অনিন্দিতা গোস্বামী'র গল্প হংসধ্বনি


প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক, প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক, সারাক্ষণ ধরে হাঁসটা ডেকে চলেছে, মনে মনে ভীষণ বিরক্ত হন বিশ্বপতি বাবু, যাব্বাবা, হাঁস আবার এত ডাকে নাকি! বিশ্বপতি বাবু গ্রামের মানুষ, হাঁস মুরগী তো তিনি কম দেখেন নি। তাদেরই বাড়ির উঠোনের কোণে ছিল লোহার খাঁচা করা হাঁস মুরগীর ঘর। সকাল বেলা সেই ঘর খুলে দিলে হাঁস গুলো প্যাঁক প্যাঁক করতে করতে দল বেঁধে গিয়ে পুকুরে নামত, তারপর এদিক ওদিক ভেসে বেড়াত, খুব বেশি ডাকা ডাকি কিন্তু করত না, আবার যখন দল বেঁধে ঘরে ফিরত প্যাঁক প্যাঁক করে ডাকত খানিক। কিন্তু এ হাঁস যেন পাগলা হাঁস , মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে, সারা দিন শুধু প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক । শহুরে অঞ্চলে এমন উৎপাত বিশ্বপতি বাবু আগে কখনো দেখেন নি। তাছাড়া এসব অঞ্চলে হাঁস মুরগী পোষার পারমিশান আছে কি কর্পোরেশনের, কে জানে, খোঁজ নিতে হবে, মনে মনে ভাবেন বিশ্বপতি বাবু।

এঁরা নিশ্চয়ই রুজি রোজগারের জন্য হাঁস মুরগী পোষেন না, নিশ্চয়ই শখ। মানুষের শখও কত বিচিত্র ধরণের। মানুষে গান শোনার জন্য বাড়িতে ময়না পোষে, টিয়া পোষে আর এরা কিনা পুষেছে হাঁস, তাও আবার একটা পাগলা হাঁস যে কিনা সারা দিন প্যাঁক প্যাঁক করে মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে বিশ্বপতি বাবুর। বিশেষ করে রাত দুপুরে হাঁসের প্যাঁক প্যাঁকানি তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে বিচ্ছিরি ভাবে। না একটা কিছু ব্যবস্থা করতেই হবে, কম্‌প্লেন জানিয়ে আসবেন কি তিনি ওয়ার্ড অপিসে গিয়ে! কিন্তু তিনি একা মানুষ। প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধে যাওয়াটা কি ঠিক হবে, তবে এরা যে ধরণের লোক তাতে কোনদিন কোন কাজে লাগবে বলে তো মনে হয় না। সারাদিন তো কাউকে সেভাবে চোখেই পড়ে না। উঁচু প্রাচীরের আড়ালে এ যেন এক আজবপুরী।

সবচেয়ে সমস্যার কথা তিনি এই ব্যপারটা কাউকে বলতেও পারছেন না, কারণ তার কাছে কোন সাক্ষী নেই। আর বয়স হলে এই এক সমস্যা সাক্ষী প্রমাণ ছাড়া কোন কথা কাউকে বলতে গেলেই লোকে সন্দেহজনক ভাবে তাকায়, ভাবখানা এই শরীরের সঙ্গে সঙ্গে বুঝি মাথাখানাও এবার তার জবাব দিচ্ছে। দশচক্রে ভগবান কে ভূত বানানো না গেলেও মানুষকে পাগল বানানো যায় অতি সহজেই। সাক্ষী জোগারের চেষ্টা যে তিনি করেন নি এমনটা নয় কিন্তু পেরে ওঠেন নি, তাই বিফল মনোরথে হাঁসের প্যাঁকপ্যাঁকানি কানে নিয়ে বুকের ধুকপুকানি বুকে চেপে দিনাতিপাত করছেন। শুধু মাঝে মাঝে মৃত স্ত্রীর ছবির সামনে গিয়ে বলেন, অলকা এই অসহ্য প্যাঁক প্যাঁকানি আর সইতে পারি না আমাকে তোমার কাছে ডেকে নাও। অলকা যেন মৃদু মৃদু, হাসেন, বলেন কেমন মজা, আমি একটু কথা বললেই নাকি তোমার বই পাড়ায় বিঘ্ন ঘটত ! এখন! নাও ঠেলা সামলাও। এসব ঝামেলা শুরু হবার আগে ভাগ্যিস আমি মানে মানে কেটে পড়েছি।

ঠিক, ঘটনা বেশি দিনের না, ঘটনা শুরু হয়েছে মাত্র দুবছর। আর এই দু’বছর আড়াই বছরের মধ্যেই অনেকটা অদল বদল হয়ে গিয়েছে বিশ্বপতি বাবুর সংসারেও। বিশ্বপতি বাবুর স্ত্রী মারা গিয়েছেন, মনার আগমন ঘটেছে, পাশের বাড়িতে এসে জুটেছে এই ভূতুড়ে দম্পতি।

বিশ্বপতি বাবুর এ বাড়িও কিন্তু খুব বেশি দিনের না। বিশ্বপতি বাবুর এই শহরের উপকণ্ঠে বসবাসের গল্পটা যদি শুরু থেকে শুরু করা যায় তাহলে অনেকটা এই রকম। বিশ্বপতি বাবুর জন্ম থেকে জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে তার গ্রামের বাড়িতে মা বাবা দাদা বৌদি, গাই গরু, হাঁস মুরগী, বাঁশঝাড়, ধানক্ষেত, পুকুর, মাছ, রাতে শেয়াল, ভাম। স্কুল, সদর শহরে কলেজ এমনকি সদর শহরে মাস্টারির চাকরি পাওয়া পর্যন্তও তিনি গ্রামেই ছিলেন। বিয়ে করে নিয়ে গিয়ে স্ত্রীকেও তুলেছিলেন তিনি ঐ গ্রামেরই বাড়িতে। গ্রাম থেকে সাইকেল, বাস, ঠেঙিয়ে তিনি যেতেন ইস্‌কুলে পড়াতে। ইংরেজীর শিক্ষক ছিলেন তিনি। তার দুই মেয়ের জন্মও ঐ গ্রামেই।

তারপর মেয়েদের ভালো স্কুলে পড়ানোর জন্য সদর শহরে বাসা নিয়ে উঠে এসেছিলেন ওঁরা। ধীরে ধীরে ওখানেই মাথা গোঁজার মত একটা এতটুকু বাড়ি। তবে বিশ্বপতি বাবুর মেয়ে দুটি হয়েছিল দুটি রত্ন। অসম্ভব ভালো ছিল মেয়ে দুটি পড়াশোনায়। পরে, বড় মেয়ে পড়ে ডাক্তারি আর ছোট মেয়ে স্থপতি বিদ্যা। মেয়ে দুটির বিয়ে থা নিয়েও কোন বেগ পেতে হয় নি বিশ্বপতি বাবুকে। বড় জামাই ও ডাক্তার। বড় মেয়ে মলির চন্ডীগড়ে এম.ডি. করতে গিয়ে আলাপ ছেলেটির সঙ্গে। ছেলেটি পাঞ্জাবী, ভাতিন্ডায় ওর শ্বশুর বাড়ি। ওরা থাকে ওখানেই। ছোট মেয়েও বিয়ে করেছে সহপাঠীকেই । ওরা এখন থাকে সিঙ্গাপুরে।

দুই মেয়েই শখ করে এই বাড়িটা বানিয়েছে শহরের উপকণ্ঠে। বুড়ো বয়সে নাকি দুই বোন এসে থাকবে দু’তলায়। আপাতত মা বাবার জন্য তাদের তরফ থেকে এটা উপহার। বেশ কথা। কিন্তু শহরের জলহাওয়া তার স্ত্রী অলকার বেশিদিন সইল না। অবশ্য তিরিশ বছর বয়স থেকে সে ছিল অসুস্থ। বাতের ব্যথ্যায় প্রায় অথর্ব। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গিলতে গিলতে শরীরে বাসা বেঁধেছিল আরো নানান ধরনের রোগ বালাই। শেষে তো হাত পা এর আঙ্গুলগুলো পর্যন্ত বেঁকে গেছিল।বিশ্বপতি বাবু বলা যায় সারা জীবন একাই প্রায় সংসার সামলেছেন। মেয়েদের টিফিন গুছিয়ে স্কুলে পাঠানো, নিজে স্কুলে বেরনোর আগে অলকার জন্য খাবার গুছিয়ে টেবিলে রাখা, সব নিজে হাতে সামলাতেন তিনি। এক ঢাল লম্বা ঘন কালো চুল ছিল অলকার। হাত ঘুরিয়ে সেই চুল একা একা আঁচড়াতে পারত না অলকা, খুব কষ্ট হতো। মেয়েরা তখন একটু বড়, তারা প্রস্তাব দিল মা চুল কেটে ছোট করে ফেলো, এই আমাদের মত, বব্‌ড হেয়ার। অলকাও দিব্যি রাজী হয়ে গেল। প্রায় রে রে করে উঠেছিল বিশ্বপতি বাবু, এত সুন্দর চুল কেটে ফেলবে মানে? আমি আঁচড়ে দেবো তোমার চুল। শুধু আমি স্কুলে বেরানোর আগে তুমি কষ্ট করে একটু স্নান সেরে নিও। সে অভ্যাস বিশ্বপতি বাবুর অলকার মৃত্য পর্যন্ত বজায় ছিল। এনিয়ে মেয়ে জামাইরাও মুখ টিপে কম হাসে নি। বিশ্বপতিবাবু অবশ্য ওসবে আমল দেন নি, আপনজন কষ্ট পেলে আপনজনই তো হাত বাড়াবে, নাকি অপর কেউ ছুটে আসবে সে কষ্ট লাঘব করতে! দীর্ঘ্য রোগ ভোগের পর অলকা যখন মারা গেলেন বিশ্বপতি বাবুর মনে হলো এখন তিনি কি করবেন? স্কুল থেকেও অবসর নিয়েছেন, দুই মেয়েরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তার হাতে তো করবার মত কোন কাজ নেই।

খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগত প্রথম কিছুদিন, তারপর ধীরে ধীরে সব অভ্যাস হয়ে গেল, কিন্তু দুই মেয়ে জামাই বাবার চিন্তায় অস্থির। বাবাকে কি একা একা ফেলে রাখা যায় অত বড় বাড়িতে? বিশ্বপতি বাবু যতবার বলেন তাঁর কোন অসুবিধা হচ্ছে না, ততবারই মেয়েরা প্রস্তাব পাঠায়, হয় তুমি আমাদের কাছে চলে এসো, না হলে দিনে রাতে আয়ার ব্যবস্থা করো। বিশ্বপতি বাবুর এক গোঁ কোন মহিলা পরিচারিকার হাত রাত দিন তিনি নিজেকে সঁপে দিতে পারবেন না, এখনো তিনি অতটা বুড়ো হন নি। অথচ পুরুষ এ্যাটেন্‌ডেন্টের খুব আকাল এদেশে। আয়া সেন্টার গুলোতে লাগাতার লেগে থেকেও কিছু সুবিধা করতে পারছিল না তার দুই মেয়ে। ফোনে ফোনে কতটুকুই বা আর করা সম্ভব। অবশেষে ব্যাটন নিজের কাঁধেই নিলেন বিশ্বপতি বাবু। গ্রামের বাড়িতে তাদের জমিজমা চাষ করে ধেনা। ধেনার ছোটছেলে মনা ক্লাস এইটে পড়াশুনো ইস্তফা দিয়ে ধান্দা করছিল দুবাই যাবার। গ্রামে থেকে চাষবাস করার তার মোটেই ইচ্ছে নেই। অথচ ধেনার ইচ্ছে নেই ছেলেকে অতদূরে ছাড়বার। এই নিয়ে নিত্য অশান্তি। বিশ্বপতি বাবুর প্রস্তাবটা যেন ধেনা লুফে নিল, মনাও ভাবল তার দুবাই যাওয়া আদৌ হবে কি হবে না সাধা লক্ষ্মী আপাতত পায়ে ঠেলে লাভ নেই। অতএব বিশ্বপতিবাবু মনাকে নিয়ে এসে রাখলেন নিজের কাছে।

মনা যে জ্যেঠুর দেখভাল করে না তা না, তবে মনার কানে সবসময় ছিপি গোঁজা, কানে হেড ফোন লাগিয়ে সে সবসময় মোবাইলে গান শুনছে, না হলে কি সব খুটখাট করছে, ডেকে কখনো তাকে সাড়া পাওয়া যায় না। তবে সে সময়ের কাজ সময়ে করে, ফাঁকি দেয় না। অনেকটা যন্ত্রের মতো ঠিক সময়ে সে জ্যেঠুর খাবার দেয়। ঠিক সময়ে চোখে ওষুধ দিয়ে দেয়। ঠিক সময়ে চা, গার্গেলের জল, পিঠে তেল মালিশ ইত্যাদি ইত্যাদি।

সব ঠিক আছে, কিন্তু মুশকিলে পড়েছেন বিশ্বপতিবাবু, কানে ছিপি গোঁজা হেতু ইহো জগতের কোন শব্দই মনার কানে পৌঁছয় না। ফলে প্যাঁক প্যাঁক শব্দের সপক্ষে মনার সমর্থন পাবার আশা বৃথা। তবু দু’ একবার মনার গায়ে ধাক্কা দিয়ে চেষ্টা করেছেন বিশ্বপতিবাবু কিন্তু লাভ হয় নি, মনা পাশ ফিরে শুয়েছে, তার কষ থেকে বালিশে গড়িয়ে পড়েছে দু ফোঁটা নাল। সন্ধ্যে সাড়ে আটটা না বাজতেই মনার ঘুমের বহর দেখে বিশ্বপতিবাবুর সন্দেহ হয় ব্যাটা নেশার গুলি খায় নাতো! তবু একদিন খুব জোরেই ধাক্কা দিয়ে ডাকলেন মনাকে, ঐ শুনতে পাচ্ছিস হাঁসের ডাক? ধরমর করে বিছানার ওপর উঠে বসে মনা বলল, হাঁস? মাঝ রাতে তুমি হাঁস কোথায় পেলে? ওঃ জ্যেঠু তুমি নিশ্চয়ই আজ ঘুমের ওষুধ খাও নি। কত করে বললাম সিঙ্গারা খেও না, পেট গরম হয়েছে তোমার। গ্যাস হয়ে গেছে। দেখো তোমার বালিশের নীচে গ্যাসের ওষুধ রাখা আছে। একটা খেয়ে নাও। তুমি নিজে পারবে? না আমি দেবো ? দাঁত কিরমির করে বিশ্বপতিবাবু বললেন, না আমি নিজেই পারব, তুই এখন ঘুমো।

অথচ ঐ অদ্ভুত বাড়ি সম্পর্কে আজ পর্যন্ত সংগৃহীত যত তথ্য সব ঐ মনার কাছ থেকেই পাওয়া। এত ঘুমিয়েও কি করে যে এত খবর পায় ছেলেটা কে জানে। একদিন মনা এসে খবর দিল, জানো জ্যেঠু ঐ বাড়ির স্বামী স্ত্রীতে না হেব্বি মিল। বউটাকে কি ভালো বাসে গো বরটা। এই না হলে সংসার। বিশ্বপতিবাবু মুখ টিপে হেসে বললেন, কি রকম?

এই সেই দিন গো, সহোৎসাহে মনা বলে, ঐ রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলাম, ঐ ভদ্রলোক গেলেন সিগারেট কিনতে, মুখার্জী কাকুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে এ কথা সে কথা, কি প্রশংসা করছিল গো বউটার, বলছিল খুব নাকি ভালো ছিল বউটা পড়াশোনায়, এখন তো কলেজের ম্যাডাম, আবার কুড়িয়ে পাওয়া গাছের ডাল, কাঠি, পুথি এইসব দিয়ে কি সব কুটুস কাটুস না কি সব বানায়, সেগুলো আবার নাকি কত দামে বিক্রি হয়। কি গর্ব গো বরটার বউটাকে নিয়ে।

বিশ্বপতিবাবু বললেন, কি বানায় বললি?

মনা বলল, আমিও ঠিক বুঝতে পারিনি গো চায়ের দোকানে গোপাল দা বলল মূর্তি পুতুল এইসব আর কি। ছেলেটাও নাকি খুব ভালো গো পড়াশোনায়, ফাস্ট হয়।

বিশ্বপতিবাবু মনার একটু পিছনে লেগে বললেন ফাস্ট হয় মানে ? জোরে দৌড়ায়?

মনা বলল, ধ্যাৎ ক্লাসে ফাস্ট হয়।

বিশ্বপতিবাবু বললেন, ও ওটা ফাস্ট নয় ফারস্ট মনা।

মনা বলল, ঐ হলো। বাড়ি হো তো এ্যয়সা।

বিশ্বপতিবাবু বললেন, বুঝেছি বুঝেছি, দেখেছি কি করে তোরও একটা সংসারের ব্যবস্থা করা যায়।

মনা কপট রাগ দেখিয়ে বলল, জ্যেঠু আমি কিন্তু সে কথা বলিনি।

বাস্তবিকই ঠিক হয়েছে মনার বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে। ওরা থাকবে বাড়ির আউট হাউসে। রান্নার মেয়েটিকে ছাড়িয়ে দিয়ে তখন রান্না বান্না করবে মনার বউই। তখন যদি একটু মনার গান শোনা কমে। কিন্তু পরের চিন্তা পরে। আপাতত তিনি সাক্ষী খোঁজায় ব্যাস্ত। কাকে যে তিনি পাবেন! ঐ বাড়ির ডান দিকের বাড়িটি তাঁর। বাম দিকের বাড়িতে থাকেন একজন নব্বই উর্দ্ধ বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা, যাঁকে বিশ্বপতিবাবু মাসিমা বলেন। মাসিমা যখন বিকেলে টুক্‌টুক্‌ করে একটু বাগানে বেড়ান তখন কানে যন্ত্র লাগান নচেৎ তাঁর কোন কিছু শোনার দরকার হয় না, কারন তাঁর চোখের দৃষ্টি ঝাপ্‌সা, টিভি তিনি দেখতে পান না, একটি মেয়ে তাঁর দেখাশোনা করে, সে মোটামুটি হাত পা নেড়ে যা বলে তা বুঝে যান মাসিমা, তবে হ্যাঁ তাঁর ছেলেদের ফোন এলে তিনি যন্ত্র লাগান কানে। তার তিন ছেলে দুই মেয়ে মনার ভাষায় ভারতবর্ষের কোণে কোণে মে ছড়িয়ে। হাঁসের বাড়ির পিছনের দিকে পুরসভার পুরনো হাসপাতালের পোড়ো জমি, ভাঁঙাচোরা দুটি ঘর আর সংলগ্ন ভাটফুলের জঙ্গল, ছোট কুমিরের মত গোসাপও ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় কখনো। তবে কে দেবে আর বিশ্বপতিবাবুর সমর্থনে সাক্ষী। একমাত্র মাসীমার কাজের মেয়েটির দিতে পারে, সে নিশ্চয় এতদিনে হাঁসের প্যাঁক প্যাঁকানি শুনেছে অনেকবার। কিন্তু মেয়েটিকে সারাদিন দেখাই যায় না বাড়ির বাইরে। মনাকে একবার জিজ্ঞাসা করলেন বিশ্বপতিবাবু, তুই দেখেছিস মেয়েটিকে? মনা উত্তরে মেয়ে দেখা আমার কাজ নয় জ্যেঠু ওসব আধবুড়োদের কাজ বলে চোখ মটকে টেরী বাগিয়ে চলে গেল বাজারে। কান গরম হয়ে গেল বিশ্বপতিবাবুর, রাগে গরগর করতে করতে ভাবলেন বড় বাচাল হেয়েছে মনাটা, ইমিডিয়েট ওর বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

রোজ সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ প্রাতঃ ভ্রমন সেরে যখন বাড়ি ফেরেন বিশ্বপতিবাবু, দেখেন ঐ হাঁস বাড়ির ভদ্রমহিলা মস্ত লোহার গেট খুলে বেরুচ্ছেন, কাঁধে ব্যাগ, হাতে ছাতা আর জলের বোতল, বিশ্বপতিবাবুকে দেখে ভদ্রমহিলা একটু হাসেন, বিশ্বপতিবাবুও হাসি ফিরিয়ে দেন, দিনে দিনে হাসি একটু চওড়া হয়েছে, কথা হয়নি কখনো। তখন বড্ড তাড়া থাকে ভদ্রমহিলার, দ্রুত হেঁটে যান বাস রাস্তার দিকে। বিশ্বপতিবাবু অনেকদিন ভেবেছেন ব্যাপারটা নিয়ে একটু বলবেন ভদ্রমহিলাকে, কিন্তু ঐ সময়ে কি বলা যায়? সৌজন্যের সীমা কিছুতেই অতিক্রম করতে পারেন না বিশ্বপতিবাবু। সন্ধ্যে বেলা বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে চা খেতে খেতে তিনি দেখেন ভদ্রমহিলা ফিরছেন,। পরন্ত দিনের আলোয় ম্লান, অবসন্ন, ক্লান্ত তার মুখখানি। বড় মায়া লাগে বিশ্বপতিবাবুর, এ সময় ও কি কোন অভিযোগ জানানো যায়? কতই বা আর বয়স হবে ভদ্রমহিলার, তাঁর বড় মেয়ের থেকে সামান্য বড় হবে হয়ত। আজকাল মেয়েরা ঘরে বাইরে কত পরিশ্রম করে, দুই মেয়ের জন্য বড্ড মন কেমন করে বিশ্বপতিবাবুর।

ভদ্রলোককেও ধরা খুব মুশকিল। অপিসের গাড়ি এসে ওঁকে উঠিয়ে নিয়ে যায় বাড়ির দরজা থেকে আবার নামিয়ে দিয়ে যায় বাড়ির দরজায়, আর্দালি গিয়ে ব্যাগ পৌঁছে দিয়ে আসে বাড়ির ভিতর পর্যন্ত। মনার তথ্যসূত্র বলছে ভদ্রলোক একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি ইঞ্জিনিয়র। বাড়ির বাচ্চাটিও কোন সময় খেলতে বেরোয় না, সাইকেল চড়ে না, ওর মোটা লেন্স গুরু গম্ভীর মুখ, পিঠে ভারী বইয়ের ব্যাগ এক বিষণ্ণ বালক। স্কুলের গাড়ি থেকে নেমে ছুটে চলে যায় বাড়ির ভেতরে।



ছোট মেয়ে জামাই আর তাদের পুচ্‌কি বাচ্চাটা এলো বিশ্বপতি বাবুর কাছে দু’ দিনের জন্য বেড়াতে। মেয়ে বলল বাবা তোমার জন্য একটা দারুন উপহার এনেছি। বিশ্বপতি বাবু বললেন, আমার জন্য আবার উপহার কেন? আমি তো এখন বাড়ি থেকে বেশি বেরই না, জামা কাপড় কোন কিছু আমার আর তেমন প্রয়োজনই হয় না, যা আছে তাই তো অনেক।

মেয়ে বলল, সে জানি তাই জন্যই তো এমন জিনিস এনেছি যা তোমার কাজে লাগবে। সারাদিন একা একা ঘরে বসে বসে বোরড হও, বলতে বলতে ঢাউস সুটকেস খুলে পিতলের গোল গোল বালার মত অংশ গুলোকে প্যাঁচ দিয়ে জুড়ে চোঙের মত বানাতে বানাতে বলল, দেখো তো বাবা এটা কি?

চক্‌ চক্‌ করে উঠল বিশ্বপতি বাবুর চোখ দুটো, বললেন এটা তো একটা দূরবীন ! মেয়ে হেসে বলল, হ্যাঁ এটা একটা শখের টেলিস্কোপ। তুমি এক সময় আকাশ দেখতে খুব ভালো বাসতে না? পুষ্যা নক্ষত্র, সিংহ রাশি, এখন তোমার চোখ ঝাপসা হয়ে গিয়েছে, এটা তোমাকে বেশ সাহায্য করবে। ছেলে মানুষের মত খুশি হয়ে উঠলেন বিশ্বপতিবাবু, হ্যাঁ এই জিনিসটা তার খুব পছন্দ হয়েছে।

মেয়েরা চলে গেল। বাচ্চাটা সারাদিন বকম বকম করে বেড়াত সারা বাড়ি, মনটা খুব খুব খারাপ হয়ে গেল বিশ্বপতি বাবুর। এরা থাকে না ঠিক আছে, দুটো দিন এসে চলে গেলে অসহনীয় লাগে। আড়াআড়ি ভাবে কপালের ওপর হাত রেখে বিমর্ষ হয়ে শুয়ে ছিলেন বিশ্বপতি বাবু, ঘুম আসছিল না, নাগাদ দুটো হবে। হঠাৎ মনে পড়ল এই সময় তো দক্ষিণের আকাশে কাপ্পা আসার কথা। কাপ্পা ক্রুসিস। কিন্তু এখান থেকে কি ঠিকমত দেখা যাবে তাকে! টেলিস্কোপের চোঙ খানা হাতে নিয়ে দরজা খুলে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি সামনের খোলা বারান্দায়। ঝাপসা আকাশ ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছিল, অথচ মনঃ সংযোগ করতে পারছিল না তিনি কিছুতেই, ক্রমাগত সেই প্যাঁক প্যাঁক ধ্বনি, সুতীক্ষ্ণভাবে যেন কঁকিয়ে উঠছে কেউ। ওফ্‌ বলে ঘাড় ঘোরাতেই তার নজরে পড়ল পাশের বাড়ির একটা জানালার পাল্লা কিছুটা খোলা এবং পর্দা সরানো। খানিকটা অবাক হলেন তিনি, ওবাড়ির জানালার পর্দা তো কখনো সরানো থাকে না, দু’একটি ছাড়া বেশির ভাগ জানালা তো বন্ধই থাকে। তবু সৌজন্য ও রুচিবোধে তিনি তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলেন সেদিক থেকে। কিন্তু বেশিক্ষণ পারলেন না, ফের প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক প্যাঁক, যেন আর্তনাদ। দূরবীনের চোঙ ঘুরিয়ে তিনি চোখ রাখলেন ঐ জানালা লক্ষ্য করে, দেখলেন ইঞ্জিনিয়র ভদ্রলোক দাঁত মুখ খিঁচিয়ে দু’হাত দিয়ে একটা বড়সড় সাদা হাঁসের পেট টিপে চলেছেন প্রাণ পণে, যেন পেট টিপে বার করতে চাইছেন একটা ডিম, হাঁসটাও কাতরাচ্ছে। একটা সন্তানের জন্ম দিতে মেয়েদের যেন কত কষ্ট সহ্য করতে হয়? কতগুলো হাড় ভাঙার কষ্ট যেন একসঙ্গে হয় তখন? কিন্তু ডিম তো আর বাচ্চা নয়। নিশ্চয়ই ডিম দিতে কোন কষ্ট হয় না হাঁস মুরগীর। ঐ ঐ একটা ডিম দিল হাঁসটা মনে হচ্ছে। একি আবার ঐভাবে হাঁসটাকে টিপছেন কেন ভদ্রলোক। কী নৃশংস। অবলা প্রাণীর ওপর একি অত্যাচার ! একদিনে একটার বেশি ডিম তো দিতে পারে না কোন হাঁস। দৌড়ে এলেন তিনি ঘরের ভেতরে, ধাক্কা দিয়ে ডাকলেন মনাকে, মনা ওঠ্‌ ওঠ্‌। দেখ কি হচ্ছে ঐ বাড়িতে, মনা পাশ ফিরে শুলো।

যা হোক একটা হেস্ত নেস্তো করতেই হবে এবারে। সকাল বেলা ওদের বড্ড তাড়া, বিকেল বেলা মিঞা বিবির কাউকে না কাউকে তিনি বলেই ছাড়বেন ব্যাপারটা, তক্কে তক্কেই ছিলেন বিশ্বপতি বাবু, ওদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়েই ঘোরাঘুরি করছিলেন। ভদ্রমহিলাকে ফিরতে দেখেই এগিয়ে গেলেন। ভদ্রমহিলা বিষ্ময়ে সামান্য ভ্রুকুঞ্জন করে বললেন, কিছু বললেন? বিশ্বপতিবাবু খুব মৃদু অথচ চাপা ধমকের সুরে বললেন, হুঁ।

- বলুন

- একটা নিরীহ হাঁসকে আপনার স্বামী ঐভাবে চেপাচেপি করছিলেন কেন? রহস্যটা কি একটু খোলসা করে বলুন তো? ভদ্রমহিলা চুপ করে আছেন দেখে বিশ্বপতি বাবু সামান্য গলা চড়িয়ে বললেন, একে তো বাড়িতে ময়না টিয়ার বদলে পোষেন হাঁস, তার ওপর এমন অত্যাচার, সে বেচারা তো প্যাঁক প্যাঁকিয়ে বাঁচে না, আর আশে পাশের বাড়িতে তো আমরা তিষ্টোতে পারছি না, অনেকদিন এসব অনাচার সহ্য করেছি।

উত্তরে ভদ্রমহিলা বললেন, আপনার দূরবীন খানা কিন্তু বেশ।

- ঝপ্‌ করে বিশ্বপতিবাবু কেমন যেন নিভে গেলেন, বললেন দেখুন কথা ঘোরাবেন না। কেন করেন এমন অত্যাচার হাঁসটার ওপরে?

- ও ডিম দেয় বলে।

- আরে ও তো একটা ডিম দিল, তাও তো আপনারা থামলেন না।

একটু শব্দ করে হাসলেন ভদ্রমহিলা, বললেন ওহো এতটাও দেখেছেন, তবে দেখেন নি ডিমটা সোনার ছিল।

বিশ্বপতি বাবু ভীষণ রকম রেগে গিয়ে বললেন, বুজরুকী হচ্ছে ! সোনার ডিম ছিল, আমাকে গল্প শোনাচ্ছেন !

ভদ্রমহিলা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, না ডিমটা সোনারই ছিল, আপনি দেখেন নি। আর সোনার ডিম একটাতে কি কারো হয়? সাধ মেটে?

বিশ্বপতি বাবু ঘিস ঘিস করতে করতে বললেন, যদি না-ই হয় তবে হাঁসটার পেট কেটে ফেললেন না কেন? তিলে তিলে মারার থেকে তো একবারে মেরে ফেলা ভালো। চাষী অন্তত আপনাদের থেকে কম নৃশংস ছিল।

ভদ্রমহিলা মৃদু হেসে বললেন, চাষি বোকা ছিল, বোঝে নি, এখন কেউ আর অত বোকা নেই বিশ্বপতিবাবু, বলে মস্ত লোহার গেট খুলে বউটা ঢুকে গেল ভেতরে।

সেদিন থেকে দূরবীনটা ফিট করাই আছে বারান্দায়। বিশ্বপতি বাবু আর দেরী করলেন না। মনা গেছে নাইট শো-এ সিনেমায়। অতএব সন্ধ্যে সন্ধ্যেই বিশ্বপতিবাবু চোখ রাখলেন দূরবীনের কাচে। কিন্তু সুদুর আকাশের নক্ষত্রমালার চেয়ে তাকে যেন অনেক বেশি আকর্ষণ করছিল ঐ পাশের বাড়ির গবাক্ষটি, তার পর্দা যেন আজ আরো বেশিটাই সরানো। সংকোচ সরিয়ে রেখে তিনি ফের চোখ রাখলেন জানালায়। এবং যা দেখলেন তাতে স্তন্তিত হয়ে গেলেন তিনি।

দেখলেন ভদ্রলোক অফিস থেকে ফিরতেই থালায় খাবার সাজিয়ে সামনে ধরলেন ভদ্রমহিলা, ভদ্রলোক কি যেন বলে লাফিয়ে উঠলেন, ভদ্রমহিলা দৌড়ে গিয়ে কিছু একটা এনে দিলেন থালায়, ভদ্রলোক খেলেন, জল খেলেন, ভদ্রমহিলা চায়ের কাপডিশ হাতে এসে দাঁড়ালেন ভদ্রলোকের সামনে। এবং কিছু বলতে গেলেন, ভদ্রলোক কাপডিশ ছুঁড়ে ফেলে দিলেন, ছত্রখান হয়ে ভেঙে গেল চিনামাটির কাপডিশ, আর নীচু হয়ে ভদ্রমহিলা কাচের টুকরো কুড়োতে যেতেই তার গলাটা লম্বা হয়ে গেল, ঠোট দুটো হাঁসের মত, দেখতে দেখতে ভদ্রমহিলা গোল মোটা একটা হাঁস হয়ে গেলেন। আর, ব্যাস শুরু হয়ে গেল প্যাঁক প্যাকনি। ভদ্রলোক ছুটে বেড়াতে লাগলেন হাঁসটার পিছনে আর হাঁসটাও প্যাঁক প্যাঁক করে দৌড়ে বেড়াতে লাগল সারা ঘর জুড়ে, কখনো সামান্য উড়ে হাঁসটা ফের নেমে আসছিল নীচে। একবার ভদ্রলোক খপ্‌ করে ধরে ফেললেন হাঁসটাকে। আর প্রাণপণ টিপ্‌টে লাগলেন হাঁসটার পেট। হাঁসটা পরিত্রাহি চেঁচাচ্ছিল , অবশেষে একটা ডিম দিল সে, হ্যাঁ ! ফোকাস ঠিক করলেন বিশ্বপতি বাবু, ঠিক ডিমটা সোনার ডিমই তো বটে! কিন্তু ভদ্রলোকের উৎসাহ তাতে কমল না, ক্ষণিক ডিমটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে ফের তিনি টিপতে আরম্ভ করলেন হাঁসটার পেট। অনেকক্ষণ পরে হাঁসটার প্যাঁক প্যাকানি যখন থেমে এলো, হাঁসটা যখন নেতিয়ে পড়ল, হাঁসটাকে পা দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ভদ্রলোক চলে গেলেন অন্য ঘরে। সারা ঘরে ছড়িয়ে রইল খসে পড়া হাঁসের পালক।

মাথাটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেল বিশ্বপতিবাবুর। সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারলেন না। এমন একটা ঘটনা যে কাউকে বলতে গেলেই তাকে সবাই দিব্যি মত পাগল ঠাওরাবে, অতএব চুপচাপ চেপে যাওয়া ছাড়া তার কোন উপায় নেই। একটা দিন তিনি বাড়ির ভিতর একা একাই ছটফট করে কাটালেন, তারপরের দিন ভদ্রমহিলা যখন সকাল বেলা কলেজ বেরন ঠিক সেই সময় গিয়ে দাঁড়ালেন বাস রাস্তার মোড়ে। ভদ্রমহিলা খুব দ্রুত হেঁটে এসে দাঁড়ালেন বাস স্টপের ছাউনির নীচে। বিশ্বপতি বাবু নিঃশব্দে গিয়ে দাঁড়ালেন সেখানে। তারপর ভদ্রমহিলা কানের কাছে গিয়ে প্রায় ফিস ফিস করে বললেন, একধরনের হাঁস আছে যারা অনেক অনেক মাইল উড়তে পারে। এক দেশ থেকে আর এক দেশে পাড়ি দিতে পারে তারা। দেশি হাসগুলো উড়তে ভুলে গেছে শুধুমাত্র সাহসের অভাবে। অনভ্যাসে ওদের ডানার জোর কমে গেছে। শুধু একটু সাহসের দরকার, সামান্য সাহসের। বাস এসে দাঁড়ালো, পাদানিতে পা দিতে দিতে ভদ্রমহিলা একবার ফিরে তাকালেন বিশ্বপতি বাবুর দিকে। বিশ্বপতি বাবু দেখলেন সে দৃষ্টিতে যেন একটাই শব্দ লেখা আছে, বলছেন?

রাত বাড়তেই দূরবীনে চোখ রাখলেন বিশ্বপতিবাবু, একটু পরেই কাপ্পা আসবে সেখানে। আজ সে নক্ষত্রের একটা বাংলা নাম দেবেন তিনি, হংসধ্বনি।


অনিন্দিতা গোস্বামী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ