-উঁহু!
-তাহলে? করবেটা কি?
-গরম ভীষণ! দম আটকে আসছে!
-আপনি একটু চুপ করবেন? সেই কখন থেকে একই কথা বলেই যাচ্ছেন, ‘দম আটকে আসছে...দম আটকে আসছে... গরম লাগছে গরম লাগছে!’ ধুর বাড়া!
-উনারে ঠাপায়ে লাভ নাই ভাইজান! এট্টু পর আপনারও ওরাম গরম গরম লাগবেনে!
-কিহ্? আমি ওনার মতো?
-নিজেরে কি হরিদাস পাল মনে করেন? শুরুর থেকে একই কথা বারবার ঘুরায় ফিরায় জিগাইতেছেন, ‘...আমাদের কি মেরে ফেলবে?’ আরে চুদিরভাই! মউত থাকলে মরবি, না থাকলে ক্ষেইচা দৌড়! নাইলে যারা নিয়া যাইতেছে তাগরে মাইরা ফেলবি চামে! এতো প্যাঁকপ্যাঁক করস ক্যা?
-সহমত! আমি আপনার কথায় সমর্থন দিলাম! এই সাইয়োডা বেশিই প্যাঁকপ্যাঁক করে! এই জন্য ভদ্রলোক আমার পছন্দ না। আর এরা হচ্ছে শিক্ষিত বিচিপাকা মাল কিন্তু খোড়ল ভরা ভয়!
-হে হে! আমার কলাম ভাল্লাগতিছে! অনেকদিন পর বাইরে বের হলাম! খাঁচার মধ্যি থাকতি থাকতি ব্রেন্টটা কিরাম জানি আতার মতন হয়ে গেইলো, ল্যাদা ল্যাদা! তুইলে নেয়ার উছিলায় অন্তত দুনিয়ার হাওয়া বাতাস খাওয়া যাচ্ছে!
-সাব্বাস বাঘের বাচ্চা! দেখছেন কি মাল? আপনের মতো ‘...আমাদের কি মেরে ফেলবে... মেরে ফেলবে’ কিসিমের না, সাইয়ো!
-হিসসস! আস্তে! এতো গেঁজায়ো না! চোদন দেবেনে!
-ইসসস! চান্স পালি নোড়লি কামড়ায় ধরবানি!
-পিসাব লাগছে! করবো কি?
-মুইতে দেও! তোমার জন্যে তো আর ফাস্টক্লাস মোতাখানা খুঁজে দেবে না। যা করার এহানেই করতি হবে!
-উঁহু! এটা করবেন না ম্যাভাই! মাখামাখি হয়ে যাবে!
-তালি মোতপো কুহানে?
-উনার মুখের মধ্যে ঝেড়ে দেন! হে হে!
-ইহ! নুনু চুষে দেয় যদি?
-হি হি!
-আরে ভাই এইসব কি বলেন?
-নতুন মাল আপনি ভাইজান, তাই এতো নোখ্তা! কয়েক মাস গেলি ঠিক হয়ে যাবে! কিন্তু কপাল খারাপ আপনিও বিধবা হলেন আর দেশে রঙিন শাড়ি ওঠলো!!
-মানে? এর মানে কি?
-আপনিও খাঁচায় আসলেন আর সেদিনই খাঁচা ধইরে নিয়ে যাচ্ছে! শুরুর দিকি আসলি সিজেন করা তক্তা হয়ে যাতেন!
-কিন্তু আমি মোতপো কুথায়?
-আরে বাড়া মুইতে দিতি কলাম না?
-দিলাম তালি?
-শিস দেবো মুরুব্বী?
-হে হে!
-হি হি হি!
-নুনু দেখা যায় না কাকা এমন অন্ধকার!
-চুপ শালা!
-তা দেখপা কেমনে? নুনু কি রড লাইট? ইরাম আন্ধারে দেখপা কেমনে?
-এইসব কি বলছেন আপনারা?
-এহ্! আইছেন সাহেব লোক! বাবা সাহেব আপনি চুপ থাহেন! দোয়া কালাম মুখস্ত থাকলি তাই পড়েন!
-হেই! খানকির পুত! বুড়োর বাড়া! খালি মোতে! তোর পিসাব গাড়ায় আইসে আমার পোঙ্গা ভিজায় দিছে।
-হি হি!
-হে হে! ভালোই তো, শুইকা দেখেন!
-এ কেমন বেইন্সাফি কথাবার্তা? শুঁকে দেখবো ক্যা? তুই শোঁক!
-কাকা কতদিন আমরা এই গাড়িতে? দুই বচ্ছর হবে?
-ধুর! তিনদিন! খালি ঘুল্লি ঘুল্লি ঘুল্লি...!
-ড্রাইভার কি মানুষ নাকি ভূত?
-নির্ঘাত ভূত! নালি বসে থাকতি থাকতি পোঙ্গায় রক্ত জমে যাবার কথা!
-হি হি! ভালো বলছেন! জ্ঞান আছে আপনার পোঙ্গা বিষয়ে! বড় হলি ভাঁড়ছিটির মাস্টার হতেন তাই না?
-তা হবো কোন দুঃখে? মালের ব্যবসা করতাম!
-খিদে লাগিছে ভাই!
-আল্লা আল্লা করেন! মর্জি হলি খাবার ছুঁড়ে দেবে!
-উঁহু! আসেন সকলে দোয়া ইউনুস পড়ি! যেই দোয়া পড়ে নবী ইউনুস মাছের পেটের থেকে খালাস পেয়েছিলেন! আমরাও তেমন মহা বিপদে! একটা লোহার গাড়ির মধ্যে বন্দি!
-ভালো প্রস্তাব! কিন্তু ডাঙায় কি এই দোয়া কাজ করবে জনাব?
-এ শালা মানুষ নাকি ফান্টুস?
-হোল টিপা দেন, ঠিক হয়ে যাবে!
-ইসসস! মুখখারাপ করে না সোনা!
-খাবেন?
-হুট্!
-বাড়ি যাবো... আমি বাড়ি যাবো!
-আহারে! কান্দে না ভাই!
-বাড়ি ফিরতেছিলাম, মধ্য পথ থেকে তুলে নিয়ে আসলো; তারপর আর মনে নাই!
-কবে?
-সেই যে কবে তাও মনে নাই!
-আমার মনে আছে! কিন্তু আমার যে মামলা সেই মামলায় আমি আসি নাই!
-তাইলে?
-আহা হা... বললাম না, আসেন জিকির করি। দোয়া পড়ি।
-এহ্! আমাদের পক্ষে আপ্নে পড়েন!
-তা কেমনে হয়? যদি আমি একা মুক্তি পেয়ে যাই? সেটা কি ঠিক হবে?
-মোটেই না! তাইলে ওয়েট করেন। সবাই এক হোক। ঐক্য প্রয়োজন!
-আমার আবার পিসাব পাচ্ছে!
-আর কতো লিটার বাপ?
-এতো ঘুরানোর দরকার কি? গুলি করে দিলেই পারে!
-সরকারের তেল না মেরে এরা গুলি মারে না।
-সাইরেন সাইরেন চারিদিকে সাইরেন...!
-হুট! পাগলা ক্ষেপছে!
-হিসসস! উঁহু! আমি খেপি নাই! কান পেতে দেখেন টের পাবেন না! পেট গুলাবে তবু বলতে পারেবন না, আপনার হাগা পাচ্ছে! বুঝলেন?
-আমাকে বোঝান দাদাভাই!
-এ মাল তো ম্যালা প্যাঁকপ্যাঁক?
-পুরো! নতুন তো! আমদানি! সিজনের আগেই রফতানি হয়ে যাচ্ছে! হো হো হো!
-কান পাতেন, দেখতে পাবেন, লেফট রাইট লেফট... লেফট রাইট লেফট! তারপর একটা বিরাট পাদ! মানে তোপধ্বনি! তারপর বিউগলের মতো এক মাগীর কান্না! উফফফ! নেয়া যাচ্ছে না! ফাঁপা কনডমের মতো জনগণ ন্যালব্যালে! এরচেয়ে শিম্পাঞ্জি ভালো।
-বেশি হয়ে যাচ্ছে! হিসসস!
-ইয়েস স্যর! প্যান্টি ভিজিয়ে ফেলেছি!
-ওডা তোমার আইটেম না!
-ওম শান্তি! চুপ করো গো বাবা!
-উঁহু! সময় নেই! আরেকটুস্...!
-আপনি কে?
-কেউ না। তোর মতো কেউ... ঘেউ ঘেউ ঘেউ!
-ওরে সব দেখি উপরে উঠে যাচ্ছে! মালের শিশিতে এক ফোঁটা ঢালো গো দয়াল চান্দ!
-আমাকে বলুন আপনি! আমি শুনবো, আমি শুনতে চাই!
-সকল জীবেই হরি আছেন!
-ইঞ্জিনেও আছে কাকা?
-এই চুপ! সিরিয়াস আলাপ হচ্ছে!
-যিনি দৌড় দিতে বলেন তার ঠোঁটেও আছেন, যিনি দৌড়ান তার চরণেও আছেন, আবার যিনি ঠাস্ শব্দে গুলিটা করে দিলেন পিছন থেকে তার আঙুলেও আছেন হরি?! হে হে হে!
-আপনি কি উন্মাদ?
-অ সোনা তুমি এখনো টের পাও নাই? দুইদিন হয়ে গেলো গাড়িতে ঝাঁকা খাতি খাতি টের পাওনাই কারা যাচ্ছে, কাগের সাথে যাচ্ছ তুমি?
-আরে ধুর!
-ক্ষেপে লাভ নেই! পালাতে পারলে পালাও! নৈলে বাবার নাম নাও!
-কোন বাবা?
-ধুর বাড়া এ-তো মুর্খ!
-উঁহু! প্লাস্টিক!
-হি হি!
-হা হা!
-হো হো হো!
-খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক!
-তামাক খেতে খেতে আইসি কেটে গেলো মাথার, তবু বিপ্লব এলো না!
-বিপ্লবটা আবার কে?
-ওনার কাজিন মনে হয়!
-উঁহু! শালা কমিউনিস্ট নির্ঘাত!
-তোর বাপ আর তুই সমান গান্ডু, বুঝলি?
-কে যে কাকে মটকাচ্ছে বুঝতেছি না বাবারা!
-চুতিয়ার দেশে গাঁজাটা মুক্ত করে দেয়া উচিৎ কি বলেন?
-হিসসস!
গাড়ি থামে। লোহার কপাট খুলে টর্চের ভারী আলো ফেলা হয় কন্টেনারের মধ্যে। সবার চোখ ঝলসে যায়। একজন সিপাহী বলে ওঠে, ‘ এই তুমি নামো। ’ লোকটা ভয়ে হামাগুড়ি দিয়ে নেমে আসে। তার গোয়ায় লাথি মেরে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গাড়ির কপাট লাগিয়ে দেয়া হয়। আবার গাড়ি চলতে থাকে।
-বলেছিলাম না ঘাপলা আছে?
-টের পাচ্ছ?
-ওকে কি মেরে ফেলেছে?
-গুলির শব্দ তো পাই নি!
-বাড়া গুলিতেই কি খালি মারে? কতো ব্যবস্থা আছে!
-হিসস! বেশি কথা না! আসেন দোয়া পড়ি!
-উঁহু! আমারে নামানোর সময় আমি কামড়ায় ধরবো নোড়লি! যা থাকে কপালে-
-হুট! পাগলামি করবি না।
-হিসু পাচ্ছে!
-তা চ্যাট এতো বলার কি আছে? পারমিশন নেচ্ছেন? সারা রাস্তা তো মুত্তিই আছেন? খালি প্যাঁকপ্যাঁক!
-খিদে লেগেছে বিষম! এরা কি আর খাবার দেবে না?
-উঁহু! গুদে লাথি দিচ্ছে দেখছেন না?
-হুম্ম!
-এ জীবনে কিছুই পেলাম না ঐ লাথি ছাড়া! কোথায় যাচ্ছিলাম আর এখন কোথায় যাচ্ছি টের পাচ্ছি না!
-রাষ্ট্রবিহীন পুন্নিমায় ডুবতে যাচ্ছেন মামু! খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক!
-ভয় লাগ গো! বাড়িতে বলে আসতে পারলাম না! মেয়েটার ফাইনাল এক্সাম...!
-গুলির শব্দ কি শুনতে পেয়েছেন কেউ?
-কই?
-হয় নি তো!
-তাহলে?
-আমিও শুনিনি।
-ধুর বাড়া!
গাড়ি আবার থামে। আবার ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে লোহার কপাট খুলে যায়। একটা ভারী আলো এসে ঢুকে পড়ে কন্টেনারের মধ্যে। একজনকে নির্দেশ করা হয়। তিনি বেরিয়ে আসেন। নামতেই তার গোয়ায় লাথি মেরে রাস্তার ঢাল থেকে নিচু জমিতে ফেলে দেয়া হয়। তারপর লোহার দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্ধকার আঠালো হয়ে যায়। গাড়ি চলে।
-কি বুঝলেন?
-এক দুই তিন করে সবাইকে নামতে হবে!
-পোঙ্গায় সিল মেরে দিচ্ছে বুটের!
-ফরেনসিক রিপোর্টে আমাদের সকলের গোয়ায় একটি সিঙ্গেল বুটের চিহ্ন পাওয়া যাবে?
-হি হি!
-বিষয়টা কি?
-বোঝা যাচ্ছে না।
-গভীর ষড়যন্ত্র!
-হ্যাঁ! আসেন দোয়া পড়ি! আমরা সবাই গাড়ির পেটে বন্দি!
-উঁহু...পুরো দেশটাই।
-হরি কি হরির গোয়ায় লাথি মারছেন! কি বলেন কাকা?
-ছি ছি এভাবে বলবেন না।
-প্লান! কুৎসিত কোন মতলব এঁটেছে।
-এইজন্যেই তো আমোদ করছি। কাইজে কইরে লাভ আছে? নল ওগের হাতে আর নুনু আপনার হাতে! নলে গুলি আছে নুনুতে গুলি নাই! আসেন গান গাই!
-নাচলে হয় না?
-ইস্! জঘন্য।
-বাড়ি যাবো... বাড়ি যাবো... দোহাই লাগে বাড়ি পাঠায় দেন।
-কান্দে না ভাই! মায়া লাগে! কান্দে না!
-বাড়ি গিয়ে ঘুমাবো... ভাত খাবো! বাড়ি যাবো! আমার বাচ্চা আমার বাচ্চারে দেখবো।
-হেঁটে হেঁটে যেও সোনা। একটু পরেই গোয়ায় লাথি মেরে জমিনে নামিয়ে দেবে!
-আহা! এম্নে বলেন কেন?
-তো কেমনে বলবো সোনা?
-হাপ্ ! আর একটা কথা কবি না তুই! চুপ মাদারচোদ! ভং দেখাও?
-শান্তি শান্তি শান্তি!
-কিন্তু কোথায় ছেড়ে দিচ্ছে আমাদের? আমরা তো জানি না।
-জেনেও লাভ নেই।
-কেন?
-তুমি ভোদাই নাকি ভোদাই সেজে আছো বাপ?
-হে হে হে!
-খাঁটি চোদনা!!
গাড়ি আবার থামে। আবার ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে লোহার কপাট খুলে যায়। একটা ভারী আলো এসে ঢুকে পড়ে কন্টেনারের মধ্যে। একজনকে নির্দেশ করা হয়। তিনি বেরিয়ে আসেন। নামতেই তার গোয়ায় লাথি মেরে রাস্তার ঢাল থেকে নিচু জমিতে ফেলে দেয়া হয়। তারপর লোহার দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্ধকার আঠালো হয়ে যায়। গাড়ি চলে।
-আহা লোকটা এবার ইচ্ছে মতো হিসু করতে পারবে।
-হ্যাঁ! চিন্তা নেই! জমিন ভরে মুতবে।
-চোখে দেখতে পায় না খুব একটা ভালো।
-আহারে তাহলে হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
-তুমি কান্দো ক্যা?
-উনার জন্য মায়া লাগতিছে।
-কান্দে না ভাই!
-ইসস! এম্নে বইলো না, বুক কাঁপে।
-বউটা আরেকটা বিয়া করলে ভালো করবে আমি তো শ্যাষ!
-কি বলেন হাবিজাবি?
-সত্য!
-আমিও তাই চাই। ফ্যামিলির কাছে লাশ না দিক! না জানুক আমি কই!
-বিচার হইলো না আফসোস!
-হে হে...!
-হাসেন ক্যা?
-বিচার! শুনলেই হাসি পায়।
-ধরা খাইছেন ক্যা?
-ফাউ!
-ফুসসস!
-এমন করেন ক্যান?
-ফাউ!
-ভয় লাগতেছে ভাইসাব! ভীষণ ভয় লাগতেছে! আপনাদের ছেড়ে নেমে যেতে হবে! তারপর কি হবে?
-আপেনেই তো খালাস পাবার জন্যে দোয়া ইউনুস পড়তে ব্যস্ত হইলেন! এখন ভয় পান কেন?
-বুঝি নাই! আমি আপনাদের ফেলে যাবো না।
-কাইন্দের না মুরুব্বী!
-ইসস! গু র গোন্দ! ইয়াক!! হাগছেন তা বলবেন না?
-তাজা?
-হুম! গরম গরম!
-হাত মুছে ফেলেন!
-ভয়ে হাগছে, ভয়ে!
-হ।
গাড়ি আবার থামে। আবার ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে লোহার কপাট খুলে যায়। একটা ভারী আলো এসে ঢুকে পড়ে কন্টেনারের মধ্যে। একজনকে নির্দেশ করা হয়। তিনি বেরিয়ে আসেন। নামতেই তার গোয়ায় লাথি মারতে যাবে সিপাহীটি ঠিক তখনই লোকটা সিপাহীর হোল চেপে ধরে কঠিন শক্ত হাতে। মুহূর্তেই ভ্যাবাচ্যাকা লেগে যায়। অন্য সিপাহী এগিয়ে আসে।এবং আক্রান্ত সিপাহীটি অণ্ডকোষ ছাড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়।ধ্বস্তাধস্তি চলে। কন্টেনারের ভেতরে থাকা লোকদের কয়েক সেকেন্ড লাগে ব্যাপারটা বুঝতে। তারপর তারা দ্রুত বেরিয়ে এসে চারদিকে পালায়। পেছনে সিপাহীদের গাড়ি থেকে একজন অফিসার বেরিয়ে গুলি করে দেয় হোল চেপে ধরে থাকা লোকটার মাথায়। ঘিলুসহ বুলেট বেরিয়ে কন্টেনার ভ্যানের চাকা লিক করে দেয়।
-মরে গেছে স্যার!
-হেড কোয়াটারে খবর পাঠাও।
-অন্যরা সব পালিয়েছে স্যার!
-বাঁচা গেছে। আর ভাল্লাগছিলো না। ক্লান্তিকর!
-আমাদের একজন গুরুতর আহত! বিচি মনে হয় ছিঁড়ে গেছে।
-এ্যাম্বুলেন্স ডাকো। প্রয়োজনে হেলিকাপ্টার পাঠাতে বল!
-স্যার ভ্যানটাকে জ্বালিয়ে দেই?
-যা ইচ্ছা করো! আরো কয়েক রাউন্ড ফাঁকা আওয়াজ করো!
-থানায় ফোন দাও! জলদি! আলো ফুটবে কিছুক্ষণের মধ্যে!
-স্যার!
নিউজ চ্যানেল গুলোর খবর -
...ভোররাতে একটি কনটেইনার ভ্যান ডাকাতির সময় নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা সেখানে পৌঁছালে মুখোমুখি গোলাগুলিতে একজন ডাকাত মারা যায়। ডাকাতদের ছোড়া পেট্রল বোমায় ভ্যানটি জ্বলে যায়।নিহত একজন ডাকাতের পরিচয় জানা যায় নি।সিপাহীদের দুজন আহত এর মধ্যে একজন গুরুতর! তাকে হেলিকাপ্টার যোগে রাজধানীতে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে।
তার পরের দিন -
একটা খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ায়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় একদল লোককে দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে লোক গুলো কিছুটা অপ্রকৃতস্থ।তাদের কেউ কেউ বলছে, ‘বাড়ি যাবো’, ‘এই যায়গার নাম কি?’ , ‘...এইখান থেকে খুলনা/ নারায়ণগঞ্জ/ রংপুর/ মাদারীপুর/ গোপালগঞ্জ/ সিলেট/ শ্যামনগর/ আশাশুনি ইত্যাদি স্থানে যাবার পথ কি?’, ‘হিসু পাচ্ছে খুব!’, ‘আমাদেরকে কি মেরে ফেলা হয়েছে?’ স্থানীয় সাংবাদিক এবং কলেজ শিক্ষকদের ধারণা, এরা হয়তো কোন পাগলাগারদ থেকে পালিয়েছে।
দুজনের সংলাপ-
-আপনার প্লানটা ভালো ছিল। উপর থেকে প্রশংসা আসছে।
-ধন্যবাদ। গেম এখনো শেষ হয়নি।
-হুম! এখন কি করবেন?
-জাল টেনে ওঠাবো।
-কেমন?
-দেখুন কি করি!
-ওকে।
-এ মাস ধরে চলুক এটা?
-হ্যাঁ! ভালো আইটেম!
-ধন্যবাদ!
-পুরস্কার পেয়ে যাবেন সময় মতো!
-ধন্যবাদ!
-মাথায় রাখবেন, জনগণকে ব্যস্ত রাখতে হবে! ভয় অথবা উব্দেগ কিংবা কৌতূহল যে কোন কিছু দিয়েই হোক! মাথা গুলো ব্যস্ত রাখতে হবে।
-চিন্তা নেবেন না।পরশু দেখবেন অন্য জিনিস! তারপরের দিন আরো অন্য জিনিস।
শহরে, গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়া একটি প্রচারণা -
‘একদল লোক পাগল সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।এরা মূলত বাচ্চা এবং কিশোরী পাচারকারী। ’
ক্রমশ নিউজটা ছড়াতে থাকে। এবং এর পরেরদিন এরকম লক্ষণের একজনকে ধরে কোন এক বাজারে বেদম ধোলাই দেয়া হয়। একই ঘটনা অন্য এলাকায়ও ঘটে, সেখানে সন্দেহভাজন একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। লোকজন সেই নিহত লাশের উপর পা তুলে ছবি তোলে। এই ঘটনা আরও কয়েকদিন চলে। বিভিন্ন জায়গায় লোকেরা পিটিয়ে মারতে থাকে শিশু ও নারী পাচারকারী মনে করে অচেনা লোকদের! সেই লাশ নিয়ে জনতা উল্লাস করতে থাকে। উল্লাসের ছবি পাওয়া যায় সামাজিক মাধ্যমে! কোথাও কোথাও থানায় দেয়া হয় পেটানোর পর।
মাইকিং:
...ভাইসব ভাইসব, গুজবে কান দেবেন না... গুজবে কান দেবেন না! সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সম্প্রতি গুজবে কান দিয়ে হুজুকে যাদেরকে শিশু ও কিশোরী পাচারকারী হিসেবে পিটিয়ে মারা হচ্ছে তারা খাঁটি নিরীহ পাগল! বিনা বিচারে গুজবে কান দিয়ে সন্দেহবশত কাউকে পিটিয়ে মারা কিংবা হেনস্থা করা যাবে না। কাউকে সন্দেহ হলে নিকটস্থ থানায় খবর দিন! পুলিশ আপনার বন্ধু এবং তারা জনগণের পাশেই আছে।
ফলে:
জনমনে বিভ্রম হয় এরকম যে প্রথমত,‘খাঁটি নিরীহ পাগল’ জিনিসটা কি? তারমানে ভেজাল ভয়ঙ্কর পাগলও ঘুরে বেড়ায়? দ্বিতীয়ত, ‘পুলিশ আপনাদের বন্ধু এবং তারা জনগণের পাশেই আছে। ’ কিন্তু পুলিশ বন্ধু হতে যাবে কোন দুঃখে? পুলিশ তো পুলিশ, শত্রুও না, ভাইবেরাদারও না; অন্তত এতকাল তাদের রচিত আচরণ তা বলে না! আর তারা তো জনগনেই পাশেই থাকে, মানে সকল থানা- ফাঁড়ি লোকালয়ে! তারা জনহীন দূরে যাবে কি করতে? পাশেই তো থাকবে! ফলে বিভ্রমের চিন্তায় খাঁটি-ভেজাল বন্ধু- শত্রু টাইপ পরিহাস মঞ্চস্থ হয়।
দুজনের সংলাপ:
-ব্যাপারটা দারুণ খেয়েছে।
-জি!
-আপনার প্রশংসা হচ্ছে খুব!
-জি আচ্ছা!
-আপনার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী উপরের কয়েকজন!
-ভাগ্যবান আমি।
-এবার কি করবেন?
-এখনো শেষ হয় নি! জালটানা প্রায় শেষের দিকে। মাছগুলো জমা হবে!
-মানে?
-দেখুন কি করি!
সেই রাত্রের ঘটনার পর একটা মস্ত কাঁঠাল বাগানের এক অতিকায় কাঁঠাল গাছে দুজন মানুষ বাসা বেঁধেছে! তাদের সংলাপ:
-কাকা, কাঁঠাল খেতে খেতে এখন কাঁঠালের গন্ধ শুঁকলে বমি পায়! হাগু হিসু সব কাঁঠালগন্ধী!
-উপায় নাই! কি করবেন! নিচে বিপদ, তাও তো কাঁঠাল গাছ ছিল বলে রক্ষে!
-তা ঠিক! কাঁঠাল তো জীব, কাঁঠালে কি হরি আছে?
-ইয়ার্কি মারবে না!
-সিরিয়াসলি!
-এখন করবেন কি সেটা ভাবেন!
-হরি বাঁচাবেন না আমাদেরকে?
-পথ তো আমাদেরই খুঁজতে হবে! নিচের দুনিয়ার খবর তো জানি না কিছুই!
-হুম! হরি কে জিজ্ঞাস করলে হয় না? ধরুন ধ্যানে বসে পড়লেন কাঁঠাল গাছে বসেই?
-আচ্ছা আপনি কি ভগবানে বিশ্বাস রাখেন না?
-কাকা, আমার লাইন তো আলাদা!
-দয়াল লাইন?
-উঁহু!
-যিশু?
-উঁহু!
-অ! নাস্তিক?
-উঁহু!
-তাহলে?
-খেলা দেখা!
-বুজলাম না!
-এখন নামবেন কি করে সেটা বলেন? বাড়ি যাবো!
-নেমেই বা কি হবে? এখানেই তো ভালো আছি! খাচ্ছি-দাচ্ছি! রাতে নেমে জল পিপাসা মেটাচ্ছি! গাছে পাখপাখালি আসে। খারাপ না!
-কাঁঠালের সিজন শেষ হলে কি খাবেন? কাঁঠাল পাতা?
-তা অবশ্য!
-তাহলে কাঁঠাল থাকতে থাকতে ভাবেন কি করবেন!
-গ্রামে নেমে গিয়ে বলা যেতে পারে আমরা পথহারা দরিদ্র পথিক আমাদের ফেরার পথ বলে দাও!
-আপনাকে তুলে এনেছিল কোন দুঃখে কাকা?
-জানি না! বাজার করে ফিরছিলাম হঠাৎ তুলে নিয়ে গেলো। বাজারটাও পৌঁছে দিতে দিলো না!
-হুম! ফেরার জন্য তো টাকা চাই! গাড়ি ভাড়া পাবো কই?
-ভিক্ষে করতে করতেও চলে যাওয়া যায় না?
-আপনি আছেন কোন জামানায় প্রভু?
-তা বটে! ভুল হয়ে গেছে!
-এক কাজ করলে কেমন হয়? ধরুন নিচ দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে তার ঘাড়ের উপর লাফিয়ে পরে তাকে কুপোকাত করে টাকা লুটে নেয়া যায়?
-অন্যায়!
-ধুর বাড়া! বাঁচবেন কি করে? সিটকি মেরে?
-তা বটে!
-গ্রামে নামলে নির্ঘাত থানায় দেবে গ্রামের লোকেরা!
-তাহলে আপনিই বলুন?
-জানি না!
-বেশ!
-বেশ? ধুর বাড়া!
-এক কাজ করা যায়, আমরা দুটো কাঁঠাল নিয়ে রাস্তায় কারো কাছে বিক্রি করলাম! সেই টাকায় বাড়ি ফেরা?
-দুটো কাঁঠালের টাকায় বাড়ি ফেরা যাবে না কাকা! এক কাজ করুণ। দুটো দুটো চারটে কাঁঠাল আগে বিক্রি করি। তবে বাজারে না! রাস্তায় হেঁটে ফেরা মানুষের কাছে!
-ঠিক!
-কয়েকটা কাঁঠাল বেচতে পারলে টাকা এসে যাবে ফেরার!
-বেশ!
-চলুন! প্রথম দান মেরে আসি!
তারা দুটো করে কাঁঠাল নিয়ে মাটিতে নামে।বিক্রির জন্যে নিজেদের খুব লুকিয়ে রাস্তার দিকে নিয়ে যায়। পরেরদিন খবর কাগজে খবর পাওয়া যাবে :
‘দুজন কাঁঠাল চোরকে পিটিয়ে মেরেছে গ্রামের লোকেরা।বহুদিন ধরে তারা এইদুজনকে খুঁজছিল।এবছর কাঁঠালের সিজনে কাঁঠাল সহ ধরা পরায় ক্রুদ্ধ জনতা পিটিয়ে মেরে ফেলে তাদের। গ্রামের লোকেরা জানায় যে, এদের যন্ত্রণায় কেউ গাছের ফল রাখতে পারতো না। বিভিন্ন সময় বিচিত্র ভেক ধরে এরা চুরি করে নিয়ে যেতো গাছের ফল। কাকতাড়ুয়া দিয়েও এদের তাড়ানো যায় নি!’
দুজনের সংলাপ:
-অভিনন্দন!
-ধন্যবাদ!
-খেলা শেষ?
-প্রায়!
-আপনাকে প্রমোশন দেয়া হয়েছে! ভালো খেলেছেন! অভিনন্দন!
-ধন্যবাদ! আমি ভালো খেলোয়াড়!
-এখন কি করবেন?
-যাদের তুলে নিয়ে সাইজ করে ছেড়েছিলেন ওদের একটা বড় অংশ গণধোলাইয়ে মারা পড়েছে। বেঁচে আছে যারা তাদেরকে সারাদেশের থানা গুলো দিয়ে টেনে আনুন।
-কি করবেন?
-কাজ আছে! ওটা আমার ফর্মুলা!
-সেটা বুঝতেই পারছি! আপনি কঠিন জিনিস! উপর থেকে আপনার প্রশংসা হচ্ছে! বোঝা যাচ্ছে পৃথিবীর স্বৈর ইতিহাসে আপনাদের মতো মাথা গুলোর গুরুত্ব!
-আপনিও কম নন!
-ধন্যবাদ! তবে আপনি আরো ঠাণ্ডা মাথার ষড়যন্ত্রকারী।
-কিন্তু ওদের দিয়ে কি করবেন যারা বেঁচে আছে?
-ওদেরকে আবার একই প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনুন রাজধানীতে! একটা অন্ধকার কন্টেইনারে করে। তারপর ওদেরকে উদ্ধারের একটা নাটকে ফেলে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবেন। দেখবেন কাজে দেবে! ফোকটে আমাদের বাহিনীর সুনাম হবে! মূলত ওদেরকে ফিরিয়ে দেবার পর, ভয় এবং ভয়ের জীবাণু ছড়াবে জ্যামিতিক হারে। ওদের জবান থেকে কিংবা নীরবতা থেকে ছড়াবে! যেটা আমাদের কাজ। ক্ষমতায় টিকে থাকতে যেটার ভীষণ প্রয়োজন!
-আপনি সত্যিই ভয়ঙ্কর।
1 মন্তব্যসমূহ
অশ্লীল। বাজে লেখক
উত্তরমুছুন