আকুতাগাওয়া রিয়োনোসুকে'এর গল্প : ঝোঁপের ভেতর


অনুবাদ: মাজহার জীবন

পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে জেরায় এক কাঠুরের জবানবন্দী:

হ্যাঁ, স্যার। অবশ্যই। আমিই সেই ব্যক্তি যে লাশটা দেখেছি। সিডার গাছ কাটার জন্য আমার দৈনিক বরাদ্দ আছে। তাই নিত্যদিনের মতো আজ সকালে জঙ্গলে যাই গাছ কাটতে। সে সময় পাহাড়ের নীচে ঝোপের ভেতর মৃতদেহটা দেখতে পাই। ঠিক কোন জায়গায়? কিয়োটোর ইয়ামাশিনা স্টেজ রোড থেকে একশ পঞ্চাশ মিটারের মতো হবে। বাঁশ আর সিডারের পরিত্যক্ত ঝোপ ওটা।  
দেহটা উপুড় হয়ে সোজাসুজি শোয়ানো ছিল। নীল ধরনের কিমানো পরা। কিয়োটো স্টাইলের কোঁকড়ানো মাথার কাপড়। বুকের ওপর তলোয়ারের একটা কাটা দাগ। দেহটার পাশে পড়ে থাকা বাঁশের গায়ে রক্ত লেগেছিল। না। তখন আর রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল না। আমার মনে হয়, ক্ষতস্থান শুকিয়ে গিয়েছিল। এর সাথে অল্প সময়ের মধ্যেই একটা ডাঁশ মাছি ওর গায়ে উঠে পড়েছে। আমার পায়ের শব্দ খেয়ালই করেনি হয়ত।

আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কোনো ছুরি বা এ জাতীয় কোনো কিছু দেখেছি কিনা?

না। কিছুই দেখিনি স্যার। কাছেই পড়ে থাকা সিডার গাছের শেকড়ে কেবল একটা দড়ি দেখেছি। আর --- । দড়ি ছাড়াও একটা চিরুনি দেখেছি। আর কিছু না। তাকে মেরে ফেলার আগে, সে যে ধ্বস্তাধস্তি করেছিল সেটা বোঝা যায়। কারণ ওখানকার আশপাশের ঘাস ও বাঁশের ঝরাপাতাগুলো মাড়ানো ছিল।

“আশপাশে খোঁড়া?”

না স্যার। যেখানে মানুষের পৌঁছানোই কঠিন সেখানে খোঁড়া যাবে কি করে!

উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার জেরায় পথ-চলতি এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর জবানবন্দী:
সময়? গতকাল বিকেলে এটা নিশ্চিত স্যার। হতভাগা লোকটা সেকিয়ামা-ইয়ামাশিনা রাস্তায় ছিল। এক মেয়েকে সাথে নিয়ে সেকিয়ামার দিকে হেঁটে যাচ্ছিল। মেয়েটা ঘোড়ার পিঠে ছিল। আমি জানতে পেরেছি, সে তার স্ত্রী। তার মাথা থেকে স্কার্ফ এমনভাবে ঝোলানো ছিল যে, মুখ দেখা যাচ্ছিল না। তাই শুধু তার পোশাকের রঙ দেখতে পেয়েছি। লাইল্যাক রঙের স্যুট। ঘোড়াটা হালকা বাদামী রঙের। সুন্দর কেশর। মেয়েটার উচ্চতা? আহ! চার ফুট পাঁচ ফুটের মতো হবে। যেহেতু আমি বৌদ্ধ ভিক্ষু, তার দিকে খুব কমই তাকিয়েছি। আর হ্যাঁ, লোকটা তলোয়ার আর তীর ধনুকে সজ্জিত ছিল। আমার এও মনে পড়ছে, কুড়িটার মতো তীর রাখা ছিল ওর তুনে।

ভাবিনি তার ভাগ্যে এই ঘটবে। মানুষের জীবন সত্যিই সকালের শিশির কিংবা বিদ্যুৎ চমকের মতই ক্ষণস্থায়ী। শুধু মুখে বলে তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা সম্ভব না।

উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার জেরায় এক পুলিশের জবানবন্দী:
আমি যাকে গ্রেফতার করেছি? যখন ওকে গ্রেফতার করি তখন ও তার ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গিয়েছিল। আওয়াতাগুচি ব্রিজের কাছে সে গোঙাচ্ছিল। সময়? গত রাতের প্রথম প্রহরের দিকে। কেবল সাক্ষ্যপ্রমাণের জন্য জানিয়ে রাখি, এর আগে আমি তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ও পালিয়ে যায়। ও একটা গাঢ় নীল রঙের কিমানো পরেছিল আর সাথে ছিল একটা লম্বা সোজা তলোয়ার। আর আপনি তো দেখছেনই সে কোথা থেকে তীর ধনুক জোগাড় করেছিল। আপনি বলছেন এই ধনুক আর তীরগুলো মৃত লোকটার ধনুক ও তীরের মতো? তাহলে তো তাজমারো অবশ্যই একজন খুনী। আমার বিশ্বাস চামড়া-মোড়ানো তীর, কালো বার্নিশের তুনীর আর বাজপাখীর পালক লাগানো সতেরটা তীর - সবই ওর ছিল। ঠিকই বলেছেন স্যার, বাদামী রঙের ঘোড়াটির সুন্দর কেশর। পাথরের সেতুর কাছে রাস্তার পাশে লম্বা লাগাম দেয়া ঘোড়াটাকে ঘাস খেতে দেখেছি। আমার দূরদৃষ্টিতে দেখতে পাই, ঘোড়াটা তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল।

কিয়োটোর আশেপাশে যত সুযোগসন্ধানী ডাকাত আছে তাদের মধ্যে তাজোমারো এ শহরের নারীদের সবচেয়ে বেশি উত্যক্ত করেছে।

গত শরতে তোরিবে পাহাড়ের টেম্পেলের পিন্দোরার পেছন দিক থেকে পাহাড়ের এই দিকটাতে এক নারী এসেছিল। মনে হয় বেড়াতে। একটা মেয়ের সাথে খুন হয় সে। এই খুন সেই করেছিল বলে সন্দেহ করা হয়। যদি সে অপরাধীই লোকটাকে খুন করে, তবে তার স্ত্রীর সাথে লোকটা কি করেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আশা করি এই বিষয়টা আপনার নজর এড়াবে না।

উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার জেরায় এক বৃদ্ধার জবানবন্দী:
হ্যাঁ স্যার, ঐ পড়ে থাকা মৃতদেহটাই সেই ছেলে যে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছিল। ও কিয়োটো থেকে আসেনি। ও ওয়াকাশা রাজ্যের কোকুফা শহরের একজন সামুরাই। ওর নাম কানাজাওয়া নো তাকেহিকো। বয়স ছাব্বিশ বছর হবে। ভদ্রসদ্র ছেলে একটা। আমি নিশ্চিত যে, সে এমন কিছু করেনি যাতে অন্যের রাগের উদ্রেগ হয়।

আমার মেয়ে? ওর নাম মাসাজো। বয়স উনিশ। ও এক উদ্দীপ্ত প্রাণোচ্ছল মেয়ে। মজা করতে পছন্দ করে। তবে আমি নিশ্চিত যে, ও তাকেহিতোকে ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে চেনে না। ওর ছোট্র গোলাকার, উজ্জ্বল মুখমণ্ডল। বাম চোখের কোণে একটা তিল আছে।

গতকাল তাকেহিকো ওয়াসাকা যাওয়ার জন্য আমার মেয়ের সাথে রওনা দিয়েছিল। কে জানতো এমন খারাপ পরিণতি আর দুর্ভাগ্য অপেক্ষা করছিল! এখন আমার মেয়ের কী হবে? আমার জামাই যেহেতু মারা গেছে, আমি তাকে পরিত্যাগ করতে পারি কিন্তু আমার মেয়ের ভবিষ্যতের চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। ঈশ্বরের কসম মেয়েকে খুঁজে পেতে আমি কোনোকিছুই বাদ রাখিনি। আমি ঐ ডাকাত তাজোমারা বা যে নামই হোক তাকে ঘৃণা করি। শুধু আমার জামাই না, আমার মেয়ে ----- (তার শেষের দিকের শব্দগুলো কান্নায় মিশে যায়।)

তাজোমারোর স্বীকারোক্তি:
আমি লোকটাকে মেরেছি। মেয়েটাকে না। মেয়েটা কোথায়? আমি জানি না। এই শুনুন, একটু দাঁড়ান। যা আমি জানি না তা আমার মুখ থেকে কোনোভাবেই বেরুবে না। যতই নির্যাতন করুন না কেন। এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে, কোনো কিছুই আপনার কাছে গোপন করবো না।

গতকাল বিকেল সামান্য গড়িয়ে গেলে আমার সাথে ঐ দম্পত্তির দেখা হয়। ঠিক তখনই একটা পলকা হাওয়া বয়ে যায়। ফলে মেয়েটোর ঝুলন্ত স্কার্ফ ওঠে যায় উপরে। আমি এক মুহূর্ত তার মুখ দেখতে পাই। সাথে সাথেই আবার তার মুখ ঢাকা পড়ে। মনে হয় এর কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছিল। তাকে একজন বোধিসত্ত্বার মতো দেখাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি ওকে আমার চাই - এমনকি ওর স্বামীকে হত্যা করে হলেও। কেন? আপনি যেভাবে ভাবছেন মানুষ হত্যা বড়সড় ব্যাপার। আমার কাছে বিষয়টা মোটেও তা না। একজন নারীকে যখন নিজের করে নিতে হয় তখন তার পুরুষটিকে কোনো না কোনোভাবে মেরে ফেলতেই হয়। মেরে ফেলার সময় আমার কাছে থাকা এই ছুরি দিয়ে তাকে আঘাত করি। আমিই কি একমাত্র ব্যক্তি যে মানুষ হত্যা করি? আপনি, আপনিও তো আপনার ছুরি ব্যবহার করেন। আপনারা আপনাদের ক্ষমতা দিয়ে মানুষ হত্যা করেন। কখনো কখনো আপনি হত্যাকারীর মঙ্গলের নামে তাকে হত্যা করেন। এটা সত্য যে, তারা রক্তাক্ত হয় না। সুস্থ শরীরের মানুষ তারা। কিন্তু তারপরও একইভাবে তাদের খুন করেন আপনারা। এটা বলা মুস্কিল কে মহৎ - পাপী, আপনারা না আমি! (বক্র হাসি)

তবে ভাল হতো যদি আমি তার পুরুষটিকে না হত্যা করে তাকে নিজের করে নিতে পারতাম। আমি তার ইজ্জত লুট করার সিদ্ধান্ত নিই আর চেষ্টা করি যাতে তার পুরুষটিকে হত্যা করা না লাগে। কিন্তু ইয়ামাশিমা স্টেজ রোডে এমনতর ঘটনা ঘটানো অসম্ভব। তাই দম্পত্তিকে পাহাড়ে যেতে প্রলুব্ধ করি।

ব্যাপারটা খুব সহজ ছিল। আমি প্রথমে ওদের সঙ্গী বনে যাই। তাদের বলি পাহাড়ের ঐখানে একটা পুরাতন গুপ্তধনের টিলা আছে। আমি ওটা খুঁড়েছি। ওর মধ্যে অনেক আয়না আর তলোয়ার পাওয়া গেছে। আমি ওদের বললাম, পাহাড়ের পেছনে একটা ঝোপের মধ্যে ওগুলো পুঁতে রেখেছি। আরো বললাম, যে কিনতে আগ্রহী হবে তার কাছে আমি ওগুলো অল্প টাকায় বিক্রি করে দেবো। আর তারপর ---- আপনিই বলেন তাদের লোভ কি ভয়াবহ ছিল না? পুরুষটি না বুঝেই আমার কথা শুনে আমার পিছু নিল। আধ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে তারা আমার কথায় পাহাড়ের দিকে আমার সাথে ঘোড়ায় চড়ে রওনা দিল।

ছেলেটা ঝোপের কাছাকাছি এলে, আমি তাদের বললাম, গুপ্তধনগুলো এখানে পুতে রাখা আছে। তাদের এসে দেখতে বললাম। ছেলেটা কোন আপত্তিই করলো না - সে লোভে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটি বলল, সে ঘোড়ার পিঠে অপেক্ষা করবে। ঘন ঝোপ দেখে এটা বলাই তার জন্য স্বাভাবিক। সত্যি বলতে কি, আমার পরিকল্পনা কাজ করতে শুরু করে যেমনটি আমি চেয়েছিলাম। আর তাই মেয়েটিকে একা রেখে আমি ছেলেটার সাথে ঝোপের দিকে এগিয়ে গেলাম।

ঝোপটা সামান্য দূরে। বাঁশ ঝাড়। পঞ্চাশ গজের মধ্যে বরং ছিল সিডারের ঝাড়। আমার উদ্দেশ্য হাসিলের এটাই উপযুক্ত জায়গা। ঝোপের দিকে এগুতে এগুতে আমি একটা বিশ্বাসযোগ্য মিথ্যা কথা বললাম - সেটা হলো গুপ্তধনগুলো সেডারের নিচে পুঁতে রাখা আছে। আমি যখন তাকে এটা বললাম, তখন সে কষ্ট করে, সরু সিডার ঝাড় দেখা যায় সেদিকে ঝোপের মধ্যে এগুতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর বাঁশ ঝাড়ের ঘনত্ব কমে গেল। তারপর আমরা এমন এক জায়গায় পৌঁছালাম যেখানে কতকগুলো সিডার লাইন ধরে নতুন করে গজাচ্ছে। আমরা ওখানে পৌঁছানোর পর ওকে আমি পেছন দিক থেকে ধরে ফেললাম। ও একজন প্রশিক্ষিত তলোয়ার যোদ্ধা। যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু আকস্মিকতার বিহ্বলতায় সে কিছু করতে পারলো না। তাকে সাহায্য করারও কেউ ছিল না। তাকে দ্রুত একটা সিডারের শেকড়ের সাথে বেঁধে ফেললাম। দড়ি কোথায় পেলাম? খোদা ভরসা, ডাকাত হওয়ার কারণে আমার কাছে দড়ি ছিল যেন যে কোন সময় আমি প্রাচীর টপকাতে পারি। বাঁশের শুকনো পাতা ওর মুখে পুরে সহজেই ওর মুখ বন্ধ করি যাতে ও চিৎকার করতে না পারে।

আমি তাকে নিঃশেষ করে মেয়েটার কাছে গিয়ে তাকে আসতে বললাম এই বলে যে ছেলেটা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমার এ পরিকল্পনাও সুন্দরভাবে কাজে লাগলো। মেয়েটি ঘাস দিয়ে বানানো তার হ্যাট খুলে ঘন ঝোপের দিকে চলে এলো। আমি তার হাত ধরে সেখানে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। সে তার স্বামীকে দেখেই সাথে সাথে একটা ছোট ছুরি বের করলো। আমি এরকম উগ্র মেজাজের মেয়ে জীবনেও দেখিনি। আমি যদি প্রস্তুত না থাকতাম, তাহলে হয়তো আমাকে ও ছুরি দিয়ে আঘাত করতো। আমি কৌশলে দ্রুত পাশ কাটালাম। কিন্তু তারপরও ও আমাকে চড় মারতে থাকলো। ও আমাকে মারাত্মক জখম কিংবা মেরেও ফেলতে পারতো। কিন্তু আমি তোজামারু। আমার নিজেরটা বের না করেও ওর হাত থেকে ছুরিটা কেড়ে নিতে সক্ষম হই। কোনো অস্ত্র ছাড়া একজন ক্ষিপ্র নারী অসহায় হয়ে পড়ে। অন্তত আমি আমার ইচ্ছে পুরণ করতে পারতাম তার স্বামীকে হত্যা না করেই।

হ্যাঁ --- ওকে হত্যা না করেই। ওকে মেরে ফেলা আমার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমি ঝোপটা থেকে প্রায় দৌড়ে পালাবার উপক্রম করলাম; মেয়েটাকে কান্নারত অবস্থায় রেখেই, যখন ও আমার হাত উম্মত্তের মতো চেপে ধরছিল। ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে সে বলল, আমাকে অথবা তার স্বামীকে মরতে হবে। সে বলল, “ দুজন পুরুষ আমার ইজ্জতহানীর খবর জানার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।” সে জোর দিয়ে বলল, যে বেঁচে যাবে সে তার স্বামী হবে। তখন এক পাগলাটে ইচ্ছে জাগলো তাকে হত্যা করার। এভাবে এ কথাগুলো বলায় এটা পরিষ্কার যে, আমি আপনার চেয়ে নিষ্ঠুর মানুষ। এটার একটা কারণ ছিল। আপনি ওর মুখ দেখেননি। বিশেষ করে ঐ মুহূর্তে ওর জাজ্বল্যমান চোখ দুটো। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি ওর আগুনে পুড়ে গেলেও তাকে আমার স্ত্রী বানাবো। আমি তাকে আমার স্ত্রী বানাতে চাই--- এই একমাত্র ইচ্ছে আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকলো। এটা কেবল যৌন চাহিদা মেটানোর বিষয় না। যেমনটা হয়তো আপনি ভাবছেন। এই সময়ে আমার যৌন চাহিদা ছাড়া অন্য কোনো আকাঙক্ষা নাই-ই থাকতো তবে আমি মেয়েটাকে ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালাতে পারতাম। তাহলে ছেলেটাকে হত্যা করে আমার তলোয়ার রক্তাক্ত করতে হতো না। অন্ধকার ঝোপের মাঝে আমি যখন তার দিকে তাকালাম তখন ছেলেটাকে না হত্যা করে ঐ জায়গা ত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।

কিন্তু অসম সুযোগ নিয়ে আমি তাকে হত্যা করিনি। তার বাঁধন খুলে দিয়ে আমার সাথে তলোয়ার নিয়ে মোকাবেলার আহ্বান জানালাম। সিডার গাছের সাথে যে দড়ি পাওয়া গেছে, সে দড়ির বাঁধন খুলে দিলাম। রাগে উন্মত্ত হয়ে সে তার তলোয়ার বের করলো। আমি চিন্তার করার আগেই কোনো শব্দ উচ্চারণ না করেই ভয়ঙ্কর মূর্তিতে সে আমার দিকে তেড়ে আসলো। আপনাকে বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের মধ্যে মারামারিটা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল। তেইশ বার আঘাত --- সংখ্যাটা দয়া করে মনে রাখবেন। এ ব্যাপারটাই আমি অভিভূত। এ পর্যন্ত কেউ আমার সাথে পাল্লায় কুড়িটার বেশি আঘাত করতে পারেনি। (হাস্যজ্জ্বল মুখ)।

যখন ও পড়ে যায় রক্তাক্ত তলোয়ার নামিয়ে মেয়েটার দিকে ফিরলাম। কিন্তু অবাক হয়ে খেয়াল করলাম সে চলে গেছে। খুঁজতে থাকলাম কোনদিকে পালিয়েছে। সিডার গাছের ঝোপের মধ্যে তাকে খুঁজলাম। কেবল শুনতে পেলাম মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের কণ্ঠ থেকে গোঙানীর শব্দ।

আমরা যখন তলোয়ার নিয়ে মারামারি শুরু করি, সে সম্ভবত তখন ঝোপ থেকে সাহায্যের জন্য দৌড় দেয়। এটি আসলে জীবন-মৃত্যুর ব্যাপার - আমার কাছে তখন বিষয়টি এমনই মনে হলো। তাই তার তলোয়ার, তীর, ধনুক কেড়ে নিয়ে দৌড়ে পাহাড়ের রাস্তায় বের হয়ে এলাম। বের হয়ে দেখলাম ঘোড়াটা তখনও শান্ত হয়ে ঘাস খাচ্ছে। তারপরের ঘটনা আপনাকে বলার কোন মানে হয় না। কিন্তু আমি শহরে ঢোকার আগেই আমাকে তলোয়ার দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। এই হলো আমার স্বীকারোক্তি। আমি জানি, কোনো না কোনোভাবে আমার মাথা শেকল দিয়ে ঝোলানো হবে, তাই আমাকে সর্বোচ্চ শাস্তিই দিন। (সাহসী ভঙ্গি)।

শিমিজু মন্দিরে আসা এক নারীর স্বীকারোক্তি:
নীল রঙের সিল্কের কিমানো পরা লোকটা, যে জোর করে আমাকে ভোগ করার পর, আমার বেঁধে রাখা স্বামীর দিকে তাকিয়ে বক্র হাসি হাসতে থাকে। আমার স্বামী কত যে ভয় পেয়েছিল! ও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। শক্ত করে বাঁধা দড়িতে ওর শরীর কেটে যাচ্ছিল। আমি হোঁচট খেতে খেতে তার দিকে ছুটতে লাগলাম। অথবা আমি তার দিকে দৌড়াতে থাকলাম। কিন্তু লোকটা আমাকে আঘাত করে থামিয়ে দিল। ঠিক সেই মুহূর্তে আমার স্বামীর মুখে এক অবর্ণনীয় জ্যোতি দেখতে পেলাম। এমন কিছু যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না--- তার সেই চোখ মনে করে আমি এখনও শিউরে উঠি। আমার স্বামীর সেই ক্ষণস্থায়ী দৃষ্টি, যে কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারছিল না। তার হৃদয় দিয়ে সে আমাকে বলছিল। তার চোখের সেই জ্বলন্ত দৃষ্টিতে না ছিল রাগ, না ছিল দুঃখ - কোনটাই ছিল না। কেবল একটা শীতল দৃষ্টি, একটা ঘৃণার দৃষ্টি - চোরের আঘাতের চেয়ে সে দৃষ্টির আঘাত মারাত্মক ছিল। আমি নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না। অজ্ঞান হয়ে পড়লাম।

কিছু সময় পর, আমার জ্ঞান ফিরে আসে। তখন খেয়াল করলাম নীল সিল্ক পরা লোকটা উধাও হয়ে গেছে। নজরে আসলো তখনও আমার স্বামী সিডার গাছের শেকড়ের সাথে বাঁধা পড়ে আছে। কষ্টেশিষ্টে ধারালো বাঁশের ভেতর থেকে উঠে দাঁড়ালাম। ওর মুখের দিকে তাকালাম। কিন্তু মুখের প্রকাশভঙ্গি আগের মতনই দেখলাম।

তার চোখের শীতল ঘৃণার পেছনে ক্রোধও লুকানো ছিল। লজ্জা, বেদনা, ক্রোধ - আমি বলে বোঝাতে পারবো না আমার অবস্থা তখন কেমন ছিল। টলতে টলতে আমার স্বামীর কাছে পৌঁছালাম।

“তাকেজিরো” আমি তাকে বললাম, “ যেহেতু এ রকম একটা ঘটনা ঘটে গেল - তোমার সাথে আমি আর থাকতে পারি না। মারা যেতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, --- কিন্তু তোমাকেও মরতে হবে। তুমি আমার অপমান তুমি নিজ চোখে দেখেছ। তোমাকে আমি এভাবে বেঁচে থাকতে দিতে পারি না।”

এই হলো ঘটনা, যা আমি আপনাদের বলতে পারি। ও তখনও ঘৃণা আর অবজ্ঞা নিয়ে আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। আমার হৃদয় খান খান হয়ে যাচ্ছিল। ওর তলোয়ারটার খোঁজ করলাম। তবে নিশ্চিত যে ওটা ডাকাতটা নিয়ে গেছে। তলোয়ার, তীর আর ধনুক - কোনোটাই ঝোপের ভেতর খুঁজে পেলাম না। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমার পায়ের কাছে আমার ছোট ছুরিটা পড়ে থাকতে দেখলাম। ওটাকে আমার মাথার উপর তুলে ধরে আমি আবার বললাম, “এবার তোমার জীবন দাও। আমিও তোমাকে অনুসরণ করবো।”

এ কথা শুনে কষ্ট করে ওর ঠোঁট নাড়ালো। যেহেতু ওর মুখ পাতা দিয়ে ভরা ছিল, তাই মুখ থেকে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছিল না। কিন্তু পরক্ষণেই আমি তার কথা বুঝতে পারলাম। আমাকে ঘৃণার চোখে দেখে তার দৃষ্টি কেবল বলল, “ আমাকে হত্যা করো।” চেতনও না অবচেতনও না - এরকম এক অবস্থায় লাইলাক রঙের কিমানো ভেদ করে আমার ছোট্ট ছুরিটা তার বুকে চালাতে লাগলাম।

এমন সময় আমি আবার জ্ঞান হারালাম। এর মাঝে বুঝে উঠতে পারি যে, ও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। তখনও ও বাঁধা অবস্থায়। পড়ন্ত সূর্যের আলোর রেখা সেডার আর বাঁশঝাড়ের মধ্যে আসছিল। তাতে ওর পাণ্ডুর মুখায়াবব দেখা যাচ্ছিল। আমার ফোঁপানো কান্না থামিয়ে মৃতদেহটার শরীর থেকে দড়ি খুলে ফেললাম। আর -- আর আমার কি অবস্থা হলো তা আপনাদের বোঝানোর শক্তি আমার নাই। আমার নিজের মরার মতো শক্তিও তখন আর নাই। ছোট ছুরিটা দিয়ে আমার গলায় চালাতে লাগলাম। পাহাড়ের তলায় একটা পুকুরে ঝাপ দিলাম। এভাবেই আমি বারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করলাম। নিজের জীবন শেষ করতে না পেরে, আমি এখনো এই অসম্মান নিয়ে বেঁচে আছি। (একাকী হাসি) আমি এক অপদার্থ। ক্ষমার দেবী কাউনুন আমাকে কোনোদিনই ক্ষমা করবে না। আমার স্বামীকে আমি হত্যা করেছি। আমি ডাকাত দ্বারা ধর্ষিত হয়েছি। আমার আর কি করার আছে? আমার আর কি --- আমার --- (আস্তে আস্তে ফোঁপাতে থাকে)।

এক মিডিয়ামে কথা বলা নিহত ব্যক্তির গল্প:
আমার স্ত্রীর ইজ্জত হরণের পর ডাকাতটা ওখানে বসে তাকে সান্ত্বনার বাণী শোনাতে থাকে। আমি অবশ্য কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। আমার সারা শরীর সিডার গাছের শেকড়ের সাথে বাঁধা ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই আমি তাকে ইশারা দিয়ে অনেকবার বলার চেষ্টা করি, “ডাকাতটাকে বিশ্বাস করো না।” আমি এ ধরনের কথা তাকে বলতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার স্ত্রী বিধ্বস্থ হয়ে বাঁশের পাতার উপর বসে ছিল। আর তার কোলের দিকে তাকিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, সে ডাকাতটার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। আমি হিংসায় মরে যাচ্ছিলাম। এরই মাঝে ডাকাতটা চতুর বাক্যালাপ চালিয়ে যাচ্ছিল। এক বিষয় থেকে আরেক বিষয়ে কথা বলছিল। ডাকাতটা তার দীপ্ত এবং ভয়ঙ্কর প্রস্তাবটা দিয়ে ফেলল, “একবার যেহেতু তোমার ইজ্জত খোয়া গেছে, তুমি তোমার স্বামীর সাথে আর সুখী হতে পারবে না। তাহলে আমার স্ত্রী হওয়াই কি তোমার উচিত না? তোমার প্রতি আমার ভালবাসাই তোমাকে বিক্ষত করতে আমাকে প্রলুব্ধ করেছে। ”

শয়তানটা যখন কথা বলছিল আমার স্ত্রী হতবিহ্বল হয়ে তার মুখ তুলল। তাকে ঐ মুহূর্তের মতো সুন্দরী আগে কখনই দেখা যায়নি। আমি তখন দড়িতে বাঁধা অবস্থায়। আমার সুন্দরী স্ত্রী কি উত্তর করলো? আমি যখন সর্বস্বান্ত। সে এমন একটা উত্তর করবে আমি তা চিন্তাও করিনি। আমি ক্রোধ আর হিংসায় জর্জরিত না হয়ে থাকতে পারলাম না। সে সত্যি সত্যি বলল, “ তাহলে তোমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে তুমি আমাকে নিয়ে চলো।”

এটাই তার পাপের শেষ না। এখানেই যদি বিষয়টা শেষ হয়ে যেত তবে আমি অন্ধকারে এতটা কাতরাতাম না। যেন স্বপ্নের মতো যখন সে ঝোপ থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল তখন তার হাত ডাকাতের হাতে। সে হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে গেল এবং সিডার গাছের শেকড়ে বাঁধা আমাকে দেখিয়ে বলল, “ ওকে হত্যা করো! ও যতক্ষণ বেঁচে থাকবে আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।” “ওকে হত্যা করো” বলে ও কাঁদতে লাগলো। মনে হলো ও যেন পাগল হয়ে গেছে। তার সীমাহীন অন্ধকার হঠকারী কথাগুলো এখনও আমাকে ভয়ে তাড়িত করে। এ ধরনের ঘৃণার ঘটনা কি কখনো কোনো মানুষের মুখ থেকে বের হয়েছে? এ ধরনের অভিশপ্ত শব্দ কি এর আগে মানুষ উচ্চারণ করেছে - অন্তত একবারের জন্য হলেও? (হঠাৎ ঘৃণা সহ ভয়ের কান্না) এই কথা শুনে ডাকাতটা নিজেই তাজ্জব বনে গেল। ডাকাতটার হাত শক্ত করে ধরে “ওকে মেরে ফেল” বলে কাঁদতে লাগলো। তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে ডাকাতটা হ্যাঁ বা না কিছুই উত্তর করলো না। --- তার প্রতি উত্তর পাওয়ার আগেই সে আমার স্ত্রীকে আঘাত করে বাঁশের পাতার উপর ফেলে দিল। (আবার ঘৃণাভরে কাঁদতে লাগলো) শান্ত হয়ে হাত জোড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ডাকাতটা বলল, “ ওর সাথে থেকে আপনি কি করবেন? ওকে মারবো না বাঁচাবো? আপনি শুধু মাথা নাড়তে পারবেন। মেরে ফেলবো?” শুধু এই কথার কারণেই আমি ডাকাতটার অপরাধ ক্ষমা করে দিতে চাই।

যখন আমি ইতস্তত করছিলাম, আমার স্ত্রী তড়িঘড়ি উঠে ঝোপের গভীরে দৌড় দিল। ডাকাতটা সাথে সাথে তাকে ধরতে গেল। কিন্তু সে তার জামাটা ধরে আটকে রাখতে পারলো না।

আমার স্ত্রী দৌড়ে পালিয়ে যাবার পর, সে আমার তলোয়ার, তীর ও ধনুক হাতে তুলে নিল। এক কোপে সে আমার একটা বাঁধন কেটে দিল। তার অস্পষ্ট কথাগুলো আমার এখনো মনে আছে, “এরপর আমার ভাগ্য”। এরপর সে ঝোপের ভেতর মিলিয়ে গেল। তারপর সর্বব্যাপী এক নীরবতা। না, আমি শুনতে পেলাম কেউ কাঁদছে। আমার শরীরের অন্য বাঁধনগুলো খুলে ফেলে আমি মনোযোগ দিয়ে কান পেতে শুনলাম। আমি বুঝলাম ওটা ছিল আমার নিজেরই কান্না। (দীর্ঘ নীরবতা)

আমার শ্রান্ত শরীর সিডার গাছের শেকড় থেকে তুললাম। সামনে দেখলাম ছোট একটা ছুরি জ্বলজ্বল করছে। ছুরিটা আমার স্ত্রী ফেলে রেখে গিয়েছিল। আমি ওটা তুলে নিলাম আর তা দিয়ে আমার বুকে আঘাত করতে লাগলাম। আমার মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। কিন্তু কোন ব্যথা অনুভব করলাম না। আমার বুক ঠান্ডা হয়ে আসছিল। সবকিছু যেন মৃত মানুষের কবরের মতো নীরবতা। কি বিশাল নিস্তব্ধতা। একটা পাখির ডাকও তখন আকাশে শোনা যাচ্ছিল না। পাহাড়ের গভীরের এই কবরস্থানে কেবল নিঃসঙ্গ একটা আলো পড়ছিল পাহাড় আর সিডারের ওপর। আস্তে আস্তে আলো ফিকে হয়ে আসছিল। একসময় সিডার আর বাঁশগুলো দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল। গভীর নিস্তব্ধতার মাঝে আমি ডুবে গেলাম।

তারপর কেউ হামাগুড়ি দিয়ে আমার কাছে এগুতে থাকলো। ব্যক্তিটাকে দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু অন্ধকার আমাকে ইতোমধ্যে ঘিরে ফেলেছে। কেউ --- কেউ তার অদৃশ্য হাত দিয়ে আমার বুক থেকে আলতো করে ছোট ছুরিটা বের করে আনলো। সেই সাথে আমার বুক থেকে আরেক দফা রক্ত বের হতে থাকলো। এবং আমি, এবং আমি অন্ধকারে ডুবে গেলাম।
--------------

 
লেখক পরিচিতি:
আকুতাগাওয়া রাইউনোসুকে (১৮৯২-১৯২৭) এর জন্ম টোকিওতে মধ্যবিত্ত পরিবারে। টোকিও ইমপেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশুনা করেছেন। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন। তাকে জাপানী ছোটগল্পের জনক হিসেবে গণ্য করা হয়। তার নামে জাপানের সাহিত্য পুরস্কার আকুতাগাওয়া প্রদান করা হয়। গল্পটিতে একই পয়েন্ট অব ভিউ থেকে নানাজন নানাভাবে একই ঘটনার বর্ণনা করেছে কিন্তু কোনটা সঠিক তা বোঝা যাচ্ছে না। জাপানী পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া এই গল্প অবলম্বনে তাঁর বিখ্যাত চলচ্চিত্র “রশোমন” নির্মাণ করেন। জাপানী ভাষা থেকে গল্পটা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন তাকাশি কোজিমা।


 

 
অনুবাদক পরিচিতি: 
মাজহার জীবন
সম্পাদক লেখালেখির উঠান সাহিত্যপত্রিকা(www.uthon.com)। 
অনুবাদ: হাওয়ার্ড জিনের নাটক এমা এবং কবিতার বই আমিরি বারাকা'র কেউ আমেরিকা উড়িয়ে দিয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ