মোস্তাক শরীফের গল্প : আমি তাকে যে কারণে খুন করেছিলাম

আমি যখন ধলপুরে ফিরে এলাম তখন সন্ধ্যা নেমেছে। 

ট্রেনটা আমাকে নামিয়ে দেয়ার পর খানিক ইতস্তত করল, বোধহয় বুঝতে চাইল জনমানুষহীন এই ছোট স্টেশনে আসলেই আমি একা থেকে যাব, নাকি ফের আশ্রয় খুঁজে নেব তার উষ্ণ অভ্যন্তরে । 

আমি ট্রেনটার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। একসময়, যেন আমার নীরব প্রত্যাখ্যান বুঝতে পেরেই ধীরে ধীরে নড়ে উঠল তার শরীর।
লম্বা একটা হুইসেল বাজিয়ে রওনা দিল পরের স্টেশনের দিকে। এক এক করে ট্রেনের এগারোটা বগিকে চোখের আড়ালে চলে যেতে দেখলাম। রেল লাইনটাকে মনে হল মাছের শুকনো কাঁটার মত, আর তার ওপর দিয়ে প্রাগৈতিহাসিক কোনো সরীসৃপের মত চলে গেল ট্রেনটা। দৃশ্যটার মধ্যে চূড়ান্ত কী একটা ব্যাপার যেন আছে। এ যেন সিনেমার শেষ দৃশ্যটা দেখে ফেলা। 

সকালবেলা বাড়ি থেকে বেরোনোর পর এই প্রথম খারাপ লাগার একটি বোধে আক্রান্ত হলাম আমি। খুব কি দরকার ছিল ধলপুরে ফিরে আসার? 

কাঁধ থেকে ছোট ব্যাগটা নামিয়ে এদিক সেদিক তাকালাম। একসময় প্রতিদিন অন্তত একবার পাহাড়ি এই ছোট স্টেশনে আসতাম, স্টেশন মাস্টারের লাল দালানের পাশের ঝুপড়ি দোকানের বেঞ্চিতে পা ছড়িয়ে বসে চা খেতাম, গল্প গুজব করতাম। বলতে গেলে, ধলপুর আর তার ছোট্ট এই স্টেশন আমার আত্মার আত্মীয় ছিল। এ এলাকার প্রতিটি মানুষকে আমি চিনতাম, প্রতিটি ঘরে আমার পা পড়েছিল। 

কেন আবার ফিরে এলাম? খুব কি দরকার ছিল এই প্রত্যাবর্তনের? 

স্টেশনমাস্টারের লাল দালান এখনও আছে, তবে দেখে মনে হয় পোড়োবাড়ি। বৃটিশদের হাতে তৈরি তিন রুমের ছোট্ট ভবনটা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এটা স্পষ্ট, এখন আর এখানে কেউ থাকে না। ওটার হাত বিশেক দূরে টিনশেড হলুদ একটা দালান চোখে পড়ছে। দালানটার দেয়াল বেয়ে ছাদের ওপর উঠে গেছে শিম লতা, ওগুলো ছাপিয়ে একটা টিভি অ্যান্টেনা মাথা তুলে আছে। বাড়িতে কোনো আলো চোখে পড়ছে না। কেউ কি থাকে ওখানে? লাল দালানের পাশের চায়ের দোকানটাও আর নেই। একটা জায়গা আমূল বদলে যাওয়ার জন্য পাঁচ বছর আসলেই যথেষ্ট। আমি চোখ ফিরিয়ে স্টেশনের দিকে তাকালাম। 

পাহাড়ি এলাকায় সন্ধ্যা বড় দ্রুত নামে। যেন দুপুর থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে, বিকেলের আলো একটু দুর্বল হলেই হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ মুহূর্তে কুয়াশার গাঢ় একটা পর্দা পড়েছে চারপাশে, সেই পর্দা ভেদ করে স্টেশন মাস্টারের অফিসে টিমটিমে একটা আলো জ্বলতে দেখলাম। আশেপাশে আর কোনো মানুষের চিহ্ন নেই। আমি ব্যাগটা হাতে নিয়ে ধীর পায়ে এগোলাম স্টেশনমাস্টারের অফিসের দিকে। 

প্রায়ান্ধকারে টেবিলের সামনে ঝুঁকে বসে কাগজে কলম পিষছেন যে মানুষটা, তাঁকে আমি চিনি না। চেনার কোনো কারণ নেই। পাঁচ বছরে বদলে গেছে সবই, আগের সেই বন্ধুবৎসল স্টেশনমাস্টারও নিশ্চয়ই এতদিন এই স্টেশনে পড়ে থাকবেন না! লেখায় ব্যস্ত মানুষটি আমাকে ঢুকতে দেখে মাথা তুলে তাকালেন। পঞ্চাশ-বায়ান্ন হবে বয়স। ধলপুরের মত ছোট, রীতিমত অকিঞ্চিৎকর স্টেশনের স্টেশনমাস্টারের চেহারা যেমন হওয়া উচিত এঁরও তাই। ভারি চশমার ওপাশে চোখে ক্লান্ত দৃষ্টি, মাথাজোড়া টাক, কেবল মাথার দু’পাশে কানের ঠিক ওপরে কয়েকটা চুল নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। ভদ্রলোকের নাকটা বকের ঠোঁটের মতই লম্বা আর বাঁকানো। চশমার ফাঁক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনি?’ 

আমি হাসলাম। ‘একটু আগের ট্রেনে নামলাম।’ 

‘অ।’ 

‘এ সময় বোধহয় কেউ ধলপুরে নামে না, তাই না?’ 

‘ধলপুরে বলতে গেলে কোনোসময়ই কেউ নামে না,’ এই বলে হালকা একটা হাসি দিলেন তিনি। 

রুমের একপাশে টানা বেঞ্চি। বেঞ্চির ওপর ব্যাগটা রাখতে রাখতে আমি বললাম, ‘আর কেউ নেই স্টেশনে?’ 

‘আছে, আমার সহকারী কালু মিয়া। কোথাও হয়ত ঝিম মেরে আছে। ওকে খুঁজতে হলে ঢেঁড়া পেটাতে হবে।’ এই বলে ভাল করে আমাকে আবার নিরীক্ষণ করলেন তিনি। তারপর শুধালেন, ‘কোথায় যাবেন আপনি?’ 

‘ধলপুর গ্রামে।’ 

‘এখন তো কিছু পাবেন না। কয়েকটা রিকশা থাকে সারাদিন, বিকেলের মুখেই চলে যায় ওরা।’ 

‘আমি হেঁটে যেতে পারব। একসময় প্রচুর গিয়েছি।’ 

কাঁধ ঝাকালেন ভদ্রলোক। ‘যেতে পারেন। এদিকে চুরি-ছিনতাইয়ের সমস্যা নেই বললেই চলে। কার বাড়িতে যাবেন?’ 

‘আমজাদ সাহেবের বাড়িতে, স্কুল মাস্টারি করতেন, এখন হয়ত রিটায়ার করেছেন।’ 

মাথা নাড়লেন স্টেশনমাস্টার। ‘আমি চিনি। মাঝে মাঝে আমার সাথে গল্প করতে আসেন। ... তা, আপনি কি এখনই রওনা দেবেন, নাকি একটু চা খাবেন?’ 

‘জ্বি না ধন্যবাদ। আমি তাহলে আসি?’ 

মাথা নাড়লেন স্টেশনমাস্টার। ‘যেতে হলে তাড়াতাড়ি রওনা দেয়াই ভাল।’ 

ব্যাগটা কাঁধে তুলে আমি বেরিয়ে এলাম। ততক্ষণে রাতের হাতে নিজেকে তুলে দিয়েছে সন্ধ্যা। দূরে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়গুলো থেকে হু-হু করে বইছে শীতের হাওয়া, কাঁপন ধরিয়ে দিতে চাইছে অস্থিমজ্জায়। ধলপূরের শীতের কথা ভালই মনে আছে আমার, এজন্য বেশ পুরু একটা জ্যাকেট চাপিয়েছি গায়ে। ব্যাগটা আরো ভালভাবে কাঁধে চাপিয়ে তাকালাম রেললাইনের পাশ থেকে এঁকেবেঁকে নিচে নেমে যাওয়া মেঠোপথটার দিকে। তারপর লম্বা একটা শ্বাস টেনে একঝলক ঠান্ডা বাতাস বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে পা বাড়ালাম। 

পাহাড়ি এলাকার শীতের রাতের মধ্যে অপার্থিব কোনো ব্যাপার আছে। সমতলের চেয়ে এখানে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। চারদিকে থোকা থোকা ধূসর ফুলের মত জমাট বেঁধে থাকে কুয়াশা, রাত যত গড়ায় বাতাসে হিমভাব তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। মাঝেই মাঝেই পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে কেমন একটা শব্দ তোলে ঠান্ডা বাতাস, প্রাচীন কোনো অশরীরীর অসহায় আর্তনাদ মনে হয় তাকে। পকেট থেকে ছোট্ট টর্চলাইটটা বের করলাম, তারপর পথ দেখে দেখে এগোলাম। পাহাড়ি রাস্তায় ভয় বলতে একমাত্র সাপই। রাস্তা পেরিয়ে এক ঝোপ থেকে অন্য ঝোপে যাওয়ার সময় চমকে দিতে পারে। রাস্তার ওপর টর্চের আলো ফেলে ফেলে সাবধানে চলতে লাগলাম। রেলস্টেশন থেকে ধলপূর গ্রামের দূরত্ব তিন মাইলের মত; উঁচু-নিচু, বিসর্পিল রাস্তা চলে গেছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে। তারপর দীর্ঘ একটা বাঁক নিয়ে শেষ হয়েছে গ্রামের ছোট্ট বাজারে। আশেপাশে বেশ কয়েক মাইলের মধ্যে ধলপুরই একমাত্র গ্রাম। পাহাড়ের ঢালের সরু রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমার মনে পড়ল পাঁচ বছর আগের দিনগুলোর কথা। এরকমই এক শীতের সন্ধ্যায় প্রথমবারের মত আমার পা পড়েছিল ধলপুরে। পাহাড়ের বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা এই নিভৃত পল্লী প্রথম দেখাতেই আমার মন কেড়ে নিয়েছিল। আমার বন্ধু আতাহার, যার সূত্রে আমার ধলপুরে আসা, আমার উচ্ছ্বাস দেখে বলেছিল, ‘নতুন এলে যে কারো ধলপুরকে ভাল না লেগে উপায় নেই।’ 

সেবার তিনদিন এখানে থেকে গিয়েছিলাম আমি। আতাহারের বাবা আমজাদ সাহেব কিম্বা গ্রামের মসজিদের ইমাম আফজাল খান কিম্বা বাজারের সবচেয়ে বড় দোকানের মালিক সরফরাজ ভুঁঞা--প্রত্যেকের সঙ্গেই তৈরি হয়েছিল হৃদ্যতা। ধলপুর সত্যিই আমার হৃদয় জয় করে নিয়েছিল, মনে হয়েছিল, আহা, আমি যদি বরাবরের মত এখানেই থেকে যেতে পারতাম! 

তা কি আর হয়! ঢাকায় নিজের ব্যবসা আর নিশ্চিন্ত-নিরাপদ জীবন ছেড়ে নিভৃত পাহাড়ি পল্লীতে পাড়ি জমানো দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কি। তবে কিনা, জায়গাটা এতই ভাল লেগে গিয়েছিল যে বছরের মধ্যে দু-তিনবারও চলে আসতাম। এমনও হয়েছে, তিনদিনের জন্য এসে সাতদিন থেকে গেছি। এমনই জাদু ছিল এই পাহাড়ি গ্রামের বাতাসে, আর এখানকার মানুষগুলোর হৃদয়ের উষ্ণতায়। 

আজ ঠিক পাঁচ বছর পর আমি ফিরে এসেছি ধলপুরে, কিন্তু মনে হচ্ছে, কাল বা পরশু গেছি এখান থেকে; এখনও যেন আমার জিহ্বায় লেগে রয়েছে ধলপুরের পাহাড়ি কাঁঠাল বা আনারসের স্বাদ! 

স্টেশন থেকে হেঁটে ধলপুর গ্রামে পৌঁছাতে ঘণ্টা দুয়েক লাগে। শেষ বাঁকটা ঘুরে ধলপুর বাজারের প্রথম চা দোকানটির টিমটিমে আলো যখন আমার চোখে পড়ল, তখন ন’টা বেজে গেছে। এখানকার মানুষ সাধারণত রাত দশটার মধ্যেই ভাত-টাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বাজারের শেষ দোকানটাও দশটার মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। আমি যখন চা দোকানটার সামনে এসে দাঁড়ালাম, দোকানি ঝাপ ফেলার বন্দোবস্ত করছে, আর চা-রসিক দুজন গ্রামবাসী দিনের শেষ কাপটিতে চুমুক দেয়ায় ব্যস্ত। পাহাড়ের ঢাল থেকে আমাকে উঠে আসতে দেখে মানুষ তিনজন অবাক হলেও মুখে সেটি প্রকাশ করলেন না। দোকানের সামনের বেঞ্চিতে ব্যাগটি রেখে আমি বললাম, ‘আমাকেও এক কাপ চা দিন।’ 

‘আপনি কোথায় যাবেন?’ আমার হাতে চায়ের কাপ তুলে দিতে দিতে দোকানি শুধাল। 

‘আমজাদ সাহেবের বাড়িতে। আছেন তো তিনি?’ 

‘আছেন... তবে তাঁর আর থাকা...’ শেষের কথাগুলো উহ্য রেখে দিল দোকানি। 

‘আপনি কি আমজাদ চাচার আত্মীয় হন?’ দুই খদ্দেরের মধ্যে একজন জিজ্ঞেস করল। 

এতক্ষণে লোকটাকে চিনতে পারলাম আমি। ‘শহীদ না?’ জিজ্ঞেস করলাম। 

‘কে... আরে, কামাল!’ 

করমর্দনই আশা করেছিলাম, কিন্তু আমাকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল শহীদ। হয়ত পাঁচবছর আগে একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটানোর স্মৃতি আমার মত তাকেও তাড়িত করল এই শীতরাতে। অবশ্য ব্যাপারটা অন্যরকম হলেও অবাক হতাম না। ধলপুর গ্রামের মানুষজন, বিশেষ করে আতাহারের বন্ধুবান্ধবদের আমার প্রতি কোনো দুর্বলতা থাকার কথাও নয়। নাকি আদালতের রায়ে আসলেই শাপমুক্তি ঘটেছে আমার? কেবল আইনের দৃষ্টিতেই নয়, ধলপুর গ্রামের মানুষদের হৃদয়ের আদালতেও? 

আমার সৌজন্যে আরেক কাপ করে চা নিল শহীদ ও তার সঙ্গী। আমার সঙ্গে মানুষটার পরিচয় করিয়ে দিল শহীদ। তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় নজরুল; আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমি যখন নিয়মিত ধলপুরে আসতাম তখন নজরুল বিদেশে ছিল। সম্প্রতি দেশে ফিরেছে। স্বভাবতই আমাকে চেনে না। তবে আতাহারের ঘটনার সূত্রে আমার নাম শুনেছে। শহীদের পাশ থেকে কৌতূহলভরে আমাকে দেখতে লাগল সে, তবে চেহারায় তেমন কোনো অসূয়া লক্ষ করলাম না। তাহলে ধলপুরের মানুষ আমার প্রতি আর বৈরী নয়, ভুলই ভেবেছিলাম আমি! 

‘অনেকদিন পর তোমাকে দেখে ভাল লাগছে আমার,’ আন্তরিকভাবে বলল শহীদ। ‘আমার ধারণা আমজাদ চাচাও তোমাকে দেখে খুশি হবেন।’ 

আসলেই হবেন কি! আমি অতটা নিশ্চিত হতে পারলাম না। বিস্বাদ চায়ের কাপে ঠোঁট ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে মনে হল, কিছু কিছু জায়গা আছে, যেখানে কখনও ফিরে যেতে নেই। ধলপুর আমার জন্য সেরকমই একটা জায়গা। সত্যি বলতে কি, ফিরে আমি আসতেও চাইনি। কাল বিকেল পর্যন্তও জানতাম না, ধলপুরে ফিরব। হতে পারে, ঘুমের মধ্যে অদৃশ্য কোনো শক্তি আমার ওপর ভর করেছিল আর এজন্যই ঘুম থেকে উঠে মনে হয়েছিল, আজই ধলপুর যেতে হবে। নাকি রাতে আতাহারকে স্বপ্ন দেখেছিলাম? বোধ হয় না। আজ বহুদিন আমি আতাহারকে স্বপ্নে দেখি না। 

‘বিনা অপরাধে যে কষ্টটা তোমাকে করতে হয়েছে সেটা আমাদেরকেও কষ্ট দিয়েছে। কী করবে বল, আল্লাহ তা’আলা কপালে যা লিখে দিয়েছেন সেটাকে এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য কারও নেই!’ চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলে চলল শহীদ। 

দোকানিও এতক্ষণে আলোচনায় যোগ দিল, যদিও লোকটার চেহারা দেখে তাকে চিনতে পারলাম না। পাঁচ বছর আগে এখানে এই দোকান ছিল না। ‘মুরুব্বিদের কাছে শুনে আমারও মনে হয়েছে কামাল সাহেব এই কাম করেন নাই। বিনা দোষে জেল খাটলেন মানুষটা।’ 

আমি আর কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়ালাম। তাদের এই সহানুভূতিমাখা কথাবার্তা ভাল লাগছিল না। আমার দেখাদেখি শহীদ আর নজরুলও দাঁড়াল। শহীদ বলল, ‘চল তোমাকে আমজাদ চাচার বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিই।’ 

আতাহারদের বাড়ির এই পথ আমার কত চেনা। কত বৃষ্টি-ঝমঝম দুপুরে আর কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে এই পথ দিয়ে এই বাড়িতে এসেছি আমি। প্রতিবারই আতাহারের বাবার উষ্ণ অভ্যর্থনা আর তার মায়ের সুস্বাদু রান্না আমন্ত্রণ জানিয়েছে আমাকে। কত বিকেল আমি এ বাড়িতে আড্ডা দিয়েছি, কত রাত কাটিয়েছি ¯্রফে চা খেয়ে আর গল্প করে। পাঁচ বছর পর আবার সেই বাড়িতে যাচ্ছি, কিন্তু আমার পা টানছিল না। 

পাঁচ বছরে আমজাদ সাহেবের বয়স যেন পঁচিশ বছর বেড়ে গিয়েছে। কাঁধদুটো আরো সামনে ঝুঁকে গেছে, চোখে চশমার কাঁচ এখন অনেকটাই ঘোলা, শরীর অনেকটাই ন্যুব্জ; যেন মহাকালের ভার বয়ে ক্লান্ত এক মানুষ। ভদ্রলোককে দেখে আমার মনটা অপরাধবোধে ভরে উঠল। বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে ছিলেন তিনি, তাকিয়ে ছিলেন অন্ধকারে। সেই অন্ধকার ঠেলে আমি, শহীদ আর নজরুল তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালাম। 

‘চাচা, আমাদের কামাল, আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে।’ 

আমি আমজাদ সাহেবের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম, তিনি আমার মাথায় হাত রাখলেন। পাঁচ বছর আগের সেই স্নেহ স্পর্শ, সেই মমতামাখা চাহনি, কোথাও কোনো খাদ নেই। যেন মাঝখানে পাঁচ-পাঁচটা বছর অতিক্রান্ত হয়নি, যেন আগের মতই সহজ-স্বাভাবিক আছে সব, যেন অন্য সব বারের মতই ক’দিনের জন্য বেড়াতে এসেছি আমি, যেন আতাহারের মৃত্যু হয়নি, যেন আমি জেলে যাইনি! 

‘শেফালি, দেখো কে এসেছে!’ তিনি গলা উঁচিয়ে ডাক দিলেন। 

আতাহারের মা এসে দাঁড়ালেন। বয়সের ছাপ বড় নির্মমভাবে পড়েছে তাঁর চেহারায়ও। চশমার কাচ ভারি হয়েছে, চেহারায় কেমন একটা বিষন্ন অসহায়ত্ব। আমার বুকের মধ্যে অদৃশ্য একটা ছুরি যেন তীক্ষè একটা পোঁচ দিল। 

‘কেমন আছ বাবা?’ তিনি দরজার কাছ থেকেই বললেন। 

‘ভাল।’ 

‘তোমরা বসো, আমি খাবার ব্যবস্থা করছি।’ 

শহীদ বলল, ‘চাচা আপনারা কথা বলেন, আমরা যাই।’ 

নজরুল আর শহীদ চলে যাবার পর একটা অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এল। আমজাদ সাহেব পাঞ্জাবির কোণায় চশমার কাচ মুছতে মুছতে বললেন, ‘তোমার মা ভাল আছেন তো?’ 

‘জ্বি।’ 

‘তুমি যে কষ্ট করে আমাদেরকে দেখতে এসেছ সেজন্য আমরা অনেক খুশি। আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তোমাকে।’ 

আমার মুখে কোনো কথা জোগাল না, মাথা নামিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। 

‘আমরা সবাই জানি,’ বলে চললেন তিনি, ‘আতাহারের মৃত্যুর পেছনে তোমার কোনো হাত নেই। তোমাদের মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল সেটা তো আমরা জানি। কিন্তু পুলিশ তোমাকে ধরে নিয়ে গেল। অনর্থক একবছর জেলে পচলে তুমি। আমি পুলিশ অফিসারদের বারবার বলেছি, ছেলেটাকে ছেড়ে দিন। আসল খুনিকে ধরার চেষ্টা করুন। কিন্তু পুলিশ কি কারও কথা শোনে!’ 

ততক্ষণে আতাহারের মাও এসে বসেছেন আমাদের সাথে। তিনি বললেন, ‘আমার এখনও বিশ্বাস, কোনো ছিনতাইকারী একলা রাস্তায় পেয়ে আতাহারকে ছুরি মেরেছিল। যদিও পুলিশ বলেছে এটা ছিনতাই ছিল না, কারণ ছিনতাইকারী আতাহারের পকেটের টাকাপয়সা কিছুই নেয়নি। কিন্তু আমার মনে হয়, ওকে ছুরি মেরে ভয় পেয়ে গিয়েছিল ছিনতাইকারী। এজন্যই...’ 

‘পুলিশ যদি ছুরিটা পেত তাহলে হয়ত একটা কিনারা করতে পারত,’ আতাহারের বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন। 

‘মামলা চালাতে তোমার তো অনেকগুলো টাকা খরচ হয়ে গেল, তাই না?’ 

‘তা গেছে বেশ কয়েক হাজার।’ 

‘ইয়ে,’ আতাহারের মা একটু ইতস্তত করে বললেন, ‘নাসিমা-র কি বিয়ে হয়ে গেছে?’ 

‘হ্যাঁ। যতদূর জানি, স্বামীর সঙ্গে কানাডায় থাকে সে।’ 

‘আহা, মেয়েটার চেহারাটা বড় মিষ্টি ছিল। আমার আতাহারের সাথে ভীষণ মানাত। আল্লাহ কপালে রাখলেন না।’ 

এতগুলো দিন পার হয়ে গেছে, তবু কথাটা ঈর্ষার একটা টংকার তুলল আমার বুকের মধ্যে। আতাহারের সাথে নাসিমা--পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে অপ্রিয় দৃশ্য। ওদের দুজনকে পাশাপাশি দেখলেই আমার ইচ্ছে হত হাত দিয়ে ঠেলে দু’পাশে সরিয়ে দিই, নাসিমা আতাহারের দিকে তাকিয়ে হাসলে ইচ্ছে করত ওকে গলা টিপে মারি, আর আতাহার যদি তার সেই আবেগী দৃষ্টিতে নাসিমার দিকে তাকাত, ইচ্ছে হত ওর বুকে ছুরি বসিয়ে দিই.... 

‘এবার যখন এসেছ, দু-চারদিন কিন্তু থেকে যেতে হবে।’ 

জানি না কেন, আমজাদ সাহেবের এই আমন্ত্রণ অস্থির করে তুলল আমাকে। মনে হল, আর এক মুহূর্তও নয়, এখান থেকে পালাতে হবে। এক্ষুণি। আমি বললাম, ‘চাচা, কাল ঢাকায় আমার জরুরি কাজ আছে, একরাতও থাকতে পারব না।’ 

‘সে কি, একরাতও নয়? এতদূর থেকে এলে!’ 

‘আমাকে কাল দুপুরের মধ্যে ঢাকায় ফিরতে হবে, একটা ট্রেন আছে খুব সকালে, আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরোবো।’ মাথায় যা এল তাই বললাম বানিয়ে। অন্য কিছু নয়, যে কোনোভাবে এই বাড়ি, এই পরিপার্শ্ব, আতাহারের বাবা মা-র সহৃদয় আতিথেয়তার এই দমবন্ধ করা শেকল থেকে মুক্ত হবার জন্য আঁইঢাঁই করে উঠল আমার প্রাণ। 

‘ঠিক আছে, তাহলে কী আর করা, শেফালী ওকে ভাত দিয়ে দাও।’ 

এ কথায় ‘না’ করা যায় না; যদিও জানি, আতাহারদের বাড়ির ভাত আমার গলা দিয়ে নামতে চাইবে না। আতাহারের বাবা আর মা-র সাথে তাঁদের সেই ছোট্ট খাবার ঘরটিতে বসে আতাহারের মা’র দারুণ যত্নে রাঁধা সর্ষে ইলিশ আর ছোট মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেলাম। একসময় কী সুস্বাদু লাগত এই ভাত, আতাহার আর আমি গল্প করতে করতে রীতিমত তারিয়ে তারিয়ে খেতাম এসব খাবার--আর আজ আমার কাছে রীতিমত বিস্বাদ লাগল সব। খাবারপর্ব কোনোমতে শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘আমাকে যেতে হবে।’ 

‘এরকম ছেলে আজকাল দেখা যায় না। শুধু আমাদের সাথে দেখা করতে কয়েক ঘণ্টার জন্য ছুটে এসেছে ঢাকা থেকে। ভাবা যায়!’ আমাকে শুনিয়ে শুনিয়েই আতাহারের মা-কে বললেন ওর বাবা। 

আমি দুজনের পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। তারপর ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে এলাম অন্ধকারের মধ্যে। 

শীত এখন আরও জেঁকে বসেছে, অথচ আশ্চর্য, শীতের কোনো অনুভূতি হল না আমার। বরং মনে হল, খোলা আকাশের নিচে কতক্ষণ থাকতে না পারলে দম বন্ধ হয়ে যাবে। উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে দ্রুত পা চালালাম স্টেশনের দিকে। এতই দ্রুত হাঁটছিলাম, যেন ভূতে তাড়া করেছে আমাকে। সাপখোপের ভয়ও সেভাবে মনে এল না, টর্চলাইট না জ্বেলে নিকষ অন্ধকারের মধ্যেই হনহন করে হাঁটতে শুরু করলাম। 

রাত এখন কত জানি না। এগারোটা হতে পারে, হতে পারে বারোটাও। স্টেশনে গিয়ে কী করব, সকালবেলা আদৌ কোনো ট্রেন আছে কিনা, কিছুই জানি না। শুধু জানি, স্টেশনে গিয়ে পৌঁছাতে হবে, তারপর যত দ্রুত সম্ভব চলে যেতে হবে ধলপুর থেকে। 

উদ্ভ্রান্তের মত হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মনে হল, কে যেন পেছন থেকে ডাকল আমাকে। অবিশ্বাস্য, কিন্তু গলাটা একদম আতাহারের মতই। আমি রীতিমত দৌড়াতে শুরু করলাম। তাহলে কি মৃত্যুশীতল এই রাতে মৃত্যুর ওপার থেকে আতাহারই আমাকে ডেকে পাঠাল ধলপুরে, প্রতিশোধ নেয়ার জন্য? 

পাঁচ বছর আগের সেই রাতটির কথা মনে পড়ে গেল আমার। আতাহারকে বলেছিলাম, দুজনে মিলে কিছু কেনাকাটা করার জন্য যাব বঙ্গবাজারে। একটা রুমালে মুড়িয়ে পকেটে নিয়ে নিয়েছিলাম ছোট্ট, ধারালো একটা ছুরি। লোডশেডিংয়ের রাত, আমরা যখন নবাবপুরের সরু গলি দিয়ে হেঁটে আসছিলাম, আতাহার শিস দিয়ে গান গাইছিল। অসহ্য লাগছিল আমার ওর গান, রীতিমত ধমকে উঠেছিলাম, ‘বন্ধ করো তো!’ 

অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিল আতাহার। ‘কেন, কী হয়েছে কামাল?’ 

‘না, মানে... মাথাটা একটু ধরেছে তো...’ 

‘ওহ তাই বলো।’ এই বলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল আতাহার, তারপর, আমার শিরঃপীড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়ে বলতে শুরু করল নাসিমার কথা। নাসিমার সাথে কথা বলতে তার ভাল লাগে, নাসিমার হাসি শুনলে তার রক্তে কাঁপন জাগে, নাসিমাকে দেখলে সে পাগল হয়ে যায়--এইসব আবোলতাবোল কথা। তার প্রতিটি কথা যেন ছুরির মত বিদ্ধ করছিল আমাকে। মনে হচ্ছিল, তক্ষুণি ছুরিটা ঢুকিয়ে দিই ওর পেটে, চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিই নাসিমাকে নিয়ে এই পাগলের প্রলাপ। কিন্তু আত্মসংবরণ করতে হয়েছিল, কারণ তখনও আশেপাশে কয়েকজন পথচারী ছিলেন। তবে সুযোগের জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। একটা গলি ছাড়িয়ে আরেকটা গলিতে ঢুকতেই হঠাৎ নির্জন হয়ে গেল চারদিক। লোডশেডিংয়ের কল্যাণে ঘন অন্ধকার চারদিকে, কেবল একদঙ্গল মেঘের ফাঁক থেকে মুখ বের করার চেষ্টা করছিল বেকুব চাঁদটা। দেরি করলাম না আমি, পকেট থেকে ছুরিটা বের করে থমকে দাঁড়ালাম। 

‘কী ব্যাপার, কামাল?’ এই বলে আমার দুই পা সামনে থমকে দাঁড়াল আতাহারও। তারপর আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। 

ক্ষয়াটে চাঁদের আলোয় চোখাচোখি হল আমাদের। তারপরই আমার হাতে ধরা ছুরিটা চোখে পড়ল তার। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল আতাহারের। ‘ক্কী...’ এতটুকুই বলতে পেরেছিল আতাহার, এক পা বেড়ে সরাসরি ওর পেটে ছুরিটা ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম আমি। 

মনে আছে, কোনো কাতরোক্তি, বা বিস্ময়সূচক কোনো শব্দ উচ্চারণ করেনি আতাহার। একেবারে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, যেন মানুষ নয়, একটা কলাগাছের গায়ে ছুরি চালিয়েছি আমি। আমার দিকে বোবা দৃষ্টিতে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে মুখ থুবড়ে আমার পায়ের কাছে পড়েছিল আতাহার। আর এক মুহূর্তও দাঁড়াইনি ওখানে, ওর পেট থেকে ছুরিটা বের করে নিয়ে এক ছুটে চলে এসেছিলাম। মাইলখানেক দূরে একটা ডাস্টবিনের ময়লার মধ্যে ছুরিটা ঠেসে দিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম বাড়িতে। 

এর চারদিন পর বাসা থেকে আমাকে আটক করেছিল পুলিশ। জেরার মুখে বারবার বলেছি, আতাহারের সাথে সেদিন দেখা হয়নি আমার, ঘরে বসে বই পড়ছিলাম। নবাবপুরে দুই রুমের একটা বাড়িতে থাকি আমি। আশেপাশের কারো সাথে তেমন সখ্য নেই। আমি আসলেই বাড়িতে ছিলাম নাকি ছিলাম না সে ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য পাওয়া গেল না কাউকে। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেছিল আমার মুখ খোলাতে, সুবিধা করতে পারেনি। আতাহারের বাবা, মা কিংবা তার বাগদত্তা নাসিমা--কেউই আমার বিরুদ্ধে সন্দেহের কথা জানায়নি। জানাবে কীভাবে, আতাহার নিজেও তো জানত না কী প্রচ- ঈর্ষা আর ঘৃণা করতাম আমি তাকে! 

একসময় আদালতে খারিজ হয়ে গেল মামলাটা। জেল থেকে বেরিয়ে এলাম আমি। ততদিনে কোন এক ছেলেকে বিয়ে করে কানাডা চলে গেছে নাসিমা। শুনে ততটা খারাপ লাগেনি; আমি ওকে পেলাম না বটে, কিন্তু আতাহারও তো পায়নি! 

বাতাসে কিসের যেন গোঙানি শুনলাম। আসলেই কি আতাহারের প্রেতাত্মা আমার পিছু ধাওয়া করে আসছে? ধূর, যতসব দুর্বল মনের কল্পনা। আরো দ্রুত পা চালালাম আমি। 

এভাবে, কতক্ষণ পর জানি না, একসময় কুয়াশার চাদর ভেঙে ধলপুর স্টেশনের মিটমিটে আলো চোখে পড়ল। অন্ধকারের ভেতর, ঝোপঝাড় মাড়িয়ে ছুটে চললাম সেই আলোর দিকে। 

যেন যত দ্রুত সম্ভব সেই আলোর কাছে পৌঁছানোর ওপরই নির্ভর করছে আমার জীবন-মরণ!




লেখক পরিচিতি
মোস্তাক শরীফ

জন্ম ১৯৭৪ সালে ফেনীতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন ২০০৩ থেকে। বর্তমানে অধ্যাপক। পিএইচডি করেছেন ২০১১ সালে, ‘পল্লী উন্নয়নে তথ্যসেবার ভূমিকা’ বিষয়ে। লেখালেখির ভুবনে জড়িত প্রায় তিন দশক ধরে। গবেষণামূলক ও সৃজনশীল দুই ধারাতেই সক্রিয়। উপন্যাস, অনুবাদ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিশুসাহিত্যের পাশাপাশি সম্পৃক্ত আছেন তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতায়ও। মোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা সতেরোটি। ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র ও এক কন্যার জনক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ