সুদেষ্ণা দাশগুপ্ত'র গল্প : আপন যে জন

আর কেউ না বুঝলেও মান্তু কিন্তু গুনো’র সব কথাই বুঝতে পারে। সারাদিন একসাথে থাকে যে ওরা। আর তেমন কেউ বন্ধুও নেই ওদের। গুনো আর কারো সাথে মিশতে চায় না। এবার রেজাল্ট বেরোলে অবশ্য মান্তু দূরে স্টেশন পেরিয়ে পান্ডুয়া’র হাই স্কুলে ভর্তি হবে, গুনো বলে সে আর পড়বে না। রোজ মান্তু কত বোঝায় কিন্তু গুনো’র সেই এক কথা যে সে আর পড়বে না। সে তার বাবাকে এবার থেকে চাষের কাজে সাহায্য করবে। গ্রামে-গঞ্জে এমন ধারা বাড়িতে-বাড়িতে দেখা যায়। পরিবারের এক ছেলে বেশি দূর লেখাপড়া না করে চাষবাসে লেগে পড়ে। নয়ত বাপু জমিজমা যে বেহাত হবার জোগাড় হবে। মান্তু যে এসব জানে না তা নয়, কিন্তু দু’জনে একসাথে ইস্কুলের বেঞ্চে পাশাপাশি বসবে না এটা সে ভাবতেই পারছে না। সেবার নাগপুর থেকে মান্তুর পিসতুতো দাদা এসেছিল, গুনোকে দেখে তার কি ঘেন্না ।


--তুই ওর সাথে মিশিস কি করে রে মান্তু? খবর্দার ওই কিম্ভূতটাকে কিন্তু তুই কখনও ছুঁবি না ।


মান্তু’র বাড়িতে অবশ্য কেউ কিছু বলে না। পশ্চিম-পাড়ার জোড়া-দিঘির ধার ঘেঁষে বট গাছের এই আড়ালটা গুনো’র বড় পছন্দের। সে প্রায় নিজেকে লুকিয়ে রেখে মান্তু’র সাথে বসে গল্প করছে। তবু হাড়ি-পাড়ার ক’টা ছেলে ওদিক দিয়ে যেতে যেতে ঠিক বুঝেছে।

 --গুনো একটা খোনা --গায়ে ঝোলা ঝোলা --গুনো একটা খোনা !

মান্তু ওদের তেড়ে মারতে যায়, কিন্তু গুনো ওকে বারণ করে। মান্তুর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে নিজের নাকি গলায় বলে,

--কাকে কাকে মারবি তুই? মুখ বন্ধ করবি কজনার? এরপর পান্ডুয়া ইস্কুলে যেতে কচ্ছিস? আমি মাটির পানে চেয়ে গেলেও তুই নিজেই কি চুপ থাকতি পারবি? খোনা গলা নিয়ে তাও বেশি ভাবি না। কিন্তু চিরশত্তুর এই আবগুলো নিয়ে কোন পানে যাই বল দিকিন।

--তাতে কি ? অন্ধ, বোবা, কালা সবাই তো লেখাপড়া করে, ইস্কুলে যায়। গুনো আমি আচি, তুই যেদিন যেদিন যেতি পারবি না আমি তোকে পড়া সব বলে দেব।

মান্তু লক্ষ্য করেছে গুনো’র গায়ের আবগুলো বেড়েই চলেছে আর বয়েসের সাথে ওগুলো বড় বড় আকার নিচ্ছে। ওর কোমরে লাগে প্যান্টের বেল্ট বাঁধতে তাই গুনো আজকাল সব সময় পাজামা পরে থাকে। চোখ, মুখ সব ঢেকে যাচ্ছে তার। মান্তু ভাবে ভগবান কেন তার বন্ধুকে এত কষ্ট দিল? গুনোর উঁচু-নিচু হাতের ওপর নিজের হাত রেখে মান্তু বলে-

--বারো ক্লাস দিয়ে আমি ঠিক ডাক্তারি পড়ব, তুই দেকিস। তারপর তোর চিকিচ্ছে করাব।

গুনো সে কথার গুরুত্ব না দিয়ে তাদের থেকে এক ক্লাস নিচে পড়া ঝুমরি’কে যেন মান্তু বড় হয়ে বিয়ে করে তার প্রতিশ্রুতি চায় ।

-- ঝুমরিকে তো তোর ভালো লাগে গুনো।

 --সে জন্যিই তো তুই বিয়ে করবি, আমি মাঝেমাঝে দেখতি যাব।

মান্তু’দের এই শিবগ্রাম গাঁ হলেও একেবারে অজ পাড়া-গাঁ নয়। পোস্ট-অফিস আছে বাজারের গা ঘেঁষে। লেখাপড়ার চল আছে সেই বহু আগে থেকেই ।জমিদার বিহারীলাল মুখোপাধ্যায় যখন শিবগ্রামে ছেলেদের ইস্কুলটির পত্তন করেন তখন স্বয়ং বিদ্যাসাগর তা পরিদর্শনে এসেছিলেন। মেয়েদের ইস্কুল বীণাপাণি বালিকা বিদ্যালয় অবশ্য এর বহু পরে তৈরি হয়েছে। জিটি রোডে বাস থামে আবার একটু এগিয়ে শ্মশান-কালী পেরিরে রেললাইনের লেভেল-ক্রশিং। ওদিকে স্টেশন, আপ-ডাউনের গাড়ি যায় হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনে। কত মানুষ যে প্রতিদিন যাতায়াত করে তা বোঝা যায় গনেশের দোকানে সাইকেলের সারি দেখে। রিক্সাও দাঁড়িয়ে থাকে খান-কতক। কারো বাড়ি কুটুম এলে তারা চড়ে রিক্সায়। তবে শিবগ্রামের রিক্সাচালকরা খানিক বাবু, সুয্যি মাথায় উঠলে তারা ঘরে যায় ভাত খেতে আর তারপর দেয় একখানা ভাত-ঘুম। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি আগে থাকতে বলে দেয়-

--ও ন্যাড়া, কাল বাপু দুটো আটের আপ লোকালটা ধইরে দিতে হবে, তাড়াতাড়ি আসিস কিন্তু, টিকিট কাটতে হবে, তোর বৌদির মান্থলি নেইকো খেয়াল রাকিস।

তখন ন্যাড়া ঠিক পৌনে দুটোয় হাজির হয়ে সে বাড়ির দোরে গিয়ে রিক্সায় ডাক তোলে ‘প্যাঁক প্যাঁক’।

রেডিও’তে দুপুর আড়াইটের স্থানীয় সংবাদে মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে জানার পর থেকেই দুই বন্ধুতে একসাথে আছে। মান্তু ছটফট করলেও গুনো একেবারেই শান্ত। মান্তু’র বাবা বা গুনো’র দাদারা কেউ কলকাতা’য় চাকরি করে না। শেষে আর থাকতে না পেরে বিকেলের মুখে মান্তু গুনো’কে সাইকেলে বসিয়ে দক্ষিণ-পাড়া পেরিয়ে নিয়ে এলো একেবারে স্টেশনে। আর তখুনি চারটে পঞ্চান্ন’র লোকালে মান্তু’দের উত্তরপাড়ার গর্ব প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়া দীনেশ’দা গেজেট হাতে নামল। নেমেই ওদের রোল নাম্বার জানতে চায়—

 -- যা মিষ্টি নিয়ে আয়, গুনোর দু-দাঁড়ি আর মান্তু তোর এক দাঁড়ি হয়েছে।

ঝুমরি আগাগোড়াই গুনো’র বইগুলো নিয়ে পড়েছে। নতুন ক্লাশে উঠেই গুনো তার পুরনো বইগুলো দিয়ে দেয় ঝুমরি’কে। সারা বছর তাই বইগুলো খুব যত্নে রাখে গুনো, প্রায় নতুনের মতো। বইয়ে না লিখে নিজের নাম লেখে মলাটের ওপর। আহা ঝুমরি’র যেন মনে হয় এটা ওর নিজেরই বই। মাধ্যমিকের রেজাল্টের পর গুনো আর পড়বে না জেনে ঝুমরি একদিন গুনোকে জিজ্ঞেস করে—

--তুমি আর না পড়লে গুনোদা আমি বই পাবো কোতা? আমারও তালে আর পড়াশুনো হবে না।

--কেন ?মান্তুরে আমি বলব ও তোরে ওর বইগুলো দেবে।

--আহা আমি যেন বিজ্ঞান নিয়ে পড়ব!

-- আরে বাবা বাংলা, ইংরাজি বই তো পাবি, বাকি বইগুলোও আমি যোগার করে দেব খন।

পান্ডুয়া-স্কুলের গল্প রোজ বিকেলে ফিরে বন্ধুকে শোনায় মান্তু। গুনো শোনে চুপ করে, তবে তার ঢাকা পরা মুখের ভাব বোঝে না মান্তু। মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট হলেও বারো ক্লাসে তেমন ভালো না হওয়ায় ডাক্তারি ভুলে মান্তু ভর্তি হয় বি কম-এ। আর শুরু করে চাকরির প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি। গুনো সকাল হতেই মাঠে চলে যায় ফেরে মাঝ দুপুরে। নিজেও হাত লাগায় মুনিষদের সাথে। খানিক কুঁজো হয়ে চলে যেন শরীরের ওই আলগা ভারে। দুই বন্ধুর আজকাল দেখা হয় সপ্তাহান্তে, রবিবার শুধু। ক’মাস পর মান্তু’র রেলের চাকরির চিঠি আসে, কাজে যোগ দেবে মাস তিনেক পর। দেখা হলে দু’জন বিড়ি খায়, কোনো কোনোদিন মান্তু শার্টের ভেতরে লুকিয়ে নিয়ে যায় অফিসার্স চয়েসের ছোট্ট বোতল। গুনো একটার পর একটা বিড়ি খেলেও কিছুতেই মদে মুখ লাগাবে না। যেমন যেমন দিন গেছে গল্পের ধারাও পাল্টেছে, তবে ঝুমরি’র কথা গুনো প্রায়ই তোলে। মাধ্যমিকের পর ঝুমরি আর স্কুল-কলেজে যায়নি, তবে প্রাইভেটে পড়ে বি এ পরীক্ষা দেবে আসছে বার। মান্তু’র মা চান যে মান্তু চাকরিতে যোগ দিয়েই যেন বিয়েটাও সেরে ফেলে। পাত্রী দেখার কথাও সেদিন বলাবলি করছিলেন। তা ঝুমরি দেখতে শুনতে মন্দ নয়, পড়াশুনোও করেছে, কিন্তু গুনো মনে মনে ঝুমরি’কে পছন্দ করে যে।
-- ঝুমরিকে তুই বিয়ে কর না কেনো গুনো। সেই এইটুকুন থেকে ঝুমরি ঝুমরি করিস।

--পাগল হলি না কি!

গুনো মান্তু’কে জানায় যে কিছুদিন আগে তার মা নাকি ক্ষীণ কন্ঠে একবার গুনো’র বিয়ে দেবার কথা তুলেছিলেন, কিন্তু তখুনি দুই বউদির বাক্যিবাণে সে নাকি পালাবার পথ খুঁজে পায়নি।

-- উহ সখ দেখে বাঁচিনে আর ! গাময় এই নিয়ে বিয়ে করবে? তারপরে পরের বাড়ির মেয়ে গলায় দড়ি দিক আর কি!

মান্তু খানিক চুপ করে থেকে আমতা আমতা করে বলে,

--তোকে একটা কতা শুধোই গুনো, মনে নিস না যেন কিচু। তোর কি, ...মানে ও অঙ্গেও এগুলো আচে?

গুনো কোনও উত্তর দেয় না, ফুক ফুক করে বিড়ি টেনে যায়। খানিক পর গুনো মান্তুকে বলে যে সে ঝুমরি’কে নিয়ে ছোটবেলা থেকে ভাবলেও তা বিয়ে-শাদির কথা নয়, বরং গুনো খুশি হবে তার বন্ধু ঝুমরি’কে বিয়ে করলে। বাপ-মরা মেয়েটাকে কে বিয়ে দেবে, মান্তু তাকে বিয়ে করলে তো গ্রামের একটা গরিব মেয়ের সুরাহাও হবে। এবার মান্তু’ও কথার জবাব না দিয়ে শুধু ‘হুঁ’ দিয়ে যায়।

চাকরিতে যোগ দিয়েই মান্তু’র মাস তিনেকের ট্রেনিং আসে কাঁচড়াপাড়া । আর মান্তু’র মা’ও তোড়জোর করে ছেলের বিয়ের যোগাযোগ শুরু করেন। মেয়ে কাছেপিঠেরই, সিমলাগড়ের। বারো ক্লাস পাস। ফরসা গোলগাল, পানপাতাটির মতো মুখ। ট্রেনিং থেকে ফিরে মেয়েটির ছবি দেখে মান্তু’রও মনে ধরেছে, ঠিক হল সামনের রবিবার সে মেয়ে দেখতে যাবে। মান্তু’র ইচ্ছে তার সাথে বন্ধু গুনো’ও যাবে সিমলাগড়। কিন্তু এই প্রথমবার মান্তুর মা এতে বাধা দেন ।

 -- অয় দ্যাকো, ছেলের কতা শোনো । না মান্তু তুই একা যা বা অন্য কারোরে বল সিমলেগড় যাবার কতা, একেনে তুই গুনোরে নিয়ে যাসনে, তালে বিয়ে ভেস্তে যেতি পারে রে।

মান্তু বিয়ের কার্ড হাতে গুনো’র হাতে-পায়ে ধরে কোনোক্রমে তাকে রাজি করালো বউ-ভাতে আসতে। বর-যাত্রী যাবার তো প্রশ্নই আসে না। গুনো বিশেষ কথাও বলছে না মান্তু’র সঙ্গে। বিয়ে হল খুব ধূমধাম করেই। মেয়েপক্ষ দিয়েছে-থুয়েছে ভালো। মান্তু’র মা’রও এক ছেলে, তায় সরকারি চাকরি করে দেদার খরচা করছেন ছেলের বিয়েতে। বাড়ি ভরা আত্মীয়-কুটুমে। সানাইয়ের আওয়াজে কেউ কারো কথা শুনতে পারছে না। তার মধ্যেই কেউ একজন নতুন বউকে জানিয়ে দিয়েছে মান্তু’র এক বন্ধুর কথা, যার শরীরে নাকি কি সব অসুখ।ফুলশয্যার রাতে নতুন বউয়ের মুখে প্রথমেই গুনো’র অসুখ এবং তার থেকে দূরে থাকার অনুরোধ শুনে মান্তু’র মনটা একটু খারাপ হয়। গুনো’কে এত বলা সত্বেও বৌ-ভাতের রাতে সে ভোজ খেতে এলো না। পরেরদিন সকাল তখন সাড়ে দশটা হবে মান্তু তিনতলার ছাতে ডেকরেটার্সের হিসেব মেটাচ্ছে, হঠাৎ নিচে চ্যাঁচামেচির আওয়াজে নিচে নেমে আসে। এসে দেখে তার ঘরের দরজার সামনে মা’র পাশে হাতে একটা গয়নার বাক্স হাতে গুনো দাঁড়িয়ে আর ঘরের ভেতর খাটের বাজু ধরে তার বউ ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে প্রায় কাঁপছে ।

 --আয় গুনো বোস।

--না রে মান্ত আর বসবোনি। মা এইটে পাঠাল, ধর ।

বেরিয়ে গিয়ে গুনো’ র মাঠের কাজে যেতে আর মন চাইল না। একাই গিয়ে বসল জোড়া-দিঘির ধারের বটগাছের নিচে। এবার থেকে একাই বসার অভ্যেস করতে হবে। সেই কোন শিশু বয়েস থেকে মান্তু’র সাথে তার ভাব। সারা শরীর জুড়ে ছোট-বড় নানা আকারের এই টিউমার থাকায় কোনো বাচ্চাই গুনো’র বেশি কাছে আসত না, দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখত। আশ্চর্যের কথা মান্তু কিন্তু প্রথমদিন থেকেই তাকে নিজের বন্ধু করে নেয়। পরে পরে যতদিন গেছে গুনো যেহেতু অন্য ছেলেদের সাথে মিশতে পছন্দ করত না তাই মান্তু’ও আর কারুর দিকে ঘেঁষত না। খুব ছোটবেলার একটা কথা মনে পড়ায় গুনো’র হাসি পেয়ে গেল। মান্তু প্রায়ই বলত যে সে বড় হয়ে ডাক্তার হবে আর গুনো’র গায়ের এই অসুখ সারাবে। আর নেহাৎ ডাক্তার হতে না পারলে কম্পাউন্ডার হয়ে গুনো’র সেবা করবে। সেই মান্তু’র কাল বিয়ে হয়ে গেল। সুন্দর বউ হয়েছে তার। না তার বউ ভয় পেয়েছে বলে গুনো রাগ করেনি, বরং তার নিজের বড্ড সংকোচ হচ্ছিল। দেহের ক্ষতে মনের কষ্টেই তো বেশি ভোগে গুনো। চাপ পড়লে একটু ব্যাথা লাগা ছাড়া গুনো’র কোনো কষ্টই নেই। তবে বাবা মারা যাবার পর মা তাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা করে, কান্নাকাটি করে। দুই দাদা যে যার নিজের মতো থাকে কিন্তু বৌদিরা একটু মুখরা । গুনো ওদের এড়িয়ে চলে।

পুরী বেড়ানোর পর ফিরেই মান্তু’র অফিসের ছুটি শেষ। ছুটির দিনগুলোও কেটে যায় দেখতে দেখতে। দুপুরে বেরোনো হয় না, একটু গুনো’র সঙ্গে দেখা করে আসি বললেই বউয়ের মুখ ভার হয়। কোথা দিয়ে যে বছর প্রায় শেষ হতে চলল, আর বউও হল পোয়াতি। গাঁ-গঞ্জের রীতি অনুযায়ী মান্তু বউকে সিমলাগড়ে রেখে এল, যদিও অফিস ফেরতা প্রায়ই শ্বশুড়বাড়ি নামে আবার লাস্ট-লোকালে বাড়ি ফেরে। মা’র সঙ্গেও তেমন কথা হয় না মান্তু’র। তাও এর মধ্যে মা একদিন জানায়,

--ওরে মান্তু তোর বন্ধুর যে বড় অসুখ করেছে। একবার যা, দেখে আয় গুনোকে। একা মা-টা কি করছে। ছেলের বউগুলোতো দুটোই সিষ্টিছাড়া।

অভ্যেস মতো বিয়েতে পাওয়া বাইক’টা নিয়ে বেরোচ্ছিল মান্তু। কি মনে হতে বাইক আবার ঢুকিয়ে সাইকেল নিয়ে বেরোয়। গুনো’র বাড়ির ফটকের সামনে এসে আগের মতো “গুনো” “গুনো” বলে হাঁক পাড়তেও অস্বস্তি হল। সাইকেল’টা ওদের উঠোনে কূয়োর পাড় দিয়ে গিয়ে জামরুল গাছের গায়ে রেখে দেখে দালানে গুনো’র মা বসে আছেন রোদে। বাড়ির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। উঠোনের দু’দিকে সামনাসামনি দু’টো দোতলা বাড়ি উঠেছে, আর মাঝামাঝি পুব ঘেঁষে একটা ছিমছাম একতলা বাড়ি। মান্তু বোঝে ভায়ে ভায়ে ভিন্ন হয়েছে। গুনো’দের টাকা-পয়সার অভাব নেই, প্রচুর জমিজমা।

 --জ্যাঠাইমা, গুনো কোতা?

 --ও মা কে গো, মান্তু আয় আয়। বউমারে নে এলিনা কেনো ? যা যা ওই একতলার দালান দেয় যা, গুনো শুয়ে আছে রে, ক’দিন ধরে খুব ভুগছে।

একতলার দালানে উঠে, প্রথমেই একটা বসার ঘর, চেয়ার-টেবিল দেওয়া। ভেতরের ঘরে ঢুকতে যাবে মেয়েলি গলা শুনে থমকে দাঁড়ায় মান্তু। দরজায় এসে দেখে খাটে গুনো চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, মাথার কাছে ঝুমরি বসে। পরম মমতায় সে গুনো’র মাথায়, চুলে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে । মান্তু যে দরজার কাছে ওরা দু’জনের কেউ বোঝে না। যেন নিবিষ্ট দুজন। মান্তু যেমন এসেছিল, ঠিক তেমনই বেরিয়ে আসে। পা টিপে টিপে যেন মান্তু’র মা’ও না বোঝে যে সে ফিরে যাচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ