প্রথম পর্ব:
ভূমিকাঃ আচার্য যদুনাথ সরকার হিস্ট্রি অফ ঔরঙ্গজেব(১৯১২) লিখেছিলেন প্রাথমিক পারসিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করে। তাঁর মহাগ্রন্থটি ষাট বছরের ইতিহাসকে নথিভুক্ত করার প্রথম প্রয়াস। প্রাক আধুনিকতার সপ্তদশ শতককে ঠিক সেই সময়েরই দিগন্তে দেখার তত্ত্ব ও তলাশ বেঙ্গল স্কুলের ইতিহাসকারদের অনায়ত্ত ছিল।জেমস মিলের দিগদর্শনে উপনিবেশকে শাসনের জন্য যে কাজের ইতিহাস রচনা হল দ্য হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় (১৮১৭-১৮২০) তাতে দ্বিজাতি তত্ত্বের নির্মাণ হয়। তথাকথিত হিন্দু ও মুসলমান যুগের বিপরীতে ব্রিটিশ যুগ যে কত ভালো আর হিন্দু মুসলমানের বিবাদ যে কত পুরনো এটাই ঔপনিবেশিকগণ প্রতিষ্ঠা করলেন। এই নির্মাণ ও প্রতিষ্ঠার ভারে ও ধারে উপমহাদেশ ফালা হয়। ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র ভাবনার পীঠস্থান হয় , হয়েই চলে। এমন এক জমিতে ভাবনা, কল্পনা, ইতিহাস নিয়ে এই প্রকল্প । প্রাক আধুনিকতা থেকে আধুনিকতায় বাঁক বদলের যে তাৎপর্যপূর্ণ সময়টা আচার্য যদুনাথ বেছে নিলেন তখন ভারতে অনেক কিছুর মতো সবচেয়ে বিতর্কিত রাজা আলমগীর ঔরঙ্গজেবের শাসন। পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ও শিল্পোন্নত দেশ সপ্তোদশ শতকের প্রাক আধুনিক ভারত।
"Shah Jahan's already world famous tomb( Taj Mahal) and 'Alamgir's Fatwa - i - Alamgiri reflects sharply opposing visions of kingship. If the former portrays Shah Jahan as the resplendent sovereign of a sacred realm, the latter reveals 'Alamgir ' as the pious, would be patron of a judicial state." Richard M Eaton, India in the Persianate Age para 1, page 337.
অন্ধ গাইডটি মকবরার সামনে দাঁড়িয়েছিল। তার আগে জোড়া তলোয়ার দেখা গেছে। সেই তলোয়ারের ছবিকে যতদূর সম্ভব মোঘল করা হয়েছে তাতে আছে আটশো বছরের পারসিক যুগের সব প্রভাব । তাতে দেখা গেছে গোলাপ ফুল। যা পসরা সাজিয়ে বসেছিল দোকানীরা ঔরঙ্গাবাদ থেকে চব্বিশ কিলোমিটার দূরে দরগা হজরত খওয়াজা মখদুম সৈয়দ শা জয়নুদ্দিন দাউদ হুসেইন সিরাজি উরফ ওয়াইস খওয়াজার আসপাশ । সাদা ফ্লেক্সের বুকে নীল রঙের জমি তৈরি করে হলদে হলদে অক্ষরে লেখা এই দীর্ঘ নাম যত বড় হবে ফ্লেক্সকেও ততোটাই বাড়তে হবে অবশেষে নাম ও ফ্লেক্স দুটোকেই শেষ হতে দেখা যাবে আর দেখা যাবে শেষ হবার আগে ফ্লেক্সে আরো লেখা হয়েছে মকবরা শাহেনশাহ ঔরঙ্গজেব আলমগীর। সুফি সাধকের সঙ্গে একই ফ্লেক্সে মোঘল শাসকের নাম থাকায় কি বিবাদ হয়েছিল ? কেমন সে বিবাদ ? বোধহয় সেজন্যই আর একটা ছোট ফ্লেক্স টাঙানো হবে ঠিক তার তলাতেই যাতে লেখা ছিল মকবরা শাহিনশাহ ঔরঙ্গজেব আলমগীর। তবে বোধহয় দৃশ্যমান তলোয়ারের মতো সেই ফ্লেক্স ও লেখাকে মোঘল করার জন্য সবুজ, সাদা ও লাল রঙ ব্যবহৃত হয়। দোকানীর পসরা থেকে একটি দুটি বা আরো বেশি ফুল তোলা যেতে পারে আর দাম চুকিয়ে সেটি নিয়ে অন্ধ গাইডের সামনে গেলে সে কিছুই দেখতে পারছিল না। তবু বলে চলে,“সমাধি কখশা হ্যায়। ইনকে উইল থে কি মেরি কবার ইস দরগা কে অন্দর বনানে কা। তবিজদারি করতে থে। কোরান শরিফ কি লিখাই করতে থে। ইসি পইসে মে করব কা বনায়ে গেয়া। ষোলাশো আটরামে পয়দা হুয়ে থে। সতরাশো সাত মে উনকা ডাইথ হুয়া এহমদনগর মে। একানইউ বরস কি উনকা উমর থি। পঁচাশ সাল হুকুমৎ করে। ওস সাইট মে উনকি গুরু হ্যায় জয়নুদ্দিন চিস্তি। যো ময়নুদ্দিন চিস্তি আজমের মে না, উনি খানদানকে। এ্যাকচুয়ালি ওরংজেব ডায়েড ইন এহমেদনগর দ্যাট ইজ পুনা। লাসট উইশঃ মাই বডি মাসট ব্রউট হিয়ার। ডায়ড সেভানটিন ওফ সেভান। ওকে। ” অন্ধ গাইডটি একাই ঘুরে ঘুরে সব দেখায়। সাদা চাদর দেখা যায় তার মধ্যে লাল লাল গোলাপেরা পড়ে। সেই চাদর চড়ানো থাকে মধ্যিখানে এক কাঁচা মাটির কবরের যার ওপর বেইজিল গাছটি কিছু উঠে থমকেছে। এ গাছ তুলসি নয়। তবু খুশবু দেয় খানা পাকাতে আর শরবতের সুগন্ধও আনে। কদাপি একে তুলসীর সঙ্গে ভুল করা যাবে না। যেমন যাবে না বোঝা কেনই বা এই খুলটাবাদে এ কবর থাকবে। যখন এতো প্রমাণিত যে শিরকে পরিবারের বেইমানির ফলে শিবাজির পুত্র শম্ভাজি আর তাঁর কবি সেনাপতি ছন্দোগামাত্য কবি কলসকে সংগামেশ্বরের ছোটখাট লড়ায়ের পর মোগল সেনাপতি মুকারব খান হেফাজতে নিলেন। তারপর মসির ই আলমগিরি বলল,“ অতঃপর , বাদশাহ ঔরঙ্গজেব ১৬৮৯ য়ের ৩রা মার্চ রবিবার , কোরেগাঁও এলেন আর সম্ভাজি ও কবি কলসকে তলোয়ার দিয়ে মারা হল ১১ই মার্চ সোমবার।” মধ্যের সাত আট দিনে কী কী হয় এসব ইতিহাস আর কথামালা গেঁথে এতোটাই আঁটোসাঁটো এক চেহারা নিল যে শম্ভাজির টুকরো টুকরো শরীর আসলে কে বা কারা জুড়েছে সে নিয়ে ফ্যাসাদ হয়ে যায়। দলিত আর শিভালে পাটিলদের মধ্যে। পাটিলরা দাবি করে চলে তারা জুড়েছে আর দলিতদের আইকন গোবিন্দ মাহার। এইসব জোড়া লাগানো সম্ভাজির শরীরের টুকরোতে কে আগুন লাগিয়েছিল এই ফ্যাসাদে কখন ঔরঙ্গাবাদের নাম শম্ভাজিনগর হওয়ার প্রস্তাব পাস হয় বিধানসভায়। পরে তা বাতিলও হয়ে আবার পেশের অপেক্ষায় থাকে। কদাপি কবি কলসের দেহের টুকরোগুলো নিয়ে কোন ন্যারেটিভ তৈরি হয়নি। সেগুলো যেন শাহী ফরমানে যথার্থই মুদ্দাফরাশের পেটে গেছে। স্থির এক বাদশাহের মতোই খুলটাবাদের মাটির কবরটি বুকে গাছ ও মাটি নিয়ে অপেক্ষা করে। তার শরীরে হাওয়া দেয়। কারণ খোলা মকবরার নৈতিক ঔদ্ধত্য দেখে ভাইসরয় লর্ড কার্জন ভয়ে শিউরে ওঠেন। মনে পড়ে যায় ১৬৯০ সালে কোম্পানির এক কত্তাকে পিছমোড়া অবস্থায় মোঘল দরবারে আনা হয়েছিল। যার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে ইংরেজ ক্ষমা চায়, যুদ্ধের ঔদ্ধত্য দেখানোর শাস্তিতে তিনি এই আলমগীরই বটে। এতেই শেষ নয় বড়কত্তা জোসায়ায় চাইল্ডকে ভারত ছাড়তে হয় আর মোটা টাকা গুনাহগার দিয়ে সব বাজেয়াপ্ত হওয়া কুঠি ফেরত দেওয়ার ফরমান জারি অবধি ব্যবসা মাথায় ওঠে। শুধুই কি নৈতিকতা নাকি জৌলুসপূর্ণ সমাধিস্থল বানানোয় শাহী খাজানায় হাত না দেওয়ার কোন ধারা আছে ফতোয়া ই আলমগিরিতে যার ব্যতিক্রম বাদশাহও নন ? কার্জন ভাবেন। ওটা ভাবনার বিষয়ই বটে। কথাবার্তা হয়।
—— কোন সে আকাশচুম্বী আকাঙ্ক্ষা ছিল ঔরঙ্গজেবের ?
—— কেন জয় করা।
—— জয় ?
—— আলমগীর, বিজেতা হওয়া প্রশ্নের মুখে পড়েছে বারবার ?
------ কখন ?
------ প্রথম থেকেই।
------ কী ভাবে ?
------ শাজাহান বেঁচে থাকতে তাঁকে তখতে বসার বৈধতা দেননি প্রধান বিচারপতি।
------ বিচারপতি ?
------ কেন নয়। প্রধান কাজী মেনে নেননি।
------ কাজীর বিচার !
------ ইন্দো - পারসিক সংস্কৃতিতে শরীয়তি আইনের ধর্মনির্বিশেষ মান্যতা ছিল।
------ কী ? -------হ্যাঁ। যুগটা ছিল পারসিক , লেনদেন , রাষ্ট্রীয় কাজ , হকের বিবাদ সব ইসলামী আইনেই হতো। একটা অধার্মিক মান্যতা ছিল।
------- ধর্মনিরপেক্ষ ?
------- সপ্তদশ শতকে কী করে হবে। অধার্মিক সর্বগ্রাহ্যতার কথা বলছি।
------- ছিল ?
------- অবশ্যই। শিখ সাম্রাজ্যেও কাজির উপস্থিতি ছিল। মারাঠা সাম্রাজ্য এর প্রভাব মুক্ত হবার চেষ্টা চালাতে থাকে।
------- আমরা কথা থেকে সরে যাচ্ছি ।
------ নাকি প্রাক আধুনিকতা নিয়ে কথা বলছি আধুনিকতাকে বুঝতে।
------ ঔরঙ্গজেবের কথায় ফিরে আসি।
------ হ্যাঁ। তলোয়ার তার খেলা দেখাতে থাকে। প্রধান কাজীকে সরতে হয়, উত্তর গুজরাটের কাজী সাহেব আব্দ আল ওয়াহাব ছিলেন ঔরঙ্গজেবের আইনি পরামর্শদাতা তিনি হলেন কাজী আল কুজাত , প্রধান কাজী। তাঁর রায়ে অসুস্থতার অজুহাতে শাজাহানকে সরতে হল আর আলমগীর বসলেন ময়ূর সিংহাসনে। সুস্থ হয়ে উঠলে শাহজাহান হলেন গৃহবন্দী।
------ ব্যাস খেল খতম।
------ বিচারপতিকে ম্যানেজ করলেও স্যাক্রেড সভরেইনিটির ,পবিত্র সম্রাট হবার স্বীকৃতি ঔরঙ্গজেব শাজাহানের জীবদ্দশায় পাননি।
------ তাই ?
------ মক্কা শরীফের স্বীকৃতি পেতে শাজাহানের মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় আর সাফাভিড সম্রাট সুলেমান তাঁর আলমগিরিকে পিদারগিরি মানে বাপের ওপর জবরদস্তির তুলনা করলেন। মুখরক্ষায় তাঁকে নির্যাস গুল মারতে হল আলমগীরকে।
------ তাহলে ?
------ হ্যাঁ , আমরা কথা বলছিলাম উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে।
------ কী সেই ব্যক্তি নিরপেক্ষ উচ্চাকাঙ্খা ছিল ঔরঙ্গজেবের যা আকবর বা জাহাঙ্গীরের ছিল না বা থাকলেও বাস্তবায়িত হয়নি ।
------ আর শাজাহান ?
------ শাহজাহানের কথা আমরা বাদই দেব।
------ কেন ? তাজমহল নির্মাতা , ময়ূর সিংহাসন নির্মাতা - বাদ কেন ?
------ কারণ ওনাকে স্যাক্রেড সভরেইনিটির আড়ম্বর আর হিরে জহরত নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে যে ব্যক্তি নিরপেক্ষ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় উনি বাদ।
------ আকবর আর জাহাঙ্গীরও যা পারেন না তা ঔরঙ্গজেবকে করে দেখাতে হলো ফতোয়া ই আলমগিরিতে।
------ একটা ম্যানুয়ালের দরকার ছিল কাজীদের , নইলে একই শরিয়তি বিধানের সব পরস্পরবিরোধী মানে করা হচ্ছিল বিশাল কাজী নেটওয়ার্কের কোনায় কোনায়। আমরা পেলাম ফতোয় ই আলমগিরি। ইসলামী বিচারবিধির পূর্ণাঙ্গ ম্যানুয়াল। একদম ব্যক্তি নিরপেক্ষ ।
------ আচ্ছা একথা কী মানতে হবে যে তিমুরিদ, তৈমুর বংশজাত সম্রাটদের লালিত স্বপ্ন স্যাক্রেড সভরেইনিটির, পবিত্র সম্রাটের স্বর্গীয় বিভার হাতছানি থেকে ঔরঙ্গজেব মুক্ত ছিলেন।
------ সপ্তাদশ শতকের নিরিখে উত্তরটা কি এতোই সোজা ?
------ কেন ?
------ আরে উত্তরটা যে একই সঙ্গে হ্যাঁ এবং না।
------ না আর হ্যাঁ নয় কেন ?
------ বটেই তো !
------ সপ্তদশ শতকের ন্যারেটিভে ঔরঙ্গজেবকে জিন্দা পীর হিসেবে দেখার নমুনা আছে।
----- আলমগীর জিন্দা পীর।
------ একদম। যিনি মন্ত্রপূত কাগজ ফেলে বন্যার জল থামান আর আর তাঁর আঁকা নাশতালিখ ক্যালিগ্রাফিতে , কোরানের বাণীর ভেল্কিতে উড়ন্ত নিশানই যুদ্ধ জয়ে কাফি।
------ তবে।
------ দাঁড়াও পথিকবর ! এই শতকের ন্যারেটিভে ঔরঙ্গজেবের ওই গল্প ভ্যানিস ! বন্যার জল তো থামেই না উল্টে সে জলে ভাসানোর তালে মন্দিরের কাছেই পুকুর কাটানোর হোতা হিন্দুবিদ্বেষী এখনকার আলমগীরের দেবত্ব মায়ের ভোগে যায় আর দৈবী কৃপায় মন্দির বেঁচে বন্যায় ওই জলই ঘুরে মুঘল সম্রাটের তাঁবু ভাসায়। এই সময়ের অদ্ভুতুড়ে জলে ভাসতে থাকে ঔরঙ্গজেবের লালরঙা মুঘল রাজকীয় তাঁবু।
------- ভেসে কোথায় যায়।
------ সে কেউ জানে কি ?
------ তবে লর্ড কার্জনরা ভালোই জানতেন মুঘল সালামাতের সামরিক পরাজয়ে কলোনির কার্যসিদ্ধি হবে না নতুন আইনি বিধি চাই যা হবে ভবিষ্যত ব্রিটিশ রাজের ভিত্তি। সতেরোশো সত্তরের দশকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কত্তারা হিন্দু আর মুসলমানের আলাদা আইনি বন্দোবস্ত করলেন। শরিয়তি আইন যা ইন্দো - পারসিক ঐতিহ্যে মুঘল আদালতে ছিল সবার , তাকে ইংরেজরা করল মাহমেডান ল - মুসলমানের জন্য আইন।
------ ডিভাইড এন্ড রুল।
------ বলতেই পার।
------ তাহলে কি প্রাক আধুনিক ঔরঙ্গজেব ছিলেন সাধারণ আইনি বিধির প্রণেতা ?
------ পঞ্চাশজন উলেমার আট বছরের চেষ্টায় তৈরী হল ফতোয়া ই আলমগিরি।
------ প্রাক আধুনিক সাধারণ আইনি বিধির অবসান ঘটল ব্রিটিশ শাসনে ?
------ বীজ বোনা হল সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের ?
------ হিন্দু মুসলমানের আলাদা আইন কি আধুনিকতার ভিত্তি বলে মান্যতা দিল কলোনাইজাররা ?
------ আলাদা আইন হলে আলাদা রাষ্ট্র।
------ কেন নয় ?
------ শরিয়তি আইনী কোডের প্রবক্তা ঔরঙ্গজেবেই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের পিতা নন? ইসলামী রাষ্ট্রের মসিহা ?
------ প্ৰাক আধুনিকতায় তো সাম্প্রদায়িক বিবেচনা ছিল না।
------ সাম্প্রদায়িকতার ধারণাই তো আধুনিক !
------ তা হলে ঔরঙ্গজেবের কি মূল্যায়ন ?
লর্ড কার্জন পাঁচিল নিয়ে ভাবতে থাকেন। আলমগীরের শেষ ইচ্ছে ছিল তাঁর বোনা টুপি বিক্রির জমানো চোদ্দ টাকা বারো আনায় তৈরি হবে তাঁর মকবরা, শাহী খাজনার অপব্যয় করা যায় না কোন মতেই। কাঁচা মাটি থাকবে ওপরে তাতে বেইজিল গাছ । চারপাশ খোলা থাকবে। ওপরে থাকবে না আচ্ছাদন ঠিক যেমনটা আছে বোন জাহানারার সমাধিতে। কিন্তু সেতো মুঘল আইন , মুঘল তরিকা , মুঘল সম্রাটের ইচ্ছে। ওই কর্তৃত্ব কেন মানবেন তিনি? মাহমেডান আইনের পরিধিতে কি করা যায় শলা করার জন্য হায়দ্রাবাদের নিজামের ডাক পড়ে। জৈনুদ্দিন চিশতির দরগার সঙ্গে প্রাচীন যোগ নিজামশাহীর। আলমগীরের মকবরাতে মার্বেলের আচ্ছাদন হয়, জাফরি বসে। তবে ঔরঙ্গজেব আলমগীরের অন্তিম ইচ্ছাকে ছাদের আকার দিয়ে ঢেকে দেওয়ার সাহস বৃটিশেরও হয় না। তাই এখনও খোলা আকাশের নীচে তার ওপর জলেরা পড়ে। পড়ে গড়িয়ে যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দিক চিহ্নিত হতে থাকে। পাণ্ডিত্যপূর্ণ সমালোচক যদুনাথ সরকার আসেন, ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়ায় আকবর - ঔরঙ্গজেব বাইনারির তত্ত্বজালে নেহেরু ঔরঙ্গজেবকে ঘড়ির কাঁটা পেছনে নেবার দোষ দেন। পঞ্চাশ বছরের শাসনে বাদশাহী ক্ষমতার গুমোর ঠেলে আলমগীরের আদুল গা মকবরায় অন্ধ গাইডটি এক মিশ্র ভাবে ও ভাষায় আসলে সেসব কথাই বলছিল, সমস্ত কথা। গাইডদের এরকম করতে হয়। আর অন্ধ হয়েও সচ্ছন্দে চলা ফেরা করছে দেখে তাকে বলা হল,“ বড়িয়া।”
—— কিঁউ ?
—— এ্যায়সেহি।
দেখা গেল সে টাকাকড়ি নিখুঁতভাবে গুনতে পারে। সবকটা নোটকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করছিল সে। মকবরার অলিগলি স্বছন্দে পার হয়ে আবার লাল লাল গোলাপ সাজানো দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গেল অন্য কারো প্রতীক্ষায়। কোথাও আর জোড়া তলোয়ারের চিহ্নটি নেই যে মোঘল আদল আনতে হবে।
চলবে...
---------------
এই লেখাটির সহায়ক গ্রন্থপঞ্জিটি ও অন্যান্য সূত্র:
1)India in the Persianate Age
Social History of Decan
Rise of Islam and the Bengal Frontier
Expanding Frontiers in South Asian and World History
All by Richard M Eaton
2)History of Aurangzeb
Sir Jadunath Sirkar
3) Discovery of India
Jawaharlal Nehru
4) Aurangzeb: The life and legacy of India's most controversial King
Culture of Encounter:Sanskrit at the Mughal Court
The Language of History: Sanskrit Naratives of the Muslim Past
All by Audrey Trusche
5) Last Mughal: William Dalrymple .
6) Daughters of Sun : Ira Mukhoty
7) Braj Bhum in Mughal Times : State, Peasants and Gosains. : Tarapada Mukherjee and Irfan Habib.
8) The Emperor who never was : Supriya Gandhi
9) Many deaths of Sambhaji: Ambrish Satwik , hindubusinesslines.com
19.01.2018
10) Legion of travel and history bloggers in YouTube especially Dr Mukesh Kumar and Professor Ram Puniyani.
0 মন্তব্যসমূহ