রাজসিক মিত্র'র গল্প : আরশোলা


অনুবাদ : প্রতিভা সরকার

০১৯, ভোর রাত ৩টে ছেচল্লিশ। এই সময়ই আরশোলাটা প্রাত্যহিক অভ্যেসে আলো নেভানোর সঙ্গে সঙ্গে ফাটল থেকে বেরিয়ে আসে। প্রথমে কেউ খেয়াল করে না, তারপর রোজ রাতে ঐ একই জায়গায় বসে থাকায় হঠাৎ করে আমার নজরে পড়ে যায়। একটা বুড়ো আরশোলা, যেন যুগ যুগ ধরে স্থির অপেক্ষায় আছে নিশ্চিত কিছু ঘটবে বলে, কিন্তু ঘটনাটা ঘটে না। ও বুড়ো হয়েই যাচ্ছে। অথর্ব হয়েই যাচ্ছে। ওর শুঁড়গুলো খুব ধীরে নড়ে ওঠে, যেন মাথার ওপরের বাতাস সাপটে নিতে চায়।
******************
২০০৯ সালের আগস্ট মাস। ভোর ৫ টা। পাকা হলুদ রঙের রোদ তেরছা হয়ে ফুটপাতে পড়েছে। বাতাসে ভেজা ঘাস আর মাটির ঘ্রাণ, আর এখনই থেমেছে যে বৃষ্টি, তার সোঁদা গন্ধ! আমি কোনোখান থেকে বাবার সঙ্গে ফিরছিলাম। বাবার মুঠিতে আমার হাত ধরা, বাবা আমাকে বলছিল, "দ্যাখ নীল, সোনালি রঙের ডোরাকা্টা যেন সারা ফুটপাথটায়, তাই না রে!" আমি দেখলাম ঘুরে, তার আগে এইসব চিন্তা করিনি কখনও, বাবার কথা শুধু কানে আসছিল, "আমি যখন ছোট ছিলাম, তোর ঠাম্মা আমায় খালি বলত, আমি বাবা মরতে চাই না। পৃথিবীটা এতো সুন্দর, ছেড়ে চলে যেতে বুক ফেটে যাবে রে!"

অথচ এখন এই ভোর ৫টা ০৬ এ আমি কেবল মৃত্যুর কথাই ভাবছিলাম। এই প্রথম এইরকম ভাবনা আমাকে একেবারে গ্রাস করে নিল।

**************************
কয়েক মাস পরে আমাদের বসার ঘরের কোণায় বসে নানি নিঃশব্দে কাঁদছিল। বলতে গেলে এই নানির কাছেই আমি ছোটবেলা থেকে বড় হচ্ছি। নানির ভাই মারা গেছে। এই ভাই চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের মা-কে দেখেছে ,তার কথা শুনেছে, এমন কেউ আর পৃথিবীতে রইল না, এটাই নানির বড় দুঃখ। কারণ মরার সময় মা নানিকেই বলে গিয়েছিল ভাইকে দেখতে।

আমাদের বসার ঘরটা এমনিতেই আলো আঁধারি। না আলো না অন্ধকার মতো, দিনের আলো তেমন করে ঢোকে না। সেদিন ঘরের আলোও নেভানো ছিল। নানি কেঁদেই যাচ্ছিল। আমি জানি যে নানি লিখতে পড়তে পারে না, তাই সামনে পড়ে থাকা টেক্সট বইটা তুলে নিয়ে সামান্য আলোয় আমি তাকে পড়ে শোনাতে লাগলাম,”যা কিছু জন্ম গ্রহণ করে, তাইই দিনে দিনে বৃদ্ধি পায় এবং শেষে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।”

এইসময় আবার মা হঠাৎ আমায় ডাকল, আমি যেতে যেতে দেখলাম, নানি তখনও কেঁদেই চলেছে।

সেদিনই অপরাহ্ন বেলায় নানি আমাকে নিয়ে পার্কে যাচ্ছিল, যেতে যেতে হঠাৎ বলল,”আমার মেয়েটা বড় গরীব রে !” আমি তো অবাক, মীনাপিসি গরীব !

”হ্যাঁ রে বাছা, নাহলে কী আর আমি, ওর মা, অন্য বাড়িতে কাজ করি!”

পুলিশ থানার পাশে যখন আমরা, তখনও নানি বকবক করেই যাচ্ছিল, “দেখিস একদিন তোর মীনাপিসি একটা বাস কিনবে। সেটা ভাড়া দিয়ে আমাদের দিব্যি চলে যাবে। ঠাকুরের ইচ্ছে হলে, সবকিছু ঠিক থাকলে আমাকে আর ও খাটতে দেবে না, এখান থেকে নিয়ে যাবে। আঙুলও ওঠাতে হবে না আমাকে।” নানি এবার একটু হাসেও।

অনেকদূর চলে এসেছিলাম আমরা। রাস্তা সাজাবার মাটির মূর্তিগুলির পাশ দিয়ে যাবার সময় কে যেন কেশে উঠল। নানির অবশ্য সেদিকে মন ছিল না, সে বলেই যাচ্ছিল, “কালিপদ এইভাবে ফাঁকি দিল ! আমার মা বলেছিল খুকি, ভাইটাকে দেখিস, আমি না থাকলে ওর যত্ন নিস। ইসস, মীনাটারও যদি একটা ঠিকঠাক বিয়ে দিতে পারতাম !”

আমি দেখি সামনে রাস্তায় ভাঙা গর্তে জল জমে আছে। আমার খুব ইচ্ছে হয় অল্প একটু লাফঝাঁপ করি জলের মধ্যে। নানির কাছে আবদার করতেই সে বলে, “বেশ তো, লাফা একটু। ও তো বৃষ্টির জল, বৃষ্টির জল হচ্ছে সবচেয়ে পরিষ্কার, কারণ তা আকাশ থেকে পড়ে। মা যদি তোকে বকতে যায়, আমি বুঝিয়ে বলব 'খন।”

পরের বছর সে কী বৃষ্টি ! সবাই বলাবলি করছিল, এবারও না ১৯৭৮ এর মতো শহরে কোমর অব্দি জল দাঁড়িয়ে যায় ! জুলাইয়ের একটা সকালে ঘুম ভেঙে শুনতে পেলাম পাশের ঘরে কথা কাটাকাটি চলছে পুরোদমে, আর জানালার বাইরে তুমুল বৃষ্টি, যেন ব্রডকাস্টের কথা ছাপিয়ে রেডিও-র ঘরঘরানি। খাটের নিচে কুলকুল আওয়াজে জল বয়ে যাচ্ছিল, নর্দমা-ছাপানো জল, প্রত্যেক মূহুর্তেই যা একটু একটু করে ওপরে উঠে আসছিল। আবার শুরু হয়েছে মা বাবার গলা তুলে ঝগড়া করা। বেলা পড়ে এলে আমি জানালায় বসে দেখি বৃষ্টি ধরেছে ,জমা জলও এখন যেন শান্ত। রাতের কালো বাক্সে বন্দী হবে বলে পথ হারানো এক টুকরো হলদে রোদ পাঁশুটে জলের ওপর চুপ করে বসে আছে। আর তার জীবন্ত কাঁপা কাঁপা প্রতিফলন আমার মাথার ওপরের সিলিং-এর কিছুটা কালো অংশকে দুধসাদা করে রেখেছে। এই এপার্টমেন্টের সিলিংগুলো খুব উঁচু বলে আমার বাবার খুব গর্ব। বাচ্চা ছিলাম যখন, আমারও মনে হতো সিলিং যেন মহাবিশ্বকেও ছুঁয়ে ফেলেছে। এখন ঐ কাঁপতে থাকা সাদা আলোর প্রতিফলনে না জানি কত লক্ষ আত্মা বন্দী হয়ে আছে ! এই পৃথিবীর দেশকালের মাত্রায় এবং মহাজাগতিক অন্ধকারে টলমল করা এক বিন্দু অশ্রু যেন ! আমি তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতাম ঐ জ্যান্ত নড়তে চড়তে থাকা প্রতিফলনের টুকরোটির মধ্যে আর একটা পৃথিবী, অন্য কোনো জীবনের অসংখ্য কণা লুকিয়ে আছে কিনা ! আমি যেন একটা গভীর রহস্যের আঁচ পেতাম। পেছনে রেডিও থেকে অন্য আওয়াজের সঙ্গে মিশে আমার বোনের প্রিয় গানের সুর ভেসে আসত। জল না নামলে বিদ্যুৎ আসবে না এইটা জেনে আমার বোনটা হাতে কাজ করতে করতে রেডিওর গানের সঙ্গে গুনগুন করে যেত। যে কাজ্টা করত, সেটাও তেমন কিছু না, জাতীয় ক্রিকেট টিমের বিখ্যাত ক্যাপ্টেনের সম্বন্ধে তথ্য ধার করে আনা ম্যাগাজিন থেকে ডায়েরিতে টুকে রাখা।

অনেক বছর বাদে একদিন আমি আর আমার বোন ঠিক এইভাবেই অবিশ্রান্ত বৃষ্টির মধ্যে জানালার ধারে বসে ছিলাম, বোনটাও সেই একই ডায়েরির দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে ছিল,আর আমার ভগ্নীপতি জানালার বাইরে আলো ছায়ার করিডরে একটুও না থেমে সমানে পায়চারি করে যাচ্ছিল, কারণ বোনের পেটের যমজ বাচ্চার মধ্যে একটির হৃৎস্পন্দন আচমকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

*********************************************
দুদিন পরেও যখন জল নামল না, জমা জল থেকে দুর্গন্ধ বেরতে লাগলো। বাবা মায়ের চোখের আড়ালে একটা লাঠি হাতে আমি জমা জলে ঝপঝপ করতে করতে নেমে গেলাম। আমাকেই মেঘেদের সঙ্গে লড়াই করতে হবে, কারণ দেবতারা আর তাদের চ্যালাচামুন্ডারা লড়াইটা লড়তে পারেনি, বরং নির্লজ্জের মতো মেঘেদের পরাক্রমের কাছে হার মেনে নিয়েছে। মেঘেদের বিরুদ্ধে লড়াই করবার এই অস্ত্রটা আমি দড়ি আর একটা বাঁকানো শক্ত পাইপের তৈরি ধনুকের জ্যায়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে সপাটে ছুঁড়লাম। তারপর জ্যায়ের কাঁপুনি অনুভব করতে করতে নানির জমানো একের পর এক পাটকাঠিকে তীরের মতো ছুঁড়ে দিতে লাগলাম। নানিই ছিল এই তীর ধনুকের স্রষ্টা। আমি এটা নিয়ে জানালার ধারে গেলাম, নিজের বানান মন্ত্র বিড়বিড় করতে করতে বাতাসে প্রচুর তীর ছুঁড়ে দিলাম। কোনটাই মেঘ অব্দি পৌঁছল না, কিন্তু কী করে যেন বৃষ্টিটা থেমে গেল। নিজেকে মনে হতে লাগল মস্ত বীর,মন্ত্রপূত এবং অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন। এখন ভাবলে নিজেরই হাসি পায় !

দুই

২০০৬ এর অক্টোবর মাসের ভোরবেলা। পুজোর ছুটি সবে শুরু হয়েছে। দেরিতে ঘুম ভেঙে উঠলাম, একটু হতভম্বও। মা তো বলেছিল এখন ছুটি থাকবে। তাহলে এই মস্ত ডিলাক্স বাসটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কেন! এতবড় বাস যেন বাড়িটার সমান বড় ! ওমা, তারপর শুনি মীনাপিসি তার মা-কে নিতে বাস পাঠিয়েছে, নানি নাতনির বিয়েতে যাবে ঐটা চেপে।

*************************************************

নানি চেয়েছিল যেন আমরা সবাই যাই। “শুধু তোরা বাচ্চারাও যদি যেতে পারতিস”,

মা রান্না করতে করতে গম্ভীর মুখে বলল, “চটি পরে বাড়ি থেকে বেরোবার সময়ও তোর নানি যাবার কথা বলছিল বার বার।”

“তা হলে আমরা যাচ্ছি না কেন ,মা?” আমি শুধোই। মা প্যানে খানিকটা জল ঢেলে দেয়,তারপর বলে, “না,সেটা ভালো দেখাত না। তাছাড়া ছুটিতে হোম ওয়ার্ক নেই তোদের ! যা শিগগির গিয়ে পড়তে বোস।”

নানি ফিরে এলে আমি আমার নতুন এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে ওকে অনেক ছবি দেখালাম। মঙ্গল গ্রহের পিঠ, চাঁদের গর্ত, কিন্তু নানি একটাও সত্যি বলে মনে করেনি। মঙ্গল তো একজন দেবতা,আর চাঁদ তো চাঁদই,তার আবার পৃষ্ঠদেশ কী ! আমি কী করে নানিকে বিশ্বাস করাব ভেবে পাচ্ছিলাম না। নানি খালি হাসছিল আর বলছিল,”নীল,তোর কী কোনো কাজ নেই রে ! আমার কাজের সময় এসে এসে খালি বিরক্ত করিস !”

সে রাতে ঘুমোতে যাবার আগে অন্যমনস্ক হয়ে মা-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নানির ভাই কিভাবে মারা গেল ? ওর নাকি ফুসফুসের অসুখ ধরে গিয়েছিল, গম পেষাই কলে দিন রাত কাজ করতে করতে। মরার আগে অব্দি বড় বোনের খবর নেবার জন্য নাকি প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসত, নানির দেওয়া অল্পসল্প খাবার খেয়ে, যৎসামান্য টাকাকড়ি যা দিত ট্যাঁকে গুঁজে চলে যেত। বিয়ে করেনি,কোনো বন্ধুও ছিল না, সকাল থেকে সন্ধে গমের তুষ ওড়াতে ওড়াতে লোকটা মরে গিয়েছিল।

আমিও তার কথা এ কান দিয়ে শুনে ও কান দিয়ে বার করে দিলাম।

এর তিন বছর পরে আমার নিজের বোনের বিয়ে হচ্ছিল। আত্মীয়স্বজন থিক থিক করছিল। ভিড়ের মধ্যে সবার মুখগুলিই কেমন যেন সুখী সুখী। প্রতিবেশিরাও আমাদের অতিথিদের জন্য ঘর ছেড়ে দিয়েছিল।বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটা উৎসব উৎসব গন্ধ! সারা বাড়িতে মীনা পিসি মেয়েকে নিয়ে চা কফি স্ন্যাক্স বিলি করে বেড়াচ্ছিল আর মনে মনে ভাবছিলাম ওর মেয়েটার ভালো বিয়ে হয়েছে তো !

নানি অন্য বাড়িতেও কাজ করত, কিন্তু আমাদের বাড়িতেই রাত কাটাত। জায়গা কম থাকায় রান্নাঘরের এক কোণে শুয়ে পড়ত। রেশন কার্ডে পাওয়া কেরোসিন নানি বিক্রি করে দিত। খুবই অল্প পয়সায় করতো,কিন্তু যাই হোক কিছু টাকা তো হাতে আসত। ভোটারকার্ড বা সরকারি কোনো পরিচয় পত্র নানির ছিল না, এমন কি আধার কার্ডের ব্যবস্থাও আমরা তার জন্য করতে পারিনি। কারণ সরকারি লোকজন পরিচিতি বলতে যা বোঝে তার কোনোটাই নানি দেখাতে পারেনি। মন তো খারাপ নিশ্চয়ই হয়েছিল,আমি চাইলাম একটু সান্ত্বনা দিতে, এইসব সরকারি গ্যাঁড়াকল শুরুর আগেও তো মানুষটা ছিল, পরেও থাকবে।

থাকার মধ্যে ছিল একটা হাসপাতালের টিকিট- কার্ড। সারাদিন হাসপাতাল ফেরত নানির কাছে ডাক্তারদের গল্প শুনতাম, মজার সব তরুণ চিকিৎসক যারা নানিকে খুঁটিয়ে দেখত, ওষুধপত্র দিত, তাদের কথা। মধ্যাহ্ন সূর্যের নিচে সাঁকো পেরিয়ে নানি হাসপাতালে যেত, আবার ফিরে আসত।

নানির অন্য বাড়িতে কাজ করা নিয়ে মা একটু বিরক্তি প্রকাশ করতে শুরু করেছিল, নানির বয়সটাও ঠিক চোদ্দো বাড়ি খেটে বেড়াবার মতো নয়, আর আমাদের নিজেদের বাড়ির কাজকর্ম এর ফলে ঠিক মতো হচ্ছিল না। অনেকটা সময়ও তো চলে গিয়েছিল, কারণ আমার বোন যখন হবে তখন নানি প্রথম আমাদের বাড়িতে আসে। মা নানিকে একাধিকবার ছাড়িয়ে দিতে চেয়েছে। মীনাপিসির ব্যবসা ভালই চলছিল, অনেকগুলো বাস ,বাড়ি এইসব কিনেছে বলে শুনছিলাম। তবুও নানির মাইনেটা নিতে মীনাপিসিই আসত,রেশন বেচার পয়সাটাও ছাড়ত না,এমনকি নাতি রবির বিয়ের জন্যও নানির কাছ থেকে কুড়িয়েবাড়িয়ে সব নিয়ে যেত মীনাপিসি। রবি কম্পিউটার জানে বলে নানির বেজায় গর্ব ছিল। রবি দাঁড়িয়ে গেলে আমাকে আর খাটতে হবে না, একটা আঙুলও তুলতে হবে না ,দেখো, নানি হাসতে হাসতে বলত।


তিন

২০১২ সালের ৭ই আগস্ট । বৃষ্টি হচ্ছিল।আমার বন্ধুরা একটা জলার ধারে একটা পছন্দমতো জায়গা খুঁজে বার করেছিল। মুশকিল হচ্ছে ওখানে প্রচুর মরা মাছ ভেসে উঠত,আর জলাটা থেকে ভয়ানক দুর্গন্ধ বেরতো। কিন্তু তা বেশিক্ষণের জন্য নয়। একবার ব্যাপারটা জমে উঠলে আর কোনো গন্ধ আমাদের নাকে ঢুকত না। নাক মুখ আর মস্তিষ্কে তখন একটাই গন্ধ, মুখে জড়ানো পলিথিন প্যাকেটের থেকে বেরিয়ে আসা অদৃশ্য ডেনড্রাইটের ঘ্রাণ ! আমরা পচা গন্ধের কথা মুহুর্তে ভুলে যেতাম। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পলিথিন প্যাকেটটা একবার ফুলে উঠে, আবার চুপসে গিয়ে আমার ফুসফুসের ধকধক নকল করতে শুরু করে দিত। আমি বুঝতাম প্রত্যেক নিঃশ্বাসে আমার শরীর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিউরন দশ হাজার করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ, লোকে তো তাই বলে, এক টান দিলেই নাকি দশ হাজার নিউরনের ধ্বংস অনিবার্য !

—----------------------

ডেনড্রাইট হচ্ছে নিউরনের অংশ বিশেষ যা অন্য কোষ থেকে সংকেত বহন করে নিয়ে যায়। আবার একটা কেমিক্যাল আঠার নামও ডেনড্রাইট। হায়ার সেকেন্ডারি শুরু হবার পর আমি নতুন নতুন বন্ধু করতে শুরু করলাম, স্কুল পালানো শুরু হল, এবং এই আঠার ওপর আমার বিশেষ টানও খুব বেড়ে উঠল। রোজ ক্লাস পালিয়ে আমি আঠা শুঁকতাম। জামাইবাবু কথা বলা বন্ধ করে দিল, আমার আঠারো বছরের জন্মদিনে আমি মা আর বোনকে কাঁদতে দেখলাম। নানা রকম অদ্ভুত স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন যেন আমার ঘুমের মধ্যে হানা দিচ্ছিল, কখনো তারা ভরে ছিল গানপাগল উন্মত্ত জনতার অর্থহীন কোলাহলে, কখনো কালো পোশাকের পিঙ্ক ফ্লয়েড-ভক্তদের উচ্চকণ্ঠে, কখনো আফিম বমি করার কষ্টে। আমি ক্রমাগত দৃষ্টিবিভ্রমে ভুগছিলাম। কিন্তু আমার নতুন পাওয়া বন্ধুরা সব বিভ্রম ঘুঁচিয়ে দিচ্ছিল, সবকিছুর উত্তরই তাদের কাছে ছিল।

এক এপ্রিলের সকালে বাবা আমার ঘরে ঢুকে দেখল চারদিকে পলিথিন প্যাকেট ছড়িয়ে আছে, আমার বিছানায় বমির দাগ আর তার মধ্যেই আমি অঘোরে ঘুমোচ্ছি। বিকেলের দিকে কোনমতে মাথা তুলে দেখি নানি সব পরিষ্কার করছে। কিন্তু একটা বিকট গন্ধ ছেয়ে আছে। এবারও বাবা এলো, এসেই ঘরের আলোটা জ্বেলে দিল।

বাবা ঐ সময়টায় চোখে ভালো দেখত না। ডাক্তার সার্জারির কথা অনেকদিন আগেই বলেছিল, কিন্তু আমার কলেজের খরচের জন্য ব্যাংকের টাকায় হাত দেয়নি বাবা, ফলে সার্জারিটাও আর হয়ে ওঠেনি। ব্যাংকের ঐ টাকাটা একটা কচ্ছপের পিঠের মতো জেগেছিল, যে পিঠের ওপর আমাদের গোটা সংসারই দাঁড়িয়ে। যদি কচ্ছপ বেশি নড়েচড়ে বা সরে যায়, আমরা টুপ করে সমুদ্রে পড়ব এবং তলিয়ে যাব।

বাবা দরজার কাছ থেকে শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করল, 'এখন কেমন লাগছে রে, নীল?'

যতই শান্ত থাকার চেষ্টা করুক, বাবার গলায় সর্বার্থে হেরে যাওয়া একটা মানুষের চূড়ান্ত ক্লান্তি লেগে ছিল।

আমি কোনো উত্তর দিইনি। ফিনাইল দিয়ে মেঝে মুছতে মুছতে নানি বলল, 'উত্তর দাও নীল। বাপ মা কিছু জিগ্যেস করলে উত্তর দিতে হয়।' আমার যে হঠাৎ কী হল, দাঁত কিড়মিড় করতে করতে আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, ' চুপ কর, বুড়ি। বাড়ির ঝি কিনা বাপ ছেলের কথার মধ্যে নাক গলাতে আসে!'

'ক্ষমা চাও, নীল', বাবার নিচু গলায় যেন গুড়গুড় বাজ ডাকছিল। আমি পাত্তা না দিয়ে বাইরে চলে গেলাম, যেতে যেতে শুনলাম নানি বলছে, 'না, ও তো ঠিকই বলেছে। বাড়ির ঝি-ই তো… '

জুলাইয়ের এক রাতে সোঁদা মাটির গন্ধ মাখা হাওয়া ঝামড়ে পড়ার আগে অব্দি কিছুই পাল্টায়নি। সে রাতে বাড়ি ফেরার সময় ঐ ভেজা মাটির গন্ধ আমার সমস্ত ঘ্রাণেন্দ্রিয়কে অধিকার করে আমার ডেনড্রাইট কোষগুলিকেও ঠেসে ভরে দিল। বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল, ঝমঝমানি প্রবলতর হতে থাকলে আমি একটা খানায় পা দিয়ে স্যান্ডাক জুতোতে ভর্তি কাদা মেখে নিলাম। কেন যেন খুব আনন্দ হল, আরেকটা জমা জলের গর্তে পা ধুতে ধুতে পুরনো দিনের মতো ভাবলাম, 'এ তো বৃষ্টির জল, এ জল সবসময়ই পরিষ্কার। '

টিভির দোকানের পাশ দিয়ে যাবার সময় টিভির বিশাল চওড়া পর্দায় প্রতিফলিত বর্ষণকে উজ্জ্বলতর হতে দেখতে পেলাম, সংবাদ পড়তে পড়তেই পরিবেশক স্ক্রিনের বাইরে ভিজতে থাকা আমাকে দেখে একগাল হেসে নিয়ে আবার সংবাদ-পাঠে মন দিল, পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া রিকশাগুলোকে মনে হতে লাগল যেন প্রাচীন কালের রথ!

বাড়িতে ঢুকে দেখি সব নিশ্চুপ। শুকনো তোয়ালে দিয়ে গা মুছতে মুছতে নানিকে হাঁক দিলাম খেতে দেবার জন্য। মা এতক্ষণ চুপ করে বসেছিল, এইবার উঠে এসে আমার হাত ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল, নানি আর কোনদিন খেতে দিতে আসবে না। একটু আগে মীনাপিসি ফোন করে জানিয়েছে আজ বিকেলেই কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়ে নানি না-ফেরার দেশে চলে গেছে।

খুব দ্রুত এসব ঘটে গেল, রান্নাঘর নতুন সাজে সেজে উঠল, মেঝে দেওয়াল সব ভোল পাল্টে ফেলল, এপার্টমেন্টটা চেনার যোগ্য রইল না। বর্ষাকালে নর্দমার উঠে আসা জল মাড়িয়ে এঘর ওঘর করতে হত বাবা মা-কে, সে ভয়ও রইল না। তারা গরম খাবার খেতে খেতে বৃষ্টির ঝমঝমানির মধ্যে টিভি দেখার মজা নিতে শিখে গেল।

অনেক রাত নির্ঘুম কাটিয়েও আমি কোনো কাজ জোটাতে পারলাম না, কেউই আমায় চাকরি দিতে রাজি ছিল না। রাতে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি বাড়িয়ে দিলাম রহস্য রোমাঞ্চের খোঁজে, শেষের সে দিন কী রকম ভয়ংকর হবে, সেই নিয়ে তথ্য খুঁজতাম, পুনর্জন্ম, কলিযুগের সমাপ্তি এইসব নিয়ে অচেনা অজানা লোকের সঙ্গে আলাপ জমাতাম।

আমার কালচে পর্দা টানা অন্ধকার ঘরে এল,ই।ডি-র আলোতে আমার বন্ধুর গান রেকর্ডিং হচ্ছিল, সাদা আলোর তীব্র এক জমাট রেখা এসে ওর গেঞ্জির স্ফটিকে ভেঙে খান খান হয়ে গেল আর মূহুর্ত মেপে মেপে মোবাইল ভরে উঠছিল গানের নতুন ইপি -র প্রস্তুতিতে। অথচ এ-র আগেরটায় নাকি মাত্র ১০টা লাইক পড়েছিল!


চার

সন্ধে ৫ টা। আমার পুরনো শোবার ঘরের জানালার পাশে বসে আছি, দূরের এ-ই ঘরটায় বাবা এখন ঘুমোয়। এক পুরনো বন্ধু এসেছিল দেখা করতে। আমার ছোটবেলার প্রেমিকা। আমরা দুজনে পাশাপাশি বসে দেখছিলাম বাতাসে সুপুরি গাছের দোলন। একটা দুটো করে তারা ফুটছিল, আসমানী নীলের একটা গাঢ় পোঁচে গা ডুবিয়ে গম্ভীর সান্ধ্য আকাশের নিচে আমরা পরস্পরকে ক্রমাগত অস্বস্তিকর প্রশ্নে কাবু করে ফেলছিলাম। আমার মনে পড়ছিল নিজের লেখা একটা কবিতা, যেটায় কখনো প্রেমে না পড়ার প্রতিজ্ঞা ছিল।

আমার মনে পড়ে যেদিন আমরা পরস্পরকে প্রথম চুম্বন করি, সেদিন সার্কাসের একটা হাতি পালিয়ে গিয়ে হুলুস্থুল বাঁধিয়ে দিয়েছিল। ওটাকে ওরা ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে আবার বন্দী করেছিল বটে, কিন্তু হাতিটা আর কোনোদিনও খেলা দেখায়নি। এখনও যেন স্বপ্নে দেখি জলে ভেজানো খড়ের গোছা আর তার নিচে টান টান হাতির প্রাচীন ভাঁজ পড়া ত্বক!

বাচ্চা থাকতে রোজ ভোরে উঠে কাছের সার্কাসের ময়দানে দৌড়তাম জীবজন্তু দেখব বলে। কুয়াশায় রাস্তা আবছা হয়ে থাকত। বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে রীতিমতো কাঁপন ধরত, কারণ খাঁচার ভেতরে জন্তুটা একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে পায়চারি করত, সঙগে চাপা গর্জন! আমি নানির হাত ধরে কাতর অনুনয় করতাম, 'নানি নানি, খাঁচার অতো কাছে যেও না… '

ওহ, নানি, জীবন তো তোমাকে খালি হাতে ফিরিয়েছে, মৃত্যুকে কি কিছু আলাদা মনে হল তোমার?

একটা দেশলাইয়ের কাঠির কমলা রঙের বিচ্ছুরণ যেন সন্ধ্যাকাশে আগুন ধরিয়ে দিল, তারপর একটা মেয়ের ঠোঁটে সিগ্রেট হয়ে জ্বলে উঠেই নিভে গেল, যে মেয়েটাকে আমি একদা ভালবাসতাম। আমার প্রাক্তন প্রেমিকা হঠাৎ আমায় জিজ্ঞাসা করল নানি কোথায়। বাঘের খাঁচা নিয়ে আমি কি খুব জোরে স্বগতোক্তি করে ফেলেছি? আমি ওকে বললাম… ওকে বললাম… আমি জানি না!

বাদবাকি সময়টা আমরা অন্ধকারেই বসে রইলাম, যেন কী করে আলো জ্বালাতে হয় ভুলে গেছি !

-------------------

ওই রাতেই কিম্বা হয়তো কয়েক রাত পরে আমি একটা স্বপ্ন দেখলাম। নানি আরশোলাদের খেতে দিচ্ছে, ওগুলো যেন তার সন্তান। খেতে দেওয়া, লালনপালন, সব নানি করে। নিজে যা যা জানে নানি আরশোলাদের সবই শিখিয়েছে। ওদের মধ্যে একজনের নাম আবার নীল, নানি আমার নামেই নাম রেখেছে । ওদেরকে অংক, ব্যাকরণ, বিজ্ঞান, সব শিখিয়েছে। স্বপ্নে নানি পড়তে লিখতে পারে, গানও গাইতে পারে। জিজ্ঞাসা করলাম, নানি, তুমি কি মরে গেছ? পাত্তাই দিল না, বলল দূর দূর ওসব ছাড়।

স্বপ্নেই নিজেকে বোঝাতে লাগলাম, সত্যিই নানি মরেনি। তবে কি ওর অস্তিত্ব আছে? না তাও তো নেই, কিন্তু নানি মরেনি। চলে যাবার সময় থেকেই ও আমাদের সঙ্গে আছে। আমায় ও জিজ্ঞাসা করল আমি কিছু খাব কিনা, তারপর একটা বাচ্চা আরশোলাকে গল্প শোনাতে শুরু করল, কিভাবে নানি আর তার ভাই মিলে ছোট বেলায় জমিদারের বাগান থেকে ফল চুরি করত। কী করে একবার দুজনেই জমিদারের লেঠেলের হাতে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেছিল। এ-ই গল্পটা আমার জানা গল্প, নানি কম করে একশ বার গল্পটা আমায় বলেছে।


পাঁচ

২০১৯-র ১৩ই জুলাই, বেলা ৩-৪৬। এ-ই আরশোলাটা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আমিও উল্টো ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। রোজ রাতেই। যেই আলো নেভাই, অমনি ওটা বেরিয়ে আসে, মাইক্রোওভেনের ওপর উঠে বসে। যেন আসন্ন কোনো কিছুর জন্য ওর অপেক্ষা, সেটা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

সত্যি সত্যি যদিন মৃত্যু আসে আর ওটাকে গিলে নেয়, বড়জোর এক হপ্তা জায়গাটা খালি পড়ে থাকে, তারপর নতুন একটা আরশোলা আগেরটার জায়গা নিয়ে নেয়। আমার ক্রমে ক্রমে এই বিশ্বাস জন্মে যাচ্ছিল যে ওটা একটাই আরশোলা, জন্মিলে মরিতে হবে, তাই ঐ জায়গায় বসে ও মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে, মরার পর আবার একই শরীরে ফিরে আসে। অন্য কোনো জন্মে আমিই ঐ আরশোলা ছিলাম। এখনকার আমিও হয়ত তাই। এইখানে দাঁড়িয়ে স্বপ্নে জাগরণে আমি ওর অসংখ্য মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে আছি।

একটা জলে ভাসা শহরের অসংখ্য অন্ধকার ফাটল থেকে মাঝ রাতে গুঁড়ি মেরে বেরিয়ে আসে আরশোলার দল। ওরা সবাই মনুষ্যজীবনের ডিম্বাশয় থেকে জন্ম নেওয়া, মানুষেরই স্বপ্ন আর ছোট বড় ব্যর্থতার ছায়া ! ওরা শুধু টিঁকে থাকতে চায়, অন্ধকারে অতীত রোমন্থন করতে চায়।

অনুভব করি যেন কুঁকড়ে ছোট হয়ে যাচ্ছি। একবার কপোতাক্ষ নদে সাপে কাটা মরা ভেলায় ভেসে যেতে দেখেছিলাম। যেন ফের দেখতে পাই বাবা ঠাম্মার কোলে সীমান্ত পেরচ্ছে, তখন একটা ছোট্ট ঘুমন্ত শিশু মাত্র। মা-কেও দেখতে পাই, প্রাচীন লাভা উদ্গীরণের পৃথিবী থেকে সদ্য জেগে ওঠা গন্ডোয়ানাতে, কবি কালিদাসের নগরে, মুঠো ভর্তি কালো মাটি। মায়ের বাবা ঔপনিবেশিক আমলের ফুটবল প্লেয়ার, শরীর ভর্তি আঘাত নিয়ে যাকে বসে যেতে হয়েছিল।

অনেক বছর পর বোন জন্মায়। নানি এসে যেন তাকে বহাল করবার আবেদন পত্র বাবার কাছে জমা দেয়। সেটা আবার ঝকঝকে ইংরেজিতে লেখা। আমি অবাক হয়ে ভাবি কে লিখে দিল!

বৃষ্টি নামে, রাস্তা গলি উপচে কাদা এসে বাড়িগুলো ভর্তি করে দেয়। আরশোলারা তার মধ্যেই সাঁতার কাটতে থাকে। নানি ওদের শুঁড় ধরে শুকনো ডাঙায় ছুঁড়ে দেয়। আমি বোঝার চেষ্টা করি।

চেষ্টা করতে করতেই একটা ভাবনা মাথার ভেতর ঢুকে যায়। আমাকে জ্বরের মতো আঁকড়ে থাকে। আমরা তো শুকনো ডাঙাতেই আছি নানি। কিন্তু তুমি কোথায়? তোমার কী হলো !

পাঁচ মাথার ক্রসিংয়ে ভনভনে পোকাদের ভিড়। ক্রমে আলো ফোটে। সকাল হয়ে আসে। আমি আর আরশোলা, দুজনেই যে যার ব্যক্তিগত অন্ধকারে হামাগুড়ি দিতে দিতে ফিরে যাই।


[ ইংরেজি ভাষায় লিখিত গল্পটি গত জানুয়ারি ২০২২, সুখ্যাত আমেরিকান পত্রিকা দ্য কমন এ প্রকাশিত।]

লেখক পরিচিতি
রাজসিক মিত্র
কবি। গল্পকার। 
কলকাতায় থাকেন। 






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. মূল রচনাটি পড়া হয়নি। কিন্তু অনুবাদটি এতোই স্পর্শশীল যে পঠনের তৃপ্তি পুরোটাই আদায় হয়ে যায়। জয় হোক ...

    উত্তরমুছুন
  2. ব্যতিক্রমী লেখা । মুগ্ধ হলাম। বিদেশী সাহিত্য পড়ার সামান্য অভিজ্ঞতায় দেখেছি গল্প লেখার চলন গেছে বদলে । রাজসিক এই পরিবর্তিত চলন রপ্ত করেছে দেখলাম । যেখানে স্মৃতির সঙ্গে বর্তমান, কল্পনার সঙ্গে বাস্তব , ঘটিত সত্যের সঙ্গে অঘটন অনায়াস মিশে যেতে পারে। রূপক কখন রূপ অবলম্বন করে নেয় । আর যে চেতনা আমাদের জন্ম ইস্তক সেই মৃত্যুচেতনা রাজসিক নাড়াচাড়া করেছে অভিজ্ঞ লেখকের মতো। অভিনন্দন রাজসিক। অনুবাদ অসাধারণ। প্রতিভাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সমীর চট্টোপাধ্যায়।

    উত্তরমুছুন