লাল কুসুমের বলটা ঢলে পড়তেই লালা বমের পাহাড়ে সন্ধ্যা নামে। বিশাল পাহাড়টা প্রথম দেখায় মনে হতে পারে একটা দীর্ঘ অজগর, যেন দেহটা গুটিয়ে সূর্যের আনত আলোয় শেষবারের মতো তা দিচ্ছে। একটু পরেই তীব্র শীতের রাত নামবে। উঁচু-নিচু পাহাড়ি ঢালের ভেতর থেকে মাঝেমধ্যে ফ্যাকাসে কিছু আলো ছড়িয়ে পড়তে পড়তে পুনরায় মিলিয়ে যাচ্ছে। লালা বম নিবিষ্ট মনে হাতের কড়িতে কী-যেন গুনতে থাকে, অনেকক্ষণ ধরে। তার হাতের কব্জিতে এখন অনেক জোর। নতুন টাকা গোনার সময় পচপচ করে যে-আওয়াজ হয় তার নেশা ভর করে আছে চোখে। দুই দশকেরও আগে মড়কে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া পাহাড়ি গয়ালের শোক এখন সে নতুন টাকার ঘ্রাণে ভুলতে চাইছে কি না বোঝা যায় না। আহ, পাহাড়ের টিলায় মৃত গয়ালের রক্ত টপটপ করে ঝরছে এখনো। এই মুহূর্তে তার চোখে সে-বেদনার রঙ খেলা করছে না কি পড়ন্ত সূর্যের আভা মুখে পড়ায় সে-রকম মনে হচ্ছে কে জানে। তবে শরীরে একটা আলগা শিরশিরানি জাগে। এই পাহাড় তার।
গয়ালের শোকে পাহাড়ি পথের দিশা হারিয়ে দিগ্বিদিক ছুটে চলার স্মৃতি তাকে এখনো পোড়ায়। চোখের পর্দায় এখনো ভাসছে। ফেলে আসা অনাবাদি পাহাড়গুলো একটার পর একটা সে টপকে যেতে থাকে। কেউ তাকে রুখতে এগিয়ে আসে না। কাউকে সে রুখতে দেয় না। এই ভয়ডরহীন দীর্ঘ রজনী আর কখনো থামে না। সেই আঠারো-উনিশ বছরের পাহাড়ি কিশোর পূর্বপুরুষের অনাবাদি পাহাড়ের রাজত্বে কী করে যেন দিশা হারিয়ে ফেলে আবার এতদিন পর। খুব দ্রুত বুঝতে পেরেছিল এই পাহাড় কেবল তার পূর্বপুরুষেরই নয়। পাহাড়ের চড়াই বেয়ে উঠছে জলপাই রঙের বিশালকায় অজগর। তারপর হঠাৎ করে গয়ালের বাছুরগুলো ধীরে ধীরে অদৃশ্য হতে থাকলে তাদের ঘুম ভাঙে। ক্ষোভ ও হতাশায় মনটা ভারি হয়ে ওঠে। দার্জিলিং পাড়ায় তার পূর্বপুরুষের ঘর্মাক্ত দেহের গন্ধ বাতাসে ভাসতে থাকে, এই দুর্গম পথে একদা যারা পত্তন করেছিল জনবসতির। বগালেকের শীতল জলের স্বাদ তখনো কেউ পায়নি।
কেওক্রাডং-এর চূড়ায় দাঁড়িয়ে তার সেসব স্মৃতি মুহূর্তে পলকা মেঘের সারিতে ঢুকে পড়ে। তারপর দ্রুত কোথায় যেন ছুটে যেতে থাকে। অদূরে কালাপাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে বাতাস ক্রমে ভারি হয়ে ওঠে। অদ্ভুত সরল ঢঙে তৈরি হচ্ছে একটার পর একটা মেঘ! পাহাড়টার পেটে এখনো অনেক গয়াল লুকিয়ে আছে। কেউ দেখতে পায় না। মাঝে মাঝে খুব শীত পড়লে তীব্র গোঙানির শব্দ অনুভব করে সে। একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে খুব দ্রুত টঙঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যেতে থাকে। তারপর এক ধাক্কায় নিজেকে আবিষ্কার করে কালাপাহাড়ের মেঘের আড়তে! আচমকা শিউরে ওঠে সারা শরীর। গয়ালগুলো ঠিক বুনো মোষের মতো নয়। চোখগুলো কী ভয়ঙ্কর লাল! আগুনের পিণ্ডগুলো শো শো করে বাতাসের সাথে ঘূর্র্ণি তৈরি করে ঘুরতে থাকে হাজার হাজার ফুট উচ্চতায়।
একদিন বাবার হাতে বুনো মোষের একটা বাছুর ধরা পড়ে। মোষ নয়, কোনো এক দেবতার সন্তান ছিল সে-বাছুরটা। তাদের পাহাড়ি শ্রমের দিনগুলোতে নতুন অতিথির আগমন একটা অদ্ভুত পরিবর্তন নিয়ে আসে। খুব দ্রুত বাছুরটা বড় হতে থাকে। তারপর কীভাবে যেন বাছুরটা খেলার সাথি পেয়ে যায়। তারা বড় হয়। বলশালী হয়। একদিন দেখে তাদের ঘরে বেশ ক’টা দেবতা বাছুরের বেশ ধরে মায়ের ওলানের বাট চাটছে! সেই থেকে বৃদ্ধি পেতে থাকে গয়ালের সংখ্যা। রাতে তাদের খামারে দেবতারা নামে। দেবীদের মেঘনৃত্য হয়। পাহাড়ে অদ্ভুত জোছনা ওঠে। আর সারি সারি মেঘের টুকরো পুরো পাহাড় চষতে থাকে। এসব মেঘে চড়ে দেবতারা দেবীদের মেঘনৃত্য পহারা দেয়। এই নৃত্য কেউ দেখেনি। তাদের পূর্বপুরুষ সে-নৃত্যের হদিশ পায় পাহাড়ের গন্ধ শুঁকে। পাহাড়ের মাটিতে একটা পরিবর্তন তারা লক্ষ করে। তাদের ধারণা যেসব পূর্ণিমা রাতে এই নৃত্য হয়, সেসব রাতে তাদের ঘরের চালাটা নিচের দিকে দেবে যায়। গোটা পাহাড়টাই যে খানিকটা দেবে যায়! তারপর আবার ধীরে ধীরে পাহাড় আগের জায়গায় ফিরে আসে। দাদার মুখে একদিন শুনেছিল সে-নৃত্যের বর্ণনা। মনে হত দাদা নয়, গল্প বলে যাচ্ছে এক বৃদ্ধ পাহাড়ি দেবতা। তখন কী ঘোর লাগত চোখেমুখে!
তারপর খুব দ্রুত দাদার মুখের অবয়ব সে ভুলে যেতে থাকে। পাহাড়ি দেবতারা খুব দ্রুত আড়াল হতে থাকে। একদিন দেখে পাহাড়ে আর কোনো মেঘের সারি ভাসে না। সবাই ধরে নেয় আর কখনো দেবীরা মেঘনৃত্য করতে নেমে আসবে না তাদের পূর্বপুরুষের পাহাড়ে। গয়ালের খামারে নেমে আসে অদ্ভুত নীরবতা। আর কোনো গয়াল প্রজনন করতে পারে না। বাছুরগুলো প্রতিরাতে কোথায় যেন গায়েব হয়ে যেতে থাকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা দেখে অসংখ্য অজগর তাদের বসতির ঠিক মাথার উপর ছাউনি গেড়েছে। তাদের মুখের রা বন্ধ হয়ে যায়। মা’কে কান্নায় গুমড়ে উঠতে দেখে তার চোখও ভারি হয়ে ওঠে। চোয়ালটা ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে ওঠে। জীবনে প্রথমবারের মতো দেখতে পায় কোনো আলামত ছাড়াই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে জুম ক্ষেতে।
তির-বর্শা-বল্লমের ভারে ক্লান্ত পূর্বপুরুষের কাঁধে আচমকা এত বড় বিপদ এসে পড়বে কেউ কল্পনাও করতে পারে না। তারা কেউ এমন কোনো অজগরের আবাস আপন ভূমিতে কামনা করে না। অজগরের সংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিশোর লালা বমের শরীরে খেলা করতে থাকে পাহাড়ি রক্তের ঘ্রাণ। একদিন খুব সন্তর্পণে পাড়ার বড় ভাইদের সাথে বেরিয়ে পড়ে। অনেক দিন ধরে একটা গুঞ্জন বাতাসে ভাসে। কিন্তু কেউ কিছু আঁচ করতে পারে না। পাড়ার যুবক ও কিশোররা, এমনকি গোঁফ না গজানো বালকদের কেউ কেউ পর্যন্ত হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যেতে শুরু করে। এই নিয়ে তাদের পরিবারে একটা অদ্ভুত টানাপোড়েন তৈরি হতে থাকে। এই বুঝি নেমে এল অজগরের পাল। আর কোনো গয়ালের বাছুর খামারে চোখে পড়ে না। তদের সন্তানদেরও একই পরিণতি হচ্ছে কিনা তা ভেবে পরিবারের বয়োঃবৃদ্ধরা শিউরে ওঠে। এই ঘটনার পর থেকে শয়ে শয়ে অজগর ছাউনি ছেড়ে বসতির দিকে আসতে থাকে। জিভে জমা হতে থাকে লালা। তাজা রক্তের নেশা খেলা করে সেসব অজগরের শরীরে। একের পর এক গায়েব হতে থাকে যুবতি ও কিশোরী, এমনকি সদ্য বুক ফোটা বালিকা।
তারপর থেকে পাহাড়ি সন্তানেরা দীর্ঘদিন নিরুদ্দেশ হতে থাকে। কেউ কোনো খবর পায় না। কেবল মাঝেমধ্যে দুয়েকটা অজগরের লেলিহান জিভ ধারালো বর্ষার আঘাতে এফোড়-ওফোড় হয়ে যাওয়ার খবর নিয়ে আসত কেউ কেউ। কাদের বীরত্বে এ-অসাধ্য সাধন হত কেউ বলতে পারত না। তখন তাদের চোখে নতুন স্বপ্ন উঁকি মারে। দেবতারা বুঝি আবার তাদের দিকে চোখ ফেরাল! তারপর কোনো কোনো অমাবশ্যার রাতে কালাপাহাড়ের চূড়ায় হঠাৎ হঠাৎ কুণ্ডলি পাকানো মেঘের মতো আগুনের ধোঁয়া উড়তে দেখত সবাই। একটা অদ্ভুত ঘ্রাণ বাতাসে ভাসত। মাংস পোড়ার ঘ্রাণ। অজগরের মাংস।
২.
গভীর হয়ে উঠতে থাকা রাতে একপাল তরুণ লালা বমের পাহাড়ে ঘুরপাক খাওয়া মেঘের চাদরটা ইশারায় জড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করে। একটু পর পর গেয়ে উঠছে অদ্ভুত মাতাল করা গান। তার দিশা হারাবার দশা হয়। চোখে নেশা জাগে। এত সুন্দর গান সে কখনো শোনেনি। অনেক দিন পর ফিরে এসেছে নিজ বাসভূমে লালা বম। দীর্ঘ ফেরারিজীবন কাটিয়ে। দীর্ঘ মড়কে গেঁথে যাওয়া একটা অধ্যায় শেষ করে। অজগরের ভয়ে নয়, জীবনের গ্লানি ভুলতে না পেরে বেছে নিয়েছিল একটা ফেরারিজীবন। তারপর বছরের পর বছর আর ফেরা হয়নি। মেনে নিতে পারেনি মাংসাশী অজগরের ছোবল। তছনছ হয়েছে যৌবন। তাতে কী, সে ফিরে এসেছে।
যেসব পর্যটক মাঝেমধ্যে বুনো পাহাড়ের স্বাদ নিতে আসে তাদেরকে সে এসব গল্প বলে। সে তাদের জানায় কী করে পাহাড়ি জীবনের সমৃদ্ধির ইতি ঘটিয়েছিল একপাল অজগর। কেমন করে তারা শিখে নিয়েছিল প্রতিরোধের কৌশল সেসব কথা এড়িয়ে যায়। দীর্ঘ ফেরারিজীবনের পুরোটা সময় ছিল উত্তেজনা আর প্রতিশোধের কাল। তারা কখনো রণে ভঙ্গ দেয়নি। তাদের বিশ্বাস ছিল একদিন ঠিকই ফিরে পাবে ভূমির মালিকানা। মাঝেমধ্যে খুব নেশা জাগত ঘরে ফিরে আসতে। ছেটো ভাইবোনের মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার ইচ্ছে মাথায় ঝড় তুলত। এই ভূমি এখন তার। মালিকানা সে পেয়েছে। সান্ত্বনা পায় এই ভেবে যে, জীবিতদের জন্য একশো বছর দীর্ঘ সময়। মাঝেমধ্যে হতাশা জাগে। এখন আর এতকিছু সে বুঝতেও চায় না । তবু চায় একটা মুক্ত জীবন। আত্মমর্যাদার জীবন।
যেসব অতিথি তার পাহাড়ে সময় কাটাতে মাঝেমধ্যে আসে তাদের যত্নআত্তি করতে সে কসুর করে না। সামর্থ্যরে সবটুকুই দিতে চায়। যে-প্রতিশোধপরায়ণতা তার জীবনের দীর্ঘ সময় গিলে ফেলেছে, আর কারও জীবনে এমন কিছু ঘটুক সে চায় না। তবু ক্ষোভের অভিব্যক্তিটা লুকানোর চেষ্টা করেও অনেক সময় ব্যর্থ হয়। সামলাতে পারে না মাঝেমধ্যে। সে জানাতে চায় না কাউকে তাদের দীর্ঘ বিনিদ্রার কথা। কোথায় একটা বাধা অনুভব করে। কেবলই কি চামড়ার ফারাক? সে বুঝতে পারে না। তারপরও সে তাদের সেবার ত্রুটি রাখে না। কালাপাহাড়ের গল্প শোনায়। বন মোরগের গল্প শোনায়। জুমের আগুনে পোড়া পাহাড় দেখায়। আর শোনায় তাদের সমৃদ্ধির কথা। অস্ত্র জমা দেওয়ার আগের বছরগুলোতে পালিয়ে গিয়েছিল প্রতিবেশি দেশে। দীর্ঘদিন ওখান থেকেই সংগঠিত করেছিল পাহাড়ি তরুণদের। সেসব দিনের কথা এই নবীন গোঁফ গজানো পর্যটকদের সে শোনাতে চায় না। যে-পাপ তারা করেনি তার দায়ভার তাদের উপর দিতে সে রাজি নয়। তার সংগ্রামে এখন নতুন পালক যোগ করার সময় এসেছে। নতুন পালে হাওয়া দিতে হবে। এটা সে বোঝে।
আনমনে কী যেন সে হিসাব করে। অতিথিদের কাছ থেকে ভালই আয় হয়। এত দ্রুত সমৃদ্ধির এই পথ তার কাছে ধরা দেবে সে বুঝতে পারেনি। নাহ, ভূমিপুত্রের অভিমান সে এখন আর বয়ে বেড়াবে না। পাহাড়ের মায়া আর নয়। নিসর্গ আর নয়। সে এখানে ইট-পাথর আর বালির আস্তর দেবে। এই পাহাড় ধর্ষিত হোক। কিন্তু সমৃদ্ধি আসুক এই তার পণ। পাহাড়িদের নিরন্নের দিন আর নয়। অদূরে তাঁবুর ভেতর যুবকদের হইচই আর চেঁচামেচিতে বাতাসে একটা ভিন্নরকম ব্যঞ্জনা তৈরি হতে থাকে। গভীর রাতে একদল যুবকের এই হইহুল্লোড় তার ভেতর একটা আলোড়ন তুলতে থাকে। পাহাড়ের নিস্তরঙ্গ জীবনে একদিন তারাও এমন হইহুল্লোড়ে রাত কাটাতে চাইত। গভীর রাতে কোনো দুষ্ট পাহাড়ি কিশোরের পাল্লায় পড়ে পাড়ি দিতে চাইত দুর্গম পথ। পহাড়ি দেবতার মতো হতে চাইত তারাও! লালা বমের মনে হতে থাকে তাঁবুর ভেতরে বিশাল বিশাল সব অজগর হিসহিস করছে অথচ সে শব্দগুলো কানে তুলতে চাইছে না। অজগরের আদলটা এখনই যেন তার সামনে পষ্ট হয়ে উঠবে। লকলক করে বেড়ে উঠবে ধারালো জিভ। ভূমিপুত্ররা নিশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করছে পাহাড়কে বুকে আগলে ধরে। মনে মনে একটা বড় গর্ত খুঁজছে পরিবারের নিরাপত্তার জন্য। অনেক বড় গর্ত। সবাইকে আড়াল করে রাখবে ওই গর্তে। তারপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখতে পাবে সেই গর্তের পাশে এসে ছাউনি গাড়বে অজগরের পাল। তাদের আর গর্ত থেকে বের হওয়া হবে না। বুকের ভেতর হজম করে রাখা নিশ্বাসটা দীর্ঘ করে পাহাড়ি দেবতার আশীর্বাদের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো পথ যেন খুঁজে পায় না তারা। হিসহিস শব্দ হচ্ছে এখনো। কানটা খাড়া করে শব্দটা অনুভব করার চেষ্টা করে লালা বম। তাঁবুর বাইরে বইতে থাকা নিসর্গের ঘ্রাণ সে নাকে নিতে ব্যর্থ হয় ভেতরের হইহুল্লোড়ের আওয়াজে। অনাবিল আনন্দে মেতে আছে এরা। এই নিসর্গ তাদের। তাদের কোনো ভয়ডর নেই। কোনো শপথ নেই। তারাই আলোর দিশা। তাদেরই আছে শাসনের পরম্পরা। লালা বম ভাবতে থাকে এদের রক্তে জমাট হয়ে আছে পূর্বপুরুষের শোষণের বয়ান। এসব পর্যটকের হইহুল্লোড়ের মাঝে লুকিয়ে আছে পাহাড়ের গ্লানি। হঠাৎ মাথায় আগুন ধরে যায় তার। এই বুঝি গয়ালের বেশ ধরে তাঁবুর উপর আছড়ে পড়বে সে! তারপর হঠাৎ করে তার বুক ফালা ফালা করে একটা চাপা গোঙানি ধাক্কা মেরে বেরিয়ে আসে।
হু হু শব্দে লালা বমের কান্নার দম কালাপাহাড়ের উপর দিয়ে উড়তে থাকা মেঘের দিকে ছুটতে থাকে। বুকের পাঁজর ভেদ করে বেরিয়ে আসে এক দলা ঘোলা জল, ওয়াক থু! পাহাড়ের চূড়ায় বিবমিষা ঢালতে ঢালতে তার মনে হতে থাকে হয়তো সে কোনো একদিন পুনরায় মড়কে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া গয়ালগুলো জীবিত হতে দেখবে এই পাহাড়ে।
পৃথিবীর চূড়ায় ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে।
7 মন্তব্যসমূহ
গল্পের ভাষা খুব শক্তিশালী। নিপুণ বুনন যাকে বলে। মন ডুবিয়ে পড়তে হয়।
উত্তরমুছুনমনযোগী পাঠের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ভালোবাসা জানবেন।
মুছুনডুবিয়ে দেবার মত বোধ ও ভাষা৷ কী চমৎকারভাবে ভূমিপুত্রদের হাহাকার চিত্রিত হয়েছে। আদতে সংখ্যালঘুরা কতোটা বিপন্নতা বোধ করে ক্ষমতাবানদের করাল স্পর্শে, আমরা তার বিবিধ আভাস পাই৷ আন্দোলিত হই৷ এই বোধ ও ভাষার সাথে একাত্ম হতে পারা দারুণ আনন্দের। গল্পকারকে কে প্রণাম৷
উত্তরমুছুনভূমিপুত্ররা অধিকারবঞ্চিত না হোক। ধন্যবাদ গল্পকার।
মুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
মুছুনহাহাকারে ভরে গেল বুকটা। একখণ্ড হাহাকার এই গল্প। শব্দ নির্বাচন আর আবহ আনন্দ দিল বেদনা দিল। আমার ভালোবাসা রইল প্রিয়।
উত্তরমুছুনগল্পটি পাঠের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ গল্পকার।
মুছুন