আনা ব্লানডিয়ানা'র গল্প : খোলা জানালা


অনুবাদ : বিকাশ গণচৌধুরী

অনেকদিন আগে, যখন শিল্পীদের গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যাওয়া হতো তখন তারা তাদের রং-তুলি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারতো। এভাবে মিনারের ওপরের অন্ধকার কুঠুরিতে ঢোকবার সময় আমাদের এ গল্পের নায়কের প্রথমেই মাথায় এলো যে এর দেয়ালে একটা জানালা আঁকা থাকতে হবে। সে বসে পরে কাজ শুরু করে একটা খোলা জানালা এঁকে ফেলল যার মধ্যে দিয়ে একটা উজ্জ্বল নীল আকাশ দেখা যাবে। এভাবে কুঠুরিটা খুব উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

পরের দিন, জল আর খাবার নিয়ে ঢুকতে যেতেই সেই ছবির জানালা দিয়ে আসা ধাঁধাঁনো আলো জেলারের চোখে পড়ায় তাকে চোখ বন্ধ করে ফেলতে হলো।

‘এখানে হচ্ছেটা কী ?’ বলে চিৎকার করতে করতে ছুটে জানালাটা বন্ধ করতে গিয়ে দেয়ালে ধাক্কা খেলেন।

শিল্পী ঠান্ডা মেজাজে বললে, ‘আমি একটা জানালা খুলেছি, এ জায়গাটা বড্ড অন্ধকার।’

‘হে-হে-হে’, অপমানিত জেলার মুখ ভেঙিয়ে হেসে উঠল। সে নিজেকে বোকা প্রতিপন্ন করতে দিয়েছে। তারপর বদলা নেবার ভঙ্গিতে মুখ ভেংচিয়ে বলে উঠল, ‘তুমি একটা জানালা খুলেছ ... তুমি একটা জানালা এঁকেছ ... বোকা কোথাকার! এটা সত্যিকারের কোনো জানালাই নয়, শুধু তুমিই এটাকে কল্পনায় জানালা ঠাউরাচ্ছো।’

শান্ত গলায় শিল্পী বলে চলল : ‘আমি চাইছিলাম এই কুঠুরিটায় আলো আসুক তাই সেটা করলাম। আমার এই জানালাটা দিয়ে আকাশ দেখা যাবে; তুমি যখন এ ঘরে আসবে, আলোর জন্য তোমাকে চোখ বন্ধ করতে হবে।’

এবার জেলার প্রচন্ড মেজাজ হারিয়ে বলল : ‘তুমি আমাকে বোকা বানাবার চেষ্টা করছ না অন্যকিছু ? এই মিনারটায় আদৌ কোনো জানালা নেই। যে-ই এখানে ঢুকবে সে-ই আর জীবনে কোনোদিন দিনের আলো দেখতে পাবে না!’

শিল্পী বলল, ‘তবুও তো খোলা জানালা দিয়ে দিনের আলো আমার কুঠুরীর মধ্যে ঢুকছে।’

‘ও, তাই ?’ জেলার মুখ ভেঙালো। ‘তাহলে তুমি পালিয়ে যাচ্ছো না কেন ? ওটা করলে তবেই তুমি আমাকে বিশ্বাস করাতে পারবে যে জানালাটা আসল।’

এক লহমার জন্য শিল্পী জেলারকে মাপল, তারপর দেয়ালের দিকে কয়েক পা গিয়ে জানালা দিয়ে লাফ দিল।

‘দাঁড়াও!’ ওকে থামাবার জন্য পাগলের মতো ওর পিছনে ছুটলো, কিন্তু আবার ওর মাথা দেয়ালে ঠুকে গেল। ‘সাবধান!’জেলার চিৎকার করতে লাগল, ‘ব্যাটা পালিয়েছে!’ আর মিনারের চাতালের পাথরে শিল্পীর থ্যেঁতলানো শরীরের ধড়ফড় করার শব্দ বাতাস বেয়ে শোনা যেতে লাগলো।



লেখক পরিচিতি
আনা ব্লানডিয়ানা (Ana Blandiana) (১৯৪২ - ): 
জন্ম পশ্চিম রোমানিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী টিমিসোয়ারায়; কবি, প্রবন্ধকার এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মূলত কবি। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জেরে তাঁর লেখালেখি রোমানিয়ায় নিষিদ্ধ ছিল বহুদিন, যদিও তাতে তাঁর রাজনৈতিক ও সাহিত্যের ভাবনা টাল খায়নি এতটুকুও; চাসেস্কুর মৃত্যুর পর তাঁর লেখাপত্তর প্রকাশিত হতে শুরু হয়।





অনুবাদক পরিচিতি
বিকাশ গণচৌধুরী
কোলকাতায় থাকেন।
কবি। অনুবাদক। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

9 মন্তব্যসমূহ

  1. এমন গল্পও লেখা যায়! অসাধারণ বললেও যেন কম বলা হয়। অনুবাদ মূল গল্পের সুরে দারুণভাবে সঙ্গত দিয়েছে। ব্রাভো!

    উত্তরমুছুন
  2. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  3. ভালো লাগলো। প্রথাগত কাহিনীর থেকে এ গল্পের বিষয় আলাদা !

    উত্তরমুছুন
  4. অসাধারণ ভারসাম্যরাখা গল্পের চমৎকার অনুবাদ।

    উত্তরমুছুন
  5. ভালো লাগেনি। অতি সরল গল্প। পড়বার খানিক পরেই বুঝেগেছিলাম গল্পের শেষে কী হতে পারে। সেইটাই হল।

    উত্তরমুছুন