অনুবাদ : ফজল হাসান
লেখক পরিচিতি :
আধুনিক চৈনিক কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিক্রিত উপন্যাস ‘নাইন ডাইরিজ’-এর লেখক ইউ ডাফু। তিনি ছিলেন একাধারে একজন প্রথিতযশা ঔপন্যাসিক, গল্পকার এবং কবি । ইউ ডাফু তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম এবং পোশাকী নাম ইউ ওয়েন । তিনি জেজিয়াং প্রদেশের ফুইয়াংয়ে ১৮৯৬ সালে ৭ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এবং মাত্র তিন বছর বয়সে পিতৃহারা হন । শৈশবে স্থানীয় স্কুলে লেখাপড়া সমাপ্ত করে তিনি ১৯১৩ সালে টোকিওর ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশুনা করার জন্য জাপানে গমন করেন । সেখানে সমকালীন চীনা বুদ্ধিজীবিদের সঙ্গে তার পরিচয় হয় । মাতৃভাষা (ভ্যারন্যাকিউল্যার ল্যাঙ্গুয়েজ) এবং আধুনিক (মর্ডার্ণ) সাহিত্যকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তারা ১৯২১ সালে ‘ক্রিয়েশন সোসাইটি’ নামে একটি সাহিত্য সংগঠন তৈরি করেন । একই বছর বিতর্কিত উপন্যাস ‘সিংকিং’ প্রকাশের পরপরই পাঠকমহলে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং বিশ্ব সাহিত্যাঙ্গণে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে । তৎকালীন সরকারের তীব্র সমালোচনা করা ছাড়াও তিনি এই উপন্যাসে যৌনতাকে খোলামেলা ভাবে তুলে ধরেন । তার অন্যান্য বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য পাস্ট’ (১৯২৭) এবং ‘ফ্লাইট’ (১৯৩৫) । গত শতাবদীর দ্বিতীয় দশকে তিনি চীনা ছোটগল্পের জনক লু স্যুনের সঙ্গে মিলে ‘গ্রেট লীগ অব ফ্রিডম মুভমেন্ট’ সূচনা করেন, যা আধুনিক সাহিত্যের প্রসার এবং উন্নতি সাধনে গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । সেই সময় তিনি প্রচুর সংখ্যক ছোটগল্প রচনা করেন । একসময় কমিউনিষ্ট দলের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার পড়ে প্রাণের ভয়ে তিনি জাপানে পালিয়ে যান । পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সপরিবারে ইন্দোনেশিয়ার গমন করেন এবং সেখানে তিনি জাপান-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন । একসময় তিনি জাপানী সৈন্যদের হাতে বন্দি হন এবং ১৯৪৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় ।
নিরহঙ্কার আত্মত্যাগ
।। এক ।।
বসন্তের ঝকঝকে উজ্জ্বল অপরাহ্ন । বাইরের আবহাওয়া এত সুন্দর এবং মনোরম যে অকারণে ঘরের ভেতরে বসে থেকে আমার ভীষণ একঘেঁয়েমী লাগছিল । দেরিতে দুপুরের খাবার খাওয়ার পর বাইরে এদিক-ওদিক উদ্দেশ্যহীন হাঁটাহাঁটি করার জন্য আমি পকেটে কিছু খুচরো টাকা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি ।
এই রকম স্বচ্ছ এবং পরিস্কার আবহাওয়ায় বেইজিংয়ের আকাশ দক্ষিণ অঞ্চলের আকাশের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা । দিনের বেলা দক্ষিণাঞ্চলের আকাশ পরিস্কার থাকুক না কেন, সেখানে সবসময় মেঘের পাতলা আস্তরণ ভেসে বেড়ায় । ফলে নীল আকাশ রীতিমতো ফ্যাকাসে দেখায় ।
দক্ষিণ অঞ্চলের মলিন আকাশ বেইজিংয়ে দেখা যায় না । বরং বেইজিংয়ের আকাশে যেন রোশনাই ছড়িয়ে থাকে । অনেকক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার সময় অবচেতনে আমার মনে হয় আমি যদি পাখির মতো ডানা মেলে শূণ্যে উড়ে বেড়াতে পারতাম, তাহলে খুব ভালো হতো । এসব দৃশ্যকল্প অবশ্যই শুধু আটপৌড়ে দিনের জন্য প্রজোয্য । তবে একবার যদি বেইজিংয়ে ঝড়ো বাতাস শুরু করে, তখন এমন অবস্থা হয় যে উপরের দিকে তাকিয়ে আকাশের রঙ দেখা তো দূরের কথা, চোখ মেলে তাকানোই অসম্ভব হয়ে পড়ে ।
শরীর ও মন জুড়িয়ে দেওয়ার মতো চারপাশে বসন্তকালীন বিকেলের হাওয়া । নিঁখুত এবং স্বচ্ছ আকাশের নিচে বেইজিংয়ের রাস্তায় হেঁটে পথ চলার সময় আমার মনে হয় পড়ন্ত বিকেলের সোনা রোদ যেন গায়ে এসে আলতো পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে । একসময় আমি নিজেকে চিয়ানমেন গেইটে পৌঁছানোর আগে ব্যস্ত সড়কে আবিস্কার করি ।
একটা কাগজের বাতি বিক্রি করার দোকানে প্রবেশ করে আমি বাতির ঢাকনা দেওয়ার জন্য কয়েকটা কারুকাজ করা কাগজ ক্রয় করি ।
তারপর পুনরায় আমি রাস্তায় নেমে আসি । পাশের নাট্যশালা থেকে গানের সুরেলা সুর এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের মূর্ছনা এসে আমার কানে একধরনের অনুভূতির পরশ বুলিয়ে দেয় । আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো নাট্যশালায় প্রবেশ করি এবং গভীর মনোযোগের সঙ্গে চুপচাপ নাটক দেখতে থাকি । একসময় বাইরের বাতাসের প্রচন্ড দাপাদাপি আমার কানে এসে অনুরণিত হতে থাকে । তখন বাতাসের তোড়ে ঘরের চাল রীতিমতো কাঁপছিল ।
নাটক শেষে আমি ধূলির ঝড়ের মধ্যে বাইরে বেরিয়ে আসি । ধূলির ঝড় থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য চোখের পাতা বন্ধ করে আমি তারস্বরে রিকশা ডাকতে থাকি । স্থানীয় সব রিকশাওয়ালারা ষাট-সত্তর টাকার কমে যাবে না এবং কেউ এক টাকাও ভাড়া কম নিতে রাজি নয় ।
তখনো চারপাশে সন্ধা নেমে আসেনি । কিন্তু বাতাসে এত বেশি ধূলি ওড়াওড়ি করছিল, মনে হচ্ছিল ইতিমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে । দোকানিরা বাতি জ্বেলেছে । পথচারি, মটরগাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি এবং রিকশার জন্য রাস্তায় প্রচন্ড ভীড় । মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচি, অনবরত মটরগাড়ির ভেঁপু, রিকশার টুং টাং আওয়াজ আশেপাশের আবহাওয়াকে রীতিমতো মুখরিত করে তুলেছে । এর মাঝে কোথাও থেকে বিশেষ একধরনের একটানা বেতাল শব্দ আমার কানে ভেসে আসছে । আমি তার উৎস জানি না । সুসজ্জিত একদল নারী এবং পুরুষ গাড়িতে বসে আছে । হয়তো তারা কোনো অনুষ্ঠানে যাচ্ছে ।
এই ধূলির ঝড়ের সময় রিকশা পাওয়া খুবই কঠিন । তাই চিয়ানমেন সড়কে যাওয়ার জন্য আমি হাঁটতে থাকি । কখনো যদি একই সঙ্গে ধূলির ঝড় এবং অফিস ছুটি হয়, তাহলে রিকশাওয়ালাদের পোয়াবারো । মওকা বুঝে তারা অসম্ভব বেশি ভাড়া দাবী করে । ইতিমধ্যে আমি প্রায় সব টাকাই খরচ করে ফেলেছি । এখন আমার পকেটে মাত্র চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা আছে । এই টাকায় আমি রিকশাওয়ালাদের দাবী অনুযায়ী ভাড়া দিতে পারবো না । অগত্যা সিদ্ধান্ত নিই, আমি সিদান পর্য্যন্ত হেঁটে যাবো এবং তারপর রিকশা নেবো । তাতে এই অবশিষ্ট টাকায় কোনো অসুবিধে হবে না ।
জেংইয়াং ব্রীজের উপর ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দক্ষিণগামী একটা মটরগাড়ি আমার সমস্ত শরীরে একরাশ ধূলি ছড়িয়ে দিয়ে দ্রুত চলে গেল । পলকেই হাঁটার ইচ্ছেটা আমার মন থেকে হাওয়া হয়ে যায় এবং আমি থমকে দাঁড়াই । তারপর কোনোরকম বাঁকের কাছে পৌঁছে দ্বিধান্বিত গলায় একটা রিকশার জন্য চিৎকার করে বলতে থাকি, ‘কোন রিকশা কি চল্লিশ টাকায় সুনবুটিং লেইনে যাবে ?’
একজন রিকশাওয়ালা হ্যাঁ-সূচক ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললো, ‘যাবো । উঠুন, স্যার ।’
আমরা উত্তর দিকের রাস্তায় চলতে শুরু করি । তখনো ধূলির ঝড়ের তান্ডব চলছিল । তবে আমার চোখেমুখে এসে আছরে পড়ছিল না । হয়তো দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস বইছিল ।
আমি যখন রিকশায় চড়ি, তখন রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে খেঁজুরে আলাপ করতে ভীষণ ভালো লাগে । আমার কেন জানি মনে হয়, এই আলাপচারিতা হয়তো তাদের কায়িক কষ্টকে কিছুটা লাঘব করে । এছাড়া আমার নিজের সুবিধা হলো যে রিকশাওয়ালার সঙ্গে কথাবার্তার মাঝে আমি নিজের অজান্তেই গন্তব্যে চলে আসি । কখনই একঘেঁয়েমী বোধ করি না । অযথা রিকশায় চুপচাপ বসে না থেকে নিদেন হলেও আমি রিকশাওয়ালাদের অনায়াসে এতটুকু মানবিক মূল্যবোধ বা সহানুভূতি দেখাতে পারি । হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের মতো দ্রুত দৌঁড়িয়ে আমার পাশ কেটে যাওয়া কোন মানুষের চেয়ে এটা অনেক বেশি মর্যাদাশীল ।
তবে সেদিন আমি কথা বলার উৎসাহ পাইনি । কেননা শিরদাঁড়া ধনুকের মতো বাঁকা করে লোকটির রিকশা টানার দৃশ্যটা আমার চোখে পড়ে এবং তার বুকের ভেতর ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ আমার কানে ভেসে আসে, তখন লোকটার জন্য আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে ।
‘দরকার হলে আস্তে চালাও,’ যতটুকু সম্ভব কন্ঠস্বরে সহানুভূতির রস ঢেলে আমি বললাম, ‘আমার কোনো তাড়া নেই । তোমার রিকশা কোন জায়গার ? ’
‘সুনবুটিং লেইনের পশ্চিম মাথায় ।’
‘কোথায় থাকো ?’
‘নানশ্যুনজেং সড়কের উত্তর দিকে, ঠিক সুনবুটিং লেইনের কোণায় ।’
আচমকা আমাদের কথোপকথনের মাঝখানে নীরবতা এসে পথ আগলে দাঁড়ায় । কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে একসময় আমি নীরবতাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম, ‘হে ঈশ্বর ! প্রতিদিন কেন এত জোরে বাতাস বয় ?’
রিকশাওয়ালা পেছন ফিরে না তাকিয়ে বললো, ‘আপনি অবশ্যই ঈশ্বরকে তা জিজ্ঞেস করতে পারেন । তবে এমন পাগলা বাতাসে আমার মতো অন্য রিকশাওয়ালাদেরও রিকশা চালাতে খুবই কষ্ট হয় । এছাড়া আপনার মতো যাত্রীদেরও ভোগান্তির সীমা থাকে না । অসহ্য !’
এভাবেই আমরা পথ চলার সময় আমাদের আলাপ চালিয়ে যাই । আমার বাসার কাছে পৌঁছার আগেই সন্ধ্যার তরল অন্ধকার জমাট বেঁধেছে । রিকশা থেকে নেমে আমি পকেট থেকে টাকা বের করে গোণতে শুরু করি । সেই ফাঁকে রিকশাওয়ালা একটা ছাই রঙের তোয়ালে দিয়ে মুখের ঘাম মোছে । তারপর অকস্মাৎ একগাল হেসে আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বললো, ‘ভাড়া নিয়ে কোনো পেরেশান করবেন না । ওটা আপনার কাছেই থাকুক । আমরা তো প্রতিবেশি । কি, তাই না ?’
আকস্মিক এই অকল্পনীয় ঘটনাটা আমার জন্য রীতিমতো অস্বস্তিকর । আমি পকেটের সব টাকা দিতে চাইলাম, যা সর্বসাকুল্যে আটচল্লিশ টাকা । সে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত ধূলি-ধুসরিত পথ ধরে পশ্চিম দিকে চলে যায় ।
রিকশাওয়ালার চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার সময় আমার কল্পনার কায়াহীন শরীর রীতিমতো তাকে অনুসরন করে । আমার মানস চক্ষু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রিকশাওয়ালা বাড়ি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী এগিয়ে এসে অভ্যর্থনা জানায় এবং রিকশার সীটের নীচ থেকে সারাদিনের উপার্জিত টাকা তুলে নেয় । তারপর মালিককে ফেরত দেওয়ার জন্য রিকশাওয়ালা রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যায় । ফিরে এসে হাত-মুখ ধোয় । স্ত্রীর সঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার আগে সে আরাম করে সিগারেটে সুখটান দেয় । খাওয়ার সঙ্গে সে সুরা পান করে । তখন তার সমস্ত শরীর হালকা হয়ে যায় এবং সে অনর্গল কথা বলতে থাকে । খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে সে স্ত্রী ও বাচ্চাদের আদর-সোহাগ করে এবং একসময় বিছানায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেয় । অল্প সময়ের মধ্যে সে ঘুমের অতলে তলিয়ে যায় । এই রিকশাওয়ালার মতো কায়িক শ্রমজীবী মানুষদের কাছে আসলে এই গাঢ় নিদ্রাটুকুই একমাত্র বিলাসিতা ।
আমার অসুস্থ মস্তিস্কের ভেতর ভাবনা-চিন্তার রেলগাড়ি আমাকে প্রতিনিয়ত হতাশার বিষাদপুরীতে নিয়ে যায় ।
‘আমার অবস্থা কতই না নাজুক,’ আনমনে আমি বললাম । ‘গত দু’বছর ধরে রাতে আমার ভালো ঘুম হয় না । সে কারণেই আমি অসুস্থ । আমার এই অসুস্থতার জন্য কাউকেই দোষারূপ করতে পারি না । কিন্তু কেন স্ত্রী এবং সন্তান আমার কাছ থেকে তিন হাজার মাইল দূরে থাকবে ? ওরা কি আমার সুখ-দুঃখ এবং আনন্দ-বেদনার অংশীদার হবে না ? আমরা কি চিরদিন দূরে থাকবো ? আমার অসুস্থতা কি এই বিচ্ছেদের জন্য দায়ী ?’
হয়তো তাই হবে । সব আমার দোষ । আমাদের এই দূরত্বের কারণ হলো আমি স্ত্রী এবং সন্তানের ভরনপোষণ যোগাতে পারি না ।
অথচ তারপরেও রিকশাওয়ালা আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে । তার প্রতি আমি সহানুভূতিশীল । কিন্তু তার মতো আমি সচ্ছ্বল নই । না, আমি তার মতো সচ্ছ্বল নই ।
অন্ধকারে আমি গভীর ধ্যানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকি । সময় যতই গড়িয়ে যায়, আমার মনের ভেতর ততই দুঃখ জমা হতে থাকে এবং অশ্রুতে চোখ ভারী হয়ে আসে । একসময় আমি বাড়ির সামনের সিঁড়ি পেরিয়ে ধীর পায়ে রিকশাওয়ালাকে অনুসরণ করি । প্রথমে সে এবং পরে আমি রাস্তার মোড়ে এসে পৌঁছি । মোড়ে এসে এক চক্কর দেওয়ার পর তাকিয়ে দেখি রিকশাওয়ালা একটু থেমে সরু রাস্তার শেষপ্রান্তে একটা জরাজীর্ণ একতলা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে ।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আমি একাকী হাঁটতে থাকি এবং সিটি গেইটের বাইরে চলে যাই । সেখান থেকে ঘুরে পুনরায় হেঁটে রাতের খাবারের জন্য বাড়ি পৌঁছি ।
সেই থেকে রিকশাওয়ালা এবং আমার মধ্যে একধরনের সখ্যতা গড়ে উঠে । তারপর আমি অনেকবার তার রিকশায় চড়েছি । ক্রমশ আমাদের মধ্যে একটা নিবীড় সম্পর্ক গড়ে উঠে ।
।। দুই ।।
পিংজেমেন গেটের বাইরে শহরের বিশাল পরিখা । তবে এই পরিখা শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত চাওইয়াংমেন গেটের বাইরের খালের মতো প্রশস্ত নয় । কিন্তু বসন্ত এবং শরৎকালে প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য এই পরিখা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে । তখন বাতাসে নৌকার পাল তুলে অনায়াসে দক্ষিণ দিকে যাওয়া যায় ।
পরিখার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা মলিন চেহারার বেদনার্ত উইলো গাছের ধূসর ছায়া পানির উপর শুয়ে আছে। গোধূলির শেষ লগ্নে ঘোড়ার পাল এসে সবুজ ঘাস খায় এবং এদিকওদিক চড়ে বেড়ায় । এছাড়া অনেকেই পোষা শিকারী ঈগল পাখি এনে ওড়ার কৌশল অনুশীলন করায় ।
সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে কেউ যদি ফেরীতে উঠে, তাহলে উত্তর দিকে তাকিয়ে সে দেখতে পাবে উইলো গাছের মাথা ফুঁড়ে বের হয়ে আছে সিঝিমেন গেইটের ওয়াচ টাওয়ার । গোধূলির রক্তিম আভা এসে সেই টাওয়ারের গায়ে ছড়িয়ে পড়েছে । বসন্ত বা শরৎকালের কোনো এক অলস বিকেলে এখানে কেউ বেড়াতে এলে দেখতে পাবে চারপাশের দৃশ্যাবলী যেন কোনো এক শিল্পীর নিপুণ হাতের নান্দনিক চিত্রকর্মের মতোই চোখ জুড়ানো অসাধারণ সুন্দর কাজ । অনেক সময় আমার মন কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না, আসলে এই জায়গাটা কর্মব্যস্ত বেইজিং শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত ।
পশ্চিম দিকের অসংখ্য পাহাড়ের চূড়া হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে । ওরা যেন স্বপ্নে বিভোর । আমার মন বলে, আমি যদি একবার ওদের কাছে ডাকি, তাহলে ওরা নির্দ্বিধায় আমার কাছে চলে আসবে । সিঝিমেন গেইটের বাইরে বেশ কিছু হাঁসের খামার রয়েছে । প্রত্যেকদিন বিকেলে হংসীরা দলবেঁধে মনের সুখে পানিতে সাঁতার কাটে । উইলো গাছের আড়ালে ক্লান্ত সূর্য ডোবার ঠিক আগের মুহূর্তে তার শেষ রশ্মিটুকু এসে হংসীদের পিঠের উপর লুটোপুটি খায় ।
জনবহুল এই কর্মচঞ্চল বেইজিং শহরে আমি একাকী বাস করি । মাঝে মাঝে মন খারাপের একটুকরো কালো মেঘ এসে আমার চিন্তা-ভাবনার আকাশকে ঢেকে দেয় । তখন আমি নিরাশার অন্ধকারে ডুবে থাকি । সেই নিরানন্দ সময়ে আমি নিজেকে উদ্দেশ্যহীন এক অচিন মানুষ হিসেবে দেখতে পাই । শহরের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আমি দক্ষিণের শেষপ্রান্তে গিয়ে কখনো সিনেমা বা নাটক দেখি, কখনোবা চায়ের দোকানে বসে সময় কাটাই । আবার অন্য সময় পানশালায় গিয়ে ঊর্বশীদের নৃত্য উপভোগ করি । সেই সময় আমি আমার দূর্বিসহ জীবনের উপস্থিতি ভুলে যাই এবং অন্যদের মতো বুকের ভেতর জমে থাকা দুঃখ-কষ্টকে পাথর চাপা দিয়ে যন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকতে চেষ্টা করি ।
অনেক সময় আমি শহরের বাইরে পিংজেমেন গেইটের কাছে গিয়ে চারপাশের নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী উপভোগ করি । তবে আমি জেইড স্প্রিং পাহাড়ের শান্ত পরিবেশের কথা এড়িয়ে যাই না । না, আমি কখনই তা করি না । তার কারণ প্রায় সারা বছরই আমার পকেট ফাঁকা থাকে । তাই দূর থেকে ইচ্ছে হলেও যখন-তখন এসব সুন্দর জায়গাগুলোতে যেতে পারি না ।
মে মাসের মাঝামাঝি কোনো এক বিকেলে আমার মন ভীষণ খারাপ ছিল । সেদিন বিনা কারণেই আমার মেজাজ বিগড়ে যায় । প্রথমে ভাবলাম, শহরের দক্ষিণের কোনো এক মনোরম জায়গায় গিয়ে সময় কাটিয়ে মনটা ভালো করে আসি । কিন্তু আমি কপর্দকহীন । রিকশা ভাড়ার জন্য আমার পকেটে একটা কানা-কড়িও নেই । তবে আমার কাছে যা আছে, তাহলো আমার এক জোড়া পা । আমি অনায়াসে এই পা দিয়ে পিংজেমেন গেইট পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারি এবং শেষপর্যন্ত আমি তাই করি । আমি একটা উইলো গাছের নিচে পা ছড়িয়ে বসি এবং পাহাড়ের পশ্চিম দিক থেকে ভেসে আসা নির্মল হাওয়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে বুকের ভেতর টেনে নিই ।
আমি শেষ বিকেলের দূরের আকাশের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি । সূর্য ডোবার সময় হঠাৎ সমস্ত বিশ্ব চরাচর যেন লালে লাল হয়ে উঠে । দূরের গীর্জার চূড়া এবং চারপাশের গাছের মাথায় সূর্যের সেই রক্তিম আলোকচ্ছ্বটা এসে পড়েছে । তারপর আস্তে আস্তে বাতাস শান্ত হয়ে আসে । সবকিছুই যেন আমার দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যায় । সেই সময় আমার চারপাশের ছায়াগুলো আমাকে রীতিমতো বিভ্রান্ত করে তোলে । আমি থ হয়ে চুপ করে থেকে ক্রমশ দুঃখের নোনা পানিতে ডুবে যেতে থাকি ।
সারাদিনের ক্লান্ত সূর্য পশ্চিমাকাশে অস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখে আমার সম্বিত ফিরে আসে । তখন অশ্রুতে আমার চোখ ভিজে যায় । নিজেকে ধাতস্থ করে আমি ঘরে ফেরার পথে পা বাড়াই । আমার মনে হচ্ছিল, সব কিছুই যেন স্বপ্নের ভেতর ঘটছে।
পিংজেমেন গেইট পেরিয়ে আমি দক্ষিণে বাঁক নিয়ে নানশ্যুজেং সড়ক ধরে হাঁটতে থাকি । পূর্ব দিকের প্রথম রাস্তাটাই সুনবুটিং লেইন । পুনরায় রাস্তা বাঁক নেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে একটা জরাজীর্ন ঘর থেকে ভীষণ জোরে আওয়াজ আসে। যে কারণেই হোক, আমি কন্ঠস্বর চিনতে পারি । এক পলকের জন্য ভাবলাম । শোনার সঙ্গে সঙ্গে রিকশাওয়ালা গলার আওয়াজ চিনতে আমার কোনো অসুবিধে হলো না । সেখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আমি ঘরের ভেতরের কোলাহলের উৎস বোঝার চেষ্টা করি । রিকশাওয়ালা তার বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করছে । এতদিন রিকশায় চড়ে তার সম্পর্কে যা বুঝেছি, তা হলো সে একজন নিরেট সাদাসিধা মানুষ । তাই এই মুহূর্তের ঝগড়া আমার কাছে কেন যেন অস্বাভাবিক এবং অদ্ভুত লাগছে । সাধারণত সে আগ বাড়িয়ে কথা বলে না, এমনকি সচারচর বেশী কথাও বলে না । কিন্তু কেউ যদি কিছু জিজ্ঞেস করে, তবে তার কাছে সব সময়ই তাৎক্ষণিক জবাব তৈরি থাকে ।
রিকশাওয়ালার দেহের গড়ন লম্বা । কিন্তু বাঁকা পিঠের জন্য তার দৈহিক উচ্চতা ঠিকমতো বোঝা যায় না । আমি জানি না, হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনির জন্যই কি তার পিঠ বেঁকে গেছে, নাকি জন্ম থেকেই বাঁকা । যদিও তাকে দেখলে মনে হবে তার বয়স পঞ্চাশের উপর, কিন্তু সে বলে তার বয়স নাকি মাত্র বিয়াল্লিশ বছর । তার চোখেমুখে ফুটে আছে সংগ্রামী জীবন এবং কঠোর পরিশ্রমের করুণ চিহ্ন । তার ধৈর্য্য এবং সহ্য ক্ষমতা সেই চোখেমুখে কঠিন বাস্তব জীবনের মুখোমুখি হবার শক্তি ও সাহস সঞ্চার করে । তবে আমার কাছে তার চেহারা দুঃখের ছবি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না ।
সত্যি কথা বলতে কি, সমাজে আমার অবস্থা রিকশাওয়ালার চেয়ে খুব বেশী ভালো না । মাঝে মাঝে মনে হয় আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত । রিকশাওয়ালার পেছনে বসে তার সঙ্গে কথা বলার সময় আমি কিছুতেই দূর্ভাগ্য থেকে নিস্কৃতি পাই না, এমনকি দূর্ভাগ্যকে উপেক্ষা করে পালিয়ে যেতেও পারি না । আমি জানি, সেও তার পোড়া কপাল খন্ডাতে পারে না । একজন শিক্ষিত এবং ভদ্রলোক হয়ে বিনা অজুহাতে ভাগ্যকে মেনে নেওয়া আমার উচিত । যখন মনে হয় আমি দুঃখ-কষ্টের ভার আর বইতে পারছি না, তখন আকাশের দিকে মুখ তুলে কান্না করা ছাড়া আমার আর কিছুই করার থাকে না ।
এক পক্ষকাল আগে আমি শহরের দক্ষিণাঞ্চলের এক জায়গায় প্রচুর পরিমানে মদ্যপান করি । তারপর মাতাল হয়ে ঘুমোনোর জন্য কাছাকাছি এক বন্ধুর বাসায় যাই । কিন্তু আকাশের শরীর বেয়ে বাঁকা চাঁদ ওঠার মনোরম দৃশ্য অবলোকন করার জন্য আমি মধ্যরাতে জেগে উঠি এবং একটা রিকশা নিয়ে সিদান যাই । সেখানে পুনরায় রিকশাওয়ালার সঙ্গে আমার দেখা হয় ।
সেই সময় আমার খুব খারাপ লাগছিল । মাতাল অবস্থা আমাকে রীতিমতো হতবুদ্ধি করেছে । নিস্তব্ধ দীর্ঘ রাস্তায় কদাচিৎ একরাশ ধূলি উড়িয়ে গাড়ি চলে যাচ্ছিল, যা আমার মনকে আরো বেশী শূন্যতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল । এই বিষণ্ন অবস্থায় রিকশাওয়ালার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন অভিযোগ মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমাকে শুনতে হয়েছে।
রিকশাওয়ালা বললো যে তার সময় খুবই খারাপ এবং সংসারের চাকা সচল রাখতে সে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে । মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে চাল-ডাল, তেল-নুন সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপাতির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে । এছাড়া রিকশার মালিক ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে কিভাবে তাকে জব্দ করে বেশী ভাড়া আদায় করা যায় । সবসময় মালিক রিকশার চাকার কোনো শিক ভেঙ্গে গেলে কিংবা ছোট স্ক্রু হারিয়ে গেলে বেশি পরিমানে ক্ষতিপূরণ দাবী করে । যে কোনো সাধারণ দিনের পুরো উপার্জন দিয়ে মালিককে সে দৈনিক ভাড়া পরিশোধ করতে পারে না । তার উপর চাকার শিক ভাঙ্গা কিংবা স্ক্রু হারিয়ে যাওয়ার মতো ছোটখাটো দূর্ঘটনা ঘটলে তো কোন কথাই নেই । বাড়িতে তার স্ত্রী সংসারের খরচের কোনো হিসেব রাখে না । বরং সবসময় সে আলতুফালতু খরচ করে । তাদের ঘরে দু’টি ছেলে আছে । একটার বয়স আট বছর এবং অন্যটার বয়স তিন বছর ।
চাঁদনী রাতের ভরা জোস্নায় আমি রিকশাওয়ালার ঘরে বসেছি । একসময় কেন জানি আমার মনে হলো, আমি এক অজানা বিষণ্নতার অতলে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছি এবং একের পর এক লোকটির অভিযোগ শুনছি । তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমার অনুভূতিগুলো ডালপালা মেলে বিকশিত হয় । তখন আমি বুঝতে পারি আমরা যতই আলাপ করছি, ততই যেন লোকটির, এমনকি আমার ও আমাদের মতো আরও অনেকের দুঃখ-কষ্টের সীমানা বড় হতে থাকে । আমার প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছিল, আমি লোকটির সঙ্গে একাত্ব হয়ে কিছুক্ষণ কেঁদে মনটা হালকা করি । কিন্তু আমার পড়নের পোশাক, দামী গাউন এবং আমার মনুষ্যত্ববোধ সহানুভূতি প্রকাশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ।
ইচ্ছে করেই আমি সেই রাতের পর থেকে রিকশাওয়ালাকে এড়িয়ে চলি ।
কিন্তু এখন পিংজেমেন গেইট থেকে ফেরার পথে শুনতে পেলাম রিকশাওয়ালা অন্য একজনের সঙ্গে চেঁচিয়ে ঝগড়া করছে। এতদিন তাকে এড়িয়ে চলার জন্য আমি নিজেকে প্রচন্ড ধিক্কার দিলাম । এক বা দু’মিনিটের মধ্যে বুঝতে পারলাম, সে তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করছে ।
একসময় দ্বিধা-দ্বন্দ্বের জড়তা কাটিয়ে আমি রিকশাওয়ালার চিৎকারের আওয়াজ অনুসরণ করে একটা জরাজীর্ণ ঘরের ভেতর প্রবেশ করি । এক কক্ষ ঘরের ভেতর অর্ধেকটা জুড়ে ইঁটের বিশাল বিছানা । যদিও রাত হয়নি, কিন্তু ঘরের ভেতর অন্ধকার । প্রথমে আমি কিছুই দেখতে পাইনি । যাহোক, কিছুক্ষণের মধ্যে পরিবেশের সঙ্গে চোখ মানিয়ে নেওয়ার পর আমি রিকশাওয়ালার সঙ্গে কুশল বিনিময় করি । সেই মুহূর্তে সে বিছানায় কুঁজো হয়ে বসে একজন মহিলার সঙ্গে হাত-পা নেড়ে কথা বলছিল । বিছানার উল্টো পাশে ছেলে দু’টি শুয়ে আছে ।
একসময় আমি রিকশাওয়ালাকে স্ত্রীর উপর রাগের কারণ জিজ্ঞেস করি । তৎক্ষণাৎ সে স্ত্রীর দিকে আঙুল উঁচিয়ে বললো, ‘আমার কষ্টার্জিত উপার্জন থেকে সে তিনটা রূপার মুদ্রা খরচ করে এই কাপড় কিনেছে । এটা দিয়ে লাশ মোড়ানো যাবে ।’
কথা বলার সময় রিকশাওয়ালা মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা জিনিসপত্রের উপর সজোরে লাথি মারে । একসময় রাগ কিছুটা কমে এলে সে পুনরায় বলতে শুরু করে, ‘এই মহিলা কখনই আমার পরিস্থিতি বুঝতে চায় না, এমনকি আমার চাওয়া-পাওয়ার কোনো কিছুই তোয়াক্কা করে না । তাহলে কেন আমি এত কষ্ট করে টাকা-পয়সা জমাচ্ছি ? তিলে তিলে টাকা জমিয়ে আমি একটা রিকশা কিনতে চাই, যেন ভাড়ার টাকা আর গোণতে না হয় । এখন গরম পড়েছে । এই সময় গরীবদের জামা-কাপড় লাগে না । আমরা উদোম শরীরে থাকতে পারি । কিন্তু সে এই কাপড় কিনবেই । কারোর অমতে এধরনের কাজ করে যে তাকে অনায়াসে পাগল বানানো যায় ।’
রিকশাওয়ালার গভীর হতাশা এবং এন্তার অনুযোগের সঙ্গে আমি সহমত পোষন করি এবং আন্তরিক সমবেদনা জানাই । একসময় আমি বললাম, ‘তুমি তো জানো, আব্রু রক্ষা করার জন্য আমাদের কাপড় পড়তে হয় । ধৈর্য্য ধরো । সামনে তুমি আরো অনেক টাকা জমাতে পারবে ।’
রিকশাওয়ালার কোনো কথা বলে না । শুধু তার স্ত্রীর হেঁচকির শব্দ বন্ধ ঘরের গুমোট হাওয়ায় অনুরণিত হতে থাকে ।
এই মুহূর্তে আমার পকেটে যদি কোনো টাকা-পয়সা থাকতো, তাহলে আমি তার পুরোটাই রিকশাওয়ালার হাতে তুলে দিয়ে বলতাম, সে যেন তার স্ত্রীর সঙ্গে আর কখনো রাগারাগি বা ঝগড়া-বিবাদ না করে । কিন্তু আমার দূর্ভাগ্য, পকেটে একটা কানাকড়িও নেই ।
ওখানে দাঁড়িয়ে আমি ভাবতে থাকি । কিন্তু সমাধানের কোনো পথ খুঁজে পাই না । কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমি অপেক্ষার প্রহর গুণি । হঠাৎ জ্যাকেটের পকেটে হাতঘড়ির টিক টিক শব্দ শুনতে পেলাম । আমার মনে হলো ঘড়িটা সরাসরি তাকে দিলে সে হয়তো মনঃক্ষুন্ন হবে এবং তৎক্ষণাৎ নিতে সংকোচ বোধ করবে । যাহোক, চট করে আমার মস্তিস্কের ভেতর একটা বুদ্ধি এসে উপস্থিত হয় ।
রিকশাওয়ালাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমি মনে মনে কয়েকটা কথা গুছিয়ে নিই । তারপর লোকটির দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে পকেট থেকে ঘড়িটা বের করি এবং একটু এগিয়ে গিয়ে সন্তর্পণে টেবিলের উপর রাখি । তারপর কোনো কথা না বলে নীরবে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি । আমার মনের আকাশে পুনরায় কালো মেঘের মতো অক্ষমতা জমা হতে থাকে । আমার অসহায়তার জন্য আমি নিজেকে প্রচন্ড ধিক্কার দিই ।
পরদিন সকালে আমি যখন পোশাক পড়ে তৈরি হচ্ছি, তখন কেউ একজন আমার দরজায় করাঘাত করে । দরজা খুলে তাকিয়ে দেখি রিকশাওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে । আমাকে দেখে সে তড়িঘড়ি করে রিকশার সীটের নিচে এলোপাথারি কিছু একটা খুঁজতে থাকে । একসময় সে সীটের নীচ থেকে আমার ঘড়িটা বের করে ।
‘স্যার, এটা কি আপনার ঘড়ি ?’ রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করে, ‘গতকাল রাতে আপনি কি ভুল করে আমার ঘরে টেবিলের উপর ঘড়িটা ফেলে এসেছেন ?’
তৎক্ষণাৎ আমার মুখ আরক্তিম হয়ে উঠে । সঙ্গে সঙ্গে আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, ‘না, এটা আমার ঘড়ি না । আমি কোনো ঘড়ি হারাইনি ।’
আশ্চর্য্য ! অদ্ভুত ! স্বগোক্তির মতো করে রিকশাওয়ালা বার কয়েক উচ্চারণ করে । তারপর ঘড়ি পাওয়ার কাহিনী সে বিশদভাবে বললো । আমি জোর গলায় বারবার অস্বীকার করি । যখন সে বুঝতে পারলো যে হয়তো ঘড়িটা আমার নয়, তখন সে কোনো কথা না বাড়িয়ে ঘড়ি নিয়ে চলে যায় ।
।। তিন ।।
গ্রীষ্মকাল শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় এক পক্ষকাল অনবরত বৃষ্টি হয়েছে । অসাবধানতাবশতঃ রাতে আমি ঠিক মতো নিজেকে ঢেকে রাখিনি । ফলে আমার ভীষণ ঠান্ডা লেগেছে । পুরো দু’সপ্তাহ ভুগেছি । যাহোক, সুস্থ হওয়ার তিনদিন পরে আবহাওয়া ভালো হয়েছে । বাইরে হাঁটাহাঁটি করার জন্য আমি একটা বেতের লাঠি নিয়ে বেরোই ।
আমার অসুস্থতার পর ওটাই ছিল ঘর থেকে বাইরে বেরোনোর প্রথম ঘটনা । পিংজিমেন গেটের বাইরে পরিখার কাছে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমি যখন সরু রাস্তার বাঁকে জরাজীর্ণ বাড়িটা পেরিয়ে পশ্চিম দিকে যাচ্ছিলাম, তখন দেখতে পেলাম একদল লোক দরজায় দাঁড়িয়ে আছে এবং ঘরের ভেতর থেকে হেঁচকির সঙ্গে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে । পলকেই আমি ভাবলাম, রিকশাওয়ালা হয়তো আবার স্ত্রীর সঙ্গে আবার ঝগড়া করছে এবং উৎসুক লোকজন দরজায় দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করছে ।
‘আজ যদি রিকশাওয়ালা টাকা-পয়সা নিয়ে পুনরায় ঝগড়া করে, তাহলে আমি ওদের সাহায্য করতে পারি,’ আপনমনে বললাম । আমার চিকিৎসা বাবদ পাঠানো টাকা থেকে এখনো বেশ কিছু টাকা অবশিষ্ট আছে ।
ভীরু পায়ে আমি দরজার কাছে এগিয়ে যাই । ভেতরে রিকশাওয়ালার স্ত্রী । ইঁটের বিছানার পাশে বসে সে বিলাপ করে কাঁদছে । খুব দ্রুত ঘরের চারপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে দেখি রিকশাওয়ালার কোনো হদিশ নেই । বাচ্চা ছেলেটা মায়ের পায়ের কাছে মাটিতে বসে আছে এবং সেও কাঁদছে ।
পাথরের মূর্তির মতো আমি এক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকি । ঘটনার কিছুই ঠাহর করতে পারি না । তবে দরজায় দাঁড়ানো কয়েকজন লোকের দীর্ঘ নিঃশ্বাসের ভারি শব্দ শুনতে পাই । বাদবাকি লোকজন অশ্রুভেজা চোখ মুছতে মুছতে শোকার্ত গলায় বলছে, ‘আহা! পরিতাপের বিষয় । আহা! খুবই দুঃখজনক ঘটনা ।’
আমার পাশে দাঁড়ানো একজন মধ্যবয়সী মহিলাকে ঘটনার কারণ জিজ্ঞেস করতেই আমি যেন ভীষণ জোরে ধাক্কা খেলাম । মহিলা বললো যে বন্যায় ভরে যাওয়া দক্ষিণের জলাশয়ে রিকশাওয়ালা কয়েকদিন আগে পানিতে ডুবে মারা গেছে ।
নিখোঁজ হওয়ার পরদিন সন্ধ্যায় রিকশাওয়ালার এক সহকর্মী মৃতদেহ দেখে এসে রিকশাওয়ালার স্ত্রীকে দুঃসংবাদ দিয়েছে । এর আগে মহিলা জানতো না যে তার স্বামী মারা গেছে । তৎক্ষণাৎ মহিলা দু’সন্তানকে নিয়ে তুমুল বৃষ্টির মধ্যে নানহিং সড়কের দক্ষিণে সেই মর্মান্তিক ঘটনার জায়গায় গিয়েছে । একসময় মহিলা পানিতে ডুবে আত্মঘাতী হতে চেয়েছিল । কিন্তু বাচ্চাদের আর্তচিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন দৌঁড়ে এসে মহিলাকে উদ্ধার করে ।
যাহোক, পরদিন পাড়া-প্রতিবেশী দয়ালু এবং সহানুভূতিশীল লোকজন চাঁদা তুলে রিকশাওয়ালার সৎকারের ব্যবস্থা করেছিল । এছাড়া সংসার চালানোর জন্য মহিলার হাতে তারা খাদ্য-খাবার এবং নগদ অর্থকড়ি তুলে দিয়েছিল । সেই থেকে স্বামী হারিয়ে মহিলা অনবরত কেঁদেই চলেছে ।
আমি যখন বিয়োগান্তক এবং মর্মস্পর্শী ঘটনার আদ্যপান্ত শুনলাম এবং রিকশাওয়ালার স্ত্রীর শোকার্ত অবস্থা দেখলাম, তখন অবলীলায় আমার মনটা বিষণ্নতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে ।
এক মাসের বেশী আগে কোনো এক মধ্যরাতে চিয়ানমেন গেইট থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমি এই রিকশাওয়ালার রিকশায় করে এসেছিলাম । তখন তার জীবনের করুণ কাহিনী শুনে আমার যেমন মন খারাপ হয়েছিল, এই মুহূর্তে ঠিক একই রকম মন খারাপের অনুভূতি অনুভব করছি । মহিলার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে । জানি না কেন, তখন আমার স্ত্রী ও মেয়েটার কথা মনে পড়ে । যে বাচ্চাটি মেঝেতে বসে কাঁদছে, আমার মেয়েটাও প্রায় একই বয়সী । বাচ্চাটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকার সময় আমার দু’চোখ অশ্রুতে ভরে যায় ।
সেই সময় একটা অর্ধ-উলঙ্গ আট-নয় বছরের ছেলে আমাদের ঠেলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে । খুচরো কয়েকটি মুদ্রা খোলা হাতের মুঠোয় নিয়ে সে ভীরু এবং কম্পিত গলায় বললো, ‘মা দেখ, এগুলো একজন আমাকে দিয়েছে ।’
ছেলেটির গম্ভীর মুখভঙ্গি এবং রীতিমতো হাস্যকর ভাবে প্রসারিত হাতের দিকে তাকিয়ে দর্শকদের অনেকে মুখ টিপে হাসতে হাসতে নিজেদের পথে ফিরে যায় । সেখানে মাত্র দু’জন বয়স্ক মহিলা সজল চোখে বসেছিল ।
ঘরের মধ্যে কয়েকজন আগুন্তুক দেখে আমি ভেতরে প্রবেশ করি । তারপর রিকশাওয়ালার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করি, ‘আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন ?’
মহিলা অশ্রুভেজা ফোলা চোখ তুলে আমার দিকে তাকায় । হ্যাঁ-সূচক ভঙ্গিতে মাথা দুলিয়ে সে সঙ্গে সঙ্গেই দৃষ্টি আনত করে এবং আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ে । আমি হতবিহ্বল হয়ে বারবার তাকে কান্না থামানোর চেষ্টা করি, কিন্তু কিছুতেই পারি না । সেই অসহায় মুহূর্তে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থেকে মহিলার কান্না শোনা ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না । কয়েক মিনিট পরে একসময় তাকিয়ে দেখি ইতিমধ্যে বেশ অনেক লোক দরজার বাইরে এসে জড়ো হয়েছে । ওরা সবাই হা করে তাকিয়ে আমার অসহায়ত্বকে দেখছিল । লোকগুলোর চাহনি আমার মোটেও ভালো লাগেনি । আমার সমস্ত শরীর রাগে-ক্ষোভে ফুঁসছিল । আমি এক কদম এগিয়ে গিয়ে রীতিমতো চিৎকার করে বললাম, ‘অমন করে তাকিয়ে কি দেখছেন ? মৃত স্বামীর জন্য মহিলা কাঁদছে । এটা এমন কি তামাশার বিষয় যে ওভাবে ট্যারা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে হবে ?’
আমি যে ভীষণ রেগেছি, তা রিকশাওয়ালার বড় ছেলেটির দৃষ্টি এড়ায়নি । যাহোক, প্রচন্ড রাগে আমি ঠাস করে নড়বড়ে দরজা বন্ধ করি । আর অমনি ঘরের ভেতর অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে । আচমকা ছেলেটির মা কান্না থামিয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আমার বিব্রত মুখের দিকে তাকায় । আমি এই সুযোগে পুরোপুরি কান্না থামানোর জন্য মহিলাকে বিশেষ অনুরোধ করি ।
‘আপনাকেই কিন্তু এই মাসুম বাচ্চা দু’টিকে লালনপালন করতে হবে,’ স্বান্ত্বনার সুরে আমি বললাম । ‘সারাক্ষণ কান্নাকাটি করলে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না । আমার যদি কোনো সাহায্য এবং সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাহলে বলবেন । আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো ।’
ভেজা গলায় মহিলা বললো, ‘হঠাৎ করে সে যে এভাবে না-ফেরার দেশে চলে যাবে, তা মেনে নিতে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে । আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, সে কি আত্মঘাতী হয়েছে, নাকি ... ।’
মহিলার কান্নার গমকে এবং কন্ঠস্বরে একধরনের আন্তরিকতার ছোঁয়া লেগে আছে । আমি জানি না, এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিত । যাহোক, আমি পকেট থেকে পাঁচ টাকার নোট বের করে বললাম, ‘যদিও এ টাকাটা তেমন কিছু না, তবুও রাখুন এবং প্রয়োজনে খরচ করবেন ।’
এক পলকের জন্য কান্না থামিয়ে মহিলা বললো, ‘আমরা ... আমাদের টাকা-পয়সার দরকার নেই । হায় ! তার মৃত্যুটা বড়ই মর্মান্তিক । হতভাগা লোকটা সবসময়ই ভাবতো, একদিন সে নিজেই একটা রিকশা কিনবে । কিন্তু দূর্ভাগ্য, কখনই তা সম্ভব হয়ে উঠেনি । কিন্তু এখন ... । তার কবরের উপর পোড়ানোর জন্য আমি গতপরশু নিজেই দোকানে গিয়ে একটা কাগজের রিকশা কিনতে চেয়েছিলাম । কিন্তু আমি কিনতে পারিনি । কেননা ওটার মূল্য ছিল ছয় টাকা । আমার কাছে টাকা ছিল না । স্যার, আপনি খুব দয়ালু । মৃত লোকটির জন্য কি আপনি একটা কাগজের রিকশা কিনে দেবেন ?’
বলেই মহিলা পুনরায় কাঁদতে থাকে । তার কান্না দেখে আমি ভীষণ অস্বস্তি অনুভব করি এবং নিথর হয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকি । একসময় আমি নোটটা পকেটে ঢুকিয়ে ভরসা দিয়ে বললাম, ‘আর কাঁদবেন না । আপনার স্বামী আমার বন্ধু ছিল । অবশ্যই আমি তার জন্য একটা কাগজের রিকশা কিনবো এবং আপনার সঙ্গে গিয়ে সেটা তার কবরে পোড়াবো।’
তারপর বাচ্চাদের সঙ্গে সামান্য কথাবার্তা বলে আমি সেখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসি । যাহোক, জীবনে আমি কখনই এধরনের পরিস্থিতির মোকাবেলা করিনি । ফলে কাগজের রিকশা কেনার জন্য আমাকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে । শেষপর্যন্ত সিপাইলুর কাছে একটা দোকান খুঁজে পেয়েছি । আমি পুরো টাকা দিয়ে দোকানীকে বললাম, রিকশাটা আমার খুব তাড়াতড়ি লাগবে । দোকানী আমার কাছে দু’দিন সময় চেয়ে নেয় ।
সেদিন ঝকঝকে সুন্দর দিন ছিল । নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমি খাবার খেয়ে তৈরি হয়েছি । মহিলা, তার দু’সন্তান এবং আমার কবরস্থানে যাওয়ার জন্য চারটা রিকশা ভাড়া করি । কাগজের তৈরি সুন্দর রিকশা এবং দু’আটি কাগজের মেকি টাকা সামনের রিকশায় রাখি । প্রথম রিকশাকে আমরা অনুসরন করি । আমরা যখন সুনজিমেন সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন রাস্তার দু’পাশের পথচারীরা আমার এবং কান্নাভেজা ফোলা চোখের সদ্য বিধবা মধ্য-বয়সী মহিলার দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ।
আশেপাশের লোকজনের, বিশেষ করে গাড়ির ভেতরের উৎসুক লোকদের অনুসন্ধিৎসু চাহনি আমাকে রীতিমতো হিতাহিত জ্ঞান শূন্য করে তোলে । মনে মনে আমি ওদের অভিসম্পাত দিই । সেই সময় আমার ভেতরে অদমনীয় ক্রোধের সিংহটা জেগে উঠে ।
‘শুয়োর ! কুত্তা !’ আমি ভীষণ জোরে চিৎকার করে বলতে চাইলাম, ‘তোরা কি জানিস, অমন করে তাকিয়ে কি দেখছিস ? আমরা আমার এক গরীব রিকশাওয়ালা বন্ধুর কবরস্থানে যাচ্ছি । তোদের জন্যই মৃত্যু তাকে না-ফেরার দেশে নিয়ে গেছে । এখন তোরা তার স্মৃতিচিহ্নের দিকে বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছিস ।’
গল্পসূত্রঃ ‘নিরহঙ্কার আত্মত্যাগ’ গল্পটি ইউ ডাফুর ইংরেজিতে ‘এ হাম্বল স্যাক্রিফাইস্’ গল্পের অনুবাদ । গল্পটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন হুয়াং শাওচেন । ইংরেজিতে গল্পটি ১৯৫৭ সালে ‘চায়নীজ লিটারেচার’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত ‘নাইটস্ অব স্প্রিং ফিভার অ্যান্ড আদার রাইটিংস্’ গল্পসংকলনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং সেখান থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে ।
0 মন্তব্যসমূহ