক’ দিন দারুণ বৃষ্টি গেলো। বৃষ্টির ভেতর দু’দিনের চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। তারপর এখন রোজ এমন দুনিয়া আলো করে চাঁদ উঠেছে। এর ভেতর কাজ করা বড়ো অসুবিধে। সে দিন তো মরতে মরতে বেঁচেছে। 

মনিরামপুর পোল পেরিয়ে গাড়ি চন্দ্রঢিপের কাছে এসেছে, দোর ভেঙে চা-এর দুটো পেটি নামিয়ে দিয়েছে, এমন সময় সাঁই সাঁই গুলি। ভাগ্যিস অন্ধকার ছিলো,হলে নিতাই পচা-দু'জনকেই জানটা দিতে হতো। 

গত বছর শেপাইচণ্ডির নুর ইসলামটা গেলো। আহ, শালা একেবারে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিলো। 

-'নেতাই।' 

পচা যেনো অনেক দূর থেকে ডাকলো। 

-'হুঁ বল।' 

-'আচ্ছা, বলাই মাইতির ক’ বিগে ধান জমি?’ 

শালাকে ধরেচে। পটলা মদে পানি মেশায় বলে গাল দিচ্ছিলো এতোক্ষণ, আর এখন দেখো, সবাইয়ের আগে মাতাল হয়েছে। 

-‘তা অনেক।’ 

-'হু, দখিন জলা, কোচোর জলার ধান, শেরামপুরে কাপড়ের দোকান, বাড়ীতে রেশন দোকান, জানাই বাজারে গম কল, শালার অনেক পয়সা, নয়? 

-'তাতে তোর কি?’ সগু বলে। 

-'না, আমার কিছু নয়,আমার শালা আবার কি, আমার জমি নেই, বাঁদা চাকরি নেই, ঘরে মাগ-ছেলে আচে, পেটে ক্ষিদে আচে। বলাই মাইতি অঞ্চল প্রধান হবে। বিজয় ঘড়ুইকে মারাবার জন্যে আমাদের বসিয়ে রেখেছে এখানে। মেরে দিলে টাকা দেবে। আমার আর কি।’ 

কথা বলতে বলতে মাথা ঝুঁকে আসে পচার। নাড়ু, সগু, নিতাই তিনজনই পচাকে দেখে। 

হিম হিম বাতাস আসছে মাঠের দিক থেকে। তার সঙ্গে নতুন ধানের ভিজে, মিষ্টি সোঁদা গন্ধ। 'হু, বলাই মাইতির অনেক পয়সা, সেবার কী আকালটাই না গেলো, আ’র ইদিকে শোরের বাচ্চা, রাত দুপুরে লরি বোঝাই করে করে চাল পাচার ক’ রে লাল হয়ে গেলো। আর এখন দেখো, অঞ্চল প্রধান হবে, পথের-কাঁটা বিজয় ঘড়ুইকে সরিয়ে দেবার জন্যে ঘট ঘট ঘটাং ঘং ঘটাং ঘটাং কী -ঈ-ঈ-চ-চ ঘটাং ঘটাং- মাল পাড়ার গেট পেরিয়ে জ্যোৎস্নার ভেতর দিয়ে পেরুতেই থাকে, পেরুতেই থাকে। 

সগু নাড়ুকে জড়িয়ে গেলো। নিতাই সগুকে টেনে ধরেঃ ‘হ্যেই শালা।’ 

কথাগুলো গাড়ির তলায় গুড়িয়ে যায়। 

পচা চুপচাপ চেয়ে আছে। সামনের দিকে বিরাট একটা ময়াল সাপ জ্যোৎস্নার গর্তের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।

শির শির শির শির করে পুকুরের পানি কাঁপে। চাঁদ খান খান হয়ে যায়। গাছ, গাছালির ছায়া মাথা নাড়ায়-পাতা ঝম ঝম করে। হু-উ-উ হুক্কা হুয়া, হুয়া হুয়া-শিয়াল ডেকে ওঠে গোরস্তানের ভেতর থেকে। মাল গাড়ির পেছনের লাল আলো মিলিয়ে যায় এক সময়। 

-'আর একটা পাঁট হলে জমতো।' বোতল তিনটের দিকে তাকিয়ে সগু বলে। নিতাই, পচা কিংবা নাড়ু কোন কথা বলে না। সগু শালাকে এ্যায়সা মার দেবো একদিন। 

নাডু মনে মনে ভাবে। 

নিতাই সিগারেট ধরিয়ে টানে। পচা বলে, 'বসে থাকতে থাকতে শালা একদম থাকে যাচ্ছি, দে তো একটা সিকরেট!’ 

পচা আর নিতাই সিগারেট টানতে থাকে। সগু নাড়ুকে আবার জ্বালাতন করতে গেলে পচা রেগে যায়: 'দ্যাক সগু” এ্যায়সা লাতি মারবো পোঁদে, শালার গাঁড়বাজারি ছুটিয়ে দেবো।’ পচার মাথায় তখন নানান ব্যাপার চলছিলো নিজের কথা, ঘরের কথা, বিজয় ঘড়ুই কি বলাই মাইতি, তার ভেতর-পেটে ঘা হয়ে মাস কয়েক আগে মা'র মৃত্যুর কথাও চলে আসছিলো। আর বাঞ্চোতটা সেই কখন থেকে জ্বালাচ্ছে। 

সগু একবার কটমট করে তাকালো। 

সগুর ঘোড়ার মতো লম্বা মুখ, ঠোঁট দু'টো অস্বাভাবিক মোটা, নাকের ডগাটা ভয়ানক থ্যাবড়া, চোখ দু'টো ছোট উঁচু ঢিবির মতো কপালের কাছাকাছি প্রায়। ওকে দেখলেই কেমন রাগ ধরে। 

বিজয় ঘড়ুই মাঝের গাঁয়ে গেছে মেয়ের বাড়ি, ডাউন লাষ্ট ট্রেনে বাড়ি ফিরবে। ট্রেন এলে জাম তলায় ময়না কাঁটার ঝোঁপের আড়ালে গিয়ে বসবে ওরা। 

পচা পেছন থেকে মাথায় রডের বাড়ি মারবে, বিজয় ঘড়ুই অক করে পড়ে যাবে, তারপর..... 

নিতাই যেনো দেখতে পাচ্ছে ময়না কাঁটার ঝোঁপের নীচে ঘড় ঘড় শব্দ করতে করতে শাদা ধুতি, মেটে রঙের ঘাস লাল হয়ে যাচ্ছে, তার ওপর জ্যোৎস্না পড়ে চকচকে ঝিলিক দিচ্ছে। 

বুকের ভেতর থর থর করে। 

-'নাডু?’ 

-‘উ!’ 

-'তোদের কারখানা খুলবে বলে মনে হয়?’ 

-"কি জানি শালা।’ 

পচা দুরে রেল লাইনের ওপারে জমাট গাছ-পালার আকাশ ছোঁয়া কালচে-দেওয়াল, এক ফোঁটা স্টেশন, তার পাশে ডানা গুটিয়ে উবু হয়ে বসে থাকা শুকুনের মতো সিনেমা হল—এই সব দেখতে থাকে। 

সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে আনে মাঠের ওপরে-সারা মাঠ জুড়ে সবুজ সোনালী ধান গাছ একটু নুয়ে জ্যোৎস্না পিঠে নিয়ে যেনো ছেলেকে দুধ দিচ্ছে। সগু এখন সটান শুয়ে প'ড়ে হাঁটুর ওপর পা তুলে নাচাতে নাচাতে গুন গুন করছে: ‘কে। তুমি আমারে ডাকো, অলকে লুকায়ে থাকো....' 

নাড়ু জগডুমুর গাছের নিচে ছর ছর ছর ছর পেচ্ছাব করছে। 

পচা কান কাড়া করলো, ‘গাড়ি আসছে।’ 

-'আরে না, নাড়ু শালার মুতের আওয়াজ।’ 

সগু গান থামিয়ে গুঙিয়ে ওঠে। 

-'উহু, ডাউন লাষ্ট ট্রেন।' 

কথাটা শোনবার সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসে সগু। নিতাই ড্যাগরাটা হাতে তুলে নিলো। নাড়ু পেচ্ছাব করতে করতে ভাবছিলো, সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে শালা কোথাও যদি চলে যেতে পারতুম। 

সে-ও তাড়াতাড়ি চলে এলো, 'আসচে’ -প্রায় চাপা ফিস ফিস করে বলে। 

দলটা জামতলায় নেমে গিয়ে ময়না কাঁটার ঝোঁপের আড়ালে ব’সে স্টেশনের দিকে চেয়ে থাকে। 

পচা বিড় বিড় করে 'শালা বলাই মাইতি....’ 

-'বিজয় ঘড়ুই লোক কিন্তু ভালো।’ নাডু গুন গুন করে। 

-'লে লে, ভালো ভালো মন্দ বুজি না, বলাই মাইতি টাকা দেবে, মেরে দেবো, ব্যাস। ভালো দুনিয়ায় কুন শালা নেই, বুজলি?’ –স ঘড় ঘড় করে। 

‘তুই শালাকেই খুন করতে ইচ্ছা করচে' এখন-পচা মনে মনে ভাবে। 

নিতাই কিভাবে বোঝা যায় না ড্যাগার দিয়ে মাটি খোঁচাচ্ছে। 

ট্রেনের শব্দ এখন স্পষ্ট হয়েছে। বারুই পাড়া স্টেশন ছাড়িয়ে আসছে গাড়িটা। একটু পরেই চন্দ্রঢিপ পেরিয়ে মাল পাড়ার রেলগেট, তারপরই ঝাঁঝাঁ করে একেবারে বেগমপুর স্টেশনে এসে দাঁড়াবে। 

কী চান্নি। যেনো দুধে আলতা ঢেলে দিচ্ছে কেউ, আর ধান কি গো। সারা মাঠ জুড়ে যেনো বান ডেকেচে, খালি শোঁ শোঁ শোঁ শোঁ শব্দ আর মিষ্টি সোঁদা খোশবো পাক খেয়ে মাথার ভেতর ঢুকে যায়। 

হুইসিল বাজাতে বাজাতে ট্রেনটা এগিয়ে যাচ্ছে। কামরায় কামারায় জোনাকির মতো আলো। নাড়ুর মনে হয়, বুকের ওপর দিয়ে চাকাগুলো ব’সে ব’সে যাচ্ছে। সগু চোয়াল শক্ত করে চেয়ে আছে সামনের দিকে। ঘোড়ার মতো মুখটা আরো লম্বা দেখাচ্ছে। 

পচা নিতাইকে কি যেনো বললো। 

জ্যোৎস্নার ওপর দিয়ে হিম ঝরছে। 

আল ঝাঁপিয়ে পড়া ধান গাছ পায়ে পায়ে জড়িয়ে যায়। ভেতরে ভেতরে কর্মী ইঁদুর খুট খুট সড় সড় আপন কাজ করে যাচ্ছে। আকাশে অজস্র তারার খই ফুটে আছে। বাওনদের বিধবা মেয়ের মেচেতা-পড়া, ফর্সা মুখের মতো গোল চাঁদ আর আশ্বিনের বাতাস, পায়ের নীচে শিশির, বকুল ফুলের মতো নরম স্পর্শে ভিজিয়ে দিচ্ছে। 

দূরে সিনেমা হল ঝক ঝক করছে। রিঁ রিঁ রিঁ রিঁ ঝিঁ ঝিঁ করছে, ক্রু ক্রু ক্রু উচ্‌ চিংড়ে, দূরে হু-উ-উ শিয়ালের ডাক। 

মাথা ঝুঁকিয়ে, কাঁধ ভেঙে তারা চারজন ফসল ভরা মাঠের ভেতর দিয়ে ফিরে যাচ্ছে। বিজয় ঘড়ুই মেয়ের বাড়ী থেকে ফেরেনি। 

নিতাই ভাবে, দুদিনের দুটো ট্রিপই গুবলেট হলে। আর চাঁদটা শালা ক’ দিন ধরে হারামীপনা করছে। 

রাত্রিকাল দীর্ঘতর হতে থাকে। তাঁতি পাড়ার বারোয়ারী তলা থেকে জ্যোৎস্না কাঁপিয়ে ঢাকের আওয়াজ আসতে থাকে, হ্যাজাকের আলোয় অন্নপূর্ণার চোখ আঁকতে আঁকতে বুড়ো মহেশ্বর পাল নিজের চোখেই জল এনে ফেলে। জ্যোৎস্নায়, শিশিরে ধান পাকতে থাকে। মাটি থেকে, ধানের গুচ্ছ থেকে, জ্যোৎস্নার গা থেকে গন্ধ এসে চারজনকে জড়িয়ে জড়িয়ে ধরে, তবু সগু পা হড়কে পচার গায়ে পড়ে গেলে পচা ভীষণ রেগে চড়াৎ করে সগুর গালে চড় মারে। সগু ঘুরে আলের ওপর পড়ে গিয়ে হঠাৎ হাউ হাউ করে উঠলো : ‘আমাকে মেরে ফেল আল্লার কসম, তোরা আমাকে এখানে খুন করে রেকে যা, আর বাঁচতে ভাল্লাগেনা, আমাকে মেরে ফেল পচা, তোর পায়ে পড়ি, আমায়...' 

ওরা তিনজন থমকে দাঁড়িয়ে যায়, সগুকে দেখে। ভেউ ভেউ করে, কাঁদতে থাকা সগুকে ভারী বিশ্রী দেখাচ্ছে। চাঁদের দিকে মুখ তুলে অবিকল একটা ঘোড়া চেঁচাচ্ছে যেনো। তবু পচা, নিতাই কিংবা নাড়ু কেউ কোন কথা বলতে পারে না। সমস্ত মাঠটা ওদের বুকের ভেতর ঢুকে যেতে থাকে। 



লেখক পরিচিতি
কায়েস আহমেদ বিভাগোত্তর বাংলাদেশের শক্তিশালী কথাশিল্পী। তাঁর জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৫ মার্চ; পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার শ্রীরামপুর থানার বড়তাজপুর গ্রামে। দেশভাগ ও পিতার চাকরিবদলের সূত্রে তাঁর পরিবার ঢাকায় আগমন করে এবং বসবাস আরম্ভ করে। কায়েস আহমেদ ১৯৬৪ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯৬৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন; অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলা বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু অনার্স শেষবর্ষে‌ থাকা অবস্থায় তাঁর পড়ায় ছেদ পড়ে।

কলেজে আই.এ পড়ার সময় তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় ‘পূর্বদেশ’-এ। দৈনিক ‘গণকন্ঠ’ ও ‘সংবাদ’-এ তিনি সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেছেন। তবে কায়েস আহমেদের আজীবন পেশা ছিল শিক্ষকতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে বাংলার শিক্ষক ছিলেন। বিয়ে করেন ১৯৮৩ সালে। একমাত্র পুত্রের নাম অনীক আহমেদ। ১৯৯০ সালে তিনি হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। কায়েস আহমেদ ১৪ জুন, ১৯৯২ সালে আত্মহত্যা করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ

  1. কায়েস আহমেদের লেখা আমি প্রথম পড়ি কলেজে উঠে, তিনি তখন বছরদুয়েক হয় মারা গেছেন। পড়ে থমকে গেছিলাম, কী অপূর্ব! ওঁর একটা ছোটগল্প আছে জেলেপাড়া নিয়ে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত মনে হয় এমন। কিন্তু এই গল্পটি পড়বার সময় মনে হলো, পড়লাম নাকি ফিল্ম নোয়ার দেখলাম।

    উত্তরমুছুন
  2. কতদিন পর গল্পটা আবার পড়লাম। আবার শিউরে উঠলাম। এমন একজন লেখক আত্মহত্যা করেছেন -- ভাবতেই খারাপ লাগে।

    উত্তরমুছুন
  3. কি ঠাস বুনোট গল্পের। ৪জনের বনের ভিতরে অপেক্ষার মুহূর্তগুলি অনুভূতিতে ভরপুর - নৈরাশ্য, তিক্ততা, আর উদবেগ। এমন নিরুক্ত মানসিক আবহের অংকন আর দেখিনি। কিন্তু কোথাও অথিকথন হয়নি, প্রকৃতি বর্ণনা, চিন্তাশ্রোতে ভাবাবেগ, কোথাও একটুও বাহুল্য নেই, সরাসরি পাঠকে বলেও দেওয়া হয়নি, বৃত্তান্তের গুণে ফুটে ওঠে।
    একজন নতুন মহান লেখকের সন্ধান পেলাম, অনেক ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন