সকালবেলা ওর নাম ছিল প্রেম, দুপুরে সে-ই হয়ে গেল সমীর, হাওয়া কা ঝোঁকা, আর বিকেলে... আরে ওই যে, শান্ত বিনম্রতার সঙ্গে ফিরছে, হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল, মোড়ের মাথায় বজরঙ্গবলীর মূর্তি দেখেছে যে!
ঠোঁট নড়ছে
‘জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর
জয় কাপিস তিহুন লোক উজাগর
সঙ্কট সে হনুমান ছুটবাই
মন করম বচন ধ্যান জো লাভাই’
বলতে বলতেই সঙ্কট এসে হাজির। ফোন বাজছে। সন্দেহজনক একটা নম্বর। পবন দেখেই বুঝে যায় ফের একটা মুসিবতের সামনা করতে হবে তাকে। কিন্তু সঙ্কট থেকে পালিয়ে যাওয়া তার স্বভাব নয়। তাই ফোনটা ধরেই ফেলে সে। অবশ্য ধরার আগে একবার ঝাঁকিয়ে নিতে ভোলে না। তার বিশ্বাস এভাবে ঝাঁকিয়ে নিলে সব অশুভ ঝর ঝর করে নিচে পড়ে যায়!
‘হেলু’
‘পবনকুমারচতুর্বেদী?’
‘হাঁজী।আপকা শুভনাম?’
উল্টোদিকের লোকটি এ প্রশ্নের উত্তরে শুভ অশুভ কোন নামই বলে না। তার বদলে সে একটি ঠিকানা বলে- দরিয়াগঞ্জের একটা পুরনো হোটেলের ঠিকানা। সেখানে আজ ঠিক সন্ধে সাতটায় তাকে পৌঁছে যেতে হবে।
লোকটার গলার আওয়াজ ঠিক পরীক্ষার হলের শেষ ঘণ্টার মতো, তারপর আর কিছু লেখার বা বলার চেষ্টা বৃথা। তবু পবন বলে ফেলে
‘জরুর জরুর।লেকিন মামলা ক্যায়া হ্যায়?’
উত্তরে লোকটি যা বলল তাতে এমন হাট্টাকাট্টা পবনকুমারের শিরদাঁড়া দিয়েও হিমস্রোত খেলে গেল।
‘মুন্নিকো ছোড় আয়া থা না আপ? অ্যায়সে হি কুছ কাম। ইয়াদ রাখনা ইয়ে দেশ কা কাম হ্যায়। কুছ গড়বড়ি মত কিজিয়ে’
দেশ কা কাম! পবনের শরীরটা উড়তে থাকে হাওয়ায়। ‘দেশকা ধরতি সোনা উগলে’থেকে‘এ দেশ হ্যায় তুমহারা নেতা তুম হি হো কালকে’–ছোটবেলা থেকে শোনা যাবতীয় দেশাত্মবোধক গান বাজতে থাকে বাতাসে। পবন, সুরিলা সফররত পবন, হাসি হাসি মুখে বজরঙ্গবলীর মূর্তির দিকে তাকিয়ে হকচকিয়ে যায়। এই প্রথম সে খেয়াল করে বজরঙ্গবলীর মূর্তির চেরা বুকে রামসীতার বদলে ভারতবষের ম্যাপ আঁকা!
২.
‘হাওয়া খুব খারাপ বেটা’ জ্ঞান হবার পর থেকেই এ কথা শুনে এসেছে পবন। নানা, বাবা, চাচা আরও কত বুজরুগের মুখে। আজ সন্ধের হাওয়াটা কিন্তু চমৎকার। রকমারি পরোটা, কাবাব আর সোন হালুয়ার হরেকমিশেলি গন্ধের সঙ্গে আরও কী যেন মিশে রয়েছে। মনটা চনমনে করে দিচ্ছে। আবার, আবার বেরিয়ে পড়বে সে। দেশের কাজে!
পুরনো দিল্লির এলাকা দরিয়াগঞ্জ, সেখানে গলি তস্য গলি পেরিয়ে হোটেলটাকে খুঁজে পেল পবন। দাঁড়িয়ে নাম্বার মেলাচ্ছে, অমনি ওর ফোনটা একবার বেজেই ধরতে ধরতে কেটে গেল। পবন দেখল সেই আগের নাম্বারটা। কল ব্যাক করবে কিনা ভাবছে, তখুনি হাওয়ায় মিশে থাকা দুজন লোক দুদিক থেকে এসে ওকে চেপে ধরল। কিছু বোঝার আগেই একটা আধো অন্ধকার ঘরে পৌঁছে গেল পবন। যে গন্ধটা ও এতক্ষণ পাচ্ছিল, সন্ধে থেকে ওকে চনমনে করে তুলছিল, এ ঘরে ঢোকার পর থেকে সেটা আরও বেশি করে নাকে এসে লাগছে। কেমন যেন নেশা ধরানো ঝিমঝিমে একটা গন্ধ এ ঘরের হাওয়ায়। পবনের শরীর অবশ হয়ে আসছিল। হঠাৎ সে পরীক্ষার হলের শেষ ঘণ্টার মতো চেনা গলার আওয়াজে চমকে ওঠে। ভয়ের অনুভূতিটা ফিরে আসে। সে বুঝতে পারে লোকটা এই ঘরে নেই, পাশের ঘর বা আরও দূর থেকে আওয়াজটা ভেসে আসছে। নাকি এটা ইচ্ছে করেই পবনকে ভড়কে দেবার জন্যে করা হয়েছে? আরে! তার মনে পড়ে যায়! এটা তো বিগ বসের সেটের মতো কায়দা। সেই লোকটাই নয় তো! তখন তো ভাইজান ভাইজান বলে পায়ে পড়ে যাচ্ছিল, আর আজ তাকে! উত্তেজনায় সে উঠে দাঁড়াতে চায়, অমনি তাকে পেছন থেকে চেপে ধরে বসিয়ে দেয় কারা। মানে সেই লোকদুটো এখনো তার পেছনে সেঁটে আছে ফেভিকলের মতো! বাধ্য হয়ে বসে পড়ে পবন। আপাতত শোনা ছাড়া অন্য কোন কাজ নেই তার।
‘পবনজী। জাদা স্মার্ট হোনে কি কোশিশ মত কিজিয়ে। আপনাকে যাকে বর্ডার পার করে রেখে আসতে হবে, তিনি আপনার সামনেই বসে আছেন’
চমকে ওঠে পবন কুমার। একেবারে সামনে! অথচ এতক্ষণ সে কিছুই টের পায়নি! তার মানে এই সেই ঝিমঝিম করা গন্ধের উৎস, মনে মনে আবার একটু হনুমান চালিশা আওড়ে নেয় পবন
‘সঙ্কটসেহনুমানছুটবাই
মন করম বচন ধ্যান জো লাভাই’
আলোটা একটু বাড়ল মনে হল। তার ঠিক সামনেই একটা সিংগল সোফা ছিল এতক্ষণ বুঝতেই পারেনি পবনকুমার। আর তাতে বসে! ছিটকে উঠে পবন বলে ‘আপ?’
সময় একটি ঝরে পড়া গোলাপের মতো, যতদিন ফুটে ছিল, কত মুগ্ধতা টেনেছে, কিন্তু হায়! ঝরে পড়া গোলাপকে তার এক অনুপল আগের আশ্রয় শাখায় আর ফেরানো যায় না। আরব সাগর দিয়ে ইতিমধ্যে কত জল বয়ে গেছে, কাল থাবা বসিয়েছে এঁর আসমুদ্রহিমাচল কাঁপানো রূপে, তবু সেই চোখ, সেই নখরা, পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে থাকলেও চিনতে অসুবিধে হবে না। আহা! হাওয়া হাওয়াই! এঁকে রেখে আসতে হবে কেন? এতক্ষণের চনমনে ভাব, হাওয়ায় বাজা ‘ভারতভূমি জান সে পেয়ারা হ্যায়’ইত্যাদিইত্যাদিকে যেন গ্রাফিক ইকুইলাইজার দিয়ে খুব নিচু পরদায় বেঁধে দিয়েছে। হাওয়া হাওয়াই হাতের পাখা ননস্টপ নাড়তে নাড়তে, পবনের মিইয়ে যাওয়া মুখের দিকে অজস্রবার চোখ পিটপিট করে বলে-
‘হাঁ ম্যায়’
পবন কুমার সেই চোখের দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে না বলে পারে না ‘বিলকুল হিরণী জ্যায়সি আঁখে!’
হরিণের কথায় শিউরে ওঠেন হাওয়া হাওয়াই
‘হরিণ? না, না হরিণ দেখলেই তো আবার’
ঝনঝন করে হাসেন হাওয়া হাওয়াই। পবনকুমারের রক্তে ভাঙ্গা কাচ ঢুকে যায়।
৩.
আকাশ ভরা তারার নিচে খাটিয়ায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিল পবন। তার অবস্থার অনেক উন্নতি ঘটলেও এই খাটিয়াটি বদলায়নি, বদলায়নি সকালে চায়ের সঙ্গে বাসি রুটি ভিজিয়ে খাবার অভ্যেসও। কিন্তু এই দেশ কা কামটা যেন কেমন? খাটিয়ায় শুয়ে শুয়ে এটাই ভাবছিল পবন। মুন্নিকে রেখে এসেছিল, কাজটা কঠিন ছিল বটে। কিন্তু মুন্নির জন্য ওদেশে সহানুভূতির হাওয়া ছিল। তাছাড়া হাওয়া হাওয়াইকে কেন রেখে আসতে হবে মাথায় ঢুকছে না পবনের। দ্বিতীয় বার কাম ব্যাক করা ছাড়া আর কোন অপরাধ করেছেন নাকি? সেটাতে কার ক্ষতি হতে পারে ভাবল পবন। এখনকার নায়িকাদের মধ্যে কেউ কি হাওয়া হাওয়াইয়ের এই কাম ব্যাক সাক্সেসে জেলাস? সে বা তারাই এভাবে তাদের পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে চাইছে? কিন্তু সেটা দেশ কা কাম হবে কী করে? পবন শুয়ে শুয়ে ছটফট করে খাটিয়ায়। ঘুম আসে না তার। তাকে বলা হয়েছে ঠিক সময়ে তাকে যাবার দিনক্ষণ সব জানিয়ে দেওয়া হবে, আর সেটা যখন খুশি হতে পারে। পবন যেন তৈরি থাকে। পবন তো সব সময় তৈরি, শুধু তার মনের মধ্যে তৈরি হওয়া প্রশ্নটার যদি উত্তর পাওয়া যেত।
হুপ হুপ করে আওয়াজ হয় খুব কাছ থেকে। পবন শশব্যস্ত হয়ে উঠে বসে। কৃপা করে হনুমানজি দর্শন দিতে এসেছেন, এখনি তার সব সঙ্কট দূর হয়ে যাবে। কোথায় কী। পবনের চোখ ফাঁকা আলসে থেকে ঘুরে আসে। আবার হুপ হুপ।আরে তার মোবাইল বাজছে। কখন যে এমন একটা রিং টোন করে রেখেছে কে জানে। নাহ, এ নিশ্চয় কোন বাচ্চার কাজ।
তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরে পবন
সেই গলা।
‘কাল সন্ধে সাতটায় রওনা। বাড়ি থেকেই তোমাকে তুলে নেওয়া হবে।'
‘আর উনি?’
‘সেটা তোমার জানার বিষয় নয়’
‘কিন্তু এটা তো বলবেন কেন ওঁকে রেখে আসতে হবে?’
ওপারে এক মুহূর্তের নীরবতা। পবন বোঝে এ প্রশ্নটার উত্তর পাওয়া যাবে না। ঠিক তখনি তাকে অবাক করে লোকটি বলে ওঠে
‘মোগাম্বোর ডেরা থেকে কিছু গোপন নথি বার করে আনতে হবে। এ কাজ উনি ছাড়া কেউ পারবেন না।’
‘কিন্তু সে যে ভীষণ ঝুঁকির কাজ। উনি যদি ধরা পড়ে যান?’
‘সেটা তোমার ভাবার বিষয় নয়। মুন্নিকে রেখে আসার জন্যে তুমি কোন টাকা পাওনি। এবার পাবে।’
রাগে পবনের সিক্স প্যাক ফুলে ওঠে। তাকে টাকা দেখানো! কিন্তু দেশ! তার ওপর ওই হরিণের মতো চোখ!
সে বলতে চায় ‘আপ ফিকর না কিজিয়ে।আপকা কাম হো জায়েগা।'
তার আগেই ফোন কেটে গেছে।
৪.
চারদিকে শুধু বালি আর বালি। মাথায় ছাতা ধরার কেউ নেই, পেছনে ক্যামেরা নেই, পছন্দ না হলে স্ক্রিপ্ট বদলানোর সুযোগ নেই। শুধু একভাবে হেঁটে যাওয়া। কথামতো বাড়ি থেকেই পবনকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। গাড়িতে উঠে পবন সেই ঝিমঝিম করা গন্ধটা পেল। হাওয়া হাওয়াই আগে থেকেই বসে আছেন গাড়িতে। সে কথা বলার চেষ্টা করায় হাওয়া হাওয়াই ইশারায় ড্রাইভারকে দেখিয়েছিলেন।
অনেক অনেক পর তাদের জনমানবশূন্য একটা জায়গায় নামিয়ে দেওয়া হল। এবার ওদের বরাবর উত্তর দিকে হাঁটতে হবে। সঙ্গে জল আর কিছু শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। হাওয়া হাওয়াই-এর কাছে কী আছে কে জানে, পবনের ব্যাগে অস্ত্র বলতে একটা কানখুস্কি আর নেলকাটার। অবশ্য হাওয়া হাওয়াইয়ের চোখেই তো এ কে ৪৭। আর শরীরে আর ডি এক্স। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতেই টের পেল পবন।
মুন্নি তো একটা একরত্তি বাচ্চা মেয়ে ছিল। ক্লান্ত হলে তাকে কাঁধে চড়িয়ে নিয়েছে, শুশু-পটির দরকার হলে সেসবও সামলেছে। কিন্তু এই নিভন্ত আঁচেও এখনো অনেক তন্দুরি রুটি সেঁকে নেওয়া যায়। সে যে কি করবে! একবার মনে মনে চালিশা আওড়ে নেয় পবন।
হঠাৎ একটা পাথরের ওপর বসে পড়ে হাওয়াই। পবন ঘাবড়ে যায়। এখনি থমকে গেলে চলবে? দেশের কাম বলে কথা।
‘তবিয়ত ঠিক আছে তো?’
হাওয়া হাওয়াই ওর কথার উত্তর না দিয়ে একমনে হাত আয়না সামনে রেখে লিপস্টিক লাগাতে থাকেন।
পবন ইতস্তত করে বলে ‘ইয়ে সব বাদমে।রাস্তে আভি বহুত বাকি হ্যায়’
‘রাস্তে নেহি,পিকচার’
‘মতলব?’
‘পিকচার আভি বহুত বাকি হ্যায় দোস্ত’ গলাটা অন্যরকম করে বলেন হাওয়া হাওয়াই, তারপর হাসিতে ফেটে পড়েন। সেই ঝনঝন হাসি। পবনের অসহায় লাগে। কি মুসিবতে ফেলা হয়েছে তাকে। এই মহিলা ওপারে গিয়ে ডকুমেন্টস হাতিয়ে আনবে? অসম্ভব। এ তো প্রথম থেকেই তার সঙ্গে শত্রুতা করছে। কথায় কথায় চিরশত্রুর প্রসঙ্গ টেনে আনছে। তাছাড়া ওই দুটো চোখ ছাড়া আর আছেটাই বা কী শরীরে? ওপারের বাঘা বাঘা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বধ করতে গেলে এসব সেকেলে জিনিসে কিসসু হয় না। কত চিকনি চামেলি, কালে চশমা বেরিয়ে গেছে। হঠাৎ হাওয়া হাওয়াই তীক্ষ্ণ গলায় চেঁচিয়ে ওঠে ‘ওই ওই কী ছুটে গেল!’
চমকে তাকায় পবন। অন্ধকারে কিছুই চোখে পড়ে না। তবু বর্ডারের এত কাছে, সাবধান হওয়া ভাল। সে বিনম্রতার সঙ্গে শুধোয় ‘কেমন দেখতে মনে হল?’
হাওয়া হাওয়াই খুব সিরিয়াস মুখ করে বলেন ‘কালে কালে আঁখে/ গোরে গোরে গাল/তিখি তিখি নজরে/ হিরণি জ্যায়সি চাল’
পবন আর কথা না বাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করে। আজ রাতের মধ্যে একে চাঁদ নওয়াজের হাতে তুলে দিতে হবে, তারপর তার ছুটি। হাঁটতে হাঁটতে তার আশ্চর্য লাগে। সারাজীবনে এমন একটাও রাত আসেনি। খোলা রাতের হাওয়া যে এমন হয়, এমন তার মেহক, জানত না সে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখল হাওয়া হাওয়াই দাঁড়িয়ে পড়ে হাঁপাচ্ছে। সে গায়ের জ্বালা মেটানোর জন্য বলে-
‘কোথায় বাড়ি বসে মেয়ের বিয়ের ফর্দ করবেন তা না, নৌটংকীপনা করতে হচ্ছে, তাও আবার বর্ডার পেরিয়ে’
হাওয়া হাওয়াই দাঁতে দাঁত চেপে বলেন ‘দেশ কা কাম’। তারপর আবার ঝনঝন করে হাসেন হাওয়া হাওয়াই। পাখা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলেন ‘বুদ্ধুকাঁহিকা! এটাতোআমার নতুন ছবির প্রোমশনাল ভিডিও’ পবনের সব কেমন গুলিয়ে যায়। সে মাটিতে থুতু ফেলে বলে ‘বুকে সিলিকন, মুখে প্লাস্টিক সার্জারি, শুধু পাখা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নতুন ছবি! বাজারে হাওয়া না থাকলে পাখা ঘুরবে ?’
ঠিক তখনি হাওয়া নয়, ঝড় ওঠে। ধুলোর ঝড়। চোখে মুখে ঢুকে যায় কিচকিচে বালি।নিজেদের চোখ ঢেকে ওরা দৌড়য়। হঠাৎ সামনে কী যেন দেখে পবন হাওয়া হাওয়াইর হাত ধরে টানে।
‘কী হল?’
‘সামনে দেখ’
সামনে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মতো ওপারের সীমান্ত সেনাদল, বন্দুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে।
‘জয় হনুমান’এটুকু ছাড়া আর কিছু মনে পড়ে না পবনের।বর্ডার এলাকায় হনুমানজীর টাওয়ার কাজ করছে না। সে বলে
‘ফিরে গেলেও মরব, দেশের কাজ অধুরা থেকে গেল’
‘এগলেও মরব, এরা অনেকদিন রক্ত খায়নি’
পবন চাপাস্বরে বলে ‘মিস্টার ইনডিয়াকে পাঠালে ভাল হত। চট করে ভ্যানিশ হয়ে যেত’
হাওয়া হাওয়াই পাখা দিয়ে মুখ আড়াল করে ফিসফিসিয়ে বলে ‘আমি একটা কায়দা জানি। আমার হাতটা শক্ত করে ধরো’মেয়েছেলের কথায় বিশ্বাস করলেই মরবি।বুজরুগরা শিখিয়েছিল।কিন্তু পবন ভাবে এমনিতেই তো মরব।সে চোখ বুজে হাওয়া হাওয়াইর হাতটা চেপে ধরে। আর বললে প্রত্যয় হবে না, হাত ধরাধরি অবস্থায় ওরা আস্তে আস্তে উড়তে শুরু করে। সেনাদল বন্দুক চালাতে ভুলে গিয়ে ‘স্যারজী স্যারজী’ করে চেল্লামেল্লি জুড়ে দেয়। ওরা ততক্ষণে অনেক উঁচুতে উঠে গেছে। পবন এবার চোখ খুলে নিচের দিকে তাকায়। এই ন্যাড়া জমিটুকুও আশ্চর্য সুন্দর লাগে তার। হাওয়া হাওয়াই বাঁ হাতে পাখা ঘোরাতে ঘোরাতে চোখ মটকায়। পবন ভাবে একবার জিগ্যেস করে, যে জায়গাটায় তারা উড়ছে সেটা কোন দেশের মধ্যে পড়ছে। তারপর ভাবে দুস। জমিন আর হাওয়ার ভাগাভাগির অংক কি করে এক হবে? সে বিন্দাস উড়তে থাকে হাওয়ায়।
0 মন্তব্যসমূহ