‘হাই ইরেশ, হাই, মোমবাতিটা দেওয়ালের উপর রাখলে কি কিছু মনে করবে?’
মনে মনে বেশ খানিকটা বিরক্ত হলেও মুখের হাসি অমলিন রেখে ফেবিয়ানকে উত্তর দিলাম, ‘না না, কিচ্ছু অসুবিধে নেই, যতগুলো ইচ্ছে হয় রেখে দাও। দুজনের ঘরের সীমানা টানা দেওয়ালের অর্ধেকটার মালিক তো তুমিও। জিজ্ঞেস করতে হবে না বন্ধু।’ তারপর ভদ্রতা করে বললাম, ‘চলে এসো, আমাদের সাথে পান করো কিছু।‘ ‘না, ধন্যবাদ। তোমরা আনন্দ করো’ বলে অচেনা এক দৃষ্টি হেনে চলে গেল ফেবিয়ান। দেওয়ালের উপর জ্বলন্ত মোমবাতিটা রেখে গেল সে। কালবিলম্ব না করে আমরাও আবার মজে গেলাম জমজমাট আড্ডায়।
কয়েকজন প্রিয় বন্ধুর সান্নিধ্যে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার গ্রীষ্মকালীন এক অপরূপ সন্ধ্যা ছিল সেটা। আমার বাড়ীর পেছনের বারান্দার ছাউনির নিচে বসে হাল্কা জলখাবার খাচ্ছিলাম আমরা, সাথে ছিল যার যার পছন্দের পানীয় এবং গল্প করবার বিষয়গুলো। বরাবরের মতই একযোগে গর্ব আর আনন্দবোধ করছিলাম প্রিয় বন্ধুদের পাণ্ডিত্যের ঝলকানিতে। আমার মতো ব্যবস্হাপকের তুলনায় তাঁরা অনেক বেশি উজ্জ্বল। সন্ধ্যাটি প্রত্যেকের স্বভাবসুলভ কৌতুকপ্রদ আচরণের কারণে মনকে হাল্কা করে তুলছিলো আমাদের।
মনে আছে সেদিন নানাবিধ বিষয়গুলোর মধ্যে হেরমেন হেসের সিদ্ধার্থও ছিল। গৌতমকে যখন সিদ্ধার্থ একটি পাথরের টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে বলছিলো যে সাধারণ মানুষ হিসেবে একটি প্রস্তরখণ্ডকে সে একটি পাথরের টুকরো বলেই ভাবতো, কিন্তু উপলব্ধির এই পর্যায়ে সে তা ভাবছে না। সে পাথরটির গায়ের রেখা অথবা এর উপরের ছোট গর্তগুলো, কিংবা হলদেটে রঙ অর্থাৎ একটি বিমূর্ত অবস্থাতে সেটির ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে বলে দাবী করছিল। এর শুষ্কতা ও আর্দ্রতা অনুভব করতে পারছিল। সিদ্ধার্থ বলছিল যে প্রস্তরখণ্ডটি এর পর হয়তো ধুলোমাটি হবে, হয়তোবা উদ্ভিত অথবা প্রাণী কিংবা মানুষ হবে, তবে সেজন্যই যে সে এটিকে মূল্য দিচ্ছে তা ঠিক নয়, বরং এইটির বর্তমান অবস্থাকে, এটির অস্তিত্বকে সে ভালবাসছে। অবজ্ঞা করতে পারছে না। এভাবে তাঁর উপলব্ধির জগৎ আরও পরিণত হচ্ছে। গম্ভীর সেই দর্শন আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসতে তখন হাল্কা ছলে বলছিলাম, পাথরকে পাথর হিসেবেই দেখা যাক। প্রকৃতি এটিকে নিয়ে কী করবে তা প্রকৃতিই ভাবুক আমরা বরং আজকের পৃথিবী, আজকের প্রাণ, ভালোবাসা ও বেঁচে থাকাকে নিয়ে উল্লাস করি, এসো পানমৌরির সুগন্ধ মাখা এবসিন্থ পান করি।
দর্শন নিয়ে বিবিধ আলোচনা সেদিন থামেনি অনেকক্ষণ। এরই মধ্যে ছোট একটি ঘটনা ঘটলো, ফেবিয়ানের মোমবাতিটি ধুপ্ করে আমাদের সীমানায় পড়ে নিভে গেল গেল। সেটা যেই পুরু কাচপাত্রে ছিল তাতে বিচ্ছিরি কিছু ফাটল ধরেছে দেখলাম। পাত্রটি মুছে দেওয়ালে তুলে দেবার সময় আমার স্নানঘর থেকে আরও ক’খানি আধপোড়া সুগন্ধি মোমবাতিও জ্বেলে দিলাম একসাথে। আমাদের প্রায়ন্ধাকার বসবার যায়গাতে পাঁচটি উৎসের নরম আলো আর মায়াবী সুগন্ধ যোগ হলো। প্রশান্তিময় হয়ে উঠলো আশপাশ।
২.
বড় ভূমিকম্পের ভয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ঘরবাড়িগুলো পাকা মেঝেতে খুব হাল্কা উপকরণ দিয়ে কাঠের শক্ত কাঠামোর উপর তৈরি। ছাদের উপর টালি আর ঘরের কামরার দেওয়ালগুলো পলকা। সামনের উঠোনে সাধারণত সীমানার কোন দেওয়াল থাকে না। কাউন্টির ঠিকাদার ধাতব মুদ্রার মাপের একটা পেতলের চাকতি পেরেক দিয়ে গেঁথে দেয়। ডান দিকের বাড়ির ফেবিয়ানের সাথে আমার সীমানার চাকতি দৃশ্যমান কিন্তু বাঁ দিকের প্রতিবেশী হোসে আর আমার সীমানার চাকতি কোন কারণে অদৃশ্য হয়েছে। ঘাস কাটা বা সীমানার দায় নিয়ে আর ওর সামনের উঠোন পাকা করা নিয়েও ঠাণ্ডা সম্পর্ক চলছে আমাদের। তা ছাড়া হোসের বাড়ীর অধিকাংশ সীমানায় এত ঘন করে ইতালিয় সিকামোর গাছ লাগানো যে বর্ণিল পশ্চিমের আকাশ তাতে আড়াল হয়ে গেছে।
হোসে দম্পতি ইংরেজিতে বেশ দুর্বল। প্রায় পনের বছর চেষ্টার পর হোসে সে এখন ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে আমার সাথে কথা বলে। হোসে-বৌ হল ব্লাঙ্কা, স্প্যানিশ ছাড়া অন্য ভাষা জানে না সে। তাদের তিনটের মধ্যে দুটো ছেলে হাইস্কুল পাশ করে ঘরে বসে থাকছে। এদেশের হাইস্কুল মানে দেশের উচ্চমাধ্যমিকের সমান। হোসেদের ছোট ছেলে হাইস্কুল সিনিয়র। ওদের কার্গো পরিবহন ব্যবসা, স্বচ্ছল। ছোটবড় মিলিয়ে পাঁচজনের জন্যে নয়টি গাড়ী তাদের। যাপিত জীবনে হোসের সাথে এইসব ছোটখাটো বিরক্তিগুলোর সাথে যোগ হতো ফেবিয়ানের এখনকার প্রিয় এবং অবশিষ্ট বেড়ালটার উৎপাত।
সীমানা নিয়ে অসন্তোষের ব্যপারটা হাল্কা করতে ফেবিয়ান একদিন হোসেকে গালাতিয়ানের স্তবক থেকে পংতি শুনিয়ে বলেছিল নিজেকে ভালোবাসার মত করে ভালবাসতে হয় প্রতিবেশীকে। এতে হোসে বেশ শান্ত হয়ে যায়। ফেবিয়ানের ভেতর অপ্রত্যাশিত ধর্ম-ভাবনা দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম।
আমার বাড়ির সামনের উত্তরে পাহাড়ের রঙিন অপরূপ দৃশ্য পশ্চিমের কেড়ে নেওয়া সৌন্দর্যের বেদনা ভুলিয়ে দেয়। পাহাড়ের দৃশ্য ঘণ্টায় ঘণ্টায় রঙ বদলায়, কাব্য করে। পাহাড়টা বসবার ঘরের বড় জানালা দিয়ে পরিষ্কার দেখা যায়, সেইখানে বসে পাহাড় দেখা আমার খুবই আনন্দের এবং প্রিয় একটি কাজ।
৩.
মোমবাতি ঘটনার ক'দিন পর জানালা দিয়ে দেখলাম যে ফেবিয়ান আমাদের সামনের সীমানা বরাবর একখানা মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ কেন দেখিনি ভেবে অবাক হলাম। পড়ন্ত বিকেলে জ্বলন্ত মোমবাতি তার হাতে। ফেবিয়ান হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ আরএন বা রেজিস্টার্ড নার্স। বেশ দায়িত্বশীল মানুষ। আবেগের চেয়ে সেবাদানেই যে তার বেশি আনন্দ সেটা সে প্রায়ই বলতো। কাজ ছাড়া আনন্দ-ফুর্তি, গানবাজনা বা চার্চগমন কিছুই করতে দেখিনি ওকে। মোমবাতি হাতে ফেবিয়ানকে একাকী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অস্বাভাবিক লাগলো তাই বেরিয়ে গেলাম। দেখলাম তার বিভ্রান্ত চোখ, যা আগে কখনো দেখিনি। এগিয়ে গেলাম ফেবিয়ানের সাথে কথা বলতে। লক্ষ করলাম হঠাৎ যেন বেশ রোগা হয়ে গেছে ফেবিয়ান। কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই ক্লান্ত এবং বিষণ্ণ কণ্ঠে সে বলে উঠলো, ‘এলিস মারা গেছে জানো ইরেশ? নয় দিন হয়ে গেছে।‘ ফেবিয়ানের অচেনা চাহনি দেখে আমি একটু যেন কেঁপে উঠলাম। বেদনার্ত ও বিভ্রান্ত হলাম। অপরাধবোধ হলো এই ভেবে যে কেন সেই আড্ডার সন্ধ্যায় তাকে জিজ্ঞাসা করিনি কাচপাত্রের মোমবাতি কেন জ্বালছিল সে। এলিসও ছিলো ফেবিয়ানের মতো রেজিস্টার্ড নার্স। ফেবিয়ান আর এলিস কখনো বিয়ে করেনি। ফেবিয়ানের যমজ মেয়ে আর এক ছেলের মা এলিসকে বাইশ বছরের মধ্যে গত দশ বছর ধরে এখানে থাকতে দেখছিলাম না। ফেবিয়ান আর এলিস যে যার বাড়ীতে থাকতো বলেই জানতাম। সব সময়ই দেখেছি ওদের দুজনার মধ্যে সম্পর্কটা বেশ ছাড়া ছাড়া। ওদেরকে কখনো দেখনি চুমু খেতে বা হাত ধরাধরি করে হাঁটতে। দেখিনি ওদের এক গাড়ীতে চড়তে, অথবা একসাথে বাচ্চাদের নিয়ে কখনো ঘুরতে। সপ্তাহান্তে এলিস এখানে এসে অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চাগুলোকে নিয়ে যেত দু’দিনের জন্য। বাচ্চাদেরকে আবার ফিরিয়ে দিয়ে উধাও হয়ে যেত সে। আদালতের আদেশ হয়তো তেমনই ছিল। আমার চোখে চোখ পড়লে কঠিন এক দৃষ্টি হানতো এলিস, বিড়বিড়ও করতো। কারণটা অজ্ঞাতই রয়ে গেল। ফেবিয়ান আর এলিসের ভালোবাসায় কোন মাধুর্য দৃশ্যমান হয়নি। ফেবিয়ানকে আলিঙ্গন করে সান্ত্বনা দিলাম, বললাম আমি এলিসের জন্য এই সপ্তাহান্তে মোমবাতি জ্বালবো। তারপর ফেবিয়ানকে একা থাকতে দিয়ে ফিরে গেলাম আমার প্রিয় জানালায়।
৪.
খুব দরকারি কথা ছাড়া কখনো রাজনীতি, সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন, ভালোবাসা এসব কিচ্ছু নিয়ে কথা বলতো না ফেবিয়ান। চিন্তাশক্তি জাগানো বা মননশীল কিছু নিয়ে কথা বলতে চাইলে তাতে কখনো অংশ নিতো না সে। অন্যদিকে হোসের সাথে কথাবার্তা হতো সাধারণ দিনকাল নিয়ে।
ফেবিয়ানের সাথে অবশ্য কোন শীতল যুদ্ধ যে হয়নি তা নয়। বেড়াল নিয়ে হয়েছে কিন্তু সে'সব মিটে যেত সহজে। ফেবিয়ানই প্রথম আমাদের এদিকটায় বেড়াল নিয়ে এসে ঘরের পেছনের উঠোনে ছেড়ে দিয়েছিলো। বেড়াল এখানে সেখানে যেমন ইচ্ছে ঘুরে বেড়াতো ফলে দ্রুত সন্তান-সম্ভবা হয়ে উঠতো। অদ্ভুত কোন কারণে বেড়ালের ছানা প্রসব হতো আমার বাড়ীর পেছেন দিককার অথবা পাশের দিকের উঠোনে। কেন যে মা বেড়ালের এমন পছন্দ সেটা জানা যায়নি। ছানাগুলোকে খুব ভালো লাগলেও অল্প সময়েই ওদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে ফেবিয়ানের কাছে জানতে চাইতাম যে ওদের নিয়ে কী করব? তারপর ফেবিয়ানের কথামত কাগজের বাক্সতে ছানাগুলোকে ভরে ওর হাতে সঁপে দিয়ে হাঁপ ছাড়তাম। ক’দিন পর একটির বেশি বেড়াল ছানা আর দেখতাম না ফেবিয়ানের কাছে। অবশিষ্টগুলো কোথায় গেল জিজ্ঞাসা করলে প্রতিবার বলেছে, ‘ব্যবস্থা করেছি।’ তারপর মা বেড়ালটাও একসময় উধাও হয়ে যেত। কুড়ি বাইশ বছর ধরে এই ব্যবস্থাই চলছে।
যা হোক, আমরা সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। ছোটখাটো বিরক্তি ছাড়া আমার প্রতিবেশীদের সাথে মোটামুটি ভালই দিন কাটে আমার।
৫.
নিস্তরঙ্গ জীবন কাটানো ফেবিয়ানের জীবনাচরণ কয়েক মাসে আমূল বদলে গেছে। প্রায় রাতেই চারপাশের দেওয়ালের উপর মোমবাতি জ্বালায় সে। সংখ্যাটা একটা থেকে ক্রমশঃ বেড়ে কয়েকটা হয়েছে। ওদিকে বারো চোদ্দ ঘণ্টা কাজ করে এসে সম্ভবত কিছু একটা ড্রাগ নেয় সে। উঁচু শব্দে রক ধরণের সঙ্গীত শোনে। হঠাৎ হঠাৎ আপনমনে রক ছাপিয়ে চিৎকার করে কাকে যেন অশ্রাব্য ভাষায় গাল দেয় আর প্রায়ই বলে, হোয়াই হোয়াই হোয়াই সাচ, হোয়াট দা ... । কখনো আসবাব কিংবা কাচ ভাঙার শব্দ পাই। প্রতিবেশী ও সুনাগরিক হিসেবে একযোগে চিন্তিত এবং বেদনার্ত হই। পুলিশ ডাকতে হবে কী না ভাবি। পরদিন আবার সব শান্ত হয়ে যায়।
গত কালের ঘটনা, ফেবিয়ান ওর প্রিয় বেড়াল অ্যান্ডিকে কাঁধে তুলে বেড়াতে বেরুচ্ছিলো। অ্যান্ডি আর ফেবিয়ানকে ঘরের বাইরে একসাথে এমন করে দেখিনি কখনো। কাল বিকেলেই প্রথম দেখলাম। আমাকে দেখে এগিয়ে এসে অদ্ভুত শান্ত কণ্ঠে বলল, ‘আমি জানি তুমি যথেষ্ঠ পড়াশোনা কর। তোমার বন্ধুরাও খুব পণ্ডিত। এই যে তুমি প্রায়ই আমাকে এত জ্ঞানের কথা বলতে চাও, আমি শুনতে চাইলে কি খুব একটা অন্য কিছু ঘটতো? জ্ঞান কাউকে দিয়ে দেওয়া যায় না। বিদ্যা, শিক্ষা, এসব পারলেও, জ্ঞান আসলে কারো ভেতরই সঞ্চার করা যায় না। ওটা উপলব্ধির ব্যপার, অতঃপর প্রজ্ঞাই আসল কথা। সমাজের দর্শন নিয়ে আমি ভাবি না, ব্যাক্তির জ্ঞানলব্ধ প্রজ্ঞাই আমার কাছে শ্রেষ্ঠতর।' কথাগুলো বলেই ফেবিয়ান ওর প্রিয় বেড়ালকে নিয়ে পাহাড়ের দিকটায় হাঁটতে চলে গেলো। ফেবিয়ানের মুখে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত গভীর এই দর্শনতত্ত্ব শুনে আমি প্রচণ্ড ধাক্কা মত খেলাম। এই চমক সহসা দূর হবে না বুঝলাম। দেখলাম পশ্চিমের প্রতিবেশী হোসে তার বাড়ির সামনে থেকে আমার দিকে বেশ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে।
৬.
পরদিন সন্ধ্যায় আমার একমাত্র প্রিয় কুকুর ইটি’র অসহিষ্ণু ঘেউ ঘেউ চিৎকার শুনে পেছনের উঠোনে বেরিয়ে এলাম। কোনের দিকের উঁচুমত যায়গায় দাঁড়াতেই ফেবিয়ানকে দেখলাম। বাড়ির পেছনে উঠোনের উত্তর-পশ্চিম কোনে দু’হাতে জ্বলন্ত দু’টো মোমবাতি নিয়ে স্থাণুর মত দাঁড়িয়ে আছে সে। ‘হাই’ বলে হাত নাড়তেই মোমবাতি হাতে এগিয়ে এলো সে। ঘোলাটে চাহনি, সেটা ব্যাথার, বিভ্রান্তির, তৃপ্তির না কী অতৃপ্তির কিছুই বুঝতে পারলাম না। ফেবিয়ান বলে উঠলো, ‘অ্যান্ডি মারা গেছে জানো? নয় দিন হয়ে গেছে।’ বললো, ‘তোমার সামনের উঠোন আর নোংরা হবে না ইরেশ, রাস্তা পার হতে গিয়ে বেড়ালটা মরে গেছে।’ আমার মাথাটা ঝিম ঝিম করে উঠলো। এমনিতেই অফিসে আজ বড্ড ঝামেলা হয়েছে। ইনভেন্টরির হিসেব মেলেনি। আজ যেন কোন হিসেবই মিলতে চাচ্ছে না। গতকালই তো ফেবিয়ানের কাঁধে অ্যান্ডি-বেড়াল ছিল, নয় দিন হলো কী করে! নব্য দর্শনপ্রেমী ফেবিয়ানের হিসেবে ঝামেলা আছে। হঠাৎ মনে পড়লো ফেবিয়ানের বাচ্চাদের মা এলিসও রাস্তা পার হতে গিয়ে মারা গিয়েছিলো। নয় দিন পর তা জানতে পেরেছিলাম।
৭.
আজ রাতে দেখলাম ফেবিয়ানের বাড়ির সবগুলো দেওয়াল আর ড্রাইভওয়েতে অসংখ্য মোমবাতি জ্বলে উঠেছে। কেন যেন মনে পড়লো পাথর নিয়ে সিদ্ধার্থের সেই কথাগুলো যেখানে সে পাথরের ভবিষ্যৎ চক্র দেখতে পেয়েছিলো। ভাবলাম কোন সদ্যমৃত বেড়াল ছুঁয়ে কি ফেবিয়ান তার অতীত দেখতে পেতো? মনে হতে লাগলো, বেড়াল-ছানাদের অদৃশ্য হবার, হারিয়ে যাবার কথা, এলিসের হারিয়ে যাবার কথা। আধো-অন্ধকারে ভাবলাম তার এইসব কাজ হয়তো অন্ধকার কোন অপরাধবোধ অথবা সত্যিকারের কোন এক শূন্যতা থেকে উৎসারিত। দেওয়ালে মোমবাতিগুলোর আলোর আন্দোলন আমাকে সম্মোহিত করে রাখলো।
0 মন্তব্যসমূহ