শ্যামল-তর্পন : লেখালেখি নিয়ে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের কয়েকটি কথা


সমীরকুমার  চট্টোপাধ্যায়

১৯৮১। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় তখন আটচল্লিশ। একটি কথোপকথনে তাঁর শান্ত স্মিত রসময় কণ্ঠস্বরে সস্নেহ উল্লাসে শুয়ে বসে গড়িয়ে কিছুটা এলোমেলো দীর্ঘ আলোচনা করেন যাতে ছিল না কুটিল প্রশ্নের কুশলী উত্তর। সঙ্গে ছিলেন অনুজ লেখক কল্যাণ মজুমদার। সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবারের বিকেলে। তদ্দিনে " হাওয়া গাড়ি " লেখা সমাপ্ত। " অমৃত " সম্পাদনার পাঁচ বছর অতিক্রান্ত।

পড়তে পড়তে মনে হল একচল্লিশ বছর আগে অনেক কথার ভিড়ে এমন অনেক সাহিত্য এবং জীবন সম্পর্কিত বিশ্বাসের কথা বলেছেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় যা আজও অমোঘ । সুনির্দিষ্ট। যেকোনও প্রজন্মের সাহিত্যসেবকের চিন্তা ভাবনার পরিসর উন্মুক্ত করে দিলেও দিতে পারে।
আজ কথাসাহিত্যিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় উননব্বই পূর্ণ করলেন। তাঁকে প্রণাম নিবেদন করে অতি নির্বাচিত কয়েকটি অংশ তুলে ধরছি। সন্দেহ হয় , আজকের পরিবর্তিত সময়ে হয়তো অনেক কথাই অনেকের কাছে শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস, তবু আশার কথা তো এও যে , সব সময়েই শিল্প সাহিত্যে কিছু দৈবী পাগল থাকেন যাঁরা অবুঝ , সৃষ্টিসুখে মগ্ন। এই নির্বাচিত উচ্চারণ শুধুমাত্র তাঁদেরই জন্য।
----------------------------------------------------------------------------------------

" বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস না লিখে শুধু গল্পের দ্বারা স্থায়ী আসনলাভ করা বা স্মরণীয় হয়ে থাকা প্রায় অসম্ভব। সুবোধ ঘোষ অনেক ভালো গল্প লিখেছেন। এখন তিনি প্রায় ভুলে যাওয়া লেখক, কারণ সুবোধদার কোনও স্মরণযোগ্য উপন্যাস নেই।"

" সত্যিকারের ভালো লেখার এক নম্বর উপাদান--- আত্মোপলব্ধি। ফান্ডামেন্টাল থিংস। সুনীলের সঙ্গেও এ নিয়ে আমার অনেক কথা হয়েছে। যেমন সুনীল আমাকে বলল, ' তুই তো অনেক ফান্ডামেন্টাল জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া করেছিস, দ্যাখ না কল্লোল যুগ কীভাবে মিলিয়ে গেল। ' যে কথাগুলো আমি বলি তাই সুনীলের মুখে শুনলাম। কথায় কথায় বললাম , দ্যাখ সুনীল, সত্যজিৎবাবু ফ্যাক্টর নন, ফ্যাক্টর হচ্ছেন বিভূতিবাবু। একটা বিজ্ঞাপন দিলে ২৪০ টাকার সুলভ সংস্করণের গ্রাহক দশ হাজার লোক টাকা দিয়ে যায়। অথচ তাঁর বিষয় হচ্ছে--- গ্রাম, রাস্তাঘাট, মানুষের সুখদুঃখ---- এইসব । এই যে লেখাগুলি, একটা দেশ কেমন, সে দেশের জলবায়ু কেমন, প্রহর কেমন, বেলা তিনটে কেমন---- এগুলো বিভূতিবাবুর লেখায় দারুণভাবে আছে। আর কী। মানুষে মানুষে রিলেশন। রিলেশনের টানাপোড়েন কেমন। যেমন, একটা লোকের স্রেফ মৃত্যু নিয়ে লেখেন নীহার গুপ্ত। আর-একজন লেখক লেখেন, পৃথিবীর ইতিহাসের মৃত্যুগুলির পটভূমিতে এই মৃত্যুটির কী রূপ। বা পৃথিবীর প্রাকৃতিক ব্যাকগ্রাউন্ডে এই মানুষটির বেলা আটটা ৯ই ডিসেম্বর ১৯১৩ সাল কীরকম। এই দুরকমের লেখা আছে। একটা প্রিসাইস সাল তারিখ দিয়ে একটি মৃত্যুর কথা, আর একটি মৃত্যুর ইতিহাসে এই মৃত্যুর প্রতিষ্ঠা। এই দুরকমের লেখা।"

" একজন লেখকের ডিউটি হল তার পাঠক তৈরি করা। লিখতে লিখতে আরও কতো মানুষের মন মজাতে পারে, মজিয়ে মজিয়ে সে ভালো জিনিসের দিকে টেনে নেবে। ভালো লেখা ভালো লেখা। আর কোনও ব্যাখ্যা নেই। পাঠক তার নিজের স্বার্থেই তার দিকে ঝুঁকবে বা লেখক পাঠককে বাধ্য করবে তার দিকে ঝুঁকতে।"

" যে লোক বড়ো জিনিস লেখে--- বড়ো জিনিস লেখা মানেই হচ্ছে মুক্তভাবে নিজেকে মৃত্যুর জন্য তৈরি করা।"

" আমার অনেক বিখ্যাত, ভালো, ইমপরট্যান্ট গল্প এমনকি উপন্যাসও কোনও নামী কাগজে বেরোয়নি । ছোট কাগজে বেরিয়েছে। আমার ' সরমা ও নীলকান্ত ' রবি বসু একটা কাগজ করত, তাতে বেরিয়েছিল। আমার এই লেখাগুলো ভালো ছাত্রের ভালো স্কুলে পড়তে না পেরে গ্রামের স্কুলে পড়ার মতোন। ইচ্ছে ছিল লেখা নামক ছেলেগুলোকে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে পড়াই। পারিনি। গভর্নমেন্ট স্কুলের টিচারগুলোও আগের চেয়ে খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু আলটিমেটলি আমার ওই লম্বাহাতা, কপাল দিয়ে সর্ষের তেল গড়াচ্ছে গল্পগুলো ------ কমপিটিটিভ পরীক্ষায় খারাপ করেনি , মোটামুটি ভালোই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। তাতে আমার একটা ভালোই হয়েছে। নৈরাশ্য ,ব্যর্থতা, স্বীকৃতি না পাওয়া ----- এসবকে অতিক্রম করার জন্য নিরন্তর একটা চেষ্টা চালিয়ে যেতে পেরেছি।"

" এই যে তোমাদের পাড়ার ঝকঝকে বাড়িগুলো, এদের মালিক কারা, এতে থাকে কারা ? এদের কাছে আমাদের গল্প বা উপন্যাসের মূল্যটা কি। এদের কাছে বেশি মূল্যবান সকালবেলা প্যানে কতটা বাওলস ক্লিয়ার হল। পরিমাণটার ওপর মনের শান্তি নির্ভর করে। এদের জন্য ঝকঝকে চকচকে হাউস ম্যাগাজিন বেরোয়, যেমন টাটা কোম্পানির বা স্টেটসম্যানের ক্যান্টিনের সুপের মতন। এদের কাছে শিল্পও তাই। ইনস্ট্যান্ট নভেল, ইনস্ট্যান্ট শর্ট স্টোরিজ এদের দরকার। এমনকি ইনস্ট্যান্ট চাওয়া-পাওয়া নামক সিনেমাও রয়েছে। তবে সত্তর কোটির দেশ তো, কিছু না কিছু করেও হাজার পাঁচেক ছয়েক লোক তোমার জন্য অনর্গল থাকবেই। কেননা বহু লোক আছে যাদের অন্য কোনও প্যাসটাইম নেই, টাকা হাতে এলে দৌড়ে গিয়ে বই কেনে। বইটা পড়ে তার ভালো লাগাটা স্ত্রীকে, মেয়েকে, ভাইকে, বোনকে এমনকি বন্ধুকে নির্জনে বসে বলে। বলে বইটা বন্ধ করে চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে । যা আরকি আমরা আছি আমরা ছিলাম ফর বিভূতিবাবু, রবীন্দ্রনাথ, ফর তারাশঙ্কর, ফর মানিকবাবু। আমরা কী করিনি এঁদের জন্য ? আমাদের জন্যও কেউ কেউ করছে সেইভাবে। নইলে বইটা যাচ্ছে কোথায়, বিক্রিটা হচ্ছে কোথায়, পড়ছেটা কে !!! এটারও তো একটা ব্যাপার আছে। দ্য পয়েন্ট অফ ইউটিলিটি । এবং শিল্প যতক্ষণ না কমোডিটি হচ্ছে , শিল্পের পক্ষে সেটা দুর্ভাগ্যজনক ।"

" লেখকের একটাই বিশ্বাস থাকা দরকার এবং তা মানুষের প্রতি। তাও সেটা আদর্শ হিসেবে না, দোষে গুণে মিলিয়ে যে মানুষ তার কথাই বারবার বলা। মুক্তির কথা বলা লেখকের দায়িত্ব নয়। লেখকের দায়িত্ব হচ্ছে পাঠককে বলা----- দ্যাখো, ব্যাপারটা এইরূপ। ' দ্যাখো ব্যাপারটা ' ভঙ্গিটাও যেন ধরা না পড়ে লেখায়। নদীতে যেমন একটা ঢেউ ভাঙে, মানুষের জীবনেও এইপ্রকার নানা ঢেউ ভাঙছে, তার মধ্যে আপনাআপনি যদি কোনও খাত প্রবাহিত হয় বিভিন্ন লেখার ধারাবাহিকতা থেকে, তবেই সেই লেখকের একটা কনটিনিউটি আছে। যার কনটিনিউটি আছে তার একটা বক্তব্য আছে, বক্তব্য কোথাও স্পষ্ট করে বলা না থাক, আপনাআপনি ঘামের মতো ফুটে ওঠে। বেলা সাড়ে দশটায় একরকম ঘাম হয় না নাকের নিচে, আপনাআপনি, যখন বলতে হয় না, গরম লাগছে নাকি--- ঠিক সেই রকম। লেখককে বলতে হবে কেন---- আপনার কোনও বক্তব্য আছে ? আর লেখকের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট ? ওসব বাজে। সারা রাশিয়ায় ১৯১৭ সালে বিপ্লব হয়েছে। এটা ১৯৮০ । ৬৩ বছরে ওদের সবচেয়ে দুর্বল লেখকের নাম গোর্কি, আর ওদের সবচেয়ে সার্থক লেখকের নাম দস্তয়েভস্কি । ওরা আর একজন গোর্কি বের করতে পেরেছে ? ওই তো সবেধন নীলমণি শলোকভ। আরে যে বাঙালি মন দিয়ে লেক মার্কেট থেকে ২৫ টাকা দামের ইলিশ কাটিয়ে কিনে নিয়ে চলে যায়, পড়ে থাকে গুয়ে ট্যাংরা আর পাঙাস মাছ, সাহিত্যেও গুয়ে ট্যাংরা আর পাঙাস মাছ পড়ে থাকবে। ভালো লেখা কখনও পড়ে থাকে না।"

" যৌবনের তাপ উত্তাপ , প্রেম বলতে যা বোঝায়, উদ্দাম আবেগ আমার লেখাতেও আছে। কিন্তু শরীর নিয়ে ঘাটাঘাটি আমার লেখায় বিশেষ থাকে না। কিন্তু প্রেমের যন্ত্রণা থাকে আন্ডারকারেন্টের মতো---- যেমন 'হাওয়া গাড়ি '-তে বা 'জলপাত্র ' । থাকে, তবে খুবই সাবডিউড টোনে। আমার বিশ্বাস, মাফলড টোনে যা বলা যায় তাতেই তীব্রতা বেশি প্রকাশ পায়। যেমন ধরো, অনেকে লেখে প্রেম মানে------ ' ইহাই মাংসের ধর্ম ' বা ' পৃথিবী এইরূপেই চলে ' । আমি বলতে চাই, হে পাঠক, প্রেমের নামে যে অভিমান, যে কম্পমান জ্বরতপ্ত অবস্থা,এগুলো কোনও ব্যাপার নয়, আসল ব্যাপারটা দ্যাখো, বিষয়টা কতো ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট। দেহের বর্ণনা, ওইসব নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ লেখা আমার কাছে বাজে ব্যাপার মনে হয় । লেখক কি বালক? কোনও অ্যাডাল্ট লেখক এগুলো কেন করবে! শরীর নিয়ে লেখা আমি বলছি না অপ্রয়োজন। কিন্তু আমি জানি, এই রচনাগুলো যখন মেয়েরা পড়ে , ওরা তখন মনে করে, ' আহারে, এই পুরুষ লেখকের এত বয়স হল তাও আমাদের বগল---- আমাদের শরীর টরীর ভালো করে জানেই না । আমাদের এত রহস্যময় মনে করে? বাহারে বাহা! '

রহস্যময়তা অবশ্যই আছে। নিশ্চয়ই আছে। আমার লেখায়ও তা প্রচুর আছে---- নারীদেহ আছে, প্যাশন আছে, ডেথ আছে, প্রিপ্ল্যানড ডেথ আছে, ক্ষমতা আছে, ক্ষমতার লোভ আছে। ' রেজারেকশন '-এ নারীদেহ আছে, কিন্তু ঘাটাঘাটি ডিটেলড বর্ণনা আছে? মিনিমাম কথায় ম্যাক্সিমাম এফেক্ট হয়, যে পদ্ধতি আমি ফলো করি। আর আমার সমসাময়িক অনেকে দেহফেহ নিয়ে যা করছে, সেগুলো জ্বরের মধ্যে লেপের তলায় মাসতুতো বোনের গায়ে হাত দেওয়ার মতোন।"

" বিদেশী সাহিত্য পড়া নিশ্চয়ই দরকার, তবে এমন পড়ার দরকার নেই , যে পড়াটা নিজের পায়ের তলার মাটি হাওয়া করে দেয়। আমরা যত বিদেশী বিদেশী করে নাচি, ওয়েস্টার্ন রেসপন্স টু ইন্ডিয়ান লিটারেচর ইজ জিরো। যেমন ধরো, সল বেলোর সঙ্গে শিকাগোর রাস্তায় একসঙ্গে হেঁটেছি, ওদের আন্ডার ওয়ার্ল্ডে গেছি। এটুকুই মনে হয়েছে ওর পৃথিবী যা নিয়ে ও বিমোহিত হয়ে আছে, আমার সোনাগাছিও তো কম নয়। আমার কলকাতা, আমার পূর্ববঙ্গ থেকে আসা, আমার আসানসোল--- বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেশি। ইউরোপের সম্বল কী। কয়েকটা যুদ্ধ। ভারতবর্ষের সম্বল কয়েকটা দর্শন। গোটা কুড়ি যুদ্ধ থেকে একটা দর্শন বেরোতেও পারে হয়ত , কিন্তু একটা দর্শন ইজ ইকোয়াল টু হানড্রেডস অফ ওয়ার। বুদ্ধ, জৈন, আমাদের জীবৎকালের মহাত্মা গান্ধী---- সবই তো আফটারওয়ার্ডস দেখা গেছে পৃথিবীর অন্য সব দেশ নিয়েছে-- প্র্যাকটিসের কথা বলছি। তা আমার এই দেশের মাটিতে বসে, ১৯৮০ সালের প্রতি চোখ বুজে থেকে আমি যদি টমাস মান, গুন্টার গ্রাস, তারপর আবার সন্দীপন বলে হেনরি মিলার---- । পড়েনি অবশ্য।

দ্যাখো, সুনীল আমাকে বলল, মতির কোন একটা লেখায় নাকি জর্জ সিমোনাঁর না কী এক ফরাসী সাহেবের মিল আছে। মিল আছে বলে যে মতি স্বল্প সাইজের লেখক তা আমি কখনোই মনে করি না। ও খুব ভালো লেখক--- পাওয়ারফুল--- কিন্তু এটা কেন করতে যাবো। হোয়াই ? তার তো কোনও দরকার নেই। আমার সর্বদাই মনে হয়, আমার প্রতিপক্ষ হচ্ছে ব্যাসদেব , আমার প্রতিপক্ষ তুলসীদাস। আমার প্রতিপক্ষ হচ্ছে শেক্সপীয়র। আমি কেন ক্ষুদে লোকজন নিয়ে মাথা ঘামাবো।

কিন্তু তাও পড়ার প্রয়োজন আছে। এই কারণেই---- পৃথিবীর তাবৎ বড়ো লেখার মধ্যে একটা বড়ো কমন গুণ--- সেটা হচ্ছে ঘুরেফিরে মানুষের প্রতি ভালোবাসা। কে কীভাবে ট্রিট করেছে। টলস্টয়ে যা পাই--- নারীর ভাইটালিটি , দখল, জমি--- তারাশঙ্করেও পাই। খুব সাবডিউড টোনে বিডূতিভূষণেও পাই। আমি জানি না বিডূতিভূষণ ফ্রয়েড বা তারাশঙ্কর টমাস মান পড়েছিলেন কি না।

তুমি চিন্তা করো, যে রাত্রে আমার পিতার আমার মায়ের সঙ্গে মিলনের ফলে আমার প্রাণটা মাতৃজঠরে এল, সেদিন হয়তো বৃষ্টি হচ্ছিল এবং ফ্রয়েড বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভিজছিলেন, বাবা কিন্তু ভেজেননি । আমি বলতে চাইছি, ফ্রয়েড থাকুন বা নাই থাকুন মানবজন্ম হবেই। কাম কাজ করে, ইচ্ছা কাজ করে, প্রেম কাজ করে। মার্ক্স না থাকলেও শ্রমিক আন্দোলন হবে, মানুষের জন্য মানুষের ভালো করার আকাঙ্ক্ষা থাকবেই। এবং মানুষ মানুষকে নিধন করার চেষ্টা করবেই। যেমন বলা হয়, মানুষের আদি আনন্দের নাম নরহত্যা। তারই মডার্ন নাম শ্রেণীসংগ্রাম।"

" ম্যাটিনিতে অনেক খেলা খেলেছি। ইভিনিংয়ে খেলেছি। নুন শোতেও খেলেছি। আমি জানি নাইট শো তো হাউস ফুল যাবেই। আমার আর কী করার আছে। বাই দ্য ডিমান্ড অফ পপুলার প্রেস প্রতি বছর বর্ষায় উপন্যাস লিখব, পুজোয় বেরোবে, পরের বৈশাখে বই হবে। কেউ ভালো বলবে, কেউ খারাপ। বিশেষত যদি বুঝি লেখা কিছুই হচ্ছে না।

এখন আমার প্রার্থনা কি জানো ? মৃত্যু যেন ঘুমের মধ্যে আসে। একটা বড়ো লেখা লিখলে মানুষ টের পায় সে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে। আর কিচ্ছু না। মৃত্যু মানে কী? একটা বড়ো ঘুম। ছোট ঘুমের ভেতর দিয়ে বড়ো ঘুমে চলে যাওয়া। স্মৃতি ও বিস্মৃতি।"
" ঈশ্বর ধর্ম তন্ত্রমন্ত্র বিশ্বাস করি না। কিন্তু বিশেষভাবে জানতে ইচ্ছে করে---- ঈশ্বর বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর অব দ্য ওয়ার্ল্ড বা চেয়ারম্যান, বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স--- যাই বলো----- লোকটা কেমন, মিটিংয়ে কতক্ষণ থাকে, তার পিএ কে, পারকুইজিটস কী কী--- জানতে ইচ্ছে করে। করা খুব স্বাভাবিক কীনা বলো?"

" আমি বিশ্বাস করি পাহাড়ের যেমন ক্ষয় আছে তেমনই লেখকেরও ক্ষয় আছে। আমি যেমন বিস্ময়ের অনুভূতি হারিয়ে বসে আছি তেমনই আমার ধারণা, আমার সিনিয়র বা সমসাময়িক লেখকরাও হারিয়েছেন। অতএব নতুনদের জন্য জায়গা করে দিতে হবে। আমি গোড়া থেকেই নতুনদের সুযোগ দিয়ে আসছি। ট্রায়াল দিচ্ছি। কিন্তু সবাইকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা সম্ভব নয়, আমি চার পাঁচজনের বড়ো লেখা ছাপব। তাদের সুযোগ দেব। এবং প্রত্যেকের ওপর নজর রাখব। কারণ, আমি নিজে লিখে সাহিত্যের ইতিহাসে কতখানি জায়গা পাবো জানি না, যদি আমি তিনজন ঔপন্যাসিক দশজন গল্পলেখককে প্রতিষ্ঠিত করে যেতে পারি, সাহিত্যের ইতিহাস নিশ্চয় আমাকে একটা পাতা দেবে।

সেই আবার কিছু গড়ে তোলার পাগলামি রোগ। না মরা পর্যন্ত রোগটা তো সারবে না ভাই।"




লেখক পরিচিতি
সমীরকুমার চট্টোপাধ্যায়
লেখক। কলকাতায় থাকেন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ