আগে কখনও লোকটার সেলুনে ঢুকিনি । আজ ব্যস্ততা ছিল । অন্য সেলুন দুটোও বন্ধ । কী করব ভাবছি । একটা তো মাত্র দিন । তাছাড়া ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ভাবে খোকন প্রামানিকের সাথে কোন শত্রুতা নেই । মানুষটা অনেক বদলে গেছে ইদানিং । কিছুদিন আগে পর্যন্তও এলাকার ত্রাস ছিল । খুন, ধর্ষণ, ভোটের সময় রিগিং... কী করেনি জীবনে !
ক্ষমতাসীন পার্টির ছত্রছায়ায় থাকায় পুলিশও কিছু করতে পারেনি । সেই মানুষ, কোন এক অজ্ঞাত কারণে গত এক বছরে
আমূল বদলে গেছে । সবকিছু ছেড়ে মোড়ের মাথায় সেলুন খুলে জাত ব্যবসায় মন দিয়েছে । রাস্তা দিয়ে হাঁটে মাটির দিকে তাকিয়ে । কথা বলে নম্র-ভদ্র । এত অল্প সময়ে এত বড় পরিবর্তন সত্যিই অকল্পনীয় । হতে পারে রাজ্য জুড়ে যে রাজনৈতিক পালাবদল চলছে, লোকটা তাতে প্রভাবিত । অথবা অন্য কোন কারণ থাকতে পারে, যা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত - আমার জানা নেই । বাজারে অনেক গল্প আছে । সেগুলির কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে কে জানে !
সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত খোকন প্রামাণিকের সেলুনে ঢুকলাম ।
-চুল না দাড়ি ?
-দাড়ি ।
মুখে ক্রিম ঘষতে ঘষতে লোকটা হটাত জিঞ্জাসা করে, বাবা কেমন আছেন ?
আচমকা প্রশ্ন ! গলায় আন্তরিকতা । যেন কতদিনের সম্পর্ক । উত্তর দিতে গিয়ে গলায় শ্লেষ্মা আটকে যায় । কোন রকমে বলি, ভালো ।
-সুগারের প্রবলেমটা এখনও আছে ।
-সুগার ! বাবার তো সুগার নেই । আর্থারাইটিস...
-বাংলায় বল...
-বাত ।
-হ্যাঁ, মনে পড়েছে । আসলে খেয়াল ছিল না । অনেকদিন দেখা হয় না তো । এখন কেমন
আছেন ?
-ভালো ।
-পার্টি করছেন তো ?
-বাবা তো কোন দিনই রাজনীতি করে না ।
-ভালো, খুব ভালো । একদম সঠিক কাজ । আজকাল রাজনীতিতে আর ভদ্রলোকের কোনও জায়গা নেই । নোংরা, সব নোংরা । এরা নিজেরাও নোংরা, সমাজটাকেও নোংরা করে দিল । এই তো, আমাকেই দেখ না, কী না করিয়েছে আমাকে দিয়ে । সে সব তোরা জানিস, নতুন করে বলার কিছু নেই । বিশ্বাস কর, কোন কাজই আমি নিজের ইচ্ছায় করিনি । আমাকে দিয়ে বাধ্য করিয়েছে । ভয় দেখিয়েছে, জেলে ভরে দেবে । চাইলেও তাই ভালো হতে পারিনি । জীবনটা পুরো
নিংড়ে নিয়েছে ।
বলতে বলতে ক্ষোভে ফেটে পরে খোকন । আমি নিরুত্তর । চুপচাপ শুনি । বিস্মিত হই । এতো ভূতের মুখে রামনাম । কী উত্তর দেব ভেবে পাই না । তবে মনে মনে খুশি হই, দেরিতে হলেও মানুষটার হুশ হয়েছে দেখে ।
খোকন প্রামাণিক তখনও বলছে, তবে আর না, ওদের দিন শেষ । রাজ্য জুড়ে এখন পরিবর্তনের হাওয়া । এই সুযোগে আমিও নিজেকে বদলে নিয়েছি । ঠিক করেছি না ?
আচমকা প্রশ্ন করে আমাকে । মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না । সৌজন্যতার খাতিরে কিছু একটা বলা উচিত । কিন্তু কী বলব ? আমার উত্তর যদি তার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায় ! কে বলতে পারে মানুষটা আবার আগের মতো ভয়ংকর হয়ে উঠবে না ? স্বভাব কী এত তাড়াতাড়ি যায় ? এই যে ভালোমানুষি, এটাও তো তার একটা ভেক হতে পারে । হয়তো এর পেছনেও নতুন কোন উদ্দেশ্য আছে । আয়নার ভেতর দিয়ে তাকাই খোকনের মুখের দিকে । উত্তরের প্রত্যাশায় তাকিয়ে
আছে আমার দিকে । বাধ্য হয়ে তাই বলতে হল, ঠিকই...
-তোদের ওই রাস্তাটার কথাই ভাব, কী ক্যাচালটাই না করল । শেষ পর্যন্ত অবশ্য আমি থেকে...আমি জানি না, রাস্তার ব্যপারে খোকনের অবদান কতখানি ! তবে ক্যাচাল একটা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত মিটেও গেছে ।
-কেন রে, পৌরসভা তোদের বাপের ? বলতে বলতে উত্তেজিত হয় সে, জনসাধারণের সম্পত্তি নিয়ে এত টালবাহানা কেন ! সেদিন পার্টিতে থেকেও পার্টির সঙ্গে সংঘাতে গেছি শুধু পাড়ার স্বার্থে । তুই দেখিস, মানুষের স্বার্থে পাড়া থেকে এই নোংরা রাজনীতি আমি হটাবোই, আগে জিতে নিই ইলেকশনে...
বিষম খেতে খেতেও সামলে নিলাম । জিতব মানে ! পৌরভোটে দাঁড়িয়েছে নাকি ? তবে যে শুনেছিলাম সরকার নিয়ম করেছে, অপরাধীরা ভোটে দাঁড়াতে পারবে না ! খোকন তো দাগী অপরাধী । কয়েকবার জেলেও গেছে ।
আমাকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখে খোকনও সংশয়ে পরে । জিঞ্জাসা করে, জানিস তো আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি ?
-না, মানে ঠিক... শুনেছিলাম দাঁড়াবেন...
-ঠিকই শুনেছিস । নতুন দলের হয়ে দাঁড়িয়েছি । ওরা তো কোন দিনই আমাকে নমিনেশনদিত না । কেবল ব্যবহার করেই নিত । ভোট করাতাম আমরা, জেতাতাম আমরা আর ক্রিম খেত বাবুরা । দরকার মিটে গেলে চাকর-বাকরের মতো ব্যবহার করত । এরা তবু একটা সুযোগদিয়েছে সমাজে মাথা উঁচু করে ভালোভাবে বাঁচার । মানুষের সম্মানটুকু এরা দিতে জানে । সত্যিইভালো চায় মানুষের । তুই দেখিস, প্রকৃত পরিবর্তন এবার হবে, এদের হাতেই হবে । বাবাকে বলিস আমার কথা ।
-বলব ।
-সন্ধ্যে বেলা বাড়ি থাকতে বলিস, দেখা করতে যাব ।
বুরুশ ছেড়ে খোকন ততক্ষণে ক্ষুর ধরেছে । সোজা হয়ে বসি । লোকটার মতিগতি ভালো ঠেকছে না । কে জানে কি আছে মনে ! বাবারও বয়স হয়েছে, তার উপর রগচটা মানুষ । কি বলতে কি বলে ফেলবে মুখের উপর । হিতে বিপরীত হতে সময় লাগবে না । মিথ্যে বলি তাই, বাবা তো সন্ধ্যায় বাড়ি থাকে না ।
-কাল সকালে যাব তাহলে ।
-সকালে বাবা স্কুলে থাকবে । মর্নিং স্কুল চলছে তো ।
-বিকালে ?
-বিকালে টিউশন পড়াতে যায় ।
-তাহলে থাকে কখন ?
খোকন বিরক্ত হয় । আয়নার ভেতর দিয়ে দেখি । আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । চোখদুটো কি একটু লালচে মনে হচ্ছে ? চোখ যায় ক্ষুরের দিকে । বুক ঢিপঢিপ করে । এই প্রথম এই শেষ, আর কখনও খোকনের সেলুনে আসব না । এখন ভালোয় ভালোয় বেরোতে পারলে বাঁচি ।
-দুপুরে আসুন । দুপুরে বাবা বাড়িতেই থাকে ।
-তাই যাব, বলে রাখিস । আর তোকেও বলছি, ভোটার হয়েছিস নিশ্চয় ? ভোটটা কিন্তু আমাকে দিবি ।
-দেখব।
মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় এরকম উত্তর । ভেবেচিন্তে বলিনি । তাতেই ক্ষেপে যায় খোকন । সঙ্গে সঙ্গে ফোঁস করে ওঠে, দেখব মানে ! এর আবার ভাবনা চিন্তার কিছু আছে নাকি ?
-না, মানে...
আয়নার ভেতর দিয়ে আবার লোকটার মুখের দিকে তাকাই । বুঝতে পারিনি ভুল করে কখন ওর অহংকারে আঘাত করে ফেলেছি । চোখদুটো রাগে দপদপ করছে । চোয়াল শক্ত । উত্তেজনায় কাঁপছে মুখের পেশি । দাড়ি কামাতে কামাতে হাতটাও কখন যেন থেমে গেছে । ক্ষুরটা ঠিক শ্বাসনালীর উপর । একটু এপাশ ওপাশ করলেই... ভয়ে রক্ত হিম হয়ে আসে। খোকন শান্ত অথচ গম্ভীর গলায় এবার সরাসরি আদেশ করে, ভোটটা আমাকেই দিবি ।
-ক্ষুরটা তখনও শ্বাসনালীর উপর । খোকনের চোখও সেদিকে । বুঝতে পারি ইচ্ছা করে ধরে আছে । এটা ইঙ্গিত । এরপর সরাসরি... ভয়ে মুখে কথা ফোটে না । একটু এদিক ওদিক হলেই... কোনরকমে উচ্চারণ করি, দেব ।
ঃলেখক পরিচিতি
কৃষ্ণেন্দু পালিত
শক্তিগড়, বনগাঁ, উঃ ২৪ পরগনা, সূচক-৭৪৩২৩৫, দূরভাষ-৯৪৩৩৪৩৬২৮৮
শিক্ষা : বি এ, বি এড
পেশা : শিক্ষকতা
নেশা : ভ্রমণ, ফটোগ্রাফি
প্রথম প্রকাশিত গল্প : ম্যাজিশিয়ান (সানন্দা, ১৫আগস্ট ১৯৯৭ সংখ্যায় )
প্রথম গল্পগ্রন্থ : ম্যাজিশিয়ান , প্রতিশব্দ প্রকাশনী (২০০১)
পরবর্তী গল্পগ্রন্থ : যেমন খুশি সাজো (কিশোর), ঊবুদশ প্রকাশনী (২০০৩)
: অন্নদামঙ্গলে নেই , ঊবুদশ প্রকাশনী (২০০৫)
: অল্প কথার গল্প , ঊবুদশ প্রকাশনী (২০১২)
: দিব্যর প্রতিদিন একদিন , নয়দরজা প্রকাশনী (২০১৪)
ক্ষমতাসীন পার্টির ছত্রছায়ায় থাকায় পুলিশও কিছু করতে পারেনি । সেই মানুষ, কোন এক অজ্ঞাত কারণে গত এক বছরে
আমূল বদলে গেছে । সবকিছু ছেড়ে মোড়ের মাথায় সেলুন খুলে জাত ব্যবসায় মন দিয়েছে । রাস্তা দিয়ে হাঁটে মাটির দিকে তাকিয়ে । কথা বলে নম্র-ভদ্র । এত অল্প সময়ে এত বড় পরিবর্তন সত্যিই অকল্পনীয় । হতে পারে রাজ্য জুড়ে যে রাজনৈতিক পালাবদল চলছে, লোকটা তাতে প্রভাবিত । অথবা অন্য কোন কারণ থাকতে পারে, যা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত - আমার জানা নেই । বাজারে অনেক গল্প আছে । সেগুলির কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে কে জানে !
সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত খোকন প্রামাণিকের সেলুনে ঢুকলাম ।
-চুল না দাড়ি ?
-দাড়ি ।
মুখে ক্রিম ঘষতে ঘষতে লোকটা হটাত জিঞ্জাসা করে, বাবা কেমন আছেন ?
আচমকা প্রশ্ন ! গলায় আন্তরিকতা । যেন কতদিনের সম্পর্ক । উত্তর দিতে গিয়ে গলায় শ্লেষ্মা আটকে যায় । কোন রকমে বলি, ভালো ।
-সুগারের প্রবলেমটা এখনও আছে ।
-সুগার ! বাবার তো সুগার নেই । আর্থারাইটিস...
-বাংলায় বল...
-বাত ।
-হ্যাঁ, মনে পড়েছে । আসলে খেয়াল ছিল না । অনেকদিন দেখা হয় না তো । এখন কেমন
আছেন ?
-ভালো ।
-পার্টি করছেন তো ?
-বাবা তো কোন দিনই রাজনীতি করে না ।
-ভালো, খুব ভালো । একদম সঠিক কাজ । আজকাল রাজনীতিতে আর ভদ্রলোকের কোনও জায়গা নেই । নোংরা, সব নোংরা । এরা নিজেরাও নোংরা, সমাজটাকেও নোংরা করে দিল । এই তো, আমাকেই দেখ না, কী না করিয়েছে আমাকে দিয়ে । সে সব তোরা জানিস, নতুন করে বলার কিছু নেই । বিশ্বাস কর, কোন কাজই আমি নিজের ইচ্ছায় করিনি । আমাকে দিয়ে বাধ্য করিয়েছে । ভয় দেখিয়েছে, জেলে ভরে দেবে । চাইলেও তাই ভালো হতে পারিনি । জীবনটা পুরো
নিংড়ে নিয়েছে ।
বলতে বলতে ক্ষোভে ফেটে পরে খোকন । আমি নিরুত্তর । চুপচাপ শুনি । বিস্মিত হই । এতো ভূতের মুখে রামনাম । কী উত্তর দেব ভেবে পাই না । তবে মনে মনে খুশি হই, দেরিতে হলেও মানুষটার হুশ হয়েছে দেখে ।
খোকন প্রামাণিক তখনও বলছে, তবে আর না, ওদের দিন শেষ । রাজ্য জুড়ে এখন পরিবর্তনের হাওয়া । এই সুযোগে আমিও নিজেকে বদলে নিয়েছি । ঠিক করেছি না ?
আচমকা প্রশ্ন করে আমাকে । মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না । সৌজন্যতার খাতিরে কিছু একটা বলা উচিত । কিন্তু কী বলব ? আমার উত্তর যদি তার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায় ! কে বলতে পারে মানুষটা আবার আগের মতো ভয়ংকর হয়ে উঠবে না ? স্বভাব কী এত তাড়াতাড়ি যায় ? এই যে ভালোমানুষি, এটাও তো তার একটা ভেক হতে পারে । হয়তো এর পেছনেও নতুন কোন উদ্দেশ্য আছে । আয়নার ভেতর দিয়ে তাকাই খোকনের মুখের দিকে । উত্তরের প্রত্যাশায় তাকিয়ে
আছে আমার দিকে । বাধ্য হয়ে তাই বলতে হল, ঠিকই...
-তোদের ওই রাস্তাটার কথাই ভাব, কী ক্যাচালটাই না করল । শেষ পর্যন্ত অবশ্য আমি থেকে...আমি জানি না, রাস্তার ব্যপারে খোকনের অবদান কতখানি ! তবে ক্যাচাল একটা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত মিটেও গেছে ।
-কেন রে, পৌরসভা তোদের বাপের ? বলতে বলতে উত্তেজিত হয় সে, জনসাধারণের সম্পত্তি নিয়ে এত টালবাহানা কেন ! সেদিন পার্টিতে থেকেও পার্টির সঙ্গে সংঘাতে গেছি শুধু পাড়ার স্বার্থে । তুই দেখিস, মানুষের স্বার্থে পাড়া থেকে এই নোংরা রাজনীতি আমি হটাবোই, আগে জিতে নিই ইলেকশনে...
বিষম খেতে খেতেও সামলে নিলাম । জিতব মানে ! পৌরভোটে দাঁড়িয়েছে নাকি ? তবে যে শুনেছিলাম সরকার নিয়ম করেছে, অপরাধীরা ভোটে দাঁড়াতে পারবে না ! খোকন তো দাগী অপরাধী । কয়েকবার জেলেও গেছে ।
আমাকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখে খোকনও সংশয়ে পরে । জিঞ্জাসা করে, জানিস তো আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি ?
-না, মানে ঠিক... শুনেছিলাম দাঁড়াবেন...
-ঠিকই শুনেছিস । নতুন দলের হয়ে দাঁড়িয়েছি । ওরা তো কোন দিনই আমাকে নমিনেশনদিত না । কেবল ব্যবহার করেই নিত । ভোট করাতাম আমরা, জেতাতাম আমরা আর ক্রিম খেত বাবুরা । দরকার মিটে গেলে চাকর-বাকরের মতো ব্যবহার করত । এরা তবু একটা সুযোগদিয়েছে সমাজে মাথা উঁচু করে ভালোভাবে বাঁচার । মানুষের সম্মানটুকু এরা দিতে জানে । সত্যিইভালো চায় মানুষের । তুই দেখিস, প্রকৃত পরিবর্তন এবার হবে, এদের হাতেই হবে । বাবাকে বলিস আমার কথা ।
-বলব ।
-সন্ধ্যে বেলা বাড়ি থাকতে বলিস, দেখা করতে যাব ।
বুরুশ ছেড়ে খোকন ততক্ষণে ক্ষুর ধরেছে । সোজা হয়ে বসি । লোকটার মতিগতি ভালো ঠেকছে না । কে জানে কি আছে মনে ! বাবারও বয়স হয়েছে, তার উপর রগচটা মানুষ । কি বলতে কি বলে ফেলবে মুখের উপর । হিতে বিপরীত হতে সময় লাগবে না । মিথ্যে বলি তাই, বাবা তো সন্ধ্যায় বাড়ি থাকে না ।
-কাল সকালে যাব তাহলে ।
-সকালে বাবা স্কুলে থাকবে । মর্নিং স্কুল চলছে তো ।
-বিকালে ?
-বিকালে টিউশন পড়াতে যায় ।
-তাহলে থাকে কখন ?
খোকন বিরক্ত হয় । আয়নার ভেতর দিয়ে দেখি । আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । চোখদুটো কি একটু লালচে মনে হচ্ছে ? চোখ যায় ক্ষুরের দিকে । বুক ঢিপঢিপ করে । এই প্রথম এই শেষ, আর কখনও খোকনের সেলুনে আসব না । এখন ভালোয় ভালোয় বেরোতে পারলে বাঁচি ।
-দুপুরে আসুন । দুপুরে বাবা বাড়িতেই থাকে ।
-তাই যাব, বলে রাখিস । আর তোকেও বলছি, ভোটার হয়েছিস নিশ্চয় ? ভোটটা কিন্তু আমাকে দিবি ।
-দেখব।
মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় এরকম উত্তর । ভেবেচিন্তে বলিনি । তাতেই ক্ষেপে যায় খোকন । সঙ্গে সঙ্গে ফোঁস করে ওঠে, দেখব মানে ! এর আবার ভাবনা চিন্তার কিছু আছে নাকি ?
-না, মানে...
আয়নার ভেতর দিয়ে আবার লোকটার মুখের দিকে তাকাই । বুঝতে পারিনি ভুল করে কখন ওর অহংকারে আঘাত করে ফেলেছি । চোখদুটো রাগে দপদপ করছে । চোয়াল শক্ত । উত্তেজনায় কাঁপছে মুখের পেশি । দাড়ি কামাতে কামাতে হাতটাও কখন যেন থেমে গেছে । ক্ষুরটা ঠিক শ্বাসনালীর উপর । একটু এপাশ ওপাশ করলেই... ভয়ে রক্ত হিম হয়ে আসে। খোকন শান্ত অথচ গম্ভীর গলায় এবার সরাসরি আদেশ করে, ভোটটা আমাকেই দিবি ।
-ক্ষুরটা তখনও শ্বাসনালীর উপর । খোকনের চোখও সেদিকে । বুঝতে পারি ইচ্ছা করে ধরে আছে । এটা ইঙ্গিত । এরপর সরাসরি... ভয়ে মুখে কথা ফোটে না । একটু এদিক ওদিক হলেই... কোনরকমে উচ্চারণ করি, দেব ।
ঃলেখক পরিচিতি
কৃষ্ণেন্দু পালিত
শক্তিগড়, বনগাঁ, উঃ ২৪ পরগনা, সূচক-৭৪৩২৩৫, দূরভাষ-৯৪৩৩৪৩৬২৮৮
শিক্ষা : বি এ, বি এড
পেশা : শিক্ষকতা
নেশা : ভ্রমণ, ফটোগ্রাফি
প্রথম প্রকাশিত গল্প : ম্যাজিশিয়ান (সানন্দা, ১৫আগস্ট ১৯৯৭ সংখ্যায় )
প্রথম গল্পগ্রন্থ : ম্যাজিশিয়ান , প্রতিশব্দ প্রকাশনী (২০০১)
পরবর্তী গল্পগ্রন্থ : যেমন খুশি সাজো (কিশোর), ঊবুদশ প্রকাশনী (২০০৩)
: অন্নদামঙ্গলে নেই , ঊবুদশ প্রকাশনী (২০০৫)
: অল্প কথার গল্প , ঊবুদশ প্রকাশনী (২০১২)
: দিব্যর প্রতিদিন একদিন , নয়দরজা প্রকাশনী (২০১৪)
2 মন্তব্যসমূহ
নাপিত ভায়া, নাপিত ভায়া, বাড়ি আছো হে..
উত্তরমুছুন-এতো রাত্তিরে কে?
-না, আমি পাঠুনি।
-তা, কী করতে হবে, শুনি?
-তুমি গল্প বলো, শুনি।
- নাপিত ভায়া, নাপিত ভায়া, বাড়ি আছো হে?
উত্তরমুছুন-এতো রাত্তিরে কে?
- না, আমি পাঠুনি।
-তো কী চায়?
- তুমি গল্প বলো শুনি।