ছিয়াত্তর বছর ধরে জীবনের অনেক ঝড়ঝাপটা সামলে শেষে যে চাউমিন গলায় আটকে কোহিনুর মণ্ডল মারা যাবে সে কথা রসিকপুরের কেউ ভাবতেও পারেনি!
তার বড়জামাই লালু শ্বশুরবাড়ি এসে চাউমিনের গুণ গাইত। শুনে শুনে আর সামলাতে পারেনি কোহিনুর। কোনওদিন খায়নি তো সে। তাই সাধ হয়েছিল। জামাই বড়তলা মোড় থেকে চাউমিন আনিয়েও দিয়েছিল। শুকনো জিনিস। বুড়োর গলায় আটকে যায়। শরীর খারাপ ছিল, শ্লেষ্মা কাশিতে অস্থির। খাওয়া বাকি থাকতে থাকতেই মারা যায় সে।
মেয়ে-জামাই ঘাবড়ে গিয়েছিল। পুলিশ কেস না হয়ে যায়! লোক জানাজানি হয়েছিল বটে তবে ঠিক চাউমিনের দোষেই যে কোহিনুর গেল তেমন কথা কেউ বলেনি। ফলে জামাই ঠিক করে ফেলে শ্বশুরের জাতিগুষ্টিকে শ্রাদ্ধে চাউমিন খাওয়াবে। বলেছিল, ‘নতুন একটা জিনিস করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেব। তাছাড়া সস্তাও পড়বে।’
লালুর বাড়ি হলদিয়া টাউনে। রোডের ওপর একটা দোকান। সেখানে সব চায়না জিনিস বিক্রি হয়। ওই বিকিয়েই বাপের একতলার ওপরে দোতলা হাঁকিয়েছে সে।
কোহিনুরের বড় মেয়ে ছবিকে দেখে যাওয়ার পর লালুর বাড়ি থেকে না করে দিয়েছিল। কোহিনুরের দুই ছেলে, দুই মেয়ে। কেউই স্কুলের মুখ দেখেনি। ছবি আর তার বোন কবিতা সারাদিন পাড়ায় টো টো করে বেড়ায়। বড় ছেলে শংকর আর ছোট ভোলা সারাবছর ইটভাটায় খাটে। জমি বলতে ভিটেটুকুই। তবে ছবিকে লালুর খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছিল।
লালুদের পান বরোজ আছে। তার বাবা লোককে পান খাওয়ায় আর নিজেও খায়। এতদিন বরোজ নেড়েচেড়েই চলেছে। কিন্তু লালু সেখানে খাটবে না। মাধ্যমিকে ফেল মেরে কী করবে ভেবে না পেয়ে কোন বন্ধুর পরামর্শে কলকাতা থেকে সস্তার চাইনিজ জিনিস এনে ব্যবসা শুরু করেছিল। ব্যাগ, জ্যাকেট, জুতো, ঘড়ি, টর্চ, এমারজেন্সি লাইট, ক্যালকুলেটর, সাউন্ড বক্স, নরম পুতুল, ব্যাটারির খেলনা, টুনি বাল্বের তোড়া, ফানুস। কী নেই সে দোকানে! একবার উঁকি দিলে কিছু না কিনে বেরোতে মন চায় না।
ব্যবসা জমে যাওয়ার পর বাবাকে দোকানে বসিয়ে পাশে আর একটা চায়না মোবাইলের দোকানও খুলে ফেলেছে লালু। এখন সে জামা না গুঁজে বেরোয় না। হাতে গাবদা ফোন, চোখে রঙিন চশমা।
লালু প্রথম প্রথম শ্বশুরবাড়ি আসত দু-একটা জিনিস ব্যাগে পুরে নিয়ে। তখন কিছু খয়রাত গিয়েছে। যদিও তা সে পুষিয়ে নিয়েছে পরে। শ্বশুরবাড়ির গ্রামে তার জিনিস বেচে। লালু চিনির দানা হয়ে আসে। পিঁপড়ের অভাব হয় না। শালাদের সে বোঝাত, ‘জান, চিনারা যা সব মাল তৈরি করছে না! সস্তায় বাজারে ছাড়ছে আর অন্য কোম্পানিগুলো সব ফেল মেরে যাচ্ছে। ওদের বুদ্ধির কাছে আমরা দাঁড়াতে পারব না। পাখা, টিভি, ক্যামেরা, কম্পিউটার বানাচ্ছে। নকল চাঁদ অবধি বানিয়ে ফেলেছে। আমরা পারব?’
কথাটা শুনে শংকর হাঁ হয়ে গিয়ে বলেছিল, ‘এক আকাশে এখন থেকে দুটো চাঁদ দেখা যাবে?’
‘না না, সে শুধু ওদের আকাশে। সেখানে ঝুলিয়ে দেবে।’
ভোলা জানতে চাইল, ‘সেই চাঁদও কি সস্তায় বিক্রি করবে?’
‘বলা যায় না, পরে করতেও পারে।’
শংকর বলল, ‘এবার ওরা সূর্যও বানাবে না কি?’
লালু গম্ভীর গলায় বলল, ‘সেরকম কোনও খবর নেই এখনও। বানাতেও পারে। ওদের অসাধ্য কিচ্ছু নেই।’
ছোট শালার বউ রত্না বলে, ‘তবে এই যে শুনছিলাম ওরা নাকি চিনা চাল, চিনা ডিম বাজারে ছেড়েছে, লোকে খাচ্ছে আর পটাপট মরে যাচ্ছে!’
লালু উড়িয়ে দিল কথাটা। ‘হ্যাঃ, মরে যাবে কেন? খাবার জিনিস খেয়ে কেউ মরে? চিনা কোম্পানির সামনে যারা টিকতে পারছে না তারাই ওসব রটাচ্ছে। ওরা আছে বলে আমরা ডাল-ভাতে বেঁচে আছি। এই তো, কলকাতায় গিয়ে দ্যাখো না একবার। বাগড়ি মার্কেট, ক্যানিং স্ট্রিট, ফ্যান্সি মার্কেট, ধর্মতলা— সব চিনা জিনিসে ভর্তি। চিনা মাল আমেরিকা অবধি ছেয়ে ফেলেছে, ইন্ডিয়া তো কোন ছার!’
এতসব নামে বড় শালার বউ কুমকুম হাঁফিয়ে উঠে বলল, ‘তবে তোমার ওসব জিনিস তাতাড়ি খারাপ হয়ে যায়। আজকেরটা কাল যায় না।’
জবাব লালুর মুখেই ছিল। ‘দামে কম তাই জিনিসের আয়ু কম। ওসব তো চিরকেলে নয়। সস্তায় পাবে, ইউজ করবে, খারাপ হয়ে গেলে ফেলে দিয়ে আবার নতুন কিনবে। এই হল নিয়ম, বুঝলে!’
জামাইয়ের কথায় অবাক হয়ে গিয়েছিল সবাই। তাই সে যখন শ্রাদ্ধে চাউমিন খাওয়ানোর কথা বলল তখন শংকর আর ভোলা মেনেই নিল। তেমন তেমন কিছু করতে পারলে বাপের শ্রাদ্ধ লোকে সারা জীবন মনে রেখে দেবে। হোক তাহলে।
আজ কোহিনুর মণ্ডলের সেই শ্রাদ্ধ।
নেমন্তন্ন দুপুরে। পাড়ায় মণ্ডলদের চল্লিশ ঘর জ্ঞাতি। সকলের হাঁড়ি বন্ধ। কোহিনুরের বাড়িতে খাবে সবাই। এখানকার নিয়মই এই। তাছাড়াও অন্যরা আছে। বলাই মণ্ডল, ক্ষেত্রমোহন জানা, পঞ্চানন বেরা, নিরঞ্জন মাইতিরা পাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠ এবং মাতব্বর। শ্রাদ্ধ হোক বা মুখেভাত, এদের পাত পড়ে সেখানে। কোহিনুরও ছিল এই দলেরই। তার আত্মার শান্তিতে এদের তো যেতেই হবে।
বলাই মণ্ডল মাথার তেলোয় চাট্টি সর্ষের তেল চাপড়ে পুকুরে গিয়ে দুটো ডুব দিয়ে এসেছিল। তার পর ধুতির ওপর ফতুয়া চাপিয়ে, চুলে চিরুনি চালিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
কোহিনুরের বাড়ির রাস্তায় এসে দেখল বাকিরা দাঁড়িয়ে। ক্ষেত্র বলল, ‘এত দেরি করলে কেন? চলো, পা চালাও।’
বলাই মাথা ঝুলিয়ে হাঁটছিল। সেভাবেই বলল, ‘শেষবেলায় কোহিনুর ওই লোভটা না করলেই পারত। সাত সাতখানা মেয়ের পর ছেলে হয়েছিল। তাই নাম রেখেছিল কোহিনুর। শেষটায় পরিবারটা একটা রত্ন হারাল।’
নিরঞ্জন বলল, ‘শুনছি তো তার জামাই চাউমিন খাওয়াবে। তোমরা কেউ আগে খেয়েছ?’
পঞ্চানন বলল, ‘আমার নাতনি অর্চনা রথের মেলায় গিয়ে ওই খেয়ে এসেছিল। এখন তো মেলায় ওইসবই বিক্রি হয়। চাউমিন আছে, আরও কীসব— এগ রোল, মোমো, চিলি চিকেন।’ তার পর যেন একটা আক্ষেপের ঢোঁক গিলে বলল, ‘খাবে তো খাবে, বাইরেই সাবাড় করে আসে সব। এক-আধ দিন কেউ নিয়েও তো আসে না। জানব কেমন করে তার স্বাদ কী।’
পঞ্চাননকে থামিয়ে বলাই বলল, ‘সে তো আমাদের বড়তলা মোড়েও পাওয়া যায়। দেখেছি তো। তাই বলে শ্রাদ্ধে চাউমিন? কেউ কখনও শুনেছে না দেখেছে!’
পঞ্চানন থামেনি। বলল, ‘এখন আর কালীপুজোয় পুকুরে প্রদীপ ভাসাতে দ্যাখো? গাছে গাছে টুনি বালবের ঝাড় ঝুলায়। জোনাকিরা ভয়ে গাছ ছেড়ে পালিয়েছে। গায়ে-মাথায় কেউ বাইট সাবান মাখে কেউ? শ্যাম্পু ঘষে।’
ক্ষেত্রমোহন ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ল। ‘এখন তো ট্যাঙ্ক বসিয়ে দিয়েছে খাবার জলের জন্যে। তা সে জল ছেলেমেয়েরা খাচ্ছে আবার চানও করছে। বলে, পুকুরে নামলে গা নাকি খসখসে হয়ে যায়। তারপর দ্যাখো, মাটির রাস্তা ঢালাই হয়ে টোটো-অটো একেবারে দোরগোড়ায় চলে আসছে। ঘরে ঘরে টিভি ঢুকেছে। মাটির বাড়ি ভেঙে পাকা দেওয়ালের বাড়ি উঠছে। বেঁচে থাকলে আরও কত দেখতে হবে।’
কথায় কথায় শ্রাদ্ধবাড়ির কাছে এসে গেল সবাই। রাস্তায় লোকজনের জমায়েত। কতগুলো বাচ্চা এলোমেলো দৌড়চ্ছে আর হাত মুঠো করে মুখের সামনে নিয়ে চেঁচাচ্ছে, ‘হ্যালো হ্যালো, চাউমিন হয়ে গেছে, আজ চাউমিন খাওয়া হচ্ছে।’
বুড়োদের দেখতে পেয়ে কোহিনুরের বড় ছেলে এগিয়ে এল। শংকরের মাথা ন্যাড়া। গায়ে নতুন ধুতি আর গেঞ্জি। বাপের কাজ সেরে উঠেছে। ‘জ্যাঠা, তোমরা একটু বসো। পরেরটাতেই ডেকে নিচ্ছি।’
বাইরে একটা চৌকি পাতা। ওরা সেদিকে যেতেই কয়েকজন উঠে জায়গা ছেড়ে দিল। তাদের মধ্যে একজন ভীমা। মিলিটারিতে চাকরি করে। ছুটিতে বাড়ি এসেছে। সে বলাইয়ের সামনে এসে বলল, ‘ও জ্যাঠা, লালুদা তো দেখি চিনাম্যান হয়ে গেছে! চিনা জিনিস বিকোচ্ছে, চিনা খাবার খাওয়াচ্ছে। এমন বলছে যেন সব ওর নিজের।’
বলাই মুখ তুলল। অনেকদিন আগে সে একবার কলকাতায় গিয়েছিল। এক হোটেলে রাঁধুনির জোগাড়ে হয়ে। তখনকার কথা মনে পড়ে গেল তার। বলল, ‘ও অনেকে অমন বলে। আমি যখন কলকাতায় ছিলাম তখন সেখানে খুব গোলমাল। মারামারি খুনোখুনি চলছিল। কারা সব বলছিল, চিনের চ্যারম্যান না কে আছে, সে আমাদেরও কী নাকি হয়। অতশত বুঝিনি। আমার তখন সোষ্টান অবস্থা। প্রাণ ওঁটায় করে পালিয়ে বেঁচেছিলাম।’
ভীমা মাথার ছোট করে ছাঁটা চুলে হাত বুলিয়ে নিল। ‘আমায় সস্তার জিনিসের গল্প শোনাচ্ছিল। তা আমিও শোনালাম। বর্ডারে ছিলাম তো। চিনারা এসে সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল। আমরাও নড়িনি। ওরা খালি হাসে, খালি হাসে। আমরাও হাসি। ওই হাসাহাসিতেই শেষে মিটল ঝামেলা। লালুদা সেসবের খবর রাখে!’
ক্ষেত্রমোহন বলল, ‘আমাদের তখন বয়েস কম, উনিশ-কুড়ি হবে। চিনাদের সাথে যুদ্ধ লেগেছিল। রেডিওর খবরে বলত। খুব নাকি গোলাগুলি চলছে। ওরা নাকি দেশের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল একবারে।’ সে চোখ ফেরাল বলাইয়ের দিকে। ‘মনে আছে তোমার?’
আদিত্য সরকার স্কুলের মাস্টারমশাই। সেও এতক্ষণ দাঁড়িয়েই ছিল। এবার পাশ থেকে বলে উঠল, ‘এখন আর সে যুদ্ধ নেই জ্যাঠা। বদলে গেছে। ওই যে সস্তার কথা বলছে না, ওই হল যুদ্ধ। সে আমাদের দেশের ভেতরেও চলছে। শুধু কি চায়না জিনিস? সস্তায় লোকে যা পাবে তাই নেবে। সবাই লোভে পড়ে শুধু কিনেই চলেছে। কেনাতে পারলেই যুদ্ধে জেতা যাবে। লোভের কী শহর আর কী গ্রাম! এখন আমরা আবার মাঝখানে পড়ে গেছি। কেউ বলছে, চিনা জিনিস কিনো না, আবার কেউ বলছে, না কিনে যাবে কোথায়! কত কত জায়গায় ওসব ঢুকে বসে আছে কে জানে!’
এর মধ্যে লালু ওদের ডাকতে এসেছিল। আদিত্যর কথাগুলো শুনে ভুরু কুঁচকে গিয়েছে তার। এইরকম কিছু লোক আছে যারা অন্যদের ভুল বোঝায়। মোটে সুবিধের নয়।
উঠোনে একটা চাঁদোয়া টাঙানো। তার নীচে কয়েকটা শাড়ি দু’ভাঁজ করে পাতা। বসে পড়ল সকলে। প্রথমে এল কলাপাতা, প্লাস্টিকের গেলাসে জল। বুড়োরা পুরনো নিয়মে কয়েক ফোঁটা করে ছড়িয়ে নিল পাতার ওপর। অ্যালুমিনিয়ামের বালতিতে চাউমিন এসে পড়েছে। হাতা দিয়ে পাতে নামিয়ে দিচ্ছিল একজন। অন্যজন তরকারি।
বলাই সরু সরু ঝোটদড়ির মতো চাউমিনের দিকে তাকিয়ে ছিল। এই খেতে গিয়ে কোহিনুরের প্রাণটা গেছে! তাদের ভাগ্যে কী আছে কে জানে! খেয়ে মানে মানে ঘরে ফিরতে পারলে হয়। তরকারিটা কীসের? হাতে তুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল। ব্যাঙের ছাতা মনে হচ্ছে! কিন্তু সে তো পচা খড়ের গাদায় ফোটে। বলাই ডাক দিল, ‘ও শংকর—’
‘কী জ্যাঠা?
‘এদিকে একটু শুনে যা বাপ।’
শংকর এসে দাঁড়াল। ‘বলো।’
‘চিনারা ব্যাঙের ছাতা জানে? ওখানে ধান চাষ হয়? খড় আছে?’
শংকরের পাশে লালুও এসে দাঁড়িয়েছিল। তবে সে চিন নিয়ে কিছুই জানে না। এড়ানোর জন্য হেসে উঠে বলল, ‘এটা ব্যাঙের ছাতা নয় জ্যাঠা। একে বলে মাশরুম। ও আপনারা জানবেন না, খেয়ে নিন।’
বলাই মণ্ডল দেখল গোটা উঠোন জুড়ে সবার মনোযোগ পাতে। তরকারির সঙ্গে চাউমিন মিশিয়ে দলা পাকিয়ে মুখে পুরতে ব্যস্ত। আগেরটা শেষ হতে না হতেই পরেরটা। ঘাম মোছার সময়টুকুও নেই। কী খাওয়া খাচ্ছে ওরা! ভয় ধরে গেল বলাইয়ের। যদি কারও গলায় আটকে যায়!
পাশে বসা বাচ্চাটা সুড়ুত সুড়ুত টানছিল। হঠাৎ সে পেট ধরে উঠে পড়ল। ‘ও দাদু, পাতাটা একটু খেয়াল রেখো, আমি এখুনি আসছি।’ ছুটে কোথায় চলে গেল ছেলেটা।
নেড়েচেড়ে কিছুটা খেল বলাই। দেখল সঙ্গীসাথীরাও হাত তুলে নিয়েছে।
খাওয়া শেষে মুখ ধুতে যাবে তখন সেই ছেলেটা ফিরে এল। ‘দাদু, আমার পাতাটা?’
‘কোথায় গেছিলি তুই?’
‘পেট কামড়াচ্ছিল। সকালে মা পান্তা দিয়েছিল তো, তাই খেয়ে—।’
‘তা তুই আবার খাবি না কি?’
‘নয় তো কী!’
বলাই বুঝতে পারছে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ছেলেটার পেটে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছিল। তবু সে খাবে। পরের বারের লোক বসছে। এ কোথা থেকে শুরু করবে কে জানে!
উঠোনের একপাশে বালতিতে জল রাখা। সেখানেই দাঁড়িয়ে শংকর। বুড়োদের হাতে একটা করে পান আর বিড়ি দিয়ে হাতজোড় করে বলছে, ‘ঠিক ছিল তো সব?’
শেষের এই ব্যাপারটায় বলাই মণ্ডল আরাম পেল। ভয় পাচ্ছিল, অন্য কিছু না আবার ধরিয়ে দেয়!
নিরঞ্জন আমতা আমতা করে বলল, ‘খেলাম তো, এখন পেটে সইলে হয়!’
শংকরের পাশেই দাঁড়িয়ে লালু। তড়বড়িয়ে বলে উঠল, ‘সে তাহলে আপনাদের পেটের দোষ জ্যাঠা, আমাদের নয়।’
বলাই বলল, ‘ঠিক বলেছ বাবা। সইয়ে নিতে হবে। ও তুমি ভেবো না।’
বাইরে এসে তাদের মধ্যে থেকে পঞ্চানন একটু থমকে গিয়েছিল। তার পর একটা ঢেকুর তুলে হেসে বলল, ‘ব্যাস, এই হয়ে গেল, আর চিন্তা নেই।’
কোহিনুরের বড় মেয়ে ছবিকে দেখে যাওয়ার পর লালুর বাড়ি থেকে না করে দিয়েছিল। কোহিনুরের দুই ছেলে, দুই মেয়ে। কেউই স্কুলের মুখ দেখেনি। ছবি আর তার বোন কবিতা সারাদিন পাড়ায় টো টো করে বেড়ায়। বড় ছেলে শংকর আর ছোট ভোলা সারাবছর ইটভাটায় খাটে। জমি বলতে ভিটেটুকুই। তবে ছবিকে লালুর খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছিল।
লালুদের পান বরোজ আছে। তার বাবা লোককে পান খাওয়ায় আর নিজেও খায়। এতদিন বরোজ নেড়েচেড়েই চলেছে। কিন্তু লালু সেখানে খাটবে না। মাধ্যমিকে ফেল মেরে কী করবে ভেবে না পেয়ে কোন বন্ধুর পরামর্শে কলকাতা থেকে সস্তার চাইনিজ জিনিস এনে ব্যবসা শুরু করেছিল। ব্যাগ, জ্যাকেট, জুতো, ঘড়ি, টর্চ, এমারজেন্সি লাইট, ক্যালকুলেটর, সাউন্ড বক্স, নরম পুতুল, ব্যাটারির খেলনা, টুনি বাল্বের তোড়া, ফানুস। কী নেই সে দোকানে! একবার উঁকি দিলে কিছু না কিনে বেরোতে মন চায় না।
ব্যবসা জমে যাওয়ার পর বাবাকে দোকানে বসিয়ে পাশে আর একটা চায়না মোবাইলের দোকানও খুলে ফেলেছে লালু। এখন সে জামা না গুঁজে বেরোয় না। হাতে গাবদা ফোন, চোখে রঙিন চশমা।
লালু প্রথম প্রথম শ্বশুরবাড়ি আসত দু-একটা জিনিস ব্যাগে পুরে নিয়ে। তখন কিছু খয়রাত গিয়েছে। যদিও তা সে পুষিয়ে নিয়েছে পরে। শ্বশুরবাড়ির গ্রামে তার জিনিস বেচে। লালু চিনির দানা হয়ে আসে। পিঁপড়ের অভাব হয় না। শালাদের সে বোঝাত, ‘জান, চিনারা যা সব মাল তৈরি করছে না! সস্তায় বাজারে ছাড়ছে আর অন্য কোম্পানিগুলো সব ফেল মেরে যাচ্ছে। ওদের বুদ্ধির কাছে আমরা দাঁড়াতে পারব না। পাখা, টিভি, ক্যামেরা, কম্পিউটার বানাচ্ছে। নকল চাঁদ অবধি বানিয়ে ফেলেছে। আমরা পারব?’
কথাটা শুনে শংকর হাঁ হয়ে গিয়ে বলেছিল, ‘এক আকাশে এখন থেকে দুটো চাঁদ দেখা যাবে?’
‘না না, সে শুধু ওদের আকাশে। সেখানে ঝুলিয়ে দেবে।’
ভোলা জানতে চাইল, ‘সেই চাঁদও কি সস্তায় বিক্রি করবে?’
‘বলা যায় না, পরে করতেও পারে।’
শংকর বলল, ‘এবার ওরা সূর্যও বানাবে না কি?’
লালু গম্ভীর গলায় বলল, ‘সেরকম কোনও খবর নেই এখনও। বানাতেও পারে। ওদের অসাধ্য কিচ্ছু নেই।’
ছোট শালার বউ রত্না বলে, ‘তবে এই যে শুনছিলাম ওরা নাকি চিনা চাল, চিনা ডিম বাজারে ছেড়েছে, লোকে খাচ্ছে আর পটাপট মরে যাচ্ছে!’
লালু উড়িয়ে দিল কথাটা। ‘হ্যাঃ, মরে যাবে কেন? খাবার জিনিস খেয়ে কেউ মরে? চিনা কোম্পানির সামনে যারা টিকতে পারছে না তারাই ওসব রটাচ্ছে। ওরা আছে বলে আমরা ডাল-ভাতে বেঁচে আছি। এই তো, কলকাতায় গিয়ে দ্যাখো না একবার। বাগড়ি মার্কেট, ক্যানিং স্ট্রিট, ফ্যান্সি মার্কেট, ধর্মতলা— সব চিনা জিনিসে ভর্তি। চিনা মাল আমেরিকা অবধি ছেয়ে ফেলেছে, ইন্ডিয়া তো কোন ছার!’
এতসব নামে বড় শালার বউ কুমকুম হাঁফিয়ে উঠে বলল, ‘তবে তোমার ওসব জিনিস তাতাড়ি খারাপ হয়ে যায়। আজকেরটা কাল যায় না।’
জবাব লালুর মুখেই ছিল। ‘দামে কম তাই জিনিসের আয়ু কম। ওসব তো চিরকেলে নয়। সস্তায় পাবে, ইউজ করবে, খারাপ হয়ে গেলে ফেলে দিয়ে আবার নতুন কিনবে। এই হল নিয়ম, বুঝলে!’
জামাইয়ের কথায় অবাক হয়ে গিয়েছিল সবাই। তাই সে যখন শ্রাদ্ধে চাউমিন খাওয়ানোর কথা বলল তখন শংকর আর ভোলা মেনেই নিল। তেমন তেমন কিছু করতে পারলে বাপের শ্রাদ্ধ লোকে সারা জীবন মনে রেখে দেবে। হোক তাহলে।
আজ কোহিনুর মণ্ডলের সেই শ্রাদ্ধ।
নেমন্তন্ন দুপুরে। পাড়ায় মণ্ডলদের চল্লিশ ঘর জ্ঞাতি। সকলের হাঁড়ি বন্ধ। কোহিনুরের বাড়িতে খাবে সবাই। এখানকার নিয়মই এই। তাছাড়াও অন্যরা আছে। বলাই মণ্ডল, ক্ষেত্রমোহন জানা, পঞ্চানন বেরা, নিরঞ্জন মাইতিরা পাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠ এবং মাতব্বর। শ্রাদ্ধ হোক বা মুখেভাত, এদের পাত পড়ে সেখানে। কোহিনুরও ছিল এই দলেরই। তার আত্মার শান্তিতে এদের তো যেতেই হবে।
বলাই মণ্ডল মাথার তেলোয় চাট্টি সর্ষের তেল চাপড়ে পুকুরে গিয়ে দুটো ডুব দিয়ে এসেছিল। তার পর ধুতির ওপর ফতুয়া চাপিয়ে, চুলে চিরুনি চালিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
কোহিনুরের বাড়ির রাস্তায় এসে দেখল বাকিরা দাঁড়িয়ে। ক্ষেত্র বলল, ‘এত দেরি করলে কেন? চলো, পা চালাও।’
বলাই মাথা ঝুলিয়ে হাঁটছিল। সেভাবেই বলল, ‘শেষবেলায় কোহিনুর ওই লোভটা না করলেই পারত। সাত সাতখানা মেয়ের পর ছেলে হয়েছিল। তাই নাম রেখেছিল কোহিনুর। শেষটায় পরিবারটা একটা রত্ন হারাল।’
নিরঞ্জন বলল, ‘শুনছি তো তার জামাই চাউমিন খাওয়াবে। তোমরা কেউ আগে খেয়েছ?’
পঞ্চানন বলল, ‘আমার নাতনি অর্চনা রথের মেলায় গিয়ে ওই খেয়ে এসেছিল। এখন তো মেলায় ওইসবই বিক্রি হয়। চাউমিন আছে, আরও কীসব— এগ রোল, মোমো, চিলি চিকেন।’ তার পর যেন একটা আক্ষেপের ঢোঁক গিলে বলল, ‘খাবে তো খাবে, বাইরেই সাবাড় করে আসে সব। এক-আধ দিন কেউ নিয়েও তো আসে না। জানব কেমন করে তার স্বাদ কী।’
পঞ্চাননকে থামিয়ে বলাই বলল, ‘সে তো আমাদের বড়তলা মোড়েও পাওয়া যায়। দেখেছি তো। তাই বলে শ্রাদ্ধে চাউমিন? কেউ কখনও শুনেছে না দেখেছে!’
পঞ্চানন থামেনি। বলল, ‘এখন আর কালীপুজোয় পুকুরে প্রদীপ ভাসাতে দ্যাখো? গাছে গাছে টুনি বালবের ঝাড় ঝুলায়। জোনাকিরা ভয়ে গাছ ছেড়ে পালিয়েছে। গায়ে-মাথায় কেউ বাইট সাবান মাখে কেউ? শ্যাম্পু ঘষে।’
ক্ষেত্রমোহন ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ল। ‘এখন তো ট্যাঙ্ক বসিয়ে দিয়েছে খাবার জলের জন্যে। তা সে জল ছেলেমেয়েরা খাচ্ছে আবার চানও করছে। বলে, পুকুরে নামলে গা নাকি খসখসে হয়ে যায়। তারপর দ্যাখো, মাটির রাস্তা ঢালাই হয়ে টোটো-অটো একেবারে দোরগোড়ায় চলে আসছে। ঘরে ঘরে টিভি ঢুকেছে। মাটির বাড়ি ভেঙে পাকা দেওয়ালের বাড়ি উঠছে। বেঁচে থাকলে আরও কত দেখতে হবে।’
কথায় কথায় শ্রাদ্ধবাড়ির কাছে এসে গেল সবাই। রাস্তায় লোকজনের জমায়েত। কতগুলো বাচ্চা এলোমেলো দৌড়চ্ছে আর হাত মুঠো করে মুখের সামনে নিয়ে চেঁচাচ্ছে, ‘হ্যালো হ্যালো, চাউমিন হয়ে গেছে, আজ চাউমিন খাওয়া হচ্ছে।’
বুড়োদের দেখতে পেয়ে কোহিনুরের বড় ছেলে এগিয়ে এল। শংকরের মাথা ন্যাড়া। গায়ে নতুন ধুতি আর গেঞ্জি। বাপের কাজ সেরে উঠেছে। ‘জ্যাঠা, তোমরা একটু বসো। পরেরটাতেই ডেকে নিচ্ছি।’
বাইরে একটা চৌকি পাতা। ওরা সেদিকে যেতেই কয়েকজন উঠে জায়গা ছেড়ে দিল। তাদের মধ্যে একজন ভীমা। মিলিটারিতে চাকরি করে। ছুটিতে বাড়ি এসেছে। সে বলাইয়ের সামনে এসে বলল, ‘ও জ্যাঠা, লালুদা তো দেখি চিনাম্যান হয়ে গেছে! চিনা জিনিস বিকোচ্ছে, চিনা খাবার খাওয়াচ্ছে। এমন বলছে যেন সব ওর নিজের।’
বলাই মুখ তুলল। অনেকদিন আগে সে একবার কলকাতায় গিয়েছিল। এক হোটেলে রাঁধুনির জোগাড়ে হয়ে। তখনকার কথা মনে পড়ে গেল তার। বলল, ‘ও অনেকে অমন বলে। আমি যখন কলকাতায় ছিলাম তখন সেখানে খুব গোলমাল। মারামারি খুনোখুনি চলছিল। কারা সব বলছিল, চিনের চ্যারম্যান না কে আছে, সে আমাদেরও কী নাকি হয়। অতশত বুঝিনি। আমার তখন সোষ্টান অবস্থা। প্রাণ ওঁটায় করে পালিয়ে বেঁচেছিলাম।’
ভীমা মাথার ছোট করে ছাঁটা চুলে হাত বুলিয়ে নিল। ‘আমায় সস্তার জিনিসের গল্প শোনাচ্ছিল। তা আমিও শোনালাম। বর্ডারে ছিলাম তো। চিনারা এসে সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল। আমরাও নড়িনি। ওরা খালি হাসে, খালি হাসে। আমরাও হাসি। ওই হাসাহাসিতেই শেষে মিটল ঝামেলা। লালুদা সেসবের খবর রাখে!’
ক্ষেত্রমোহন বলল, ‘আমাদের তখন বয়েস কম, উনিশ-কুড়ি হবে। চিনাদের সাথে যুদ্ধ লেগেছিল। রেডিওর খবরে বলত। খুব নাকি গোলাগুলি চলছে। ওরা নাকি দেশের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল একবারে।’ সে চোখ ফেরাল বলাইয়ের দিকে। ‘মনে আছে তোমার?’
আদিত্য সরকার স্কুলের মাস্টারমশাই। সেও এতক্ষণ দাঁড়িয়েই ছিল। এবার পাশ থেকে বলে উঠল, ‘এখন আর সে যুদ্ধ নেই জ্যাঠা। বদলে গেছে। ওই যে সস্তার কথা বলছে না, ওই হল যুদ্ধ। সে আমাদের দেশের ভেতরেও চলছে। শুধু কি চায়না জিনিস? সস্তায় লোকে যা পাবে তাই নেবে। সবাই লোভে পড়ে শুধু কিনেই চলেছে। কেনাতে পারলেই যুদ্ধে জেতা যাবে। লোভের কী শহর আর কী গ্রাম! এখন আমরা আবার মাঝখানে পড়ে গেছি। কেউ বলছে, চিনা জিনিস কিনো না, আবার কেউ বলছে, না কিনে যাবে কোথায়! কত কত জায়গায় ওসব ঢুকে বসে আছে কে জানে!’
এর মধ্যে লালু ওদের ডাকতে এসেছিল। আদিত্যর কথাগুলো শুনে ভুরু কুঁচকে গিয়েছে তার। এইরকম কিছু লোক আছে যারা অন্যদের ভুল বোঝায়। মোটে সুবিধের নয়।
উঠোনে একটা চাঁদোয়া টাঙানো। তার নীচে কয়েকটা শাড়ি দু’ভাঁজ করে পাতা। বসে পড়ল সকলে। প্রথমে এল কলাপাতা, প্লাস্টিকের গেলাসে জল। বুড়োরা পুরনো নিয়মে কয়েক ফোঁটা করে ছড়িয়ে নিল পাতার ওপর। অ্যালুমিনিয়ামের বালতিতে চাউমিন এসে পড়েছে। হাতা দিয়ে পাতে নামিয়ে দিচ্ছিল একজন। অন্যজন তরকারি।
বলাই সরু সরু ঝোটদড়ির মতো চাউমিনের দিকে তাকিয়ে ছিল। এই খেতে গিয়ে কোহিনুরের প্রাণটা গেছে! তাদের ভাগ্যে কী আছে কে জানে! খেয়ে মানে মানে ঘরে ফিরতে পারলে হয়। তরকারিটা কীসের? হাতে তুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল। ব্যাঙের ছাতা মনে হচ্ছে! কিন্তু সে তো পচা খড়ের গাদায় ফোটে। বলাই ডাক দিল, ‘ও শংকর—’
‘কী জ্যাঠা?
‘এদিকে একটু শুনে যা বাপ।’
শংকর এসে দাঁড়াল। ‘বলো।’
‘চিনারা ব্যাঙের ছাতা জানে? ওখানে ধান চাষ হয়? খড় আছে?’
শংকরের পাশে লালুও এসে দাঁড়িয়েছিল। তবে সে চিন নিয়ে কিছুই জানে না। এড়ানোর জন্য হেসে উঠে বলল, ‘এটা ব্যাঙের ছাতা নয় জ্যাঠা। একে বলে মাশরুম। ও আপনারা জানবেন না, খেয়ে নিন।’
বলাই মণ্ডল দেখল গোটা উঠোন জুড়ে সবার মনোযোগ পাতে। তরকারির সঙ্গে চাউমিন মিশিয়ে দলা পাকিয়ে মুখে পুরতে ব্যস্ত। আগেরটা শেষ হতে না হতেই পরেরটা। ঘাম মোছার সময়টুকুও নেই। কী খাওয়া খাচ্ছে ওরা! ভয় ধরে গেল বলাইয়ের। যদি কারও গলায় আটকে যায়!
পাশে বসা বাচ্চাটা সুড়ুত সুড়ুত টানছিল। হঠাৎ সে পেট ধরে উঠে পড়ল। ‘ও দাদু, পাতাটা একটু খেয়াল রেখো, আমি এখুনি আসছি।’ ছুটে কোথায় চলে গেল ছেলেটা।
নেড়েচেড়ে কিছুটা খেল বলাই। দেখল সঙ্গীসাথীরাও হাত তুলে নিয়েছে।
খাওয়া শেষে মুখ ধুতে যাবে তখন সেই ছেলেটা ফিরে এল। ‘দাদু, আমার পাতাটা?’
‘কোথায় গেছিলি তুই?’
‘পেট কামড়াচ্ছিল। সকালে মা পান্তা দিয়েছিল তো, তাই খেয়ে—।’
‘তা তুই আবার খাবি না কি?’
‘নয় তো কী!’
বলাই বুঝতে পারছে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ছেলেটার পেটে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়েছিল। তবু সে খাবে। পরের বারের লোক বসছে। এ কোথা থেকে শুরু করবে কে জানে!
উঠোনের একপাশে বালতিতে জল রাখা। সেখানেই দাঁড়িয়ে শংকর। বুড়োদের হাতে একটা করে পান আর বিড়ি দিয়ে হাতজোড় করে বলছে, ‘ঠিক ছিল তো সব?’
শেষের এই ব্যাপারটায় বলাই মণ্ডল আরাম পেল। ভয় পাচ্ছিল, অন্য কিছু না আবার ধরিয়ে দেয়!
নিরঞ্জন আমতা আমতা করে বলল, ‘খেলাম তো, এখন পেটে সইলে হয়!’
শংকরের পাশেই দাঁড়িয়ে লালু। তড়বড়িয়ে বলে উঠল, ‘সে তাহলে আপনাদের পেটের দোষ জ্যাঠা, আমাদের নয়।’
বলাই বলল, ‘ঠিক বলেছ বাবা। সইয়ে নিতে হবে। ও তুমি ভেবো না।’
বাইরে এসে তাদের মধ্যে থেকে পঞ্চানন একটু থমকে গিয়েছিল। তার পর একটা ঢেকুর তুলে হেসে বলল, ‘ব্যাস, এই হয়ে গেল, আর চিন্তা নেই।’
কথাটা শুনে সকলে হাঁটতে শুরু করল। বাড়ি ফিরতে ফিরতে বাকিদেরও নিশ্চয়ই ঢেকুর উঠে যাবে।
লেখক পরিচিতি:
মৃত্তিকা মাইতি
গল্পকার।
কলকাতায় থাকেন।
6 মন্তব্যসমূহ
উপভোগ্য গল্প, চাউমিনের মতোই।
উত্তরমুছুনইন্টারেস্টিং
উত্তরমুছুনআলগা কৌতুকের মোড়কে পরিবেশন করা ঈষৎ তীক্ষ্ণ কষায়িত বাস্তবধর্মী ইতিকথা। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে পণ্যময় ভুবনগ্রামে চলতি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দেওয়া প্রজন্মের কাহিনি।লেখকের ছোটগল্প লেখার হাতটি বড় মনোরম,আগামীর জন্য আরও প্রত্যাশা রাখাই যায়।
উত্তরমুছুনসত্যিই, মানিয়ে নিতে হবে বৈকি। ২২ শে শ্রাবণে রবিঠাকুরের কথায় বললে,
উত্তরমুছুনআমরা সকলে "চলতি হওয়ার পন্থী"।
বেশ ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনভালো লেগেছে।
উত্তরমুছুন