নাহার মনিকা
গল্পগ্রন্থ ‘কালাশনিকভের গোলাপ’ এবং পত্রপত্রিকায় মূদ্রিত আরো কিছু গল্প পড়ার পর মনে হয়েছে ওয়াসি আহমেদ গল্প বলেন মৃদুস্বরে, কিন্তু স্পষ্ট এক ঘোর পাঠককে গল্পের মধ্যে সম্পৃক্ত করে নেয়। সহজ গদ্যভঙ্গীতে শুরু করে পাঠককে গল্পের গলিতে টেনে নেন, তারপর তাকে এক খাদের সামনে ঠেলে দেন, সেখানে নিমজ্জমান হতে হতে কতগুলো প্রশ্ন নিয়ে পাঠক নিজেরও মুখোমুখি হয়। প্রশ্নগুলো মানুষ, সমাজ কিংবা মানুষের স্বপ্ন নিয়ে।
ওয়াসি আহমেদ মানুষের অন্তর্গত শূণ্যতা, অতৃপ্তি আর অমিমাংশিত স্বপ্নগুলোকে মনযোগ দিয়ে দেখেন। তার দেখা পাঠকের বোধকে আক্রান্ত করে, লেখক খুব আনায়াসে সে বোধটাকে কব্জা করে পাঠকের মাথায় চালান করে দেন।
মানুষকে নিয়ে সমাজ সংসারের গৎবাঁধা প্রত্যাশার বিপরীত স্রোতে এগিয়ে যায় ওয়াসি’র গল্প। সে কারণেই বুঝি তাঁর গল্পের অধিবক্তা হয়ে ওঠে একটি রাইফেল, কিংবা শরীরবিচ্ছিন্ন পা, একটি কাঠের আসবাব, পুলিশ অফিসারের ট্রমা, কিংবা দেশভাগের নিমিত্তে সংসারের মানুষ ভাগ, অথবা একদল খামখেয়ালী শিশু।
ওয়াসি আহমেদের ‘পা’ গল্পটি প্রয়াত কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে নিয়ে। গল্পটির শেষ লাইনে তার নামোল্লেখও আছে।
লেখক অসুস্থ, ক্যান্সারে আক্রান্ত। যখন জানলেন যে তার পা’টি অপারেশন করে ফেলে দিতে হবে, তখন পা’ নিয়ে শ্লেষ, বিদ্রুপ, হাস্যরসাত্মক করে জীবনকে তুচ্ছ অথচ মর্মস্পর্শী করে তুললেন! “ডান পা-টা টেবিলের নিচ থেকে বেস করে হাঁটুর ওপর থেকে হাতে মেপে মেপে একটু একটু করে উঠছি আর বলছি, এখানে? এখানে? ডাক্তার তাকিয়ে আমার দিকে, কিন্তু মুখে রা নেই। এদিকে আমি উঠছি তো উঠছিই। কাঁচা বাজারের দরদাম আর কী! দর বাড়াচ্ছি, কাজ হচ্ছে না। শেষে রাগ করে এক লাফে লাস্ট প্রাইস একেবারে কুঁচকির কাছে এসে বললাম, এখানে? দেখি কী,মুখটা নীরবে হ্যাঁ বলল” (পা)। ব্যবচ্ছেদ করা পা’এর আখ্যান এই গল্প লেখকের জন্য ওয়াসি আহমেদের গভীর বেদনাবোধ, আক্ষেপ আর অসহায়ত্বের প্রকাশ। কৌতুহল হয় এই ভেবে যে লেখক কি এই গল্পের বয়ান স্বয়ং ইলিয়াসের কাছ থেকে শুনেছিলেন? যদি তা না হয়, তাহলে কল্পনার মিশেলে যে গল্প নির্মাণ করেছেন তা সত্যি হয়েও বিমূর্ত রূপ পেয়েছে।
বাস্তবতার সীমানার বাইরে মানুষের মনোজগত এবং তার ভেতরের উন্নত স্বত্তাটিকে বিনির্মাণের নিরন্তর চেষ্টা আছে ওয়াসি’র গল্পে। সমাজের প্রান্তিক নিম্নবিত্তের চরিত্ররা অনামা বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়, যে বিষন্নতা আপাতদৃষ্টিতে মধ্যবিত্ত কিংবা উঁচুতলার মানুষের প্রাপ্য, নায্য বলে বিবেচিত। ওয়াসি আহমেদ তাদেরকে সেই এখতিয়ার দিয়ে দেন। ‘শিশিযাপন’ গল্পের মোনসের যখন বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে মোটের ওপর সুখী জীবনে প্রবেশ করেছে তখনই একদিন সে ইঁদুরের বিষ খেয়ে মরে যেতে চায়। তার চরিত্রেরা অবচেতনে জীবনানন্দএর কবিতার মত ‘মরিবার হলো তার সাধ’ এর উপসর্গে ভোগে! অথবা, সর্বহারার হারাবার কিছু নেই’ এ ভেবে জীবনকে তুড়ি বাজিয়ে দেখায়!
ওয়াসি’র গল্পে বঞ্চিত মানুষের চিন্তার প্রকৃতি কিছুটা আলাদা, চরিত্রগুলো অন্যরকম করে ভাবে। ‘নিরাপদ সন্ত্রাস’ গল্পের পুলিশ অফিসার আলী নেওয়াজ তার ডিউটিতে ডাকসাঁইটে। সে তার নিঃসন্তান স্ত্রীর সংগ্রহে থাকা দুঃখের উপন্যাস পড়ে কাঁদে। পুলিশি হাঙ্গামার সময় তার মাথায় দিনের রোদ ঝামেলা পাকায়, ‘ঝাঁক বেঁধে পোকার মতো মাথায় ঢুকে’ যায়’। ‘ফেলে আসা একটা জ্বলন্ত দুপুর নিভু নিভু হয়েও তার মাথায় জ্বলে’। বস্তি উচ্ছেদের হাঙ্গামায় অন্তঃস্বত্তা নারীর পেটে লাথি চালিয়ে তার অন্তর্গত পীড়নের ভাগ পাঠকের কাছেও পৌঁছে যায়। ফলে, পাঠশেষে বস্তিভাঙ্গা নারীটির জন্য তো বটেই, আত্মঅবসাদের কারণে আলী নেওয়াজের প্রতিও পাঠক কোথাও কোথাও সহৃদয় হতে বাধ্য হয়।
‘চিনেবাদামের খোসা’ গল্পের রিক্সাওয়ালা মনসুর আলী যাত্রীর সঙ্গে বাক বিতন্ডার চরম পর্যায়ে ঘৃণাভরে শুধু ‘মূর্খ’ শব্দটি উচ্চারণ করে। শব্দটি তারপর উড়ে বেড়ায় মানুষের মুখে প্রতিবাদের ভাষা হয়ে। শব্দটি শোনা মাত্রই প্রতিপক্ষ চুপসে যায়। বিদ্রুপের ভাষাটিও সংযত, সিম্বলিক। যা এক পর্যায়ে বহু মানুষের প্রতিবাদের ভাষায় রূপ নেয়। এই প্রতিবাদ মধ্যবিত্ত শিক্ষিতের বিরুদ্ধে শোষিত শ্রেনীর প্রতিবাদ। তার রিক্সাওয়ালা চপেটাঘাতের বদলে কেবল শালীন শব্দে ‘মূর্খ’ বলে গাল দেয় যা উলটো চপেটাঘাতের চেয়েও বেশী শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া হয়ে তার শ্রেনীর মানুষকে প্রভাবিত করে। এভাবেই ওয়াসি আহমেদ প্রতিবাদের স্বপ্ন দেখান। সে স্বপ্ন বাস্তব রূপ পেল কি পেল না তার দায় অবশ্যই লেখকের না। কিন্তু পড়তে পড়তে মনে হয়- বাস্তব রূপ পেতেও তো পারে! মানুষই তো পেরেছে আদি থেকে আজ পর্যন্ত নিজের ভেতরে শুভবোধের অধিষ্ঠান করতে। কিন্তু লেখক শুধু কল্পনা করেই শেষ করে দেন না। শব্দটি বহুব্যবহারে তার উপযোগিতা হারায় কেননা রিক্সাওয়ালার মুখের শব্দ ‘যত্রতত্র যার তার মুখে বাছবিচারহীন প্রয়োগ হতে হতে শব্দটা অর্থব্যঞ্জনাহীন আপদহীন বাদামের খোসার মত পড়ে থাকে। মানে, নানা কররোলে চাপা পড়ে বৈশিষ্টহীন তেজহীন অর্থহীন ফালতু বাদামের খোসার মতোই পায়ে পায়ে চেপ্টে ধুলোবালিতে একাকার হওয়া ছাড়া তার আর উপায় থাকে না’ (চিনাবাদামের খোসা)।
‘খেলাধূলা’ গল্পের শিশুরা ফ্ল্যাটবাড়িতে খেলে, গল্পের রহস্য ঘন হয়ে ওঠে যখন তাদের খেলা আর নির্দোষ লুকোচুরি থাকে না। একেকদিন একেকজনকে গুম করে ফেলার মত নিষ্ঠুর খেলায় মেতে ওঠে তারা। তাদের প্রাপ্তমনস্কতা দেখে মনে হয় যে এই খেলাটি শিশুরা নিজে থেকে খেলছে না, কেউ তাদেরকে দিয়ে খেলিয়ে নিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কে সেই কি ক্রীড়নক? প্রকৃতিবিচ্ছিন্নতা? না কি পর্যাপ্ত খেলার জায়গা, পার্ক বা মাঠের অভাব, কিংবা ফ্ল্যাটবাড়ির রুদ্ধশ্বাস জীবন? যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ রুখে দিচ্ছে। স্বাভাবিকতার বিরুদ্ধে বেড়ে উঠতে দিয়ে আমরাই কি শিশুদেরকে নিষ্ঠুর অপরাধপ্রবণ করে তুলছি না! ওয়াসি আহমেদ যে নির্দোষ ভাবনা থেকেই গল্পটি নির্মাণ করে থাকুন না কেন, পাঠ শেষে পাঠকের মস্তিস্কে একটি ঝাঁকি দিয়ে যায় এই গল্প।
‘কালাশনিকভের গোলাপ’ গল্পের প্রধান চরিত্র এ কে ৪৭ রাইফেল। এর সংস্পর্শে এসে মানুষের চরিত্র আমূল বদলে যায়। যাদুর দৈত্যের মত যখন যার কব্জায় থাকে সে ই নিজেকে পরাক্রমশালি ভাবে। গল্পটি যেভাবে শুরু হয় তাতে পাঠক একটি হতে পারতো সমাজবিল্পবের রোমাঞ্চ আবহের কল্পনা করে নিতে পারে। ‘বন্ধুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস’ এই আপ্তবাক্যকে একই সঙ্গে বহাল ও খারিজ করতে লেখক চলে যান খোদ রাইফেল এর আবিস্কর্তার কাছে। যিনি কবিতাও রচনা করেন। কিন্তু রাইফেল আবিস্কারের পর মানুষের যুদ্ধ ও ধ্বংসের প্রতিহিংসা দেখে বৃদ্ধবয়সে এসে অনুশোচনায় ভোগেন, এই ভেবে যে তিনি কেন কোন কৃষিযন্ত্র আবিস্কার করলেন না, যা দিয়ে সমস্ত পৃথিবীর খাবারের অভাব ঘোচানো যেত! অবশ্য সে মনোবেদনার প্রকাশ গোলাপ নিয়ে একটি কবিতা মাথায় এলে চাপা পড়ে যায়। অনেকটা যেন- রোম যখন পুড়ছিল তখন নিরো’র বাঁশী বাজানোর মত কবিতার নিমগ্নতায় ফিরে যান কালাশনিকভ।
ভারতবর্ষ ভাগের ক্ষত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো জটিল হয়েছে। দেশ মানে তো শুধু ভুখন্ড মাত্র নয়। দেশ মানে মানুষও। দেশভাগের আখ্যান বলতে গিয়ে তাই সংসারের মানুষ ভাগের ইতিবৃত্তও বলেন ওয়াসি আহমেদ। ‘অন্তরঙ্গ দূরত্ব’এ পুরানা বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সাজ্জাদ জানে তমালের বৌ সন্তানদের নিয়ে ওপারে থাকে, তার ব্যাংকে চাকুরে ডিভোর্সী বোনের স্বামী থাকে তার কন্যাকে নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে। তমালের মুখ থেকে তাদের ভাগ হয়ে ভেঙ্গে পড়ার কাহিনী শোনে সাজ্জাদ। স্ত্রী সন্তানের সান্নিধ্য পাওয়ার প্রশ্নে তমাল বলে- ‘আমিই যাই। কী করব, প্রথমদিকে ভাবতাম এক পা এখানে, আরেক পা ওখানে, আর এখন ভাবি পা এখানে, মুন্ডুটা ওখানে’। যে বন্ধুর বাড়িতে সাজ্জাদের স্মৃতির ভান্ডার সে বাড়ি এখন শুধু মাথাগোঁজার ঠাই। “এসবের ফাঁকে চোখে পড়ল বাঁপাশের দেয়ালে মরা গাঁদা ফুলের মালা ঝোলানো ছবিটা। তমালের বড়দা। একনজর তাকিয়ে ধরতে অসুবিধা হলো না। কী যেন নাম, বয়সে তমালের অন্তত দশ বছরের বড়, তমালের অনুপস্থিতিতে আমি এলে সমাদর করে এ-ঘরেই বসাতেন। ঢাকাইয়া না বলে শুদ্ধ বাংলায় জানতে চাইতেন, ‘কী খাবে বলো।’ মনে পড়ছে, নাম ছিল হিজল, তমাল সমাদ্দারের বড়দা হিজল সমাদ্দার। কাঠের ওই দুই পাট দরজার গায়ে নামটা কত দেখেছি” (অন্তরঙ্গ দূরত্ব)। ফাঁদে আটকে পড়া ইঁদুরের মত জীবনযাপন করা মানুষগুলো না চাইলেও ভাগ হয়ে যায়। আর সাজ্জাদ চাইলেও তারুণ্যের বন্ধুর কাছে ফিরতে পারে না, অথচ বন্ধু সান্নিধ্য তার ভেতরে বিদ্যুচ্চমকের মত প্রশান্তি তৈরী করে, কিন্তু তাদেরকে ভাগ হওয়া রাস্তার দু’দিকে চলে যেতে হয়।
‘একটি প্রত্যাবর্তনের রূপরেখা’- ফেরা বা ফিরতে চাওয়ার গল্প। বাবার কর্মসূত্রে মফস্বলে শৈশব কাটানো আফজাল সেখানে ফিরে তার খেলার সঙ্গী ধনাকে খুঁজে বের করে। সঙ্গীর সঙ্গে তার শ্রেনীবৈষম্য বিস্তর হলেও ছোটবেলায় তা ধর্তব্যের মধ্যে ছিল না, তবুও গরীব ধনাকে তখন বাড়তি খাতির করা হয়নি। আফজাল শৈশবের স্মৃতিতে ফিরতে চায়, তা যাচাই করতে চায় ধনার কাছ থেকে। কিন্তু ধনা তাকে ধরা দেয় না, যদিও বা দেয় তা অনেক সন্দিগ্ধ হয়ে। ধনার মধ্যে কি শৈশবের ফ্যান্টাসি কাজ করে! সে তো বড়লোক আফজালকে বন্ধুজ্ঞান করে প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি! শ্রেনীবৈষম্যের পাঠ নিতে তাকে বিদ্যা অর্জনও করতে হয়নি, স্বভাবসিদ্ধ সতর্ক, সন্তর্পণ সে। শৈশবের শহর ও স্মৃতি নিয়ে আফজাল ও ধনা একে অন্যের কোর্টে বল ছুঁড়ে দেয়ার দোটানায় পাঠকও শামিল হয়ে পড়ি।
‘উদ্ধার-পুনরুদ্ধার’ গল্পে স্ত্রী আত্মীয়ের কাছে বেড়াতে গেলে একাকীত্ব উপভোগ করতে রয়ে যাওয়া আবিদ খবরের কাগজের ধর্ষণ সংবাদে আটকে যায়। তহুরা নামের গার্মেন্টস কর্মী মেয়েটি বাড়ি ফিরছিল, গ্রামের ষ্টেশনে নেমে বৃষ্টিতে আটকা পড়ে। তার মোবাইলের চার্জও শেষ হয়ে যায়। সাহায্য করতে এগিয়ে আসা লোকটি তাকে ধর্ষণ করে, আবার ধর্ষণ থেকে উদ্ধার করতে আসা পরবর্তী লোকটিও ধর্ষক। তারপর... ‘রাতভর (উদ্ধারকারী বলাৎকারকারী হতে থাকে। একের পর এক প্রাকৃতিক নিয়মে, উদ্ধারকারী ও বলাৎকারকারী, যদিও প্রথমত ও মূলত উদ্ধারকারী, পরে বলাৎ...’। গোলক ধাঁধার মত গণধর্ষণের ঘটনাকে কোন অংকের ফর্মুলাতে মেলাতে পারে না আবিদ। ধর্ষক ও উদ্ধারকারী গুলিয়ে যায়। তাদের ‘নিজস্ব আদল নকশা পটপরিবর্তনের উত্থান-পতনে অভিন্ন। এসব নজরে আসে না। নজরে আসে ধর্ষিতার ত্যানার পুটলি গোজা মুখ। যা স্থির। আবহমান, ঋতুচক্রের পালাবদলে তপ্ত পোড়া ভেজা মাটির মত’। গল্পের নারীটি ফুঁসে ওঠে প্রতিবাদ করে না, সে তার শূণ্য ক্ষমতা নিয়ে বরং আবিদের মত মধ্যবিত্তের দিকে মূর্তিমান বিদ্রুপ হিসেবে হাজির হয়।
ওয়াসি আহমেদের ভাষা আকর্ষনীয়, রাগিনীতে দ্রুতলয়ের আলাপের মত বিবরণের মধ্যে জ্বলজ্বল করে উৎপ্রেক্ষা, ইমেজ। ‘বৃষ্টিধোয়া কালো চশমার ঘনঘোর কাঁচে দপদপ করছে টাটকা ভেজা ভোরের আলো’ (সুন্দিকাঠের আলমারি)। ‘রোকনউদ্দিন ওরফে দেবাশীষের কোলে সলিড ওয়ানপিস এ কে আরামে দোল খায়। ঠান্ডা ঘোরছাইরঙ ব্যারেলে আঙুলগুলো তার কেঁপে কেঁপে পিছল কাটে’ (কালাশনিকভের গোলাপ)।‘জানালার বাইরে গাছপালাহীন গলিতে সকাল পৌনে নটায় খাড়া হলুদ রোদ’ (উদ্ধার-পুনরুদ্ধার)। ‘পাছা-তোবড়ানো একটা ডবলডেকার টানা গোঙানিতে রাস্তার পিচের গন্ধ শুঁকে শুঁকে আর পারে না’ (হোয়াইট ম্যাজিক)।
এমন আরো অসংখ্য বাক্যের ভেতর দিয়ে ওয়াসি আহমেদ নিজের সময়কে অন্তর্গত করে ধারণ করেন যেন একটা লাইটহাউসে বসে চারপাশ দেখছেন, আর পাঠকের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে পড়ার তৃপ্তি।
কালপরিক্রমার সঙ্গে লেখককে প্রাসঙ্গিক থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই, কিন্তু লেখক তো চারপাশকে সাধারণের বাইরের দৃষ্টি দিয়ে দেখে সময়কে অক্ষরে বিনির্মাণ করার কাজটিই করেন। সমাজবীক্ষণ তাই ওয়াসি আহমেদের নিজস্ব ধরণে, প্রতীকে, উৎপ্রেক্ষায়, যাদুবাস্তবতায় গল্পে উঠে আসে।
সবশেষে বলতে হয়, যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছোটগল্পের গতিপ্রকৃতি বুঝতে হলে ওয়াসি আহমেদকে পাঠ করা দরকার।
গল্পকার, কবি, ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার।
কানাডায় থাকেন।
কানাডায় থাকেন।
0 মন্তব্যসমূহ