জাপানের সংস্কৃতি সংকট: কেনজাবুরো ওয়ে



সাক্ষাৎকারগ্রহীতা: মনজুরুল হক

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ঔপন্যাসিক কেনজাবুরো ওয়ে একটি বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, কিন্তু জাপানের সংবাদমাধ্যমে তাঁর সরব উপস্হিতি নেই। সংবাদপত্র আর টেলিভিশনের নানা রকম রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিতর্কে জাপানি দর্শক/পাঠকদের সামনে তাঁর আবির্ভাব তেমন চোখে পড়ে না। কিন্ত তিনি যে একেবারে চুপচাপ বসে আছেন তাও নয়। 
ইরাক যুদ্ধের বৈধতা-অবৈধতার বাইরেও ভিন্ন এক বিতর্কের সূচনা করেছেন তিনি, যার কেন্দ্রে আছে সেই যুদ্ধে জাপানের জড়িত হওয়ার যৌক্তিকতার প্রশ্ন আর যুদ্ধে জড়িত না হওয়ার নৈতিক বাধ্যবাধকতার প্রসঙ্গ। জাপানের সংবিধানের বিশেষ এক ধারা গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ পরিহারের কথা বলেছে, এ কারণে ইরাক-যুদ্ধকে কেন্দ্র করে চলমান বিতর্ক জাপানে শুধু ব্যাপ্তিই লাভ করেনি, একই সঙ্গে কিছু মৌলিক নীতিগত প্রশ্নও দেশবাসীর সামনে উত্থাপিত হয়েছে, জাপানি সমাজে যা মোটা দাগের এক বিভাজনের জন্ম দিয়েছে। সেই বিভক্তি রেখার একদিকে যদি অবস্হান হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়াসুহিরো নাকাসোনের মতো যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণকারী রাজনীতিবিদের, অন্যদিকে তাহলে যুদ্ধবিরোধীরা- যুদ্ধবিরোধীদের প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন কেনজাবুরো ওয়ে।
 
জাপানের এই ক্রান্তিকালে দেশ-কাল, সাহিত্য-সংস্কৃতি, প্রসঙ্গে বলতে এবং বর্তমান বিশ্বের নেতৃস্হানীয় একজন সাহিত্যকর্মী হিসেবে নিজস্ব অবস্হান তুলে ধরতে কিছুদিন আগে টোকিওর বিদেশী সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবে উপস্হিত হয়েছিলেন জাপানের দ্বিতীয় ও এশিয়া মহাদেশের তৃতীয় এবং এশিয়ার একমাত্র জীবিত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক কেনজাবুরো ওয়ে। জাপানের কথোপকথন-সংস্কৃতির কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি এবং এই অসুস্হ সময়ে নিজের দেশের নেতৃত্বের হাল ধরে বসে থাকা গোষ্ঠীর দেউলিয়াপনা উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন। তার বক্তব্য ছিল সাহসী আর সময়োচিত।
 
ওয়ের সঙ্গে এই প্রেসক্লাবেই একান্তে মিনিট দশেক আলাপের সুযোগ হলো এবং প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য পাওয়া গেল একটি মূল্যবান উপহার।
 
জাপানের সামাজিক অসুস্হতা সম্পর্কে এডওয়ার্ড সাঈদ তাঁর কালচার এন্ড ইম্পিরিয়ালিজম গ্রন্থে যে মন্তব্য করেছেন, তার উদ্ধৃতি টেনে কেনজাবুরো ওয়ে সেদিন তাঁর দীর্ঘ বক্তব্য শুরু করেন। এডওয়ার্ড সাঈদ ছিলেন ওয়ের ব্যক্তিগত বন্ধু এবং সাঈদের মতো তিনি নিজেও মনে করেন, জাপানের সংস্কৃতি এখন এক দেউলিয়া অবস্হায় এসে দাঁড়িয়েছে- টেলিভিশনের সস্তা টক শো, কমিক বই এবং নানা কনফারেন্স আর অফুরান প্যানেল আলোচনা সংস্কৃতির সেই অন্তঃসারশূন্য অবস্হানকেই নগ্নভাবে তুলে ধরেছে। ১০ বছর আগে যে রোগের লক্ষণ এডওয়ার্ড সাঈদ সনাক্ত করেছিলেন, ওয়ের মতে সেই রোগ এখন দেহের সর্বত্র বিস্তৃত হয়ে জাপানকে আরোগ্যের অযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

সে রকম অবস্হার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন তিনি, আর তা হলো বুদ্ধিজীবীদের লিখবার মতো কোনো সাময়িকী এখন জাপানে নেই। এটা জাপানের আত্মিক দৈন্য তুলে ধরে। এই আত্মিক দৈন্যদশা ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে শিল্প আর সংস্কৃতি-জগতের সবটা গ্রাস করে নিতে উদ্যত।
 
কেনজাবুরো ওয়ের মতে, সাহিত্য আর সাংবাদিকতায় আলাপচারিতার ভাষার যে সার্বিক প্রাধান্য তাও সে রকম ভয়াবহ অবস্হার কথাই মনে করিয়ে দেয়। সংবাদপত্র আর সাময়িকীতে পুস্তক সমালোচনার বাইরে অন্য কোনো ধরনের সমালোচনা জাপানে আজকাল সহসা চোখে পড়ে না। ওই পুস্তক সমালোচনাও আবার গ্রন্থের কাঠামো আর আঙ্গিককে স্পর্শ না করে কথোপকথনের ভাষায় এর বাইরের অস্পষ্ট দিকগুলোই কেবল পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছে, ফলে সমালোচনা-সাহিত্যও হারিয়ে ফেলেছে তার বস্তুনিষ্ঠ অবস্হান।
 
কথোপকথন বা আলাপচারিতায় যে আসল প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে সহজেই বিভ্রান্তির দেয়াল তুলে দেওয়া সম্ভব, কেনজাবুরো ওয়ের মতে, জাপানে তার শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত হচ্ছেন দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জুনইচিরো কোইজুমি। নীতিগত অবস্হানের কোনো রকম ব্যাখ্যা না দিয়ে এবং কোন পথে দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন, তার সঠিক কোনো নির্দেশনা নাগরিকদের সামনে তুলে না ধরে শুধু ‘কাঠামোগত সংস্কারে’র স্লোগান আউড়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে গেছেন তিনি। এ শুথু আলাপচারিতার সংস্কৃতির কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে। ওদের ধারণা: ইরাক যুদ্ধে জাপানের জড়িত হওয়ার মতো অত্যন্ত জটিল একটি প্রশ্নে গঠনমূলক বিতর্কের অভাবও নতুন করে সে রকম বাস্তবতার প্রমাণ দিচ্ছে।
 
কোইজুমির এরকম আচরণের অন্যদিকে আবার নতুনত্বের বদলে আছে পুনরাবৃত্তির পুরোনো খেলা। বছর তিনেক আগে হঠাৎ করে টোকিওর বিতর্কিত ইয়াসুকুনি শিন্তো মন্দিরে উপস্হিত হন তিনি, তারপর চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি করেও ভাব করেন যেন ‘কোনো কিছু হয়নি’। এমনকি সস্তা বক্তব্যে রাজনীতির বাজার মাতিয়ে তুলতে পিছপা হননি তিনি। সংসদের নিয়মিত রাজনৈতিক বিতর্কেও তার একই রূপ দেয়া যায়। মূল বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার যে দক্ষতা আছে, সংসদে নিয়মিত তার চমৎকার প্রমাণ রাখছেন তিনি। জাপানের বর্তমান সংকটের পেছনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়দায়িত্ব যে সবচেয়ে বেশি, আলাপচারিতার সংস্কৃতির কল্যাণে সেই সত্যও চাপা পড়ে থাকছে।
 
সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম পরিস্হিতি জাপানের সার্বিক অবক্ষয়ের অংশ বলেই কেনজাবুরো ওয়ে মনে করেন। সে রকম এ সময়ে সংকটাপন্ন সংখ্যালঘু হিসেবে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা নিয়ে দ্বিমত পোষণের কোনো সুযোগ নেই। কেনজাবুরো ওয়ের মতে সংকট উত্তীর্ণ হতে হলে লেখক আর পাঠক হিসেবে তরুণ বুদ্ধিজীবীর আবির্ভাবকে উৎসাহিত করা দরকার। বুদ্ধিবৃত্তির বিলুপ্তি রোধ করতে হলে কথোপকথনের সংস্কৃতির উত্তাল স্রোত ঠেকিয়ে রাখা বা পরিহার করা দরকার; অন্যদিকে দুষ্টচক্রের সেই বৃত্ত থেকে বেরোনোর পথ পেতে হলে প্রয়োজন চলমান সময়ের রাজনৈতিক বিতর্কেট অন্তঃসারশূন্যতাকে সঠিকভাবে চিনে নেওয়া। এই দায়িত্ব পালনে সমাজের ব্যর্থতা ১০ বছর আগে এডওয়ার্ড সাঈদের করা মূল্যায়নকে আজও এই নতুন শতাব্দীতেও যথার্থ বলে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই লেখকের ধারণা।
 
বিগত কয়েক বছরে এডওয়ার্ড সাঈদের চিন্তাভাবনা যে তাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে,দর্শকদের সে কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেননি কেনজাবুরো ওয়ে। প্রশ্নোত্তর পর্বের এক পর্যায়ে তিনি জানিয়েছেন বন্ধুর মৃত্যুতে তাঁর ব্যথিত হওয়ার কথা। এডওয়ার্ড সাঈদের মৃত্যুর ঠিক পরপরই সাঈদের কন্যা ওয়ের মেয়ের কাছে ই-মেইলে যে বার্তা পাঠায়, তাতে উল্লেখ ছিল যে বাবা তাঁর জীবনে কখনো অন্যের সামনে চোখের জল ফেলেননি, কিন্তু জীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে পরিবারের সদস্যদের সামনে তিনি কেঁদেছিলেন। তবে সেই কান্না আসন্ন মৃত্যুর ভারে ব্যথিত কান্না ছিল না, বরং তা ছিল জীবনের আরো অনেক না বলা কথা গুছিয়ে বলে যাওয়ার আগেই তাঁকে চলে যেতে হচ্ছে বলে। নিজের কন্যার কাছে পাঠানো সাঈদ-কন্যার সেই বার্তা ওয়েকে গভীরভাবে ব্যথিত করে, যে শোক এখনো তিনি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
 
জাপানের অবক্ষয়ের এই কালে নিজের দায়দায়িত্ব কীভাবে তিনি পালন করেছেন, সে প্রসঙ্গেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দিয়েছেন কেনজাবুরো ওয়ে। চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসার সঙ্কেত পেলেও আশার হাল ছেড়ে দেননি তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা তাঁর কয়েকটি বইয়ের ব্যাপারে তিনি দেশের পাঠকদের যে সাড়া পাচ্ছেন তাতে আশাহত হয়ে হাল ছেড়ে না দেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা একটি উপন্যাস ও বিভিন্ন বিষয়ে দুটি রচনা সংকলনে, বিশেষ করে জাপানের শান্তির সংবিধান এবং শিক্ষার মৌলিক নীতি সংশোধন না করার দাবি জানিয়ে চলমান সংগ্রাম সমুন্নত রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে শিক্ষাসংক্রান্ত যে মৌলিক আইন নতুন করে প্রণয়ন করা হয়, তার মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী ভাবনা-চিন্তার প্রভাব থেকে আগামী প্রজন্মকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে পাঠক্রম ও শিক্ষার নীতি-নির্ধারণে বিস্তৃত দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। জাপানের চরমপন্থি মহল এখন সংবিধান সংশোধন করার পাশাপাশি শিক্ষার সেই মৌলিক আইনও খারিজ করে দেওয়ার পক্ষপাতি। ওয়েব শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা সেসব বই পাঠ করে অনেক শিশু-কিশোরের মা আন্দোলনে শরিক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে তাঁকে চিঠি পাঠিয়েছেন। এখানেই তিনি আশার আলো দেখেছেন।
 
আলাপচারিতার সংস্কৃতি আর টেলিভিশন কালচারের সর্বগ্রাসী হামলার মধ্যেও দীপশিখা এখনো নিভে যায়নি। প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি যে মিছিলের অগ্রভাবে থাকবেন, খোলামেলাভাবেই সে কথা জানালেন ওয়ে। তবে তরুণ প্রজন্ম সেই ভূমিকায় তাঁর অবতীর্ণ হওয়া দেখতে চায় কিনা, সে সম্পর্কে অবশ্য তিনি নিশ্চিত নন।
 
শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে সেদিনের আনুষ্ঠানিক আয়োজন শেষ হওয়ার পর প্রথম আলোর জন্য ১০ মিনিটের একান্ত সময় বরাদ্দ করেছিলেন তিনি। আগে থেকে আলোচনার নির্ধারিত কোনো বিষয়বস্তু ঠিক করা ছিল না। ফলে অনেকটা মুক্ত মতামত বিনিময় হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্য তাঁকে কতটা প্রভাবিত করেছে, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুরুতেই তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা বলেন। কেনজাবুরো ওয়ের মতে জাপানের সাহিত্যিকদের জন্য রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন লেখক। রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু রচনার একাধিক ভালো অনুবাদ আছে জাপানি ভাষায়। রবীন্দ্রনাথের রচনার, তাঁর বক্তব্যের গভীরে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে জাপানি পাঠকদের সামনে কোনো দেয়াল নেই বললেই চলে।
 
এ প্রসঙ্গে ওয়ে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের একটা ঘটনার উল্লেখ করেন। নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার সপ্তাহখানেক পর শিকোকু দ্বীপের এহিমে জেলার ছোট এক মফস্বল শহরে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। ওয়ের ভাষ্য অনুযায়ী তাঁর মা হচ্ছেন অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ, যাঁর অনেক দোষ-গুণ উত্তরাধিকার সূত্রে এখন তাঁর ওপরও বর্তেছে। রাতে মায়ের পাশে বসে তিনি টেলিভিশন দেখছিলেন। টিভির খবরে একসময় নোবেল পুরস্কারের প্রসঙ্গ আসে। সংবাদপাঠক উল্লেখ করেন যে কেনজাবুরো ওয়ে হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার পর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এশিয়া মহাদেশের তৃতীয় প্রতিনিধি। সেই সংবাদ শুনে মা তাঁকে বলেছিলেন, ‘কেনজাবুরো, কাওয়াবাতার প্রসঙ্গ তুমি ভুলে যাও। এখন থেকে তুমি হচ্ছো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমপর্যায়ের একজন ব্যক্তিত্ব।’
 
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ওয়ের পরিচয় জাপানি অনুবাদে কবির রচনাবলি পাঠের মধ্য দিয়ে। তবে পরবর্তী জীবনে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির আরো দুজন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সরাসরি পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয় তাঁর, তাঁরাও কেনজাবুরো ওয়ের জীবনে গভীর প্রভাব রেখেছেন। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ জাপানে নেতৃস্হানীয় দৈনিক আসাহি শিম্বুন-এ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া মুখোমুখি আলাপ করার সুযোগও হয় অমর্ত্য সেনের সঙ্গে, যাঁকে তিনি জ্ঞানের অফুরান এক উৎস হিসেবে মনে করেন। অমর্ত্য সেনের নাম যে রবীন্দ্রনাথের দেওয়া, সে তথ্যও তাঁর অজানা নেই।
 
কেনজাবুরো ওয়ের সান্নিধ্যে আসা দ্বিতীয় বাঙালি সাহিত্যিক হলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। যৌবনে আফ্রো-এশীয় লেখক সমিতির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন কেনজাবুরো ওয়ে। সেই সুবাদেই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয়- ওয়ের ভাষায়: ‘চালচলন আর আচার-আচরণে যাঁর মধ্যে রেনেসাঁ যুগের নেতৃস্হানীয় ব্যক্তিত্বদের প্রতিফলন’ মেলে। পালাবদলের ডামাডোলে পরবর্তী সময়ে অবশ্য একসময়ের সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পদাতিক এর কবি যে এখন প্রয়াত, কেনজাবুরো ওয়ে তা যথা সময়ে জানতেও পারেননি।
 
সাক্ষাতের একেবারে শেষ পর্যায়ে তাঁর সাক্ষর নেওয়ার জন্য তাঁরই লেখা দুটি বই তাঁর সামনে মেলে ধরি। একটিতে আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহের জন্য স্বাক্ষর করেন তিনি। দ্বিতীয় বইয়ে প্রথম আলোর পাঠকদের ভালোবাসা জানিয়ে তিনি লিখেছেন: ‘প্রথম আলোর পাঠকদের শ্রদ্ধার সঙ্গে আর পরমাণু অস্ত্র বিলুপ্তিতে ঐক্য কামনায়- কেনজাবুরো ওয়ে।’ এই বইটি ‘হিরোশিমা নোটস্’- যা তাঁর এ বক্তব্যকে আরো জোরালো করেছে। সাক্ষর শেষে দিন-তারিখের উল্লেখ করেননি ওয়ে, দিনটি ছিল ৫ মার্চ ২০০৪।



 ------------
১৬ এপ্রিল, ২০০৪ প্রথম আলোতে প্রকাশিত। গল্পপাঠে প্রকাশের জন্য লেখাটি সাক্ষাৎকারগ্রহীতা কর্তৃক প্রেরিত। 
 

লেখক পরিচিতি:
মনজুরুল হক
কবি। প্রাবন্ধিক। রাজনৈতিক বিশ্লেষক 
জাপানে থাকেন।
 
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ