‘লাল কোন রঙ?’
‘লাল?’ যদিও আমি ছেলেটির প্রশ্ন উচ্চস্বরে এবং স্পষ্ট শুনতে পেরেছি, তারপরও জিজ্ঞাসা করি । আসলে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য আমি খানিকটা সময় নিচ্ছিলাম ।
‘হ্যাঁ । আমি জানতে চাই, লাল দেখতে কেমন এবং লাল রঙের অনুভূতি কী?’
ছেলেটি অন্ধ । কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকালে আমার মনে হয়, ওর কাছে অদৃশ্য সবকিছু আরো বেশি প্রতীয়মান ।
আমি আকাশের দিকে তাকাই । আমার আশা ছিল যে, হয়তো ওপর থেকে উত্তরটা আসবে এবং আমি মুক্তার রঙ দেখেছি । লাল রঙ, আমি ভাবলাম । ওকে হয়তো একটি বার দেখাতে পারবো ।
মন্থর গতিতে আমি ছেলেটির হাত দু’টি আমার হাতের মুঠোয় তুলে নিই এবং ওর কম্পিত হাতের কব্জির ওপর আঙুল দিয়ে আলতো করে অদৃশ্য বৃত্ত তৈরি করি ।
‘তুমি কী উপলব্ধি করতে পারছো?’
ছেলেটি হ্যাঁ-সূচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে ।
‘লাল হলো জীবনের রঙ । তোমার শরীর উষ্ণ । কেননা তোমার শিরা-উপশিরার মধ্যে লোহিত তরল পদার্থ চলাচল করছে ।’
একসময় ছেলেটি হাতের আঙুল দিয়ে আমার হাতের কব্জি স্পর্শ করে ।
‘আপনার শরীরের ধমনীর মধ্যেও লোহিত তরল পদার্থ প্রবাহিত হচ্ছে ।’
একটা গোপন কিছু আবিস্কার করার আনন্দে ছেলেটির কন্ঠস্বরে ঢেউ খেলে যায় ।
‘আলবৎ তুমি ঠিক বলেছ ।’
বলেই আমি আপনমনে হাসলাম । একটু থেমে আরো বললাম, ‘এই পৃথিবীতে আমরা সবাই কিন্তু একই ভাবে সৃষ্ট হয়েছি ।’
‘মিষ্টার রঘু আমাদের বলেছেন যে, দূরদেশে যারা বাস করে, তাদের মধ্যে অনেকে শ্বেতাঙ্গ, অন্যরা কৃষ্ণাঙ্গ এবং অনেকের গায়ের রঙ আমাদের মতো বাদামী । তিনি আরো বলেছেন, আমাদের চামড়ার রঙ আলাদা । তাই অনেক সময় আমরা একজন আরেকজনের প্রতি সহনশীল নই ।’
বলেই ছেলেটি তার হাতের লাঠি শক্ত করে চেপে ধরে এবং বুকের কাছাকাছি আনে । তারপর সে বললো, ‘কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি, আমরা আসলে পৃথক নই এবং আমি তার কারণ জানি ।’
ছেলেটির অসমাপ্ত কথা শোনার জন্য আমি অপেক্ষা করি । সেই সময় আমাদের মাঝে নিস্তব্ধতার অদৃশ্য পর্দা ঝুলানো ছিল ।
‘এবং তা হলো, আমাদের ভেতরে আমরা সবাই শুধু লাল বর্ণের ।’

লেখক পরিচিতি:
ভারতীয় নারী লেখক অনুকৃতি মিশ্র । তাঁর শৈশব কেটেছে হিমালয়ের পাদদেশ এলাকায় । মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি ক্ল্যাসিক্যাল নৃত্য শেখেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করা শুরু করেন । তিনি লন্ডনের কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এ লেখাপড়া করেছেন । বর্তমানে তিনি প্রথম ছোটগল্প সংকলন প্রকাশনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন । তাঁর গল্প যুক্তরাজ্যের ‘লিট্রো ম্যাগ’ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ‘দ্য লুনারিস রিভিউ’ সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে । বর্তমানে তিনি কানাডার অভিবাসী ।

গল্পসূত্র:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন