স্বপ্না ভট্টাচার্য'র গল্প : অমূল্যনিবাস


জকাল মাঝে মাঝে বিকেলের দিকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অনির্বাণ। এই কোভিড পরিস্থিতিতে মিটিং, আড্ডা, সামাজিকতা সব বন্ধ। অফিস-বাসা করে করে হাঁপিয়ে উঠছে। বুকের ভেতর শূন্যতার হাহাকার নিয়ে বাড়িতে একা থাকা যায় না। সঞ্জীব বলছিল মহাসড়কে নাকি ৭ কিলোমিটার আল্পনা আঁকা হয়েছে। আজ কৌতুহল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। পথ তাকে সব সময়ই হাতছানি দেয়। গাড়ি চলছে শুনশান রাস্তায়। দু-পাশ জুড়ে ধানক্ষেত, কোথাও কোথাও ইটভাটা ছোট্টবেলার স্মৃতিকে উসকে দিচ্ছে। আল্পনার লতাপাতা ফুলের উপর দিয়ে গাড়ি চলছে। ওয়ে টু প্যারাডাইস নাকি! পথের শেষে কি কেউ আছে ফুল ডালি নিয়ে? তবু এই শ্রাবণের মেঘ-ছেঁড়া সকালবেলার মায়াবী আলো অনির্বাণকে যেন একটু ভালো লাগা ফিরিয়ে দেয়! এই ক’দিন একের পর এক মৃত্যু-সংবাদ! গল্প উপন্যাসে প্লেগ মহামারীর কথা শুনেছে—ম্যালেরিয়া কালাজ্বর একসময়ে তাণ্ডব করেছে। কিন্তু নিজের জীবনে এমন ভয়াবহ সত্যের মুখখামুখি হতে হবে এমন তো ভাবেনি। জীবিকার উদ্দেশ্যে যে শ্রমিকরা নিজের রাজ্য ছেড়ে বাইরে গিয়েছিল কাজের সন্ধানে, তারা সরকারি আনুকুল্য না পেয়ে চাকরি হারিয়ে হাজার হাজার মাইল পায়ে হেঁটে মাদ্রাজ, ব্যাঙ্গালুরু, দিল্লি, নানা জায়গা থেকে দেশে ফিরেছে। রাস্তায় অনাহারে দুর্ঘটনায় মারা গেছে অনেক। গঙ্গায় সৎকারহীন শয়ে শয়ে মৃতদেহ ভেসেছে। গঙ্গা হয়েছে শববাহিনী। সহ্য করা যাচ্ছে না বীভৎসতা। অমানবিকতা গগন ছুঁয়েছে। ভ্যাকসিন নেই, স্বাস্থ্য রক্ষার বিধি পালিত হচ্ছে না, হাসপাতালে অক্সিজেন নেই। সরকার আছে কি নেই বোঝা যাচ্ছে না!

ছোটবেলার সাথী অশেষ মারা গেল হায়দারাবাদে। কোভিডে। মেসো গৌহাটিতে। একা জনশূন্য বাড়িতে হাঁপিয়ে উঠেছে অনির্বাণ। তার ব্যাচেলারের সংসার। পাখি, আর ফুলের পরিচর্যা নিয়ে থাকে। ছোটবোন মাঝে মাঝে আসে। ঘর-দোর গুছিয়ে দেয় আর বিয়ের কথা বলে। মহাসড়কের মাঝখানে ডিভাইডার। ডানপাশের লেন ভাঙা, গাড়ি চলে না। আপাতত এক লাইনেই আসা যাওয়া। এই পথটাই একমাত্র মুক্তির পথ। গাড়ি চালাতে চালাতে অন্যমনস্ক হয়ে নানাকথা ভাবছিল অনির্বাণ। আল্পনার প্রতিটি ফুল যেন প্রস্ফুটিত মুখমণ্ডল--অনেক কথা বলে যায় চুপে চুপে। ফুল লতাপাতাও তার সঙ্গে ছুটছে—অনির্বাণ এই পথে আল্পনা দেখে আর ভাবে--সরকারি টাকার সদ্ব্যবহার হচ্ছে। ভোটার-সচেতনতা প্রোগ্রামে সরকারি উদ্যোগ রাস্তায় ৭ কিলোমিটার আল্পনা আর বরাকের করুণ বালুচরে বালুশিল্প!

কাল রাতে এক অদ্ভুত ভাবালুতায় কেটেছে। ছোট ভাই আমেরিকা থেকে ফোন করেছিল-- প্রায়ই করে থাকে ইদানীং। কোভিড পরিস্থিতির খবরাখবর নেয়—অনির্বাণকে নানা বিষয়ে ওয়াকিবহাল করে। ভিডিও কলে কথা হয়। ভাইয়ের মেয়ে তিন বছর বয়স। সারাবাড়ি দৌড়ে বেড়ায়। মাঝে মাঝে মোবাইলের কাছে এসে দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলে ফিরে যায়। কাল রাতের একটা ছবি মনের মধ্যে স্থিরচিত্র হয়ে মনে গেঁথে আছে। মেয়েটির নাম প্রক্সিমা।

ইউরোপীয় চেহারা। মাঝে মাঝে ফ্লাইয়িং কিস্ দেয়। কাল কিছুতেই মোবাইলের পাশে আনতে পারল না ভাই। দূরে লংশটে ওকে দেখেছে। বিশাল কাঁচের দরজার পাশেও দাঁড়িয়ে বাইরে উজ্জ্বল নীলাকাশ উন্মুক্ত প্রান্তর। সেই প্রান্তরে হরিণ চরে বেড়ায়। প্রক্সিমা হাতে খেলনা নিয়ে দাঁড়িয়ে। ওর পেছনটা দেখছিল অনির্বাণ। ভাইয়ের বউ দৌড়ে যাচ্ছিল ওকে আনার জন্যে! প্রক্সিমা কাঁচের দরজার ওপার থেকে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে কী যেন দেখছিল! সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে বড় হচ্ছে চক্রবর্তী পরিবারের, অবনী মোহনের বংশধর। একমাত্র উত্তরসূরি।

প্রক্সিমা তুমি কার? মনে মনে ভাবে অনির্বাণ। তুমি তো নীল রক্তেরও অধিকারী। তোমার রক্তের কল্লোলে কোন বার্তা বয়ে যাবে? কোনটা তোমার দেশ? আমেরিকা না ভারতবর্ষ? পোস্ট-জেন্ডার সময়ে তুমি কি চক্রবর্তী থাকবে? তোমার দেশাত্মবোধের উৎসকী হবে প্রক্সিমা? অনির্বাণ জানে এসব ভাবনারও কোনও অর্থ নেই। সে বিয়ে করেনি। বিয়ে করা হয়ে উঠল না! তিন ভাইবোনের সংসারে সে না ঘাটকা না ঘরকা হয়ে রইল।একটি অহিন্দু মেয়ে তারও জীবনবৃত্তে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু সে বেরিয়েও গেছে। না বেরিয়ে তার উপায়ও ছিলনা। সেই থেকে সে অকৃতদার। মনের মধ্যে যে আল্পনা রচনা করেছিল সে-পথে সে বেশিদূর যেতে পারেনি। তার আল্পনার ফুল অকালে ঝরে পড়ে গেছে। এখন আর কোনো সুবাসও ছড়ায় না। বস্তুবাদী বাবার মুখের দিকে চেয়ে একবার মরিয়া হয়ে সে বলেছিল

--‘বাবা ছোটবেলা থেকে তোমার কাছে তো জাতিভেদের শিক্ষা পাইনি। ধর্ম তোমার কাছে..

--চুপকরো—

কোনো কথা না বলে অবনীমোহন বিপন্ন ও বিস্ময়ভরা চোখে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েছিলেন। আর অনির্বাণ লক্ষ করছিল সেই চোখ দুটো ক্রমশ বর্ষণমুখর হয়ে উঠছে। সেই প্রথম ও শেষবারের মতো অনির্বাণ নিজেকে উন্মোচিত করেছিল।

কাল অসীম বলছিল,

—আমি হয়তো আসতে পারি কয়েক দিনের জন্যে। অ্যান্ড্রোমেডাও আসতে চায়। ভারতে কিছু কাজ আছেও। আমাদের বাড়ি, দেশ দেখতে চায়।

--এখন মা, বাবা নেই। কাকে কী দেখাবি?

—তুই তো আছিস।

—আমি? বলে হো হো করে হেসে উঠেছিল অনির্বাণ। ভাই, আমি তো কাবাব মে হাড্ডি রে! ঘরেও নহি, পারেও নহি। আমাকে আবার দেখা!

—তুই যে কী বলিস! তুই আমাদের দাদা না?

—ভাই, বল তো দেশ কী।

--তোর সবতাতেই পাকামো।

কী অবশিষ্ট আছে দেশের। আমাদের দেশ নেই রে। স্বাধীনতা তো হয়নি, দেশভাগ হয়েছিল। তারও ৭৫ বৎসর পর এখন প্রমাণ দিতে হচ্ছে নাগরিকত্বের। শুনছি নিজের ভাষায় এখন পড়াশুনাও করা যাবে না। এসব খবর রাখিস? ভাই আমরা হিন্দুস্থানে আছি।

হঠাৎ গাড়িটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে থেমে যায়। আল্পনা সহ রাস্তার একাংশ ভেঙে বসে গেছে। আল্পনার লতা এখনও এগোতে চায়... গিনিস বুকে নাম উঠেছে যে! অনির্বাণ নেমে গাড়ি পরীক্ষা করে আবার চলতে শুরু করে। দূরে বড়াইল পাহাড় ক্রমশ এগিয়ে আসছে। জাটিঙ্গা নদীও জানান দিচ্ছে। দুরে রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে রোদ চমকায়। এই ধান কার? আমার? তোমার? না কৃষকের? বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে? বর্গী এল দেশে। ভারতবর্ষের কৃষকেরা দিল্লির উপকণ্ঠে ৬/৭ মাস অবস্থান ধর্মঘট করছে। ভাই বলছিল--

—তুই একইরকম রয়ে গেলি দাদা। তোর ছোটবেলার কথা মনে পড়ে না?

অনির্বাণ মনে মনে হাসে। তার শৈশব তো উত্তর-চল্লিশেও কাটেনি! শবনমকে সে তো জীবনে যুক্ত করতে পারল না। এই পথ তখন মহাসড়ক হয়নি। কেউ আল্পনাও আঁকেনি এখানে। মোটর সাইকেলের পেছনে শবনমকে বসিয়ে চলে এসেছিল বড়খলা পর্যন্ত। তখন শেষ সূর্যের অস্তরাগ। চপল-নয়না হরিণীর চোখ নিয়ে শবনম তার চোখে আশ্রয় খুঁজেছিল। অনির্বাণের হৃদয়ের একূল ওকূল দুকুল ভেসে গিয়েছিল। শবনমের হেডস্কার্ফটাকে ঠিক করে দিতে গিয়ে অনির্বাণ অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল।

শবনম শবনম... তুমি সত্যিই রাতের শিশিরবিন্দু... ঝরে গেছ দিনের বাস্তবে।

এনআইটি-এর চার বছর! চাকরি পেয়ে বিদেশ যাওয়ার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছিল অনির্বাণ। বাবা-মায়ের অস্বীকৃতি তাকে উন্মাদকরে তুলেছিল। সুযোগও এসেছিল। কিন্তুশবনমই বাদ সাধল। সে কিছুতেই বিদেশে যেতে স্বীকৃত হল না। তার এককথা--বাস্তব ছেড়ে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে সে সুখী হতে পারবে না।

অসীম বলছিল অ্যান্ড্রোমেডার দুর্গাপূজা দেখার কৌতুহল।

—অ্যান্দ্রোমেডা এতসব বোঝে?

--কেন বুঝবেনা, বুঝিয়েছি।

—মা, বাবা থাকতে এলি না? বলে হাসে অনির্বাণ।

—আসা হলোনা! বাদ দে তোর ওসব কথা। শোন দাদা এবার এলে একদিন ‘অমূল্য-নিবাসে’ যাব। বুকটা ধক করে ওঠে অনির্বাণের। সুদূর আমেরিকায় বসে ‘অমূল্য নিবাস’এর কথা মনে পড়ে কেন অসীমের?এমনও হয়? ভেতর থেকে কে যেন চেঁচিয়ে বলে হয়--হয় এও হয়। কনৌজ ব্রাহ্মণের উত্তরসুরি। অন্তর্গত রক্তের স্রোতে বয়ে চলে শতাব্দী-পুরোনো সংস্কার। হিরন্ময় পাত্র অসীম। সব হিরন্ময় পাত্র! সরিয়ে ফেল, সরিয়ে দেখ। অ্যান্ড্রোমেডাকে নিয়ে কেমন আছে অসীম, কে জানে! মেয়েটি নাকি ভালো। দাদা ডাকটা কোনো রকমে রপ্ত করেছে। নিজের সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। প্রতি রবিবার গীর্জায় যায়। বড়দিনে গিফট্‌ পাঠায়। নিজের ভাষায় কথা বলে। শ্বশুরবাড়ির প্রতি কৌতুহলও আছে। আর কী চাই? প্রক্সিমাকে নিজের কাছেই রাখার কথা ভাবছে অসীম। কিন্তু কতদিন? অনির্বাণের সমস্ত হৃদয় দুর্বার গতিতে ছুটে যায়...আর তখনই ব্যঙ্গাত্মক হাসি নিয়ে শবনম এসে চোখের সামনে দাঁড়ায়। সারাজীবন পদ্মগন্ধা হয়েই রয়ে গেল।

বহুদিন পর ‘অমূল্য নিবাস’-এর কথা মনে পড়ে গেল। একবার কৌতুক নিয়ে ভাবল—যদি শবনমকে নিয়ে চারু মামীমার কাছে যেত!তবেকী হত! স্বপ্ন থাক সঙ্গোপনে। বিশ্বাসও থাক। লতাপাতা ফুল হয়ে আলো হয়ে, জ্যোতির্ময়ী হয়ে শবনম তার হৃদয়ের নিভৃত স্পন্দনে শ্বাস প্রশ্বাসে মিশে থাক। একটা জীবন তার, সে তো শবনমকেই উৎসর্গ করেছে।

দেশভাগের পর গল্পমামা কিছুটা জমিসংগ্রহ করতে পেরেছিলেন কাছাড়ের করিমগঞ্জ মহকুমায় চম্পকনগরে। গল্পমামার দাদু ছিলেন অমূল্য গোস্বামী। দেশের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য গল্পমামা বাঁশ-বেতের ঘর তুলে নাম দিয়েছিলেন ‘অমূল্য নিবাস'। মা হেসে বলেছিলেন—‘ভাইয়ের কাণ্ড।' সেই ‘অমূল্য নিবাস’ পরে কাঠের দেড়তলা হয়েছিল। গল্পমামা মিলিটারিতে ছিলেন। বৎসরে একবার বাড়ি আসতেন আর তিল তিল করে বাড়ি সাজাতেন। পূর্ব পাকিস্তানের স্মৃতি তাকে তাড়িত করত। চারুমামী সারাবৎসর পূজা, ব্রত, পার্বণ নিয়ে থাকতেন। মঙ্গলচণ্ডী,সংকটতারিণী, বিপদনাশিনী, কর্মপুরুষ, আর কত ব্রতের নাম করতেন চারুমামী। সন্ধ্যেবেলা তুলসিতলায় বাতাসা দিয়ে হরিলুট হত! অনির্বাণ, অসীম কত হুটোপুটি করেছে তখন। মান্দারকান্দি ছেড়ে এলেও ধর্মীয় সংস্কার, পুজো-পার্বন সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। গ্রামের বাড়ি : গোশালায় গরু, গোলায় ধান, ঢেঁকিশালে ঢেঁকি। উঠানে বলদের মুখে ‘হোপা’ বেঁধে ধান মাড়াই হত। পুকুরে মাছ। সারাদিন বঁড়শি দিয়ে পুঁটিমাছ ধরা! যেন স্বপ্নের দেশ! স্কুল ছুটি হলেই দু-ভাই গল্পমামুর সঙ্গে চম্পকনগরে চলে যেত। মায়া-মমতায় ভরিয়ে দিতেন চারুমামী। এই ‘অমুল্য নিবাস'এর কত গল্প করেছে শবনম-এর কাছে। শৈশব-কৈশোর বড় মায়াময়। শবনমও তা-ই। এই পৃথিবী একবার পায় তারে...

‘অমূল্য নিবাসে’ ঢোকার পথে একটা গেট ছিল। গেটের দু-পাশে মাধবীলতার ঝাড়। বাঁশের কেয়ারি বেড়া দিয়ে দু-পাশের গাছ দুটোকে বেঁকিয়ে সুন্দর আকার দিয়েছিলেন। সাদা, গোলাপি ফুল ঝুলে থাকত—দুলত,সুবাস ছড়াত। টিলার গায়ে ধাপ কেটে সিঁড়ি বানিয়েছিলেন মামা। একমাস ছুটি তাঁর কেটে যেত বাড়ি পরিচর্যায়। পুকুরের চার কোণে চারটে তালগাছ পুঁতেছিলেন। হেসে বলতেন ‘যে তালগাছ পুঁতে তার তৃতীয় পুরুষ তাল খায়। তোমাদের ছেলে-মেয়েরা এসে তাল খাবে।’ দিদিমা, গল্পমামুর মা, নন্দরানী হয়ে দুধ মন্থন করতেন, মাখন তুলতেন। ধানের বিনিময়ে মাছ, শুঁটকি কেনা হত। চারদিকে অন্ধকার নেমে এলে গল্পমামুর ছোটভাই, সত্যমামা, আকাশে ভেগা, কালপুরুষ, বৃহস্পতি, মঙ্গল চেনাতেন। সপ্তর্ষিমণ্ডলকে কেন্দ্র করে ধ্রুবতারা পর্যন্ত পৌঁছে যেতেন। অন্ধকার রাতে ছায়াপথ চম্পকনগরকে আলোকিত করত। শোনাতেন সৌরজগতের অপার রহস্য ! নীল আর্মস্ট্রং-এর চাঁদে নামার কাহিনি। গ্রীষ্মের সারারাত বউ কথা কও পাখির ডাক! নির্জন দুপুরে ঢুপি স্তব্ধতা বাড়িয়ে ডেকে যেত। সকালে স্নান সেরে দরজার পাশে মঙ্গলঘট বসিয়ে চারুমামী ঠাকুর প্রণাম করতেন। গোবর ছড়া দিয়ে সারা বাড়ি শুদ্ধ করা হত। গল্পমামা শীত গ্রীষ্ম বারোমাস পুকুরে নাভি পর্যন্ত ডুবিয়ে সূর্যপ্রণাম করতেন—ওঁ জবা কুসুম সংকাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম’... দুপুরে ঢেঁকিছাঁটা আউশচালের ভাত। ঘরে-তোলা ঘিয়ের সঙ্গে উচ্ছেভাজা! পিঠেপুলি,সরভাজা...সব পেয়েছির দেশ।

বহুদিন রাতের ঘুম অনিয়মিত অনির্বাণের। কাল সারারাত বিনিদ্ররজনী। যেন এক লুপ্তনগরীর কথা মনে পড়েছিল তার। মুনিমুক্তো ও মূল্যবান আসবাবে ভরা হারিয়ে যাওয়া ধুসর প্রাসাদকায় শবনমকে নিয়ে চম্পকনগর যাওয়ার সাহস করেনি অনির্বাণ। তার পারস্যগালিচা, কাশ্মীরি শাল, নিটোল মুক্তা প্রবাল-তার বিলুপ্ত নগরীতে সঞ্চিত হয়ে আছে। বিলীন স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা আর শিশির বিন্দু শবনম। অনেক কমলা রঙের রোদ তুমি শবনম—অনেক কমলা রঙের রোদ তুমি ছিলে। তোমার মুখের রূপ আমি তো আজ আর খুঁজি না। শুধু মনে পড়ে তোমার নির্জন হাতের ছোঁয়া।

সারারাত আকাশে তারায় তারায় উড়ে বেড়িয়েছে অনির্বাণ। অ্যান্ড্রোমেডাকে নিয়ে আসতে চায় অসীম! অ্যান্ড্রোমেডা আর শবনমে কী তফাত! শবনম তার হলো না। সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের কোনো এক সিঁড়ির ধাপে বসে তার চাপা কলির মতো আঙুলে অঞ্জলিবদ্ধ দু-হাত তুলে অনির্বাণকে বলেছিল--

‘আমার পরিচয় কী অনির্বাণ? বলো অনির্বাণ বলো’।

সেই অঞ্জলিবদ্ধ হাতে কি সোনার প্রদীপ দেখেছিল অনির্বাণ! সেই প্রদীপের আলোয় শবনম ও সিদ্ধেশ্বরী একাকার হয়ে গিয়েছিলেন তার কাছে। কিন্তু তবু শবনম তার হলো না। অনির্বাণের চাওয়ায় কি তত জোর ছিল না? বাবা মারা গেলেন—মাও। তারপর? না, জীবনের গল্প নতুনভাবে তৈরি হলো না। বয়স তার অনুকুলে ছিল না নাকি মন? ধান কেটে নেয়া খড়ের মাঠে শূন্যতায় শবনমকে ছেড়ে দিয়ে তার সময় বয়ে চলল।

অসীম জানিয়ে রেখেছে দেশে এলে সে ‘অমূল্য নিবাসে’ যাবে। হঠাৎ ‘অমূল্য নিবাস’ কেন আকুল করল তাকে? সেসব দিন তো আর নেই। গল্পমামা-চারুমামী কেউ নেই। ছেলে অতীশ ব্যাঙ্গালুরুতে। বাড়ি আসে না। আসা সম্ভব হয় না। লক্ষ্মীমাসী বাড়ি সামলে রাখে। সব দেখা শুনা করে। বহুদিন অনির্বাণ যায়নি চম্পকনগর--স্মৃতি থেকেও হারিয়ে যাচ্ছিল সব অনুষঙ্গ। ভাই উশকে দিল। বাড়ি তো একটা সময়ের প্রতিফলন। কবে কখন চারুমামী মারা গেলেন, জানতেও পারেনি। অনির্বাণের মনোজগতে তখন রেডশিফটিং চলছে! গল্পমামার ছেলে অতীশ খবর জানিয়েছিল বহু পরে। এখন লক্ষ্মীমাসী ‘অমূল্য নিবাস’-এর প্রহরী। লক্ষ্মীমাসীর একমেয়ে—কোথায় আছে কে জানে! শেষদিন পর্যন্ত ও-ই ছিল চারুমামীরসঙ্গী। লক্ষ্মীমাসীর গল্প অনেক কিছু জানা, তবে বেশি অজানা!

ভাই জিজ্ঞেস করেছিল : —‘আচ্ছা দাদা,বল তো লক্ষ্মীমাসী চারুমামীর কে? কোত্থেকে এসেছিল? অনির্বাণ আতান্তরে পড়ে। সত্যি তো লক্ষ্মীমাসী কে?

এ নিয়ে তো সে ভাবেনি। লক্ষ্মীমাসী আছে, ব্যস। ‘অমূল্য নিবাস’-এ এতটাই অপরিহার্য ছিল যে সে বাড়ির সঙ্গে একাকার হয়ে উঠেছিল। স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে মনে পড়ে, অনির্বাণের মা বলেছিলেন--

‘বড় দুর্ভাগা মেয়ে। লক্ষ্মীর বাবা পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে ভারতে চলে এসেছিলেন। তারপর গল্পদাদুর গ্রামে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে স্ত্রী মেয়েকে ফেলে রেখে সেই যে উধাও হয়ে গেলেন আর ফেরেননি। পূর্ব পাকিস্তান বা এ-দিকে কেউ তার হদিশ দিতে পারেনি। কেউ কেউ বলে বর্ডার চোরাপথে পেরোতে গিয়ে... বিস্মিত হয়ে। অসীম বলেছিল—

--লক্ষ্মীমাসীর তো বিয়ে হয়েছিল। মেয়েও আছে। তবে লক্ষ্মীমাসী কেন ‘অমূল্য নিবাসে'।

—ওকে আশ্রয় দিয়েছিলেন চারুমামী।

—বিয়ে হয়েছিল আসামের নেলীর কাছে কোনও এক গ্রামে। কেউ কেউ বলে...১৯৮৩ সালের নৃশংস হত্যালীলায় তার বর সম্ভবত খুন হয়। দাঙ্গায় তাড়িত লক্ষ্মীমাসী এক কাপড়ে মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে চলে এসেছিল চারুমামীর কাছে। সেই থেকে সে আত্মভোলা, অনেকটা অপ্রকৃতিস্থও স্মৃতি-বিলুপ্ত। কখনো হাসে কখনো কাঁদে। কিন্তু কাজ ঠিকই করে যায়।

—ও আমাদেরে খুব ভালবাসত, তাই না দাদা?

আচ্ছা লক্ষ্মীমাসী কি এখনও ‘অমূল্য নিবাসে’? গল্পমামার অমৃতসদন এখনও কি স্নিগ্ধতা বিকিরণ করে! পূর্ণিমার রাতে নারকেল গাছের পাতায় জ্যোৎস্নার খেলা একবার দেখিয়েছিলেন গল্পমামা। সুনামগঞ্জ, খিত্তা, বইয়াখাউরি, গন্ধারকাপন, মান্দারকান্দি, হবিগঞ্জ, সিলেট, পৈল সেইসব সব-পেয়েছির দেশগুলির নাম শোনাবারও কেউ নেই। পূর্ববঙ্গের বাড়ি কার কোথায় ছিল, কেউ আজ জানে না। সব হারিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, শবনমের দাদুর বাড়িও তো সিলেটেই ছিল। তবু আমরা’ আর ‘ওরা’র বড়ো তফাত। এখন মান্দারকান্দির ‘অমূল্য নিবাস’ চম্পকনগরে স্মৃতিহীন লক্ষ্মীরানীর তত্ত্বাবধানে!

অসীম এ-মাসেই আসবে বলে জানিয়েছে। অ্যান্ড্রোমেডা অসীমের দেশ দেখতে চায়। কোনটা দেশ? মান্দারকান্দি? চম্পকনগর? ব্যাঙ্গালুরু? না শিলচর? কোথায় শেকড়? যে-লক্ষ্মীরানী ‘অমূল্য নিবাস’ রক্ষা করে চলেছে সে তো স্মৃতিভ্রষ্ট, তাড়িত, পরিত্যক্ত পিপড়ে মানুষ! আর অকৃতদার অনির্বাণ ভবিষ্যৎ-রহিত। চক্রবর্তী পরিবারের উত্তরসূরি আমেরিকায় আর ‘অমূল্য নিবাস’-এর একমাত্র বংশধর অতীশ ব্যাঙ্গালুরু! হ্যা, অনির্বাণ যাবে। বহুদিন পর ঐ ধানের ক্ষেতের রৌদ্রছায়া তাকে হাতছানি দিচ্ছে--‘আয় আয়। মন বলছে--‘অমৃত সদনে চল যাই’। কিন্তু এই মহামারীতে যেতে কি পারবে ওরা? লক্ষ্মীরানী কি টিকা নিয়েছে? অসীম কি সত্যি সত্যিই আসবে? অ্যান্দ্রেমডা কি, প্রক্সিমার জন্যে শিকড়সন্ধানী হতে চায়! প্রক্সিমা তো বড় হচ্ছে অন্য পরিবেশে ভিন্ন শিক্ষায়—সে কি পারবে এসব মানিয়ে নিতে কোনোদিন! শুনেছিল অ্যান্ড্রোমেডার পূর্ব-পুরুষও তাইওয়ান থেকে রাশিয়া হয়ে আমেরিকায় থিতু হয়েছে। আছে প্রব্রজনের ইতিকথা। তবুও...। যাত্রাপথের কথা কেউ শেষ পর্যন্ত মনে রাখে না। কনৌজের ব্রাহ্মণ এসে সিলেটে শিকড় ছড়িয়েছিলেন। পৃথিবী গ্লোবেল ভিলেজ হয়ে গেলেও সবার সঙ্গে কি আত্তীকরণ ঘটে? ঘটে না। শবনম তো অন্তেবাসী হয়েই রইল।

মহাসড়কের আল্পনাকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলে দুই ভাই, অসীম ও অনির্বাণ। অসীম অনেকটা উদাসীন। মাঝে মাঝে রুমাল দিয়ে চোখ মুখ মুছছে। চোখে কি জল?

—দাদা! জীবনের পথটা যদি এরকম হত! আল্পনা আঁকা!

--তুইনা সায়েন্স পড়েছিস, অ্যাস্ট্রোনমির টিচার। এত ভাবালুতা তোকে মানায় না ভাই। ক্ষণিকের মুঠি লও ভরিয়া, জানিস না ?

--কী যেসব বলিস তুই! আর্টস-সায়েন্সে কোনো তফাত নেই রে-- ক্যালিফোর্নিয়ার দীপেনদাকে জানিস তো আসলে সবই মানবিকী বিদ্যা।

—অ্যান্দ্রোমেডা ও প্রক্সিমাকে শেষপর্যন্ত আনলি না তুই? অখণ্ড নীরবতা স্তব্ধ করে রাখে দু-ভাইকে। অস্বস্তি কাটাতে অসীম বলে

—শেষ পর্যন্ত অ্যান্ড্রোমেডা পিছিয়ে গেল। ওর মা বাবা আসছেন তাছাড়া প্রক্সিমার অসুবিধে হতে পারে।

অনির্বাণ ভাবে, জানার উপায় নেই অসীম সত্যিই ভালো আছে কিনা। দুই ভাইয়ের ভেতরে আলো-আঁধারির খেলা চলছে। এক আলোকবর্ষ দূরত্ব রচিত হয়েছে কি?

--ভাই তুই এখনও তিল, পুস্তর বড়া খাস? কামরাঙার টক?

হো হো করে হেসে ওঠে অসীম। ... সব প্রসেসেড ফুড। সময় কোথায়? অ্যান্ড্রোমেডা আমিষাশী...

এখনো রাঙামাটির পথ আসেনি। পথের আল্পনা এখন অদৃশ্য। রাস্তায় খানাখন্দ তারপর এক সময় গাড়ি বাঁদিকে বাঁক নিয়ে কাঁচা রাস্তায় ঢুকে পড়ে। বিশাল কদম গাছ এখনও দাঁড়িয়ে। আগে এ-পথে গাড়ি চলত না। এখন চলে লাইন বাস। ধোঁয়া ধুলো উড়িয়ে চলে যাচ্ছে একের পর এক।

অনির্বান ভাবে, কেন যাচ্ছে তারা! কী আছে এখন ‘অমূল্য নিবাস’-এ। ঐখানে কাঠের দেড়তলায় আধো-অন্ধকারে বিশাল অজগর সাপের খোলস আছে। ওরা দু-ভাই আর অতীশ কত কৌতুহল নিয়ে ওটা দেখত। গল্পমামার তিন পুরুষের পেণ্ডুলাম ঘড়ির যান্ত্রিক কঁকানিতে একবার মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে চিৎকার করেছিল ওরা ভয়ে। রূপকথা আর বাস্তব। আম-কাঁঠালের গন্ধে ম-ম করে ওঠা ‘অমূল্য নিবাস’ এখন কেমন?

পৌঁছেছিল ওরা ঠিকই। কিন্তু গিয়েই অনুভব করেছে, না এলেই ভাল হত! বাড়ির সামনে আমবন-- ফাঁকা। অনেকখানি জায়গা উন্মুক্ত। কাঠের বাড়ি হুমড়ি খেয়ে বেঁকে আছে, পড়োপড়ো। কোনো গাছপালা নেই। পুকুর এখন কচুরির দামে খানাডোবা। কিছু উলঙ্গ বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি বাড়িময়। গরু নেই—গোয়াল নেই–ফুল নেই—ধান নেই... যেন খণ্ডহর। অন্ধকার ঘরে একাকী লক্ষ্মীরানী কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। শত চেষ্টাতেও চেনাতে পারেনি নিজেদেরে। শেষ পর্যন্ত কিছু ফলমূল, খাদ্যসামগ্রী ও টাকা ওর শিয়রে রেখে ‘অমূল্য নিবাস’ পেছনে ফেলে চলে আসতে থাকে দু-ভাই। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। ভাঙা দেড়তলার ওপাশ থেকে উঁকি দিয়ে গল্পমামা যেন তাদের নির্গমন দেখেন।... অনির্বাণ ভাবে শবনম বলছিল—‘আমরা দেশ ছাড়ব না।’ ও কি নিজের দেশ খুঁজে পেয়েছে? ওরা ঘুরে ঘুরে বাড়িটা দেখে। তালগাছ অনেক বড় হয়ে আকাশে উঁকি দিচ্ছে—তালও ধরেছে--খাওয়ার লোক নেই। ফুল নেই, ধান নেই, ধানী জমি বিক্রি হয়ে গেছে। পুকুর ঘেরা দেওয়া কাটাতারের বেড়া নেই—অতীশ এখানে আসে না। তারও সম্ভবত স্মৃতি নেই, পিছুটান নেই। মালয়ালী স্ত্রী! ‘অমূল্য নিবাস’ ধুকছে। লক্ষ্মীরানীর খোঁজ খবর কি কেউ করে?

আসার সময় একদল লোক তাদের পিছু নেয়।

--‘বাবু আমাদের করোনার টিকা কবে হবে?’ অবাক চোখে দু-ভাই পরস্পরের দিকে তাকায়। অসহায় মানুষগুলো ওদেরে সরকারি লোক ভেবে নিয়েছে। সমবেত জনতা বলতে থাকে—‘আমাদের অনেক লোক মারা গেছে, বাবু টাকা নেই লক ডাউন ছি--ল কাজ নেই... খাওয়া নেই...' শুধু নেই—নেই—আর নেই শুনে দুইভাই বিব্রত হয়ে কোনও রকমে গাড়ির দিকে এগোতে থাকে।

‘সরকার নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে’--বলে গাড়ির দরজা বন্ধ করে অনির্বাণ। একবার শেষবারের মতো বিষন্ন চোখে বাড়িটার দিকে তাকায়। আর তখনই নজরে পড়ে যেখানে ‘অমূল্য নিবাস’ লেখা ছিল সেখানে নতুন বোর্ড Site for Petrol Pump' তার মানে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়িও। কিন্তু স্মৃতিহীন লক্ষ্মীরানীর কী হবে! চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। ওদের গাড়ি দ্রুত বেগে এগোয়, এগোতে থাকে। ‘অমূল্য নিবাস’ পেছনে পড়ে থাকে ধুলোর আস্তরণের আড়ালে...



লেখক পরিচিতি:
স্বপ্না ভট্টাচার্য

(জন্ম ১ নভেম্বর, ১৯৫৩) উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বিশিষ্ট গল্পকার ও অনুবাদক। ইতিমধ্যে তার দুটি ছোটগল্প-সংকলন প্রকাশিত হয়েছে : সমান্তরাল ও বাস্তুহীন। এছাড়া রয়েছে তার ‘হারুকি মুরাকামির নির্বাচিত গল্প’ নামক অনুবাদ-গ্রন্থ। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক-কর্মী স্বপ্না, বিশ্বাস করেন সাহিত্য নিরবচ্ছিন্ন সমাজ-পরিশীলনের অভিব্যক্তি। জীবনানন্দের কবিতায় পরাবাস্তবের উপস্থিতি সম্পর্কে গবেষণা করে তিনি গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ. ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। তপোধীর ভট্টাচার্যের সঙ্গে যুগ্মভাবে প্রকাশ করেছেন ‘জীবনানন্দ ও পরাবাস্তব’ নামক বহু প্রশংসিত প্রবন্ধগ্রন্থ। নিয়মিত পড়া এবং লেখা স্বপ্নার জীবন-যাপনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ