১.ঝাল পাগল
গরম যত বাড়তো আর ঘাম যত ঝরতো দুকুরগুলো ঝালে ঝালে ম ম হয়ে যেতো। ছেলেবেলার সেই ফাঁকতালে ছুটি পাওয়া দুপুরে যে কোনো খাবারে ঝালের স্বাদ নেয়ায় কী যে আবেশ আমার ! হাতের কাছে যে খাবারই পেতাম চাট্টি লঙ্কা মিশিয়ে নিতাম। নিপিস করে। কাঁচা, পাকা, শুকনো , ফুরফুরে --- লঙ্কার নানারকম প্রকারভেদ করতাম এবং তারপর সোজা ইজেরের পকেটে। আর তারপর ইচ্ছেমতো যেকোনো রান্নায় ঢেলে দেযা। কাঁচা আমের টকমিঠে ঝোল থেকে সজনেপাতার দুধগোলা মিষ্ট সুক্ত সবই ঝালে কষাটে মেরে যেতো আমার বদামিতে। ফি দিন রান্নাঘরের বৌরা পালা করে ঠেঙিয়ে যেতো আমায়। যার যখন ফ্রী টাইম থাকতো।
এরই মাঝে আমার পিসি আমার জন্য বানিয়ে দিতেন কদবেলের তেললঙ্কা আচার। চাটতে চাটতে হৃদয়ই ঝাল। ভাবতে শুরু করলাম ---নাহ ! আরো ঝাল খাই। ভরপেটটা খাই। ঝাল খেলে মনের নেকু খুকু ভাবটা চলে যাবে। মনে মাকালি ভাব আসবে।--- তখন মাকালীকেই দেশের সেরা মহীয়সী ভাবতাম।
এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে একদিন আমার পোষা খরগোশটাকে খাইযে দিলাম লঙ্কা চটকানো পালং পাতা। যুৎ করে খেয়েছিলো বটে ছিঁচকাদুনে খরগোশটা। তারপর সারাটা বিকেল ভীতু প্রাণীটি মহা রাগে ছাদে ছুটে বেরিয়েছিলো আমার সাথে। তার সেই ভয়ে সিঁটনো ভাবটাই সেদিন হলুদ বনে হারিয়ে গিয়েছিলো। সেটা ঝাল সামলাতে না পেরে নাকি তেজি হওয়ার ঝোঁকে বলতে পারি না।
ভীত পোষ্যর সেই তেজ কি ঢুকেছিল সেদিন আমার মধ্যেও ? কেন সেই থেকে কান্নাও আমার ঝাল ঝাল ?
MA পড়ছি। পরীক্ষা এসে গেছে বলে জোরদার পড়াশুনো চলছে। দুকুরবেলা বাড়ির দোরে এক পাগল। বড়ো খিদে তার। তাড়ার মাথায় বললাম --- দুটো হরলিক্স বিস্কুট দি ? বললে ----না খিদে পেলে আমার ভালো খাবার লাগে। ডিমের ঝাল আর গরম ভাত দাও। বাগানের কলাপাতা কেটে বসে গেলো। কী মনে হলো ---অনেকটা শুকনোলঙ্কা বাটা দিয়ে ডিম রেঁধে খেতে দিলাম কলাপাতায় ভাত উপুড় করে। তখন তো ভালো রাঁধতে পারি না। ডিমে এত ঝাল পড়ে গেলো আধা খেয়ে পাগল পালালো কখন। না বলে। বেরিয়ে এসে দেখি তার সাধের কলাপাতায় বাকি আধা ভাত। কান্না গড়ালো পট পট। ঝাল।
আজ প্রিয় বলে --- ও বাবা এ যে দেখি প্রিয়ার আমার ঝালকান্না।
আমি বলি --- এ সময় কাছে আসবে যদি দেবো চোখ গেলে।
২.চল যাই
গাছগাছালি আর পাখপাখালি। ক্ষণে ক্ষণে এদেরকে মানুষ ভাবার সাধ আমার। সেই ছেলেকালেই। আমার ছেলেকথায় তাই কেবলি গাছ কেবলি পাখি। ভাবজগতের সেই সব পাখি বা গাছ সবসময় সৌষ্ঠব বা গুণে যে সেরা হতেই হবে এমন নয়। যেমন ধরুন ---গোলাপ বা ডালিয়ার চেয়ে আমার পছন্দ বিষধুতরো বা ঘেঁটু ফুলের গাছ। সুন্দর ফুলের মধ্যে এক পছন্দ করি বকুল। একসাথে অনেক গন্ধ জমে কিনা তাই।
আবার হলুদসবুজ টিয়ে কি চিরবসন্ত ময়ূরের চেয়ে বেশি মনযোগ পেতো পাশের বাড়ির আলসেতে বসা কাক। যদি কোনোদিন বেখেয়ালে বর্ষায় ভিজে বেঢপ হয়ে যেত তার দু ডানা সেদিন আদরে ফাটিয়ে দিতাম মনে মনে। আমার চোখের চটকানিতে হাঁসফাঁস করতো জঞ্জালখেকো বিহঙ্গ। তখন আবার আমার মনে হতো বেকায়দা ঠান্ডা লেগে গলা খুশখুশ করছে আমার কাকমণির।
মায়ের কাছে গরম জলের বায়না করতাম। মা বলতেন --- নিয়ে যা তোর কাকের গার্গল জল। কখনো বা ছোট করে 'কাকজল"। সবচেয়ে প্যার মহব্বত তখন চিল শকুনের সঙ্গে। কুজাত বলেই কী ?
শেষ দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে যেতাম ছাদে। বিকেল পাঁচটাতেও কাঠ রোদ | চিল ওড়ে। আমি চিল্লাই --- না খেয়ে মাথা ঘুরে এবার মরবি হতভাগা। নাম। শিগগির শিগগির নেমে আয় আমার হাতের পাতায়।
চিল নামে না। পড়শিকিশোর হাসে। এবার না পাগলিনী ছোঁ মারে আকাশেতে।
সময় হয়েছে। পালাস না আর। মাটিতে আয়। অনেক লাশ। খুঁটে খা | রোদে ফাটে। জলে ভাসে তারা।
ও পক্ষী ----
--------------
0 মন্তব্যসমূহ