লয়েল হেয়ারস্টোনে'র গল্প: পরিবর্ত্তনের হাওয়া

পরিবর্ত্তনের হাওয়া

(দি উইন্ড অফ চেঞ্জ)

অনুবাদঃ অমিতাভ চক্রবর্ত্তী


কত দিনের অপেক্ষা এই দিনটার জন্য। উত্তেজনার চোটে ঘড়িতে অ্যালার্ম বাজার আগেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কী কান্ড! বাড়িটা শান্ত, চুপচাপ, শুধু রান্না ঘর থেকে দিদির গলার মৃদু গুনগুন ভেসে আসছে। আমি টেবিলের ঘড়িটার সাথে হাতঘড়িটা মিলিয়ে ঠিক করে নিলাম।
তারপর বিছানায় সাজিয়ে রাখলাম – আমার জামা- কাপড়, পরিষ্কার শার্ট একটা, আর বাদবাকি যা যা পরে বেরোব। জুতোজোড়া ঝাঁ চকচকে পালিশ করে আয়নায় তাকালাম আমার স্টকিং ক্যাপ পরচুলাটা দেখে নিতে। ঘুমের মধ্যে নেমে গেছে এক দিকটায়। চুলের চমৎকার ঢেউখেলানো বাহারটা পুরো ঘণ্ট পাকিয়ে গেছে।

“মেরেছে রে!”

চুল ঠিক না থাকলে আমি বলে আমার নিজের দাফনে পর্যন্ত যাব না! লিভিংরুমে গিয়ে সনিকে একটা ফোন দিলাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট-এর জন্য। বিশাল ঢেউ লাগে আমার, ছাড়ান-কাটান নেই এ ব্যাপারে। বলল, দশটা নাগাদ একটা ফাঁকা আছে। বাঁচা গেল। হাতঘড়িটায় তাকিয়ে দেখি সময় আছে ঢের। অতএব, নিজের ঘরে ফিরে এসে বঙ্গো নিয়ে বসে গেলাম, জমিয়ে বাজালাম খানিক্ষণ।

সবে বোল-গুলো ঠিকমত আসতে শুরু করেছে, ঝাড় আরম্ভ হয়ে গেল তার। কি আর বলব, নিজের দিদি না হলে –

“ওয়াডেল”

মাত্রই সকাল আটটা। পাশের ঘরে পিতৃদেব ছোট করে একটা চটকা মেরে নিচ্ছে।

“ওয়াডেল!”

সোজা উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে খিল লাগিয়ে দিলাম। আছে সে দূরের রান্নাঘরে, কিন্তু আওয়াজ তার দশমনি ট্রাকের মত দেয়াল ভেঙ্গে তেড়ে আসছে। কোন উত্তর করিনি আমি; জিভের ডগায় যে নামটা আমার নিশপিশ করছিল – বলিনি, কিচ্ছুটি না। আমি শুধু নিজের মনে বঙ্গোটা ঝালিয়ে গেছি আর চেষ্টা করে গেছি ভাবতে দুপুর একটা নাগাদ যে অডিশনটায় আজ ফাটিয়ে দিতে হবে সেটার কথা। বিরাট সুযোগ একটা, নিজের শো-এর, যেমন তেমন না, ‘অফ-ব্রডওয়ে’ শো! আমার একমাত্র সুযোগ ওকে দেখিয়ে দেয়ার আয় করা কাকে বলে – আর সে কিনা আমায় চেতিয়ে দিচ্ছে যাতে আমি সমস্তটা বারো বাজিয়ে ছাড়ি।

“ওয়াডেল উইলকিন্স!”

“নিকুচি করেছে, দি, একটু শান্তি দে, প্লীজ!”

“জানিস না তুই, বাবা একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করছে ...”

জানি আবার না; উনি নিজে হাইড্রোজেন বোমার মত ফেটে পড়ছেন আর আমায় জিজ্ঞেস করছেন আমি জানি কি না যে বাবা একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করছে! মাইরি! আর নেওয়া গেল না। বঙ্গোজোড়া বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে বাথরুমে ছুটে গিয়ে বাথটাবে জল ছেড়ে দিলাম।

“চান করবি এখন?” রান্নাঘরে ঢুকতেই বাসন ধুতে ধুতে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল ও। এলোমেলো চুল, মাথায় বাঁধা রুমালের তলা থেকে কুঁকড়ে ঝুলে আছে কপালের উপর, ঢোলা উপরের জামাটা সরে গিয়ে নীচের জামা দেখা যাচ্ছে।

“মাথাটা ধোব শুধু”

হাতের তোয়ালেখানা বাসন ধোয়ার জলে ফেলে দিয়ে আমার দিকে ঘুরে এমনভাবে তাকাল যেন আমি এইমাত্র জানিয়েছি যে আমি একটা খুন করতে চলেছি।

“কি বলছিস রে তুই! কেউরিকাটা-পরচুলাওয়ালা-ওয়াডেল তার সবখানি রূপ জলে ধুয়ে ভাসিয়ে দেবে! অসম্ভব!”

“ছাড় না, দিদি, আর নেয়া যাচ্ছেনা মাইরি, রেহাই দে আমায়”

“ছাড় না, দিদি, ... রেহাই দে আমায়” – পিছন থেকে ভেঙ্গিয়ে উঠল ও। “মাথামোটা পাছা-দোলানো গাধা কোথাকার! মগজটা ভাজাভাজা করতে যে পরিমাণ সময় ঢেলেছিস তার আদ্ধেকও যদি ঐ পরচুলা বসানোর খুপরিটার ভিতরে কিছু ঘি ঢালতে কাজে লাগাতি - ”

“নিকুচি করেছে তোর, দিদি ... গোল্লায় যা তুই”

আমি দেরাজ থেকে এক টুকরো সাবান নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।

মানে, ও জানে টা কি! ও কি ভাবছে, আমি একটা ভাঁড় সেজে এই অডিশনটায় হাজির হব। ঐ লোকেরা কোন আনকোরা প্রতিভার খোঁজ করছে না, চাঁদু, দেখন্দারিতেই আদ্ধেক কাজ হাসিল। একটা গাড়লও জানে সেটা। তুমি যদি ফিটফাট না হও, আর টকাটক ঠিকঠাক কথা বলে যেতে না পারো, ঐ সাদা চিকনাগুলোর কানে তোমার একটা কথাও ঢুকবে না বাপ; ঐ একটা ভাষাই ওরা ধরতে পারে।

“... মেরুদণ্ড বলে যদি কিছু থাকত তোর একটা চাকরী খুঁজে নিতি এতদিনে ...”

চাকরী! ভাবেটা কি সে! এই যে এই অডিশনটার যোগাড়-যন্তর করেছি, কিসের জন্য – বুড়ো বয়সের পেনসন! একবারও কি আমি সেটা বলেছি ওকে!

“হাঃ! বুড়ো বয়সের পেনসন! চিন্তা করিস না, যে ভাবে চলেছিস, একুশ হওয়ার আগেই না খেতে পেয়ে মরে যাবি তুই।”

বাদ্দাও, সত্যিই, চুলোয় যাক ও। ঐ যে, জাতীয়তাবাদীরা বলে না – কালোরা হচ্ছে হাঁড়িতে রাখা কাঁকড়ার মত, একজন যদি উপরে উঠে আসতে চায় বাকিরা তোমায় ঠ্যাং ধরে টনে নামিয়ে নেবে – সব সময়। ঠিক বলে।

“জানিস দিদি, তুই না, আসলে ঘিনঘিনে পেত্নী একটা, এক্কেবারে, ঠিক তাই”

এবারে ও সত্যি সত্যি ফেটে পড়ল। আমি তোয়ালেটা দিয়ে কান চেপে ঘরে ঢুকে গেলাম। একটা পুরানো জামা-প্যান্ট গলিয়ে নিলাম আর আমার বিছিয়ে রাখা সাজসজ্জা সব তুলে, হ্যাঙ্গারে টাঙ্গিয়ে রেখে দিলাম। চুলকাটার দোকান থেকে ফিরে এসে সময়মত পরে নিলেই হবে।

দিদি গর্জন করে দেয়াল ফাটিয়ে ফেলতে লাগল যেন ও বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে; যতক্ষণ না আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল।

তোড়ে চালালাম আমি, “এক মিনিটের জন্য থামা তোর বাক্যবাণ, তাকিয়ে দেখ চারদিকে - কোন গাড্ডায় আছিস তুই। দেয়ালগুলোয় চিড় ধরে গেছে, ছাদ ফেটেফুটে আটখানা। পাইপ ফুটো হয়ে সবসময় জল গড়াচ্ছে, ঘর গরম রাখা ত কবেই বন্ধ হয়ে গেচ্ছে, বেশীর ভাগ সময় না মেলে এক ফোঁটা গরম জল না মেলে কোন টাটকা বাতাস। শুধু একটাই জিনিস অঢেল - এই নরকের ঘরভাড়া। ঘেন্না ধরে গেল।”

“তুই চাস আমি বাবার মত হই – এমন এক ম্যাদামারা লোক, পোস্টাফিসে দিনের পর দিন চিঠি চালানোর যন্তর ঠুকে ঠুকেও এমন ছাতনের মাইনে জোটে যে আবার একটা পার্ট-টাইম কাজ কত্তে হয় যাতে পাওনাদারে ঘাড় ধরে বার করে না দ্যায় ... সত্যি বলত দিদি, তুই কি একটা হাঁদা, না কি?”

মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে ভাবি, কেন, কেন আমার মাকেই মরে যেতে হল আর আমায় ঝুলিয়ে দিয়ে গেল এই দিদিটার সাথে। কপাল ...

রে-র চুলকাটার দোকানটায় সেঁটে গেলাম আমি। ঠেকটা এর মধ্যেই লোকজনে একেবারে ভনভন করছে। নৌটঙ্কী হুলোগুলো জোর গজল্লা বসিয়েছে কে কোন ভুল করেছে, কে কত জমিয়ে দিয়েছে এইসব নিয়ে, আর চিকনাদের নিয়ে, এবং অবশ্যই আজ কে কোন চরিত্র করবে সেই নিয়ে। ঘরটায় অর্ধেক মত চেয়ার এর মধ্যেই ভরে গেছে। কয়েকটা ভুলভাল বুড়ো এসেছে আসলি চুল কাটার জন্য। পিছনের দিকে পাঁচ হুলোতে মিলে চুল শুকোতে শুকোতে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছে। আমি একটু গুছিয়ে বসে অডিশন-টার কথা ভাবতে চেষ্টা করলাম। মানে ঘটনাটা শেষমেষ কি দাঁড়াবে, কটা হুলোর সাথেই বা লড়ে যেতে হবে, আদপেই আমি বঙ্গোটা কিছু পারি কিনা। চটকা ভেঙ্গে গেল – সনি, গুরু আমার, হাঁক পেড়েছে।

“কী ভাইটি, আসবে নাকি?”,

“হ্যাঁ, আসছি।” একবার চোখ টিপে আমার চাকরীর দরখাস্তের কর্মপঞ্জীর খসড়াটায় আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। সনি-ই বানিয়ে দিয়েছে এটা – প্রেক্ষাপট কি, কতদিন ধরে লেখাপড়া করেছি, কোথায় করেছি, কাজের অভিজ্ঞতা কি কি, এই সমস্ত কিছু। পুরো জালি, কিন্তু বানিয়েছে দারুণ। ভালো করে একবার ঝালিয়ে নিয়ে ওটা আমার পিছনের পকেটে চালান করে দিলাম। সময়টা দেখে নিলাম একবার। সনি, দেখছি, যে শ্রীমানের মাথা নিয়ে পড়েছে, তার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। হুলোটার পরচুলাটা চকচকা কালো সাটিনের মত ঝিলিক মারছে। সনির হাত চলছে আর চুলের ঢেউগুলো ফুলে ফুলে উঠছে। সামনের দিকের বড় ঢেউটার কাজ শেষ, বাকী গুলোর হয়ে এসেছে। আলতো নরম, যেন ছোঁড়ার নিজের চুল। ফাটাফাটি কাজ।

আমি সনিকে বললাম আমার ঠিক ঐ রকমটা চাই, ঐ হুলোটার মত। মাথার উপর মোটা করে গ্রীজ লেপ্টে, রাবার গ্লাভস পরা আঙ্গুলগুলো সনি এমন ঠেসে পরচুলাটার মধ্য দিয়ে চালাল, যে ঐ পুরু গ্রীজের ভিতর দিয়েও আমার খুলির চামড়া জ্বালা জ্বালা করে উঠল।

“উরি, গান্ডু রে!”

“শান্ত্‌ হো যা, মেরে আম্মা,” পরচুলাটার মধ্যে চিরুনি চালাতে চালাতে বকবক করে সনি “এ কাজের আসলি সিক্রেট-ই হচ্ছে জ্বালাটা একেবারে খুলির চামড়া পর্যন্ত ধরিয়ে দেওয়া যাতে চুলগুলো একেবারে গোড়া থেকে নিজের চুল বলে মনে হবে।”

ওর কাজ শেষ হলে আয়নায় আমি পরচুলাটা খুঁটিয়ে দেখলাম।

“গুরু, গুরু, কি মাল নামিয়েছ মাইরি, একেবারে চাম্পু।”

“ওরে না!” পাশের চেয়ারের হুলোটা চেঁচিয়ে উঠল। “হুলিয়া বদলে দিয়েছে তোমার, বাপ! চামড়াটা আর দু এক পোঁচ কম কালো হলেই তুমি নিজেকে একটা চিকনা বলে চালিয়ে দিতে পারতে।”

“নিজের ঝাড়ুগুলো আবার ঠিকমতো গজাতে গেলে, সোনামণি” সনি তার বাণী শোনালো, “মাথাটা তোমার পুরো কামিয়ে ফেলতে হবে।”

“যা-তা!” একটা পাঁচ ডলার এগিয়ে দিলাম আমার ওস্তাদকে আর খুচরোটা রেখে দিতে বললাম।

আমার কোটটা চাপিয়ে নিলাম, সবাই মিলে উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে দিল। সেইন্ট নিক থেকে এ-ট্রেন ধরে পাঁচ-এর-নয় নম্বর রাস্তায় নামলাম। সবে দুপুর বারোটা। কি আর করা, আট নম্বর অ্যাভেনিউয়ের একটা রেস্তোঁরায় ঢুকে কয়েক ঢোক ইম্পিরিয়াল মেরে স্নায়ুগুলোকে শান্ত করলাম। তারপর ভাসতে ভাসতে ছেচল্লিশ নম্বর রাস্তায়, ঠেকটায়, বড় করে শ্বাস নিলাম, ঢুকে পড়লাম ভিতরে।

মঞ্চে তখন একটা নাচের অডিশন চলছে। যতবার নাচ শুরু হচ্ছে, ফিটফাট জামা পড়া, দাঁতে সিগার চাপা এক ব্যাটা হুলো তাদের থামিয়ে দিচ্ছে। সব কটা ঘেমে নেয়ে অস্থির। আমি সবে বোঝার চেষ্টা করছি যে কি চলছে, নাক-চোখা হুলোটা আমার দিকে ফিরে আমায় বাইরে অপেক্ষা করতে বলল।

বাঁদিকে একটা অপেক্ষা করার ঘর। একটা পুরানো টেবিল ঘিরে এক গুচ্ছ চিকনা সুন্দরী। ধোঁয়া ছাড়ছে আর আলতু ফালতু কথা নিয়ে গজল্লা করছে, আমি তাই করিডরটায় দেয়ালে ঠেসান দিয়ে একটা চেয়ারে বসে রইলাম। বাড়িটার আর এক মাথা থেকে নানারকম ড্রাম বাজার আর তার সাথে পা ঠোকার আওয়াজ ভেসে আসছিল – সেই সাথে এক ভুলভাল কোরাস যেটার কিছুতেই বাজনার সাথে তালমিল হচ্ছিল না। নিশ্চয়ই অকম্মা চিকনা ছোঁড়াগুলোর কাজ, ভাবলাম আমি। কিছু না, স্রেফ আমার স্নায়ুগুলোকে শান্ত রাখার জন্য আমি আমার বঙ্গোতে লয়টা ধরার চেষ্টা করলাম। বুড়ি চিকনাদের ঝাঁকটা গজল্লা থামিয়ে আমায় ভালো করে নজর করল। আমার উপর দিয়ে ওদের চোখগুলো পিছলাতে পিছলাতে আমার চুলে এসে থিতু হল, চকচক করে উঠল সেগুলো আর ওরা ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে কে জানে কি বলতে রইল। আমি নির্বিকারভাবে বাজিয়ে গেলাম।

এইবার দরজা দিয়ে ভেসে এল এক লম্বা মেয়ে, সবুজ চোখ, হাল্কা সোনালী চুল, ঠোঁটে আটকানো সিগারেট, এদিক ওদিক তাকাচ্ছে যেন কাউকে খুঁজছে এক টুকরো আগুনের জন্য। বসার ঘরটায় এক পাকাচুলোর থেকে সেটা যোগাড় করে সাজঘরের দরজার পাশের দেয়ালটায় হেলান দিয়ে দাঁড়াল। কি যে অপূর্ব কাঠামোখানা তার, কি বলব মাইরি! তার মুখের দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারছিলাম তার চোখের মুক্তো দুটো আমায় মাপছে। একটি চিকনা হিসেবে - মন্দ নয়, একেবারেই মন্দ নয়।

যেভাবে আমায় দেখছিল তাতে নিশ্চিন্তে বলতে পারো যে ও তখন আমায় হ্যারী বেলাফন্টে বা ঐ রকম কোন বিরাট বিনোদনশিল্পী কেউ বলেই ভাবছিল। ভাবা যায়! মানে, একবার যদি ওরা চায়, খ্যাতির চূড়ায় তুমি, আর, কত কামাবে, কামাও না, দুনিয়া তোমার সামনে এনে হাজির করবে ওরা –

“এই যে”

আমি পলকে স্থির। আমার চিন্তাগুলো এই মুহুর্তে সতর্ক, টানটান। তারা এখন তাকে ঘিরে ধরতে চাইছে আর আমার অন্তরাত্মা আমায় সাবধান করে দিচ্ছে চুপ করে থাকতে। কিন্তু, সে এখন দাঁড়িয়ে আছে আমার ঠিক সামনেটায়; আর, আমি ত আর পাথর না।

“বলুন” আমি সোজা তাকিয়ে কথা বলি; চিকনারা ভাবে আমরা বস্তির ভাষা ছাড়া কথা বলতে পারি না।

“কিছু মনে কোরো না, তুমি ডাগ ওয়ার্ড না?”

মিলিয়ে নিন ঠিক বলেছিলাম কি না। মন পড়ে ফেলতে পারি আমি, বুঝলেন, চিকনাদের ত বটেই।

“না” বললাম আমি, আর তার দিকে একটা মায়ালু হাসি ভাসিয়ে দিলাম। তারপরে তিনজন আরো, একজন তাদের আমাদের মতই কেউ হবে, সাজঘর থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল, আর যেন ভাসতে ভাসতে চলে এল আমাদের পাশে। প্রথমে শ্রীমতী সবজান্তা দুঃখ প্রকাশ করলেন, আর নিজের পরিচয় জানালেন। তারপরে বাকিরাও জানালেন। আমি মাথা ঝোঁকালাম, নিজের নামটাও জানালাম আর ভাল করে নজর দিলাম যেখানটায় ওরা বেশীর ভাগ জটলা করছিল সেই দিকটায়। মানে বলছিলাম কি ওরা সব কজন এক সাথেই ছিল আর একেবারে বন্ধুর মতই কথা বলছিল। কিন্তু এই আমাদের মতন মেয়েটি, ওরে ভাই রে, একেবারে ঝকাস। বড় বাদামের মত গোল গোল চোখ দুটো তার এত ঝকঝক করছে যেন তাদের দিকে তাকালে আপনা আপনি চোখ কুঁচকে যাবে। আর মঞ্চে সে নিশ্চয়ই কোন আফ্রিকান রাজকুমারীর অভিনয় করছে, অন্ততঃ তার চুল দেখে তাই মনে হয়। স্বাভাবিক, ছোট করে ছাঁটা, মানে নিজেরই চুল আর কি, ঠিক যেন মিরিয়াম ম্যাকেবা। কিন্তু যে ভাবে তার সাটিনের মত মসৃণ ঘাড়ের কাছে বড় বড় সোনালী গোলাকার দুলগুলো ক্ষণে ক্ষণে ঝিকমিক করে উঠছিল তাতে তাকে সত্যিই কোন আফ্রিকান রাজকুমারীর মত দেখাচ্ছিল। একটুও না নড়াচড়া করে আমি বেশীটা সময় ওকেই দেখে যাচ্ছিলাম।

আমরা কথাবার্তা শুরু করলাম। আর কলীন - ওদের মধ্যে যেটির সাহস বেশী – বলল যে ওরা সবাই অ্যামেরিকান ব্যালে নামের স্কুলটার ছাত্রী। ঠিক এই সময় আমার ডাক পড়ল – কেরামতি দেখানোর। আমি ছুটে এগোলাম এই আশায় যে মেয়েগুলো চলে যাওয়ার আগেই আমি ফিরে এসে ওদের ধরে নিতে পারব। আর তাহলে রাজকুমারীকে আমার বাজনা শুনিয়ে দেয়া যাবে।

ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখি পাঁচ হুলো ঘরের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। চাপা পোশাকে বাহার খুলেছে চমৎকার। তাদের পিছনে বসানো আছে – সারি সারি লম্বাপানা আফ্রিকান ড্রাম। দেখেই আমার ভিতরে ভিতরে কিরকম একটা অস্বস্তি হতে লাগল। হুলোগুলোর সর্দার মুখ খুলতেই বুঝে গেলাম কেন আমার অস্বস্তি হচ্ছে। মঞ্চটাকে ওরা আফ্রিকান নাচের মঞ্চে পাল্টে ফেলেছে। আমি যখন বললাম যে আমি কোনদিন ঐসব আদিম যুগের বাদ্যি নিয়ে কাজ করিনি, বহুত আবোল তাবোল বাকতেল্লা মেরে সে ব্যাটাচ্ছেলে আমায় কেটে পড়তে বলল। আমি দিদির মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম – ভেংচিয়ে, হাসাহাসি করে আমার অবস্থাটা ও যা করবে, - আমি দরজার দিকে পা বাড়ালাম।

এলিভেটরে ঢুকতে যাচ্ছি, পিছন থেকে কলীন-এর গলা শুনতে পেলাম। আমার দিকে তাকিয়ে ও একটা সমবেদনার হাসি দিল। মনে হল ও বুঝতে পেরে গেছে কি ঘটেছে। সে এদিকে একেবারে সেজেগুজে তৈরী, বাকিদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বোঝাতে চাইলাম যে আমি ঠিক আছি, আসলে আমি নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিলাম।

“আসতে চাও আমাদের সাথে?”

“... আমি ... না মানে, কোথায়?”

“ইউ এন যাচ্ছি। আমরা -- ”

“ইউ এন, রাষ্ট্রপুঞ্জ ... ?”

“চলো চলো, মন ভালো হয়ে যাবে, ঠিক আছে?”

আমার উত্তর শোনার আগেই সে আমায় তার বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করতে বলে পার্কিং লট থেকে তার গাড়িটা নিয়ে আসতে চলে গেল। আর, রাজকুমারীকে দেখার পর আমি সব ভুলে গেলাম – তাকে ছাড়া! গোটা শহরটা ধরে যেতে যেতে আমি শুধু ভেবে গেলাম কি করে তাকে একটু একলা পাওয়া যাবে যাতে আমার বাজনাটা শোনানো যায়, আর এরা শুধু ইউ এন নিয়ে কিচিরমিচির করে গেল। যখন বললাম যে আমি কখনো ইউ এনে যাইনি, তারা একেবারে আকাশ থেকে পড়ল। আমার তখন খবরটবরে এই ঠেকটা নিয়ে যে সব কথা চলে সেগুলো মনে পড়ে গেল এবং ওদের বললাম যে আমি ভাবতাম হতচ্ছাড়া কমিগুলোই এই জায়গাটা চালায়। ওরা আমায় নিয়ে হাসিতে ফেটে পড়ল। আর তখনই আমি জানলাম যে, ওলেটা, মানে রাজকুমারী, একজন খাঁটি আফ্রিকান; আর তার ভাই তাদের দেশের ইউ এন প্রতিনিধি। ভাবা যায়! মানে আমার তখন ইচ্ছে করছিল সীটের পাশে হাতলের ছাইদানটার মধ্যে সেঁধিয়ে যাই।

কলীন গাড়িটা পার্ক করল। আমরা ইউ এন-এ যাওয়ার বুলেভার্ড ধরে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চললাম। সামনেই লম্বা সারিতে পতাকারা উচ্ছল হাওয়ায় ঢেউ তুলছে, সারা দুনিয়ার অজস্র নক্সায় কত যে রং ঝলমল করে নিজেদের জানান দিচ্ছে। আর আমি যখন সিঁড়ি বেয়ে উঠে পাথরে বাঁধান চাতালটা ধরে ‘জেনারেল অ্যাসেম্বলী বিল্ডিং’-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, হাল্কা নীল আকাশের গায়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ লম্বা দালানটার থেকে চোখই সরাতে পারছিলাম না।

ভিতরে গিয়ে দেখি দুর্দান্ত নকশায় সাজানো সব কিছু, উপর থেকে কার্পেট পর্যন্ত সব একেবারে যেমনটি হলে ভালো হয়; কাঁচের দেয়ালের ওপাশে বাগানটা সবুজ গাছপালা আর নানা রংয়ের উজ্জ্বল ফুলে উদ্ভাসিত; ঐ দেয়াল দিয়ে আসা হাল্কা নীল আলো ভরিয়ে তুলেছে ঘরটাকে। কিন্তু উপরতলায় গিয়ে যখন দেখি মূল ঘরের টেবিলগুলো ঘিরে একের পর এক সব আফ্রিকান হুলোরা বসে আছে, আমার ত কি বলব, উল্টে পড়ে যাওয়ার অবস্থা। তাদের কেউ কেউ পরে আছে রোজকার সাধারণ নীল পোশাক, কেউ কেউ আবার নিজের নিজের দেশের কায়দায় জোর জেল্লা দিচ্ছে। জলের পাত্রর পাশে পাশে তাদের ডেস্কগুলোয় কাগজপত্র সব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা। নিজেদের মধ্যে একে অপরের দিকে ঝুঁকে পড়ে নিচু গলায় গোপন সব কথা-বার্তা বলছে তারা। আর তার চাপ পড়ছে তাদের মাঝে মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চিকনাদের উপর।

গ্যালারী জুড়ে গুঞ্জন চলছে, “লুমুম্বা”, “ৎসম্বে”, “বেলজিয়ান মার্সেনারি” “কাসাভুবা” আর কি একটা “রেজোলিউশান” নিয়ে, “আফ্রো-এশিয়ান” প্রতিনিধিরা যেটা তৈরী করে সভার কাছে জমা দিয়েছে। ওলেটা আমায় দেখিয়ে দিল তার ভাইকে, এক গুচ্ছ ছোকরা হুলোর সাথে কথা বলছে, মসৃণ গোল গোল কালো মুখ তাদের, চুলগুলো চারিদিকে সমান করে ছাঁটা, উলের মত দেখাচ্ছে। তারা সবাই এমন জ্বলজ্বল করছিল যেন “চার্লি”-র কোন বাজনার তালে তালে তারা অনুষ্ঠান করছে এবং চার্লি তার স্বরলিপিগুলো এমনভাবে ওলটাচ্ছে যেন সব কিছু তার পুরোটা আয়ত্ত্বের মধ্যে আছে। মানে, সত্যি বলতে কি আমি আমার আসন থেকে লাফিয়ে উঠে প্রবল হাততালি দেওয়া থেকে নিজেকে আটকে রাখার চেষ্টায় এইটকু পর্যন্ত ভাবতে পারছিলাম। এবার বোঝা যাচ্ছে যে কেন খবওয়ালারা গুজগুজ করে - লাল লোকেরাই এই ঠেকটা চালায়।

রাজকুমারী ওলেটা আর কলীন-এর মাঝে বসে আছি আমি, কানে ইয়ারফোন দিয়ে শুনছি, এক আফ্রিকান ফ্রেঞ্চ-এ কথা বলছে। আর আমি সেটা শুনতে পাচ্ছি ইংরাজীতে। দিদি যদি এটা দেখতে পেত, নির্ঘাত উল্টে পড়ত ও – ভাবলাম আমি। কী কাণ্ড! মানে কি আর বলব, উদোম ব্যাপারস্যাপার।

যতক্ষণে রেজোলিউশানটা নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া শেষ হল, এবং তারা চিকনাদের বাধ্য করল সেটা মেনে নিতে, আমি আর ওলেটা নিজেদের নিয়ে চমৎকার কাটিয়ে দিলাম। ক্রমাগত সে আরো ঝলমল করতে রইল। যখন আমরা নীচে নেমে এলাম, আমি তার ঠিকনাটা চেয়ে নিলাম। কলীনকে তার মাকে আনতে যেতে হবে ডাউনটাউনে, ফলে আমাদের গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দেবার মত সময় আর ছিল না তার। আমরা তাকে তার গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। ও বলল যে আমার সাথে আলাপ হয়ে তার খুব ভালো লেগেছে, আমার হাত ধরে ঝাঁকিয়ে দিল, আমার গানবাজনার জন্য অনেক সৌভাগ্য কামনা করল, আর আমার দিকে তাকিয়ে যে মধুর হাসিটা সে উপহার দিল, একটি চিকনা সুন্দরীর কাছ থেকে এর বেশী পাওয়ার আশাই করা যায় না। মানে আমাকে একেবারে নাড়া দিয়ে গেল।

“আর হ্যাঁ, শুক্রবার রাতে আমার অনুষ্ঠানটায় আসতে যেন কোন ভুল না হয়”, আমি যখন ওলেটার সাথে গুণগুণ করছিলাম, নিজের বান্ধবীদের খেয়াল করে দিল সে। “ওলেটা তুইও আসছিস কিন্তু।”

“কলীন, তুই ত জানিস, শুক্রবার রাতে আমার একটা ক্লাস থাকে।”

“ওঃ, গুলি মার তোর ক্লাসে, - আমি বলছি তুই আসবি আমাদের সাথে।”

“ওঃ, পারা যায়না আর, আচ্ছা দেখবখন।” ঝকঝকে গোলাপের মত একটা হাসি দিয়ে মেনে নিল ওলেটা। কলীন উঠে গেল গাড়িতে। তার পর আমার দিকে ফিরে বলল –

“... মিস্টার উইল্কিন্স, আপনিও চলে আসুননা কেন?”

“বলছেন - ”

“দাঁড়ান, আমার ঠিকানাটা দিচ্ছি আপনাকে। আপনি এলে আমাদের খুব ভালো লাগবে।” একটা কার্ডের পিছনে ঠিকানাটা লিখতে লিখতে ওলেটার দিকে চেয়ে চোখ টিপল সে।

বাড়ি ফেরার পুরো পথটা ওলেটা আর আসছে শুক্রবারের রাতের অনুষ্ঠানটা – শুধু এইই আমার মাথায় ঘুরপাক খেয়ে গেল। আজকে সবে সোমবার, তার মানে শুক্রবারের মধ্যে আমার পরচুলাটা আর একবার আমায় ঠিক করে নিতে হবে। আমি তাই রে’র দোকান গিয়ে সনির সাথে শুক্রবারের একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে নিলাম। খিদে পেয়েছিল জোর। কিন্তু অডিশন-এর বারো বাজিয়ে ফেলার পর দিদির গালাগাল শোনার আমার আর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না। আমি তাই একটা স্যান্ডুইচ সাঁটিয়ে নিয়ে সিনেমা দেখতে ঢুকে গেলাম।

লৌস নামের সিনেমাহলটায় মেরিলিন মোনরোর ছবি চলছিল। আরাম করে বসতে না বসতেই ঘুমে চোখ জড়িয়ে গেল। স্বপ্নে দেখলাম ওলেটার সাথে আছি আমি, হ্রদের পাশে সেন্ট্রাল পার্কে বঙ্গো বাজিয়ে শোনাচ্ছি তাকে, আর সে আমার বাজনার সাথে সাথে নেচে যাচ্ছে। সোনালী চাঁদের আলোয় চিকচিক করা হ্রদের জলে আমি দেখছি তার অপূর্ব বাদামী শরীরের প্রতিফলন। তারপর সে এসে আমার চুলে টোকা দিল আলতো করে। আর তার ঝিকমিক করা চোখের তারায় আমি দেখতে পেলাম নিজেকে, ধরে আছি তাকে, একেবারে কাছটিতে; শুধু আমার আদ্যোপান্ত এক আফ্রিকান যোদ্ধার পোশাক, আর আমার চুলগুলো – ঠিক যেমন ঐ ইউ এনের হুলোদের ছিল – ছোট করে ছাঁটা ঘন ঊলের মত। জেগে উঠলাম আমি। মানে, স্বপ্নটা আর কি, একেবারে হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল!

সারাটা সপ্তাহ ঐ আফ্রিকানদের নিয়ে কিছু একটা আমার মাথায় থেকে থেকে কুটকুট করে গেল। মানে, নিজে থেকে কিছু ভাবিনি আমি – কিন্তু তারা যেন আমায় কিছু বলছিল। চুল কাটার দোকানে যাওয়ার আগে দিদিকে বললাম আমি তাদের কথা।

“কি বলছিস রে তুই, আমাদের ঐ নেতাগুলোর মত ওরা সাদাদের পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করছিলো না?”

আমি আর একটাও কথা বাড়ালাম না। পারেও বটে। একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছ কি, ভাষণ নামিয়ে দেবে। জুতোজোড়া চকচকে করে পালিশ করে, আঙ্গুলের নখ কেটে, পালিশ করে, বসলাম এবার চুল কাটার চেয়ারে। গালে একটু ফেনা ঘষে নিলাম আর ওলেটার কথা ভাবতে থাকলাম। কি চমৎকার মেয়ে, এরকমটা আমি আর কারো মধ্যে দেখিনি – কি নিজেদের কি চিকনাদের। সনি ঘরের পিছন দিকে কারো চুলে খানিকটা গ্যাস চালিয়ে দিয়ে আমার কাছে এসে আমার ঘাড় ঘিরে তোয়ালেটা বিছিয়ে দিলো। আমি ওকে বললাম ভালো করে কামিয়ে দিতে। সনি চেয়ারটা হেলাতে শুরু করল।

“আমার মুখে নয়, গুরু, মাথায়”

হুলোটি এতে এমন চমকে গেলো যে ওর হাত থেকে ক্লিপারটা খসে পড়ে গেলো। আমি কিছু না বলে শুধু হাসলাম আর চোখ বন্ধ করে পিঠটা হেলিয়ে দিলাম, আর ভাবতে থাকলাম কোথা থেকে এক জোড়া আফ্রিকান ড্রাম যোগাড় করা যায় ...


-----------------------
লেখক পরিচিতি: লয়েল হ্যারিস্টন (১৯২৬-২০০৮)

আমেরিকার মিসিসিপি রাজ্যের মেকন শহর। সারা দেশের দরিদ্রতম শহরগুলির মধ্যেই পড়বে। জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আফ্রিকান অ্যামেরিকান। অথচ এ শহর দেখেছে একের পর এক লিঞ্চিং। কালো মানুষরা অনায়াসে খুন হয়ে যায় সাদা মানুষদের হাতে। জন্ম থেকে জীবনের প্রথম ১৪ বছর এই শহরেই কাটিয়েছিলেন লয়েল। নৌবাহিনীর জীবন শেষে তিনি যখন নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃজনশীল সাহিত্যের পাঠ নিচ্ছেন, মেকন তাঁর মননে সৃষ্টির অন্যতম উপাদান। সাহিত্যিক লয়েল পাল্টে যেতে দেখেছেন তাঁর দেশ, সমাজ, সাহিত্য। আর সেই পাল্টানোর ঢেউ যাঁরা এনেছিলেন লয়েল নিজে তাঁদের অন্যতম পুরোধা। “দি উয়িন্ডস অফ চেঞ্জ” তাঁর প্রথম ছোট গল্প। এই গল্পের প্রধান চরিত্র, যে এই গল্পের কথক ও বটে, পুরো বর্ণোনাটা চালিয়ে যায় যে ভাবে সে মনে মনে ভাবছে, দেখছে ঘটনাগুলোকে, মানুষদের, সেইভাবে। অজস্র শব্দ সেখানে অন্য রূপে উপস্থিত। সাদা মানুষেরা - সিল্ক (চিকনা), কালোরা - ক্যাটস (হুলো) বা মেম্বার্স (আমাদের লোক)। তার সাথে মানানসই ভাষা। ফলে এ লেখা পড়তে পড়তে সেই সময়টা, সেই পরিবেশ একেবারে প্রথম অনুচ্ছেদ থেকেই চোখের সামনে হাজির হয়ে যায়। বক্তা ওয়াডেল উইলকিন্স-এর সাথে আমরা অনায়াসে ঘুরে বেড়াই তাঁর দুনিয়ায়।
অনুবাদক পরিচিতি:
অমিতাভ চক্রবর্ত্তী
কবি। গল্পকার। অনুবাদক। প্রাবন্ধিক।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ