চন্দন মন্ডল' এর কিশোর গল্প : চিলের ঘরসংসার

বসন্ত এসে গেছে।গাছের শাখায় শাখায় তাই নতুন পাতা।ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য।পাখিদের কলতান। বাতাস ফুরফুরে এবং চনমনে।বাসন্তী হাওয়া দোল দোল দোলা দিয়ে যায়। রাতের বেলায় এ সময়ে খোলা মাঠে হাঁটতে খুব ভাল লাগে।

বসন্ত এলে পাখপাখালিদের মনেও লাগে নতুন রং।তারা ঘর বাঁধে।বেশির ভাগ পাখিরই ডিম পাড়ার সময় বসন্তকাল।তিতুর শোবার ঘরের পুবের জানালা দিয়ে সরু ফিতের মতো একফালি রোদ এসে প্রতিদিন চোখেমুখে পড়ে।তার ঘুম ভেঙে যায়।বিছানা ছেড়ে উঠে সে জানালা দিয়ে বাইরের চিল দম্পতির ঘরসংসার করা দেখে।

ওর ঘরের পুবের জানালার ধারে প্রতিবেশির ছাদে বসেছে মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার।এক চিল জুটি তারই মাঝে বাসা বেঁধেছে;তিতুর জানালা থেকে বড়জোর ফুট দশেক দুরত্বে।বারো তলার এই বহুতল ভবনটির আশপাশে আর কোনও উঁচু দালান নেই। যেদিকে তাকাও ফাঁকা চারপাশে। এবং খোলা আকাশ।সম্ভবত, সে কারণেই আকাশের উঁচুতলার পাখি চিল বেছে নিয়েছে এই নিরাপদ স্থান।মোবাইল টাওয়ারের অভ্যন্তরে,ছোট্ট চৌকো স্পেসে মরা ডালপালা,কুটোকাটা,খড়, তারের টুকরো প্রভৃতি হাবিজাবি দিয়ে বানানো তাদের সুখের ঘর।

ঋতুরাজের আগমনের শুরুতেই দেখা গিয়েছিল চিল দুটোকে।নিয়মিতই তারা আসছে; এসে বসছে। টাওয়ারে। দিনের মধ্যে কয়েকবার। পরে তিতু বুঝেছিল, ওরা তখন বাসা বাঁধার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে বেড়াচ্ছিল।পেয়ারের টোকা মামার সাথে এ নিয়ে তার কথা হয়।টোকা মামাকে সে বলে,

-- জানো মামা, আমার ঘরের পুবের জানালায় মোবাইল টাওয়ারে প্রতিদিন এক জোড়া চিল আসে।দিনের মধ্যে অনেকবার।সকাল নেই,দুপুর নেই, বিকেল নেই যখন তখন ওরা আসে।এখনও আছে,দেখবে এসো!আচ্ছা,কী জন্য আসে বলো তো?

টোকা মামা একজন মস্তবড় পরিব্রাজক।ইতিমধ্যে এশিয়া-ইউরোপ মিলে তার পঞ্চাশটা দেশ ঘোরা হয়ে গেছে।বাংলাদেশের চৌষট্টি জেলা দু'দুবার ভ্রমণ কমপ্লিট করেছে।ভ্রমণপিপাসু মন ভেতর থেকে টোকা দিলেই নাকি ঘর থেকে তিনি বেরিয়ে পড়েন।এই জন্য তার নাম টোকা।হাঃ হাঃ হাঃ!

এখন বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গৃহবন্দী। কোথাও যেতে পারছেন না। ভালই হয়েছে। তিতুরও স্কুল বন্ধ। মামার কাছে দেশবিদেশের নানান গল্প শুনে অলস সময় বেশ কেটে যায়।

মামার কাছে শুনেছে তিতু, বিখ্যাত গ্রিক প্রবাদ 'নিজেকে জানো' এই কথাটি নাকি সক্রেটিসের নিজের নয়। ওটা গ্রিসের একটা পাথুরে লিখন ছিল। সক্রেটিস সেটা নিজের জীবনের সার কথা বলে গ্রহণ করেছিলেন। পাউসেনিয়াস নামে এক গ্রিক পর্যটকের বইতে তথ্যটি আছে।যিনি সারা গ্রিস ঘুরেছেন এবং গ্রিসের উপর তার লেখা ১০টি বই দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করেন।

যত দেশ ঘুরেছেন মামা,তার মধ্যে গ্রিসই তার কাছে সব চেয়ে ভাল লেগেছে। কারণ অতীত ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের দিক থেকে গ্রিসই নাকি সবার সেরা এবং পুরনো।

গ্রিক পৌরাণিক কাহিনিতে আছে, অলিম্পাস পর্বতে বসবাসকারী গ্রিক দেবতাদের রাজা জিউস একবার পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল কোথায় তা জানার জন্য পূর্ব ও পশ্চিম দিকে একই সময়ে দুটো ঈগল ছেড়ে দিয়েছিলেন।ঈগল ছিল তার চার প্রতীকের অন্যতম।বাকী তিন প্রতীকের নাম বজ্র,ষাঁড় এবং ওক।ঈগল দুটো পুব-পশ্চিমে রওনা দিয়ে দুই দিক থেকে উড়তে উড়তে এসে গ্রিসের সব থেকে উঁচু পারনাসাস পর্বত অতিক্রম করার সময় তিনি স্বর্গ থেকে সেই স্থান বরাবর পৃথিবীতে একটি পাথর ফেলে দেন।সেই পাথরকে বলা হয় অম্পালস। যার অর্থ কেন্দ্র।

পৌরাণিক মতে, পাথর ফেলে জিউস যে স্থানটি নির্ধারণ করেছিলেন,সেটিই নাকি পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল।জায়গাটার নাম ডেলফি।এথেন্স থেকে ১৯০ কিলোমিটার দূরে পারনাসাস পর্বতের গা ঘেঁসে ছোট্ট এক শহর। পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, প্রাচীন এ শহরটিতে খৃস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতকে মনুষ্য বসবাস ছিল। প্রাচীন গ্রিসের ধর্মীয় পিঠস্থান,সমাজ-সভ্যতা, ইতিহাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডেলফি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল সে-ই খ্রিস্টপূর্ব দশ শতক থেকে। সে সম্পর্কে আছে নানা ইতিহাস।

ডেলফির নামকরণ নিয়েও কাহিনি আছে।ক্রিট হলো গ্রিসের বৃহত্তম দ্বীপ।কথিত আছে যে, গ্রিক দেবতা অ্যাপোলো ক্রিট শহর থেকে ডলফিনের পিঠে চড়ে পাইথন নামক এক ড্রাগনের হাত থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রকে রক্ষা করতে এখানে এসেছিলেন।তাই এ শহরের নাম ডেলফি।

দেবতারাজ জিউসের পুত্র অ্যাপোলো ছিল সঙ্গীত,শিক্ষা, আলো,কবিতা এবং ভবিষ্যৎ গণনার দেবতা।সেকালের গ্রিকরা, বিশেষ করে ভবিষ্যৎ গণনা করার ক্ষমতার জন্য অ্যাপোলোকে খুব মানত। তার জন্য এখানে নির্মিত হয়েছিল বিখ্যাত মন্দির টেম্পল অফ অ্যাপোলো।

বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে খনন করে আবিস্কৃত হয়েছে খৃস্টপূর্ব নবম শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত পারনাসাস পাহাড়ের ঢালে অ্যাপোলোর সেই মন্দির।তা বাদে, সেখানে গান ও নাটকের জন্য অ্যাম্ফিথিয়েটার,খেলাধূলার জন্য স্টেডিয়াম, মন্দিরের ধনরত্ন-উপঢৌকন প্রভৃতি রাখার জন্য কোষাগার আবিস্কৃত হয়েছে। খৃস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে এগুলো নির্মিত।
বর্তমানে সেসব পুরাতত্ত্ব নিদর্শনের পাশেই গড়ে উঠেছে আধুনিক ডেলফি শহরতলী।

মামা সেখানে গিয়েছিলেন। ডেলফিতে পারনাসাস পাহাড়ে খ্রিষ্টের জন্মের ২৫০০ বছর আগের কয়েক টন ওজনের বিশাল সেই পাথরটি সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে ওটার একটা রেপ্লিকা আছে ডেলফি মিউজিয়ামে। মামা দুটোই দেখেছেন।


হাত ধরে টানতে টানতে তিতু মামাকে নিয়ে যায় নিজের ঘরে।দেখা গেল, তিতুর কথাই ঠিক।দুটো চিল সত্যিই বাসা বেঁধেছে।স্ত্রী পাখিটা বাসায় ডিমে তা দেওয়ার ভঙ্গিতে বুকে বসা;আর পুরুষ পাখিটা টাওয়ারের দাঁড়ে বসে আছে।চতুর্পাশে তীক্ষ দৃষ্টি।মাঝে মাঝে তিতুর জানালায় চোখ। একটা বোটকা গন্ধ এসে নাকে লাগল।ওটা ওদের গায়ের গন্ধ।

মামা বললেন,আরে! ভুবন চিল!দারুণ শিকারী জানিস তো? দূর্দান্ত ডাইভার!বহুদূর থেকে ছোঁ মেরে নিখুঁত টার্গেটে শিকার ধরতে ওস্তাদ!

ঈগল বা বাজ পাখির মতো এক নম্বরের টপ শিকারী না হলেও শিকারী পাখিদের মধ্যে কুলীন তো বটেই। ওরা যত উপর থেকে ছোঁ মারবে, নিচে নামার সাথে সাথে গতিবেগ ততই বাড়বে। পড়ন্ত বস্তুর এই গতিবিজ্ঞানটা ওরা জানে।আর জানে বলেই, অনেক উঁচু থেকে ছোঁ মেরে শিকার ধরে। প্রচন্ড বেগে নেমে আসার ফলে মাটিতে থাকা শিকার আর পালাতে সুযোগ পায় না,কিছু বোঝার আগেই ধরা পড়ে যায়! বোঝা গেল, মামা বেশ উচ্ছ্বসিত।

তিতু বলল,আচ্ছা মামা, মেঘচিল কোনটা?

মামা বললেন,মেঘচিল ভুবন চিলের অন্য নাম।

আমাদের দেশে চার প্রজাতির চিল আছে বুঝলি?

ভুবন চিল,শঙ্খ চিল,গোদা চিল ও সাধারণ চিল।এরা সব একই গোত্রের।ভুবন চিলের কালচে-বাদামী রং।খয়েরির আভা থাকে।চোখে কাজল লেপ্টানো।পা হলুদ।দেখতে পাচ্ছিস?

-- হ্যাঁ পাচ্ছি, বলল তিতু।

তিতুর বিছানায় একটা পালক পড়ে ছিল।কালো আর খয়েরি রঙের মিশ্রণের হালকা প্রিন্ট।ওটা চিলের পালক।গা থেকে খসে পড়ে জানলা দিয়ে বাতাসে ভেসে এসেছে।

মামা বললেন, কবি রফিক আজাদের কবিতার বিখ্যাত লাইন মনে পড়ে যাচ্ছে রে তিতু! দুএক লাইন তোকে শোনাতে ইচ্ছে করছে!স্মৃতি থেকে বলছি,একটু আধটু ভুলচুক হতে পারে। লাইনটা হল--
পাখি উড়ে গেলে, পাখির পালক পড়ে থাকে।
পাখি উড়ে গেলে, পাখির পালক পড়ে থাকা ভাল নয়।

--বলতে বলতে পালকটা কুড়িয়ে নিয়ে তিতুর হাতে তুলে দেন।তিতু সেটা সাদা প্লাস্টিকের কাগজের মোড়কে পুরে সযত্নে পিন আপ করে সংরক্ষণ করে রাখে। মামার কাছে প্রস্তাব দেয়,

-- মামা, বায়নোকুলারটা নিয়ে এলে কেমন হয়?ভাল করে দেখা যেত?

মামা বারণ করেন। না,না! বায়নোকুলার দেখলে ভয় পেয়ে উড়ে যাবে!দেখছিস না, কেমন চঞ্চল দৃষ্টিতে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে?প্রখর দৃষ্টিসম্পন্ন পাখি!চল, আমরা বরং জানালার আড়ালে যাই।

সত্যিই তাই।ওরা আড়াল হয়ে যেতেই শান্ত হয়ে এল পুরুষ ঈগলটা।তিতুর কিন্তু মন মানে না।সে আড়াল থেকে গুঁড়ি মেরে মোবাইলে ছবি তোলার চেষ্টা করে।কিন্তু কপাল মন্দ।ধরা পড়ে যায়।পুরুষ চিলটা ঠিকই দেখে ফেলে ওকে। বড় জোর একমুহূর্ত-- একটু যেন কী ভাবল পাখিটা। তারপর ডানা মেলে উড়ে গেল।দেখাদেখি স্ত্রীটাও।

মামার কথাই ঠিক।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি ওদের।ফাঁকি দেওয়া সহজ নয়।

ওদিকে কাকদের পাড়ায় এই নিয়ে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গেছে।তারা এটা কিছুতেই মেনে নেবে না।চিলকে ডিসটার্ব করা নাকি কাকের চিরাচরিত স্বভাব।প্রধান শত্রুও নাকি ওরাই।ফলে দেখা গেল, এক সকালে টাওয়ারে গণ জমায়েত বসিয়েছে কাকের দঙ্গল। অগুনতি সংখ্যায়। ভীষণভাবে উত্তেজিত।

তাদের সমবেত চিৎকার,চেচামেচি আর কা কা রবে তিতুর ঘরে টেকাই দায় হল। এদিন চিল জুটি বাসায় ছিল না।কাকদের ভাবখানা এমন,চিলরা কেন এসেছে তাদের পাড়ায়? ওরা তো ওপর আকাশে উড়ে বেড়ায়।সেখানে বাসা করুক।এটা তো তাদের জায়গা।এখানে চিল কেন আসবে?কে ওদের এখানে বাসা বাঁধার অনুমতি দিয়েছে? এখুনি এর একটা বিহীত করা দরকার!এটা কি জুলুম নাকি?

কাকের যুদ্ধংদেহি ভাব দেখে মনে হল, শুধুমাত্র একটা হুকুমের অপেক্ষা।হুকুম পাওয়া মাত্র শ'য়ে শ'য়ে কাক এর জন্য জীবন বিসর্জন দেবে,কেউ তাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। ভাবভঙ্গি দেখে হাসতে হাসতে তিতুর পেটে খিল ধরে যায়!

সে খুব ভাল করে জানে,চিল ওজনে-আকারে যথেষ্ট ভারি পাখি।শরীরের ওজন ছোটখাটো একটা মুরগীর সমান।অর্থাৎ প্রায় পৌণে এক কেজির মতোন বা তার কাছাকাছি।ওই ভারি শরীরে ডানা পিটিয়ে বেশিক্ষণ আকাশে উড়তে পারে না।ক্লান্ত হয়ে যায়। তাই উপরের ঘূর্ণি বাতাসের স্রোতে ডানা ভাসিয়ে ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়ায়।যখন দলবেঁধে ওড়ে খুব চমৎকার লাগে। নিচের বাতাসে এই ঘূর্ণি স্রোতটা নেই বলে খুব একটা নিচে নামে না।

তিতু মামাকে বলে,আচ্ছা মামা, কাকদের এত সমস্যা কেন?কেন ওরা চিলের বাসা বাঁধার উপকরণ ফেলে দেয়?কেন ডিমে তা দেওয়ার সময় উত্যক্ত করে?

মামা বললেন,আরে বুঝলি না,কাক হল গিয়ে পক্ষীকূলের বজ্জাত নাম্বার ওয়ান!নচ্ছার! স্বভাবটাই এমন ওদের।কোকিল,দোয়েল,শ্যামা, শালিক,ঘুঘু,ময়না,টিয়া এদের নিয়ে কত না গান,ছড়া,কবিতা আছে।সে তুলনায় কাক মানুষের অনেক বেশি উপকার করে।ময়লা-আবর্জনা খেয়ে পরিবেশ ঠিক রাখে।কিন্তু দ্যাখ,কেবল স্বভাবের কারণে কবি-সাহিত্যিকদের মন পেল না কোনও দিন।

মামার কথা শুনে তিতুর হাসি পায়।

ইতিমধ্যে বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে।চিলের বাসা বানানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন রোজ সকালে তাদের তীক্ষ্ণ চিউ…. র লম্বা ডাক শুনে তিতুর ঘুম ভাঙ্গে।সে দেখে কখনও তাদের আদর মাখামাখি। কখনও বা খুনসুটি।তখন ডাকের ধরন পাল্টে যায়।

পুরুষ চিলটা স্ত্রীর প্রতি ভীষণ অনুরক্ত।খুব যত্ন করে।তার জন্য খাবার নিয়ে আসে।স্ত্রী চিল তিনটি ডিম পেড়েছে।দিনে দিনে তিতুর বিছানায় উড়ে আসা পালকের সংখ্যাও বেড়েছে। হয়তো কোনও মানে নেই, তবু তিতু পালক জমাতে ভালোবাসে।

'পাখি উড়ে গেলে, পাখির পালক পড়ে থাকা ভাল নয়'--কবিতার লাইনটি সম্ভবত তার মনে রেখাপাত করেছে।


কয়েকদিন পরের কথা।নারী চিলটি বাসায় একা।

বসে বসে একমনে ডিমে তা দিচ্ছে।পুরুষ পাখিটা সম্ভবত খাবারের সন্ধানে গেছে।বখাটে কাকের দল দেখল, এই সুযোগ! তারা তার পিছে লাগল।

কা কা চিৎকারে,হৈ-হট্টগোল,খোঁচাখুঁচি করে যত প্রকারে পারা যায় বেচারীকে উত্যক্ত করতে লাগল। বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা দরকার। কিন্তু কাকের কান্ডকারখানা দেখে সেই হুঁশ আছে বলে মনে হল না।বজ্জাতির একেবারে চুড়ান্ত!

তিতুর মনে হল,লম্বা একটা লাঠি থাকলে ভাল মতো ঠেঙানি দিতে পারত শয়তান কাকগুলোকে।

সুস্থ মতো চিলটা যে ডিমে তা দেবে,তার কোনও উপায়ই নেই।পাখিটা না পারে থাকতে, না পারে উড়ে যেতে।ভারি এক যন্ত্রণায় পড়েছে!কি যে করবে সে ভেবে পাচ্ছে না।ইতিউতি তাকাচ্ছে। খুঁজছে।কোথায় গেল তার সঙ্গী?

এমন সময় তিতু দেখল, হঠাৎ পুরুষ চিলটা কোথা থেকে যেন সাঁ করে ছুটে এল।এসেই সরাসরি নেমে পড়ল অ্যাকশনে।

এক এক করে ধাওয়া করে সবকটা কাক সে দূর করে দিল।একটাকে ধাওয়া করে তাড়িয়ে কিছু দূর নিয়ে যায়। আবার ফিরে আসে। তারপর আরেকটাকে ধরে।এভাবে এক এক করে প্রতিটা কাক তাড়িয়ে একেবারে তল্লাট ছাড়া করে দিল। তারপর ফিরে এল সঙ্গীনির কাছে।পরিস্থিতি তখন শান্ত। ধাওয়া খেয়ে কাকগুলোর ত্রাহি ত্রাহি মধুসূদন বেগে পালাবার সে যে কী মজার দৃশ্য! যেন ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা! পড়িমরি ছুটে পালাবে কোথায় দিশা পায় না।

কয়েক মিনিটের মধ্যে টাওয়ারের কাকের দঙ্গল পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে গেল।এ বসন্তে আর এ মুখো হবে না।খুব উচিত শিক্ষা পেয়েছে।

এর পরের ঘটনা অবশ্য খুব সংক্ষিপ্ত।বলা যায়, কাক-চিল কাহিনির শেষ দৃশ্য। দেখা গেল, চিল জুটির ঘন হয়ে দুজনার গায়ে গা লাগিয়ে বসে থাকা, চঞ্চুতে চঞ্চুতে ঘসাঘসি,পরস্পর লেজ নাড়া। সে এক রোমান্টিক দৃশ্য!যাকে বলে, মধুর মিলন!

মামা তিতুকে কৌতুকের সুরে বললেন,কিরে চিল নায়ক-নায়িকা আর ভিলেন পাতিকাক অভিনীত চিলদের ঘরসংসার চলচ্চিত্রটা কেমন দেখলি?

-- মানে? তিতু বলল।

--আহা, বুঝলি না? মামা বললেন,চিল নায়িকাকে একা পেয়ে কাক ভিলেনরা যখন তার পিছে লেগেছিল তখন চিল নায়ক এসে সবকটাকে তাড়িয়ে দিল না?এটাই তো বাংলা সিনেমা! ঠিক কিনা তুই-ই বল?হাঃ হাঃ হাঃ!
মামা ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন।

মামার কথা শুনে তিতু কিছু বলল না।সেও প্রচন্ড বেগে হাসতে লাগল।


লেখক পরিচিতি
চন্দন মন্ডলঃ 
গল্প লেখক।বড়দের পাশাপাশি ছোটদের জন্যও লেখেন।কৃষিবিদ।প্রকাশিত গ্রন্থ ৩টি।খুলনায় থাকেন।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ