দুপুরের খানাপিনার পরে দিবানিদ্রায় যাওয়া আমার বহু পুরনো অভ্যাস। বৈঠকখানার চেয়ারে হেলান দিয়ে, মাথার পিছনে কুশন রেখে আয়েশ করে বসেছিলাম সেই উদ্দেশ্যে। বই হাতে পা দুটি লম্বা করে রাখলাম ছোট্ট বর্গাকৃতি চামড়ার টুলে, যাতে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ি।
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বই দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমের ভান করে রইলাম। তাতে কাজ হল না। স্ত্রী প্রশ্নটি আবার করল। এবার তার গলার স্বর আগের চেয়ে চড়া।
বিনয়ের সাথে অগত্যা জানালাম, আগন্তুকদের আসার ব্যাপারে আমার কোন ধারণা নেই।
ধারণা নেই বলা সত্ত্বেও আমার স্ত্রীর বকবকানি বন্ধ হচ্ছিল না। ‘মনে হয় না ওদেরকে আমার পছন্দ হবে। বিশেষ করে পুরুষটিকে।’
‘নাগো প্রিয়তমা। দেখ, সব ঠিক হয়ে যাবে।’
মুখের সামনে থেকে বই নামিয়ে, সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে থাকা স্ত্রীর পায়ের দিকে তাকালাম। ফ্যাশন ম্যাগাজিনের পাতা উড়ছে সেখানে।
‘তাদের সঙ্গে তো মাত্র একবার দেখা হয়েছে আমাদের।’
‘একবার দেখেই বুঝেছি তারা ভয়ংকর লোক। পুরুষটির সঙ্গে কথা বলতে গেলে আতংক লাগে- এই বুঝি চুটকি বা চটি গল্প শুরু হয়ে যাবে।’
‘নিশ্চিন্ত থাক, তুমি ওদের খুব ভালো ভাবে সামলাতে পারবে।’
‘স্ত্রীটিও কম বিপজ্জনক নয়। কখন তারা এসে পৌঁছাবে বলে মনে হয়?’
‘ছয়টার মধ্যে পৌঁছাবে বলে আমার ধারণা।’
‘কিন্তু, তোমার কি মনে হয় না তারা ভয়াবহ?’ আমার দিকে আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন করল স্ত্রী।
‘দেখ…..’
‘আমি বলছি তারা ভয়ংকর, ভয়ংকর, ভয়ংকর।’
‘এখন তো তাদের আসা বন্ধ করা সম্ভব নয়, পামেলা।’
‘ সেটাই। তারা প্রায় চলে এসেছে,’ ও বলল।
‘ভয়ংকর হলে তুমি তাদের দাওয়াত দিতে গেলে কেন?’ নিজেকে থামানোর আগেই মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে এলো। জানি এজন্য আমার দুর্ভোগ আছে।
এ বাড়ির নিয়ম হল কোনভাবে পামেলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। চুপচাপ উত্তরের অপেক্ষায় স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কারণ, ওর শ্বেত শুভ্র মুখটি রেগে গেলে এত আকর্ষণীয় দেখায় যে চোখ সরাতে পারি না।
সন্ধ্যায় পামেলা যখন মাঝে মাঝে সূচিকর্মের কাজ করে কিংবা ছোট্ট জটিল ফুলের চিত্রগুলি আঁকে- ওর সূক্ষ্ম অভ্যন্তরীণ শক্তি মুখের পেশীকে টানটান আর ঝকঝকে উজ্জ্বল করে তোলে, যে সৌন্দর্য্য শব্দ দিয়ে প্রকাশ করার নয়। পড়ার ভান করে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে দেখি তখন ওকে।
এখনও এই মুহূর্তে ওর জ্বলন্ত লাভার মতো উজ্জ্বল মুখ, কুঁচকানো কপাল, নাকে জমে থাকা ঘাম- স্বীকার করতে বাধা নেই সবকিছুই তাকে অতি আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। উচ্চতায় সে আমার চেয়ে লম্বা। তবে একান্ন বছর বয়সের পামেলাকে লম্বা না বলে আমার চেয়ে বড় বলাই ঢের শ্রেয়।
‘তোমার জানার কথা কেন আমি তাদের আসতে বলেছি,’ তীক্ষ্ম কণ্ঠে বলল পামেলা। ‘ব্রিজ খেলার জন্য। আর কিছু না। অতিথিরা দুজনেই ডাকসাইটে খেলোয়াড়।‘ ও একনজরে দেখে নিল আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি কিনা সেটা বুঝতে! ‘বেশ,’ পামেলা এরপর বলল, ‘তোমার কি জানা ছিল না, এটাই তাদের আসতে বলার কারণ?’
‘হ্যাঁ, বলা যায়, আমি..’
‘বোকা বোকা ভাব করবে না আর্থার।’
‘একবারই ওদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বেশ ভদ্রই মনে হয়েছিল তখন।’
‘কসাইকেও অনেক সময় ভদ্র মনে হয়!’
‘ পামেলা, প্রিয়তমা আমার, এখন আর আমরা কি করতে পারি?’
‘শোনো,’ হাতে থাকা ম্যাগাজিন উরুর ওপর জোরে চাপড় মেরে বলল ও, ‘আমিও তোমার মতো ওদের একবারই দেখেছি। কিন্তু ওইটুকু দেখাতেই বুঝেছি ওরা মুর্খ, অশিক্ষিত, শুধু ভালো ব্রিজ খেলতে পারার কারণে তারা যে কোনও জায়গায় যাবার সুযোগ পায়।’
`প্রিয়া, আমি নিশ্চিত তুমি ঠিক বলছ, তবে সত্যি বুঝতে পারছি না কেন-’
‘ তোমাকে কতবার বলব, ছাপোষা খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলতে খেলতে আমি ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তাই একবারের জন্যে হলেও সত্যিকারের ব্রিজ খেলার স্বাদ পেতে চেয়েছিলাম। তবে আমার বাড়িতে এজন্য এই ভয়ংকর দুটি লোককে থাকতে দিতে হবে, এটাই আমার সহ্য হচ্ছে না।’
‘আমি তোমার সঙ্গে পুরোপুরি একমত প্রিয়া। তবে এখন এসব ভেবে আর কি হবে! তারা যে কোন সময়ে চলে আসবে…’।
‘আর্থার?’
‘বলো।’
‘খোদার কসম, তুমি কেন সব কিছু নিয়ে আমার সঙ্গে তর্ক করো-- বলবে? কেন বলছ না আমার মতই তুমি তাদের অপছন্দ কর।'
‘ওদের নিয়ে বেশী চিন্তা করো না পামেলা। ভিতরে যাই থাকুক বাইরে তারা বেশ ভদ্র স্বভাবের তরুণ এক দম্পতি।’
‘আর্থার, এত আহ্লাদী কথা বলো না তো ওদের নিয়ে।’ ধুসর বিশাল দুই চোখে তাকিয়ে পামেলা এমনভাবে কথাটা বলল, যে তাতে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। সেটা এড়াতে উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। বাইরে বাগানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ঘরের সামনে থেকে ক্রমশ ঢালু হয়ে যাওয়া বাগানটিতে কিছুদিন আগে ঘাস কাটা হয়েছিল। বিবর্ণ ঘাসগুলি সরিয়ে চারদিক সবুজে উজ্জ্বল। একটু দূরে দুটি ল্যাবার্নাম গাছ ফুলে ভরা। গোলাপ সবে ফুটতে শুরু করেছে। চারদিকে কত রকম উজ্জ্বল রঙীন ফুল। রঙের মেলা যেন চারদিকে। দুপুরের খাবার শেষে বাগানের মালিকে তার কুঁড়েঘর থেকে হেঁটে আসতে দেখলাম। দূর থেকে আমি ওর কুঁড়ের ছাদের রোদের খেলা দেখতে পেলাম।
সত্যি কথা বলতে কি এই বাগান, এই বাড়ি- সবই আমার স্ত্রীর। আহা! কী সুন্দর চারপাশ। কী শান্ত শুনশান! পামেলা যদি একটু কম কথা বলতো আর আমার পছন্দ নয় এমন কিছু করার জন্য জোরাজুরি না করত, তাহলে এই জায়গাটাকে বেহেস্তখানা বলা যেত।
মনে মনে ভেবে বসবেন না যে আমি তাকে ভালোবাসি না। বরং তার উল্টো। পামেলা যে বাতাসে নিঃশ্বাস নেয় আমি তার উপাসনা করি। এত ভালোবাসার পরেও কেন যেন তাকে সামাল দিতে পারি না! কথায় আছে না- - বাসর রাতে বিড়াল মারতে হয়। সেটা করতে পারিনি বলেই তার কথায় আমাকে উঠতে বসতে হয়। মাঝে মাঝে তার এই আমাকে চালানোর চেষ্টা মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়।
পামেলার কিছু আচরণ সত্যিই যন্ত্রণাদায়ক। বিশেষ করে কোন কথার ওপর জোর দেবার সময়ে সে যেভাবে আমার উদ্দেশ্যে আঙ্গুল তুলে কথা বলে, তখন সত্যি খারাপ লাগে! তবে একটা জিনিষ ভুলে গেলে চলবে না আমি শারীরিকভাবে কিছুটা ছোটখাট, মানসিকভাবেই তাই কিছুটা দুর্বল, বিশেষ করে যখন আমার স্ত্রীর মত বিশাল কাউকে মোকাবিলা করতে হয়! মাঝে মাঝে আমার নিজেকে বোঝাতে সমস্যা হয় যে সে কোন ভয়ংকর মহিলা নয়।
‘আর্থার!’ পামেলা ডেকে বলল, ‘এসো এখানে।’
‘কী হয়েছে?’
‘মাথায় এইমাত্র একটা দুর্দান্ত পরিকল্পনা এসেছে। আসো তাড়াতাড়ি।’
বসার ঘরে ফিরে এসে দেখি পামেলা সোফায় টান টান হয়ে শুয়ে আছে।
‘মজাটা কী শুনি?’
‘স্নাপসদের নিয়ে যদি করি?’
‘স্নাপসরা কে বুঝতে পারছি না’
‘জেগে ওঠো আর্থার। তুমি এখন কোন জগতে আছ! আমি হেনরি আর স্যালি স্নাপসের কথা বলছি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমাদের অবকাশের সঙ্গী।’
‘ও আচ্ছা, তারপর?’
‘মন দিয়ে শোনো, তারা আসলেই কী ভয়াবহ তা এখানে শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম! পুরুষ লোকটির একটার পর একটা চুটকি শোনানোর চেষ্টা, আর দুজনের মাখামাখি দেখলে মনে হয় প্রেমে মত্ত যুগল চড়ুই-…’ …পামেলার কণ্ঠে ইতস্তত ভাব। অস্বস্তির একটা হাসি দিল। যে কোন কারণে হোক বুঝতে পারলাম পামেলা বিপদজ্জনক কিছু বলতে চাইছে। ‘আচ্ছা- যদি সবার সামনে স্নাপস দম্পতি এই ধরনের আচরণ করে, তবে তারা যখন একা থাকে তখন তারা কী-না করতে পারে!;
‘এক মিনিট, তুমি কী বলতে চাইছো, পামেলা-’
‘ঢঙ করো নাতো আর্থার। চলো না একটু মজা করি। আজকের রাতের জন্য সত্যিকারের মজা!’
শরীরের অর্ধেক অংশ সোফা থেকে তুলে কথাটা বলল পামেলা। তার চোখ মুখে এক ধরনের বন্য আনন্দ। মুখটা সামান্য খোলা রেখে আমার দিকে ধুসর জোড়া চোখে তাকাল, সেই চাউনিতে যেন বিদ্যুৎচমক খেলে গেল।
‘কেন আমরা এই মজাটা করব না বল?’ পামেলা বলল।
‘তুমি কী করতে চাইছ?’
‘আমি তো বলেছি। তুমি কি বুঝতে পারছ না?’
‘না, পারছি না।’
‘আমরা যেটা করব, সেটা হলো ওদের ঘরে একটা আড়িপাতার যন্ত্র রেখে আসব।’
স্বীকার করি যে খারাপ কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু এতটা খারাপ ভাবিনি। যখন ও কথাটা বলল, মনে হল যেন রীতিমত বোমা ফাটাল ও, কী জবাব দেব বুঝতে পারছিলাম না।
‘আমরা ঠিক এই কাজটা করব।’ পামেলা বলল।
‘এখানে, এই বাসায়?’ আমার হতভম্ব ভাব কাটছে না। ‘প্লিজ… তুমি এটা করতে পারো না পামেলা।’ রীতিমত আর্তস্বরে বলে উঠলাম।
‘কেন পারিনা?’
‘এমন জঘন্য কাজ আমি করতে পারব না। দরজার কি-হোলে কান রেখে ভিতরের কথাবার্তা শোনা কিংবা অন্যের চিঠি পড়ার চেয়েও মারাত্মক অভদ্রতা এটা।’ এরপরে একটু গলা নামিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা পামেলা, তুমি নিশ্চয়ই ঠাট্টা করছ! তুমি এসব করতেই পারো না।’
‘অবশ্যই আমি পারি।’
পামেলা যে অতিথিদের প্রচন্ড অপছন্দ করে সেটা জানতাম। আরো জানি যে এই সব বিষয়ে ওর কোন লুকোছাপা নেই। কিন্তু আমাকে কঠিনভাবে পামেলার পরিকল্পনার প্রতিবাদ করতে হবে। এতে হয়ত ঝুঁকি আছে তবু আমাকে এটা করতে হবে। তাই বেশ কঠিন গলায় চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম, ‘আমি তোমাকে এটা করতে নিষেধ করছি।’
সোফা থেকে সে পা নামিয়ে সোজা হয়ে বসল। ‘আর্থার, কসম খোদার তুমি এরকম ভালো মানুষের ভান করছ কেন বুঝতে পারছি না।’
‘এটা না বোঝার কোন কারণ নেই।’
‘ এরচেয়ে অনেক খারাপ কাজ তুমি করেছ আমি জানি।’
‘কখনই না!’
‘তাই নাকি! তা হঠাৎ কেন তোমার মনে হচ্ছে আমার চেয়ে তুমি অনেক সৎ, ভালো মানুষ?’
‘ভালো খারাপ জানি না। ঘরের মধ্যে আড়িপাতার যন্ত্র আমি রাখতে পারব না, ব্যস!’
‘কী বললে তুমি, ভেবে বলো," পামেলা পিস্তলের মতো তর্জনী আমার দিকে তাক করে বলে উঠল। ‘‘মিলফোর্ডসের বাড়িতে গত বছর ক্রিসমাসের কথা মনে নেই? দরজায় আড়িপাততে গিয়ে হঠাৎ জোরে হেসে ওঠো তুমি, আমি তাড়াতাড়ি মুখে হাত না দিলে তো তারা জেনে যেত! এটাকে তুমি কি বলবে?’
‘এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আর…’ আমি বললাম, ‘সেটা আমাদের বাড়ি ছিল না। তারা আমাদের অতিথিও ছিল না।’
‘এটা তেমন কোন পার্থক্য করেনা।’ একদম সোজা হয়ে বসে গোলাকার ধূসর চোখে আমার দিকে চেয়ে কথাটি বলল পামেলা। কথা বলার সময়ে চিবুকটি অবজ্ঞাভরে উঁচু করে রাখল। ‘তোমার কথাগুলি না ভন্ড মুনাফিকের মত শোনাচ্ছে! তোমার এই হঠাৎ ভালোমানুষী আমার রীতিমত অসহ্য লাগছে!’
‘তাহলে তোমাকে বলি আর্থার, আমি খুব নোংরা একটা মানুষ। আমার বহু গোপন কাজে তুমি সাহায্য করেছ। কারণ তুমিও এটা পছন্দ করো। আর এ কারণেই আমরা একসঙ্গে আছি।’
‘বলা নেই কওয়া নেই আজ থেকে তুমি যদি হঠাৎ নিজের চরিত্র পাল্টে ফেলো, তাহলে সেটা হবে আরেক কাহিনী।’
‘পামেলা এভাবে কথা বলবে না আমার সঙ্গে।’
‘কেন বলব না? তুমি যদি হঠাৎ করে সাধু সন্ন্যাসী হয়ে যেতে চাও, তাহলে তো আমাকে পথ দেখতে হবে।’
‘পামেলা তুমি কি পাগল হয়েছ? কী বলছ কোন আগামাথা নেই!’
‘আর্থার, তুমি তো ফুলের মত পবিত্র চরিত্রের মানুষ, তাহলে কীভাবে থাকবে আমার মত দুর্গন্ধের সঙ্গে, বলো?’
কথা বলতে বলতে পামেলার বিপরীত দিকের চেয়ারে ধীরে ধীরে বসলাম। সে আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। ফর্সা দীর্ঘাকৃতি সেই মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল আমি যেন একটা ক্রিমভর্তি বাথটাবের মধ্যে পড়ে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি।
‘তুমি ওদের ঘরে আড়িপাতার যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত পাল্টাচ্ছ, তাই না?
‘অবশ্যই না। আমি করবই। একটু মজা করলে ক্ষতি কি! আর্থার, রাজী হওনা প্লিইইজ, এভাবে অনড় হয়োনা।’
‘এটা অনুচিত, পামেলা।’
‘এটা উচিত, উচিত, এবং অবশ্যই উচিত’- পামেলা তার আঙুল আমার দিকে তুলে বলল, ‘ততটাই উচিত যখন তুমি মেরি প্রবার্টের ব্যাগ থেকে তার ব্যাক্তিগত চিঠি গোপণে বের করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছিলে।’
‘আমাদের আর এমন কিছু করা উচিত হবে না।’
‘আমাদের?’
‘তুমিও সেটা পরে পড়েছ, পামেলা।’
‘হ্যা পড়েছি। এতে কারো কোন ক্ষতি হয়নি। তুমি পড়ে পরে সেটা আমায় দিয়েছিলে। এবারও খারাপ কিছু হবে না।’
‘আচ্ছা, তোমার সঙ্গে যদি কেউ এমন করে তাহলে কেমন লাগবে?’
‘যদি এটা আমার অজান্তে হয়, তাহলে কিভাবে বুঝব আমার কেমন লাগছে? আর্থার, এমন লুতুপুতু মার্কা কথা বলবে নাতো!’
‘আরো ভাবতে হবে আমাকে।’
‘দেখে শুনে মনে হচ্ছে একজন ডাকসাইটে রেডিও ইঞ্জিনিয়ার জানেই না কীভাবে মাইকের সঙ্গে স্পিকার যুক্ত করতে হবে!’
‘এটাই সবচেয়ে সহজ কাজ।’
‘আচ্ছা, তাহলে শুরু করে দিচ্ছ না কেন?’
‘ভেবেচিন্তে দেখি। তারপর বলব।’
‘তুমি ভাবতে ভাবতে ওরা এসে পড়বে!’
‘তাহলে তো এটা আারো করব না! হাতেনাতে ধরা পড়ব নাকি!’
‘যদি তারা তোমার কাজ শেষ করার আগে চলে আসে, তাহলে চিন্তার কিছু নেই, আমি ওদের এখানে আটকে রাখব। আচ্ছা, এখন বাজে কয়টা?’
সময় তখন বেলা তিনটা।
‘নিশ্চয়ই দুপুরের খাবার না খেয়ে ওরা লন্ডন থেকে রওনা হবেনা। তার মানে তোমার হাতে অনেক সময় আছে, আর্থার।’
‘কোন ঘরে ওদের থাকার ব্যবস্থা করেছ?’
‘করিডোরের শেষপ্রান্তে হলুদ রঙের ঘরটা। আড়িপাতার যন্ত্রের তারের জন্য ঘরটা কি বেশী দূরে হয়ে গেল?’
‘মনে হয় ঠিক আছে।’
‘আরেকটা কথা, স্পিকার কোথায় পাবে?’
‘আমি কিন্তু একবারও বলিনি, কাজটা আমি করব।’
‘হায় খোদা’ পামেলা রীতিমতো চেঁচিয়ে উঠল, ‘ মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে কাজটা করার জন্য তুমি উত্তেজনায় মরে যাচ্ছ। আর শোনো, স্পিকার আমাদের বেডরুমে নিয়ে রাখো। যাও, যাও, তাড়াতাড়ি করো।’
সত্যি বলতে কি আমার দ্বিধাদ্বন্দ্ব তখনও যায়নি। অথচ পামেলা আদরমাখা সুন্দর ভাষায় অনুরোধ না করে এখনও আদেশের সুরে কথা বলছে।
‘আমি এটা পছন্দ করছি না পামেলা।’
পামেলা কোন কথা না বলে চুপ করে বসে রইল। একদম স্থির হয়ে গেল ও। মনে হলো আমার কাছ থেকে আরো কিছু শোনার অপেক্ষা করছে। অভিজ্ঞতা থেকে জানি, এটা এক ধরনের বিপদ সংকেত। বোমা ফাটতে যাচ্ছে একটু পরেই, শুধু পিন ফোটানোর অপেক্ষা। তারপর ‘ধুম’ করে বোমা বিস্ফোরিত হবে। কঠিন নীরবতা চারদিকে। তারমধ্যে বোমার মধ্যে টিক টিক শব্দটি শুনতে পেলাম।
বিস্ফোরণ এড়াতে নিঃশব্দে উঠে ওয়ার্কশপে গিয়ে একটা মাইক ও দেড়শ ফুটের তার নিলাম। পামেলার সঙ্গে এত তর্কের পরে নিজের কাছেই স্বীকার করতে লজ্জ্বা লাগছে- কাজটা করতে গিয়ে বেশ উত্তেজনা অনুভব করতে লাগলাম। নিজেকে বলতে লাগলাম, আমার কিছুই হয়নি। সকালবেলা পত্রিকা খুলে যখন শেয়ারবাজারে খবরাখবর পড়ি, তখনও তো বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি হয় মনে! এটা তেমনই কিছু।
উত্তেজনায় দুই সিঁড়ির ধাপ একসঙ্গে টপকে দোতলায় উঠে অতিথি কক্ষে গেলাম। চারদিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। দেখে মনে হচ্ছে কেউ কখনও রুমটা ব্যবহার করেনি। দুটি বিছানা পাশাপাশি, সেখানে হলুদ সাটিনের চাদর বিছানো আছে, দেয়ালের রঙও হলুদ। জানালায় সোনালি রঙের পর্দা ঝুলানো।
মাইক্রোফোনটি লুকিয়ে রাখার জন্য মনের মতো জায়গা খুঁজতে লাগলাম। আড়িপাতার পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এটা। কোথায় রাখা যায়? কোথায়? ময়লা ফেলার ঝুড়ি অথবা ফায়ার প্লেসে রাখব? একটু ভেবে বাদ দিলাম। রেডিয়েটরের পিছনে রাখব? নাকি ওয়ারড্রবের ওপরে? টেবিলের নীচে? শেষ পর্যন্ত কোনটাই আমার কাছে কার্যকর মনে হলো না। কোনভাবে ধরা পড়ে গেলে মানসম্মান সব শেষ!
অবশেষে পেয়ে গেলাম যা চাইছিলাম। সোফার সিটের নীচে লুকিয়ে রাখব মাইক্রোফোনটি। কারণ সোফাটা দেয়ালের সাথে লাগানো। সোফার সামনেই কার্পেট। মাইক্রোফোনের সঙ্গে লাগানো সিসার তার কার্পেটের নীচ থেকে বের হয়ে দরজা পর্যন্ত যেতে পারবে।
চাপ দিয়ে সোফার সিট সরিয়ে নীচের অংশ বের করলাম। সোফার ভিতরে স্প্রিংয়ের মধ্যে মাইক্রোফোনটি সাবধানে বসানোর আগে এটি রুমের দিকে মুখ করে আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিলাম! তারপর সোফার সিট আগের অবস্থায় নিয়ে লম্বা তার কার্পেটের নীচ দিয়ে দরজা পর্যন্ত নিয়ে গেলাম। খুব শান্তভাবে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছিলাম। দরজার কাছে কার্পেটের নীচ থেকে বেরিয়ে আসা তার লুকিয়ে রাখার জন্য ছোট্ট একটা খাঁজের মতো তৈরী করলাম।
এসব কাজ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। হঠাৎ বাড়ির সামনে ড্রাইভওয়েতে গাড়ির আওয়াজ শুনতে পেলাম। একটু পরে দরজা খোলার ও অতিথিদের কথাবার্তার শব্দ ভেসে আসল। করিডোরের তলায় তার লাগানোর মাঝপথে তখন। কাজ থামিয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। নিজের কাছে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই কেমন একটা আতঙ্ক বোধ করলাম।
অতিথিদের আগমনের শব্দ যে কী পরিমাণ ভীতিকর ছিল তা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব না। পেটের মধ্যে গুড়গুড় করতে লাগল রীতিমতো। এমন অভিজ্ঞতাকে বিশ্বযুদ্ধের দু:সহ স্মৃতির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যুদ্ধের সময় গ্রামে একদিন দুপুরে যখন প্রজাপতি নিয়ে নীরবে কাজ করছিলাম, তখন গ্রামের অন্যদিকে একটি বোমা ভয়াবহ শব্দে বিস্ফোরিত হয়।
এত চিন্তা করো নাতো- নিজেকে নিজে বললাম আমি। পামেলা নিশ্চয়ই অতিথিদের আটকে রাখবে যাতে ওরা ওপরে চলে আসতে না পারে!
অতিথিদের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলাম। তারটা পুরো করিডোর বরাবর লম্বা করে রেখে পামেলা আর আমার শোবার ঘরে নিয়ে এলাম। এই ঘরে গোপণীয়তা অত দরকারী নয়। তবে বাসায় আমরা ছাড়াও গৃহকর্মীরা আছে। ওদের জন্য বেখেয়াল হওয়া যাবেনা। শোবার ঘরের কার্পেটের নীচে তারটি বিছিয়ে দিয়ে শেষ মাথা রেডিওর সঙ্গে যুক্ত করলাম। চূড়ান্ত সংযোগ করা আমার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের প্রযুক্তিগত কাজ। তাই বিশেষ সময় লাগল না।
সাবাস! তুমি কাজটা ভালোভাবে সম্পন্ন করেছ! নিজেকে নিজেই বললাম আমি। এক পা পিছনে গিয়ে ছোট্ট রেডিওটির দিকে তাকালাম। কী কারণে যেন রেডিওটি আজ দেখতে অন্যরকম লাগছিল। আওয়াজ তোলার নির্বোধ বাক্স এটা এখন নয়। বরং এটাকে একটা অশুভ ছোট্ট প্রাণী বলা যায়। যে তার নিজের দেহের অংশ যেন দূরের কোন নিষিদ্ধ জায়গায় ছুঁয়েছে। রেডিওটা চালু করার পরে গুনগুন শব্দ শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা গেল না।
বিছানার পাশে রাখা টেবিল ক্লকটা হাতে নিলাম। ঘড়িটির একটা কাটা জোরে টিক টিক করছিল। আমি সেটাকে হলুদ রঙের অতিথি রুমে নিয়ে সোফার ওপরে রাখলাম। নিজের ঘরে ফিরে এসে কিছু ঠিকভাবে সবকিছু কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত হতে চাইলাম। রেডিওতে বাস্তবের চেয়েও ঘড়ির কাটা জোরে টিক টিক করছিল।
ঘড়িটা অতিথি রুম থেকে নিজের ঘরে এনে বাথরুমে ঢুকলাম। নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার পরে ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলি ওয়ার্কশপে রেখে এলাম। অতিথিদের সঙ্গে দেখা করার জন্য মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করলাম। বেশী উত্তেজিত বোধ করলে শরীরের সমস্ত রক্ত মুখে এসে চেহারাকে রক্তিম করে ফেলে। দুই হাত ঘামে ভিজে যায়। নিজেকে শান্ত করার জন্য প্রিয় সংগ্রহশালায় কিছুক্ষণ সময় কাটালাম।
সেখানে মনোহর ভেনেসা কার্ডুইয়ের ট্রেতে মনোনিবেশ করলাম। ‘অঙ্কিত নারী’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলাম, যেখানে কালার প্যাটার্ন ও উইংস ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। ক্যান্টারবেরিতে সংগঠনের পরবর্তী সভায় এই প্রবন্ধটি উপস্থাপন করব। প্রবন্ধে মনোযোগ দেবার পরে ধীরে ধীরে শরীরের সব স্নায়ু শান্ত হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলো।
বসার ঘরে ঢুকে দুই অতিথিকে সোফায় বসে থাকতে দেখলাম। শুধু অতিথিই বললাম, কারণ তাদের নাম এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। আমার স্ত্রীর হাতে মিশ্রিত পানীয়।
পামেলা আমাকে দেখে বলে উঠল, ‘এই যে আর্থার। কোথায় ছিলে এতক্ষণ?’
এটা একটা অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য। তাই পামেলার কথার উত্তর না দিয়ে অতিথিদের সঙ্গে হাত মেলালাম। ‘দু:খিত। একটা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সময়টা ভুলে গেছি।’
‘আমরা জানি, আপনি কী করছিলেন।’ মেয়েটি বুদ্ধিদ্বীপ্ত হাসি দিয়ে বলে উঠল, ‘তবে আমরা আপনাকে ক্ষমা করে দেব। কী বল প্রিয়তম?’ স্বামীর দিকে তাকাল সে।
‘আমাদের মনে হয় সেটাই করা উচিত।’ স্বামী উত্তর দিল।
ওদের কথায় পামেলা সজোরে হেসে উঠল। যেহেতু ওপর তলার কাজটা ওর করতে হয়নি, তাই ওভাবে হাসা ওর পক্ষে সম্ভব ছিল। অস্বস্তি নিয়ে আমি চারদিকে তাকালাম।
‘আপনাকে বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাইছি।’ মেয়েটি এবার বলে উঠল।
বুঝতে পারলাম সবাই মিলে এখানে মজা করছে। এখন যত দ্রুত আমি ওদের হাসাহাসিতে যোগ দেব তত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারব।
‘আমরা অবশ্যই সেটা দেখতে চাই।’ মেয়েটি বলে চলল।
‘কী দেখতে চান?’
‘আপনার সংগ্রহ। আপনার স্ত্রী বলেছেন, অসাধারণ সংগ্রহ আপনার।’
আস্তে আস্তে শরীর ছেড়ে আয়েশ করে চেয়ারে বসলাম। ওদের কথায় এতটা নার্ভাস হয়ে পড়া বোকামি হয়েছে।
‘আপনি কী প্রজাপতিতে আগ্রহী?’ মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলাম।
‘অবশ্যই মিস্টার বুশ্যাম্প ।’
এক দফা পানীয় খাওয়ার পরে সবাই বসে আড্ডা দিতে লাগলাম। কথা বলতে বলতে মনে হলো, আমাদের অতিথিরা আসলেই বেশ আকর্ষণীয় এক দম্পতি। বনেদী পরিবারের মেয়ে আমার স্ত্রী আভিজাত্য বিষয়ে খুব সচেতন। তবে প্রায়শই ওর প্রতি বন্ধুত্বে আগ্রহীদের ব্যাপারে কিছুটা তাড়াহুড়া করে ফেলে। বিশেষ করে সেই পুরুষ যদি লম্বা হয়। বলে রাখা ভালো, আমার স্ত্রীর অনুমান বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক হয়।
তবে আজকে আমার অনুভব হচ্ছে ও সম্ভবত কোন ভুল করছে। আমি নিজেও লম্বা পুরুষদের তেমন পছন্দ করিনা। তারা চতুর, আর সব বিষয়ে জ্ঞান দিতে উন্মুখ থাকে। স্বামীর নাম হেনরি স্নাপ, যাতে আমি মনে রাখি তাই আমার স্ত্রী ফিসফিস করে নামটি জানিয়েছে, ভদ্রলোককে বেশ অমায়িক সরল মানুষ মনে হল। বিশেষ করে মিসেস স্নাপের প্রতি তার আচরণ ছিল অত্যন্ত সহৃদয়পূর্ণ। লম্বা হলেও ভদ্রলোক বেশ সুদর্শন, তবে তার চেহারার সঙ্গে কোথায় যেন ঘোড়ার সাদৃশ্য আছে। ভদ্রলোকের গাঢ় বাদামী চোখ জোড়া শান্ত ও সহানুভূতিপূর্ণ।
ভদ্রলোকের কালো ফোলানো চুল ঈর্ষা করার মতো। মনে মনে আরো ভাবছিলাম, কী লোশন ব্যবহার করে যে তাকে এত সজীব সতেজ লাগছে। আড্ডার মধ্যে দুই একটি কৌতুক বলেছে সে, তবে সেসব বেশ উচ্চস্তরের, কেউ আপত্তি তোলার সুযোগ পেল না।
‘স্কুলে সবাই আমাকে স্কারভিক্স বলে ডাকত,’ হেনরি স্নাপ বলে উঠল, ‘কেন জানেন তো?’
‘ কোনরকম ধারণা নেই।’ আমার স্ত্রী উত্তর দিল।
‘কারণ গলদেশকে ল্যাটিন ভাষায় কারভিক্স বলা হয়। আমার নামের সঙ্গে মিলিয়ে স্কারভিক্স!’
কথার মর্মার্থ বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লাগল আমার।
‘মিস্টার স্নাপ , আপনি কোন স্কুলে পড়াশুনা করেছেন?’
‘ইটন,’
ভদ্রলোকের কথায় আমার স্ত্রী দ্রুত সামান্য মাথা নাড়ল। দুজনে কথা বলতে লাগল। এই ফাঁকে পাশের ভদ্রমহিলা স্যালি স্নাপের দিকে মনোযোগ দিলাম। হৃদতাপূর্ণ আকর্ষণীয় এক নারী, যার সঙ্গে আজ থেকে পনের বছর আগে দেখা হলে বলা যায় না হয়ত কোন মধুর সমস্যাতে পড়তে হতো। বিশেষ করে তার সঙ্গে আমার সংগ্রহের সুন্দর প্রজাপতিগুলি নিয়ে কথা বলার সময়টুকু খুব আনন্দময় ছিল।
কথা বলার সময়ে আমি তাকে খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করছিলাম। কেন যেন ধীরে ধীরে আমার মনোভাব পাল্টাতে শুরু করল। শুরুতে তাকে যতটা আনন্দিত ও হাসিখুশী একটি মেয়ে মনে হয়েছিল, আসলে ততটা সে না। মেয়েটাকে দেখে মনে হলো কোন ফন্দি আঁটছে মাথার মধ্যে। কেমন ঈর্ষাপরায়ণ চোখে চারদিক মাপজোখ করছে। তার গভীর নীল দুই চোখ সারা ঘরে কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কোথাও স্থির হচ্ছে না তার দৃষ্টি।
’’এখন আমাদের ব্রিজ খেলা শুরু করলে কেমন হয়! ’’ শেষ পর্যন্ত আলোচনার বিষয়বস্তু পাল্টাতে সক্ষম হলাম।
‘‘খুব ভালো হয়।’ কথাটা স্যালি স্নাপ সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিল। মনে হল সে যেন এই প্রস্তাবের অপেক্ষায় ছিল। ‘জানেন তো, আমরা প্রায় প্রতি রাতে ব্রিজ খেলি। খেলাটা আমাদের দুজনেরই খুব প্রিয়।’’
‘আপনারা তো শুনেছি রীতিমতো ব্রিজ বিশেষজ্ঞ। কীভাবে তুখোড় খেলোয়াড় হয়ে উঠলেন?’’
‘‘শুধু অনুশীলন। আপনাকে নিরন্তর অনুশীলন করে যেতে হবে।’’
‘কোনও চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন কখনও?’’
"এখনো না। তবে হেনরি চায় আগে একটা উচ্চতায় পৌঁছাতে। আর সেখানে পৌঁছানো তো সহজ নয়। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। রীতিমতো ভয়ংকর পরিশ্রম।’’
ঠিক কিনা জানিনা, তবে আমার মনে হলো মেয়েটির কণ্ঠে যেন অবসন্নতার ইঙ্গিত। হতে পারে স্বামী তাকে অনুশীলনের ব্যাপারে খুব চাপে রাখে। এত বেশী গুরুত্ব দেয় খেলার ব্যাপারে, বেচারী রীতিমতো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে!
আটটা নাগাদ পোষাক না পাল্টেই আমরা ডিনার শুরু করলাম। ভোজনপর্ব বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হল। খেতে খেতে হেনরি স্নাপ বেশ কয়েকটি হাস্যকৌতুক পরিবেশন করল। বিশেষ করে খুশী লাগল, আমার ফ্যাশনজ্ঞানের প্রশংসা করায়।
ডিনারের পরে কফির কাপে চুমুক দেবার আগে অনুভব করলাম, তরুণ এই দম্পতিকে বেশ ভালো লাগছে আমার। এই ভালোলাগার ফলাফল হলে, তাদের শোবার ঘরে যে আড়িপাতার যন্ত্র বসিয়ে এসেছি, এজন্য অস্বস্তি বেড়ে গেল। তারা যদি ভয়াবহ ধরনের লোক হতো তাহলে এই অপরাধবোধের সৃষ্টি হতো না। চমৎকার এই জুটির সঙ্গে এরকম কৌশলের আশ্রয় নিয়েছি বলে খারাপ লাগাটা বেশী ছিল।
আমাকে ভুল বুঝবেন না। এটা আত্মবিশ্বাসের অভাবে নয়। আমাদের অপারেশন বন্ধ করার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়নি। তবে পুরো বিষয়টির মজা উপভোগ করতে পারছিলাম না কেন যেন! আমার স্ত্রীকে মনে হলো সে খুব উপভোগ করছে পুরো ব্যাপারটা। উদ্দেশ্যমূলকভাবে হাসছে, মাঝে মাঝে চোখ মারছে, মাথা নাড়ছে আমার উদ্দেশ্যে সে।
রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ ব্রিজ খেলার উদ্দেশ্যে বিশাল লিভিং রুমে ফিরে এলাম। ভালো খানাপিনার পরে বেশ আরাম বোধ করছিলাম। স্বামী-স্ত্রী এক দল-অপর দল হয়ে টাকার বিনিময়ে খেলতে লাগলাম। চারজনই গভীর মনোযোগের সঙ্গে নি:শব্দে খেলে যেতে লাগলাম। তাস ফেলার শব্দ ছাড়া আর কোন আওয়াজ ছিল না পুরো ঘরে। কোনো দানে জিতে গেলে অবশ্য নিস্তব্ধ রুম কিছুটা সরব হয়ে উঠছিল। আমরা কেউই টাকার জন্য এতটা মনোযোগ দিয়ে খেলছিলাম না। খোদার ইচ্ছায় আমার স্ত্রীর ধনসম্পদের অভাব নেই। স্নাপস দম্পতিকে দেখলেও সেরকম মনে হয়। তবে তারা তুখোড় খেলোয়াড়দের মতো একদম নিয়মমাফিক খেলছিলেন।
সেই রাতে তাসগুলি সমানভাগে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। তবে একবার আমার স্ত্রী খারাপ খেলল, যে কারণে আমরা খুব পিছিয়ে গেলাম। খেয়াল করে দেখলাম সে পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে খেলছে না। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মনোনিবেশ আরো কমে যেতে লাগল। মনে হলো সে একটু অস্থির। বার বার ধুসর চোখ দিয়ে আমার দিকে উদ্দেশ্যেপূর্ণভাবে তাকাচ্ছে। ভ্রু নাচাচ্ছে। নাকের পাটা উত্তেজনায় মাঝে মাঝে ফুলে উঠছে। মুখের দুই কোণায় রহস্যময় হাসি ফুটে উঠছে।
আমাদের প্রতিপক্ষরা মারাত্মক ভালো খেলল। তাদের তাসের ডাক ছিল দুর্দান্ত। পুরো সন্ধ্যা জুড়ে কেবল একটাই ভুল করল। আসলে বহুবচনে না বলে, বলা যায় ভুল করল মিসেস স্নাপ। সে তার স্বামীর হাতে ভালো তাস আছে ভেবে বড় একটা দানের ডাক দিল। কিন্তু সেবার আমার হাতে ভালো তাস থাকায় আমি সেই দানে জিতলাম। ওই ভুলের মাশুল হিসেবে তাদের আটশ পয়েন্ট কমে গেল।
খুব সামান্য সময়ের জন্যে হলেও লক্ষ করলাম স্যালি স্নাপ কেমন ভয় পেয়ে গেল। যদিও এই ভুলের জন্য তার স্বামী তাকে ক্ষমা করে দিল। স্ত্রীর হাতে হালকা চুম্বন করে দুশ্চিন্তা না করার জন্য বলল সে।
রাত সাড়ে বারোটার দিকে আমার স্ত্রী ঘোষণা করল, সে ঘুমাতে যেতে চায়।
‘আর একটি দান খেলি’ হেনরি স্নাপ বলল।
‘না মি: স্নাপ। খুব ক্লান্ত লাগছে। আর্থারকেও ক্লান্ত মনে হচ্ছে। চলুন সবাই আজকের মতো শেষ করে ঘুমাতে যাই।’
কথা বলতে বলতে পামেলা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ওকে অনুসরণ করে আমরা দোতলায় উঠে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে সকালের নাস্তায় তারা কী খাবে, কোনো কিছু লাগলে কীভাবে গৃহকর্মীদের খবর দেবে, এই ধরনের স্বাভাবিক কিছু কথাবার্তা হলো।
‘আমার বিশ্বাস ঘরটা আপনাদের পছন্দ হবে।’ যেতে যেতে আমার স্ত্রী বলে উঠল, ‘রুম থেকে পুরো উপত্যকা দেখতে পাবেন। সকাল দশটার দিকে সূর্যর আলোয় চারদিক অদ্ভুত সুন্দর দেখায়।’’
আমাদের শোবারঘরের সামনে প্যাসেজে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় মেঝের তার দেখতে পেলাম। ভাগ্যক্রমে তারের রঙ দেয়ালের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল, তবু কেন যেন তারটা আমার চোখে খুব লাগছিল।
‘চমৎকার ঘুম হোক আপনাদের।’ আমার স্ত্রী বলল। ভালো ঘুম হোক আপনার মিসেস স্নাপ। শুভরাত্রি মি: স্নাপ। পামেলাকে অনুসরণ করে নিজেদের রুমে ঢুকে দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিলাম।
‘তাড়াতাড়ি করো।' পামেলা রীতিমতো চিৎকার করে বলে উঠল , ‘দ্রুত রেডিওটি চালু কর।’ তাকে দেখে মনে হল কয়েক সেকেন্ডের জন্য সে যেন অনেক কিছু মিস করে ফেলবে।
অতিথিদের দরজা খোলার ও বন্ধ হওয়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম। সামান্য সময়েই রেডিওটি যেন গরম হয়ে গেল।
‘ওই যে তারা ঘরে ঢুকে পড়েছে।’ পামেলা ঘরের মাঝখানে দুই হাত একত্র করে নীল পোষাকে দাঁড়িয়ে ছিল। একদিকে মাথা কাত করে মনোযোগ দিয়ে সে শুনতে লাগল। তার বড় সাদা মুখ উত্তেজনায় টানটান।
ঠিক তখনই হেনরি স্নাপের কণ্ঠস্বর রেডিও থেকে ভেসে এলো। খুব স্পষ্ট আর জোরালো।
‘তুমি একটা ইতর শ্রেণীর বোকা মেয়ে মানুষ।’
তার কথা শুনে রীতিমতো লাফিয়ে উঠলাম। পুরো সন্ধ্যা জুড়ে যে ভদ্র মার্জিত কণ্ঠ শুনেছিলাম, এই আওয়াজ তার থেকে এতটাই ভিন্ন ছিল যে বলার নয়। একইসঙ্গে কঠোর ও অপ্রীতিকর।
‘পুরো সন্ধ্যাটা তুমি নষ্ট করে ফেললে। আটশ পয়েন্ট হারানো কি কম কথা! পুরো আট পাউন্ড হারালাম তোমার জন্য।’
‘আমি না আমি আসলে সব গুলিয়ে ফেলেছিলাম।’ মেয়েটি ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ‘খোদার কসম এমন আর হবেনা।’
‘কী হচ্ছে এসব?’ পামেলা রীতিমতো হা হয়ে গেল। দ্রুত রেডিওর সামনে এসে ঝুঁকে পড়ে স্পিকারের কাছে কান রাখল। পামেলা বিস্মিত হলেও আমি কিন্তু এই আলোচনায় রীতিমতো শিহরিত বোধ করছিলাম।
‘কথা দিচ্ছি, আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে, এমন আর কখনও করব না।’ মেয়েটি বলে উঠল।
‘এই ব্যাপারে কোন গাফিলতি করা যাবেনা।’ ভীষণ কণ্ঠে বলে উঠল স্বামী লোকটি। ‘আমাদের এখনই একবার অনুশীলন করতে হবে।’
‘ওহ না, প্লিজ! ক্লান্তিতে দাঁড়াতে পারছি না আমি।’
‘শোনো,’ লোকটি বলল, ‘এই ধনী দুশ্চরিত্র মহিলার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য এত পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু তুমি এটা কী করলে! সব লেজেগোবরে করে দিলে!’
এবার পামেলার লাফ দিয়ে ওঠার পালা।
‘এই সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো তুমি এই কাজটা করলে।’ স্বামী বলে চলল।
‘কথা দিচ্ছি এরপর আর এই ভুল হবেনা।’
‘বসো এখানে। কিছু প্রশ্ন করব আমি। আর তুমি উত্তর দেবে।’
‘না, হেনরি প্লিজ! পাঁচশ প্রশ্নের উত্তর দিতে এখন পারব না। তিন ঘন্টা সময় লেগে যাবে।’
‘ঠিক আছে, তাহলে আমরা আঙ্গুলের অবস্থানগুলি নিয়ে অনুশীলন করব। তোমাকে আরো আয়ত্ত করতে হবে প্রাথমিক ডাকের কৌশলগুলি।’
‘ওহ্, হেনরি, সত্যিই কি করতে হবে? বিশ্বাস কর ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে পড়ছে আমার।’
‘অবশ্যই করতে হবে। কোন মাপ নেই। তোমাকে নিখুঁতভাবে রপ্ত করতে হবে সবকিছু। পরের সপ্তাহে প্রতি রাতে আমাদের খেলা থাকবে। তুমি ভালো করেই জানো, এই খেলার আয় থেকে আমাদের খেয়ে পরে থাকতে হয়।’
‘এসব কী হচ্ছে?’ পামেলা ফিসফিস করে বলল। ‘কোন দুনিয়ায় বাস করছি আমরা?’
‘চুপ!’ আমি বললাম, ‘শোনো, ওরা কী বলছে!’
‘ঠিক আছে। এখন আমরা প্রথম থেকেই শুরু করব। তুমি প্রস্তুত?’
‘ওহ হেনরি, প্লিজ!’ মেয়েটি প্রায় কেঁদে ফেলল।
‘এসো, স্যালি। ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে সোজা হয়ে বসো।’
এখন হেনরি স্নেপের কণ্ঠ অন্যরকম। নীচতলায় বৈঠকখানায় যে কন্ঠটা শুনেছিলাম, অনেকটা সেরকম।
হেনরি স্নেপ বলল, ‘একটি ক্লাব’
কৌতূহলী হয়ে খেয়াল করলাম ‘এক’ শব্দের ওপর সে বেশী জোর দিলো। ইচ্ছা করে লম্বা করে বলল।
‘ক্লাব এর এস কুইন,’ মেয়েটি ক্লান্ত কণ্ঠে জবাব দিলো। ‘স্পেড এর কিং জ্যাক। কোন হার্টস নেই। ডায়মন্ড এর এস জ্যাক।’
‘আর প্রতি সুটে কয়টা কার্ড? আমার আঙ্গুলের অবস্থানগুলি সাবধানে খেয়াল কর।’
‘তুমি বলতে চাইছ, আমরা এগুলো মিস করতে পারি।’
‘হ্যা, ঠিক হয়েছে। তুমি কি নিশ্চিত সবগুলো কার্ড এ আমি কি বোঝাতে চেয়েছি, তোমার মনে হচ্ছে?’
‘হ্যা, মনে আছে।’
একটু থামল ওরা। এরপর স্বামী বলল, ‘এক ক্লাব।’
‘ক্লাবের কিং জ্যাক। স্পেড এর এইস। হার্টস এর কুইন জ্যাক। ডায়মন্ডস এর এইস কুইন।’ তোতাপাখীর মতো বলে যেতে লাগল মেয়েটি।
তারপর কিছুক্ষণ নীরবতা। এরপর স্বামী বলল, ‘আমি বলতে চাইছি, এক ক্লাব।’
‘ক্লাব এর এইস কিং…’
‘হায় খোদা!’ বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি। ‘এসব ডাকের কিছু কোড। এরমাধ্যমে দুইজন বুঝে যায় কার হাতে কী কার্ড আছে!’
‘আর্থার, এটা হতে পারেনা।!’
‘এটা সেই খেলার মতো। যখন পুরুষ খেলোয়াড়টি মঞ্চের সামনে বসা দর্শকদের কাছে যায়। কোন দর্শকের কাছ থেকে কিছু একটা নেয়। মঞ্চে তার নারী সঙ্গীকে চোখ বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়। তারপরে পুরুষটি ওই নারীকে কিছু বিশেষ প্রশ্ন করে। তখন মেয়েটি ঠিকঠাক উত্তর দিয়ে দেয়। এমনকি রেলওয়ের টিকেট, কোন স্টেশন থেকে কেনা সব বলে দিতে পারে।’
‘এটা অসম্ভব আর্থার!’
‘মোটেও না। তবে এটা শেখার জন্য ভয়াবহ পরিশ্রম করতে হবে তোমাকে। শোনো শোনো, তাদের কথা শোনো।’
‘আমি একটি হার্টস খেলব।’ পুরুষটির কণ্ঠ আবার শোনা গেল।
মেয়েটি বলে গেল, ‘কিং, কুইন, টেন হার্টস। স্পেডস এর এইস জ্যাক। কোন ডায়মন্ডস নেই। ক্লাব এর কুইন জ্যাক…..’
‘শুনেছ, এক সুটে কয়টি কার্ড আছে আঙ্গুলের অবস্থান দিয়ে স্বামীটি বোঝাতে পারছে স্ত্রীকে।’ পামেলাকে বললাম আমি।
‘কীভাবে?’
‘জানিনা কীভাবে। তবে তারা যে করছে তুমিও শুনতে পারছ।’
‘হায় খোদা, আর্থার! তুমি কি নিশ্চিত তারা এটা করছে?’
‘কাজটা অন্যায়, তবে আমি নিশ্চিত ।’
পামেলাকে দেখলাম বিছানার ওইপাশে দ্রুত হেঁটে গিয়ে সিগারেট বের করল। তারপর সেটা জ্বালিয়ে আমার কাছে ফিরে এলো। সিগারেটের ধোঁয়ার কুন্ডলী ছাড়ল ছাদের দিকে তাকিয়ে। বুঝতে পারলাম পামেলা কিছু একটা ভাবছে। স্নাপস দম্পতি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে নিশ্চিত। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া তাদের অভিযুক্ত করতে পারব না। পামেলা এই ব্যাপারে কী ভাবছে জানার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
শেষ পর্যন্ত পামেলার মুখ থেকে যেটা শুনলাম, সেটা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। ‘আর্থার, অন্যায় কেন হবে, এটা অসাধারণ একটা ব্যাপার। তোমার কি মনে হয়, আমরা এটা শিখতে পারব?’
‘কী বলছ এসব?’
‘ঠিকই বলছি। বলো, পারব না?’
‘এক মিনিট, পামেলা, তোমার মাথা কি ঠিক আছে?’’
উত্তর না দিয়ে ও দ্রুত হেঁটে আমার সামনে এসে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। সেই পাগল করা পুরনো ভঙ্গী। মুখের কোণায় এক টুকরো রহস্যময় হাসি, নাসিকায় ঈষৎ কুঞ্চন, ধুসর চোখে মদিরা ভরা চাউনি, ও যখন এভাবে আমার দিকে তাকায় আর ঘনিষ্ঠভাবে সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন আমার কী অনুভূতি হয় বুঝিয়ে বলতে পারব না, মনে হয় যেন আমি ডুবে যাচ্ছি।
‘কী পারব না, আমরা বলো?"
‘কিন্তু পামেলা, খোদার কসম, যাই বল, এটা অন্যায়…’
‘আর্থার, তুমি সব সময় কেন আমার সঙ্গে এত তর্ক করো কেন বলতো? আমরা এই মুহূর্তে কী করব, জানো? এক প্যাকেট তাস নিয়ে এখনই অনুশীলন শুরু করে দেব।’
---------------
মূলগল্প: My Lady Love, My Dove by Roald Dahl
অনুবাদক পরিচিতি:
মনিজা রহমান
কথাসাহিত্যিক। অনুবাদক
নিউইর্য়কে থাকেন।
0 মন্তব্যসমূহ