পাঠক ও লেখক: শামীম আজাদ


  

 

 

পাঠক ও লেখক, লেখক ও পাঠক - দু’য়ের মধ্যে পারস্পরিক একটা সম্পর্ক থাকতে হয়। অনেকটা দাম্পত্যের মত। যৌথ খামারের মত। যথাযথ রসায়ন না হলে ফলাফল পানসে রক্তহীন হয়ে যায়।এ আমি যখন পাঠক তখন বোধ করি। এ বোধ আমার নির্বাচিত লেখকদের জন্য তোলাই থাকে। আমি তাদের লেখার অভ্যাসগুলো জানি। তারাও জানেন তাদের পাঠককে কি দেবেন।

গল্পের মধ্যে গল্প যতখানি তার চেয়ে কোন অংশেই কম নয় সে গল্পের আত্মাখানি। আর সেই আত্মা শুধু মাত্র একটি কম্পমান কাহিনী থাকলেই নির্মিত হয়না।গল্পের ঘটনাগুলির অভিঘাত, চরিত্রদের মানসিক মাত্রিকতা ও ভাষা ব্যবহারের কৌশল সব মিলিয়ে গল্পের আত্মার অধিষ্ঠান হয় পাঠকের মন মাঝারে।

আমি যখন পাঠক, তখন আমি লেখকের গল্পের মেরুদন্ডটির গায়ে বিস্তর ঝোলাঝুলি করি।এখানে সেখানে উঁকি দিই কিন্তু সবই ঐ শক্ত মেরুদন্ড ধরে।

আমার কাছে গল্পপাঠ সংসারের বা জীবনের ভাসমান ঠান্ডায় এক লাইফ বোট।

সে বোটে উঠার জন্য কিছু মহড়া লাগে, কিছু সময় লাগে, কিছু অগ্রিম পঠন পাঠন লাগে- যা কিনা আমরা প্রস্তুতি বলতে পারি। আহারের সময় গোগ্রাসে গেলা যায়, স্বাদ পাওয়া যায় না বা উপভোগ করা যায় না। অনেকটা সেরকমই। নিজেকে প্রস্তুত করে উপাসনার মত তৈরি হয়ে পাঠ করতে বসলে, সময় নিয়ে তা গ্রহণ করলে ধারনটা হয় ভাল। মগজের কোষে কোষে সে হাওয়াটা লাগে। হয় আনন্দ ভ্রমণ।

আর আমি যখন গল্প লিখি তখন ঐ গল্পমঞ্চটির উপর আমার সমগ্র জীবন নিয়ে আছড়ে পড়ি। মরিয়া হয়ে আমার হাড় খুলে খুলে ধরি। বাপরে! সে যে কি এক তাড়না বলতে পারবো না। মনে হয় পাঠককে আমার দেহাভ্যন্তরে টেনে এনে বসাই। তারপর সে আমি হয়ে যাক। আমার চোখ দিয়ে আমার সব দেখা দেখুক, শোনা শুনুক, জিহ্বা দিয়ে স্বাদ নিক- সে আমার পঞ্চ ইন্দ্রিয় হয়ে যাক। তবেই আমি আমার সবটা দিতে পারলাম।

তবে ‘সবটা’র মধ্যেও আবার কিছু ব্যাপার থাকে। তা গল্পের উপর নির্ভর করে। আমার এক গল্প থেকে আরেক গল্প আলাদা। যে গল্প যে তাড়না থেকে লিখেছি তা আমার পাঠক তা পেলেন কিনা সে উদবেগ থেকেই যায়। ধরা যাক আমার গল্পে আমি একটা জায়গায় হঠাত করেই স্বরগ্রামে ধ্বনি তুলেছি এবং তা মজা বা বিনোদনের কারণ হবে বলে ভেবেছি । এখানে এটাই আমার তাড়না। আমি তা অর্জন করতে পেরেছি কিনা তা জানতে আমি উদ্গ্রীব হয়ে থাকি।


শামীম আজাদ- ২৮.১.২১

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ