গল্পপাঠ ওয়েবজিন।। দশম বর্ষ ২০২৩।। সংখ্যা ৮৫


সম্পাদকীয়
প্রথম কথাগুলি – মনের জানালা ধরে যা উঁকি দিয়ে গেছে

প্রতিটি পাঠ শুরু হয় প্রথম একটি বাক্য দিয়ে। লেখক কি চিন্তা করেন সেই বাক্যটি কী হবে? এমনকী হতে পারে যে সেই বাক্যটির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে না আসার ফলে কোনো রচনা শুরুই হতে পারেনি? অথবা তিনি এই ভাবেননি একদম, ফল্গুধারায় লিখে গেছেন, প্রথম লাইনটি আর স্মরণে নেই? আমার প্রিয় লেখক প্রয়াতা উরসুলা লে গুইন বলেছিলেন, “প্রথম বাক্যগুলো হলো অন্য জগতের দরজা।” তাঁর ‘যারা ওমেলাস ছেড়ে চলা যায়’ গল্প তিনি শুরু করেছিলেন এরকম একটি আনন্দময় লাইন দিয়ে – “সোয়ালো পাখিদের ঘন্টাধ্বনি দিয়ে আকাশে উড়িয়ে দিয়ে উজ্জ্বল সমুদ্ররেখা দিয়ে ঘেরা ওমেলাস শহরে গ্রীষ্মের উৎসব এল।” এই উৎসবের বর্ণনা কয়েক পাতা চলার পরে এল এক কঠিন বাস্তবতা; এত আনন্দ, এত উৎফুল্লতার পেছনে যে কোনো অসমাধানযোগ্য দার্শনিক সমস্যা থাকতে পারে তা প্রথম লাইনটি পড়ে শুধুমাত্র বিচক্ষণ পাঠকই ধরতে পারবেন। এই গল্পটি আমার মনে গেঁথে গেছে ওই প্রথম বাক্যটির জন্যই – উচ্ছল ফেনার নীল-সবুজ সমুদ্র ঘেরা আর তুষারাবৃত পাহাড় পরিবৃত ঝলকানো ওমেলাসকে প্রায়ই যেন স্বপ্নে দেখি।

প্রথম লাইনটি কি গুরুত্বপূর্ণ? হয়তো না। তবে আমার মনে হয় বাংলা সাহিত্যে এটিকে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দেয়া হয়নি যত না হয়েছে বাইরের সাহিত্যে। কিছুদিন আগে বন্ধু প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিনের কাছ থেকে দান্তে আলিগিয়েরির ‘ডিভাইন কমেডি’র বাংলা অনুবাদটি উপহার পাই। শ্যামলকুমার গঙ্গোপাধ্যায় অনুবাদক, তিনি ভূতত্ত্বের স্নাতক। ডিভাইন কমেডিতে অনুরক্ত হয়ে ইতালীয় শিখেছেন। মূল ইতালীয় অনুসরণ করে ছন্দ, অন্ত্যমূল আর অলংকার যতটুকু সম্ভব বজায় রেখেছেন। বইটির নাম রেখেছেন ‘দিব্যাভিসার’।

দিব্য অভিসারের শুরুতে দান্তে নিজেকে আবিষ্কার করলেন ঘোর অন্ধকার এক অরণ্যের মধ্যে, তার পথ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিল তিনটি শ্বাপদ। তিনি লিখছেন,

“আমাদের এই জীবনব্রজের মাঝপথ চরণিক,
আমি নিজবোধে ফিরে পাই এক আঁধারবিলীন বনে,
সরল সরণি হারিয়ে গিয়েছে যেখানে বাস্তবিক।”

এই তিনটি বাক্যের মধ্য দিয়ে দান্তে এক বিশাল অভিযানের সূত্রপাত করলেন যা কিনা অধোলক, শুদ্ধিলোক এবং দ্যুলোক পার হয়ে তাঁকে তাঁর হৃত-প্রেম বিয়াত্রিচের সঙ্গে মিলন করাবে। (দান্তের কাজটি টাসকান ভাষায় রচিত এবং আধুনিক ইতালীয় ভাষার শুরু এখান থেকেই।) এই তিনটি প্রারম্ভিক লাইন এক বিশাল কর্মযজ্ঞের যোগ্য সূচনা। এই সূচনা কেন জানি আমাকে ‘মেঘদূতের’ অনুবন্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন কালিদাস যক্ষের ভাগ্য ও অবস্থান বর্ণনা করছিলেন। আমার কাছে বুদ্ধদেব বসুর এবং জাহেদা খানমের অনূদিত বইদুটি আছে, তার মধ্যে জাহেদা খানমের অনুবাদে প্রথম চরণটি বেছে নিলাম -

“প্রভুশাপে কোন এক যক্ষ হারায়ে সর্বমহিমা
লভিল দণ্ড, স্বকর্ম দোষে, কান্তা বিরহ দুঃসহ বর্ষকাল।
স্থাপে বসতি যক্ষ রামগিরি আশ্রয়পুঞ্জে
তরুরাজির স্নিগ্ধ ছায়া যেথা পূত সলিল সীতার গাহনে।”

বিরহী যক্ষকে আষাঢ়ের প্রথম দিবসে আমরা অনেকেই স্মরণ করি, মেঘকে দূত হিসেবে যে তার প্রেয়সীর কাছে পাঠাচ্ছে। এই মহাকাব্যের শুরুর পংক্তিটি মনে ঘোরে – “কশ্চিৎ কান্তাবিরহগুরুণা স্বাধিকারপ্রমত্ত …।’’ একটি বিশাল উদ্যোগের ঘনঘটা প্রথম কয়েক লাইনের মধ্যেই পাওয়া যায়।

এরকমই মনে দাগ রেখে যায় মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’র শুরুটি – “খালের ধারে প্রকাণ্ড বটগাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়া হারু ঘোষ দাঁড়াইয়া ছিল। আকাশের দেবতা সেইখানে তাহার দিকে চাহিয়া কটাক্ষ করিলেন। হারুর মাথায় কাঁচা-পাকা চুল আর মুখে বসন্তের দাগভরা রুক্ষ চামড়া ঝলসিয়া পুড়িয়া গেল । সে কিন্তু কিছুই টের পাইল না। শতাব্দীর পুরাতন তরুটির মূক অবচেতনার সঙ্গে একান্ন বছরের আত্মমমতায় গড়িয়া তোলা জগৎটি তারা চোখের পলকে লুপ্ত হইয়া গিয়াছে।”

বজ্রপাতে হারুর মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু এই মৃত্যু মানিক এমন মমতায় লিখেছেন যে এই ক’টি লাইন দিয়েই পাঠককে বইটিতে নিবিষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন। ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’য় এর পরে হারুর যে বড় কোনো ভূমিকা আছে এমন নয়, কিন্তু শুরুর এই বলিষ্ঠতা উপন্যাসটির শক্তির ইঙ্গিত। ঝলসানো হারুর দেহ মনে ফিরে আসে বার বার।

লেভ তলস্তয়ের ‘আন্না কারেনিনা’র অবতরণিকাকে ধরা হয় অন্যতম সফল যাত্রা-শুরু – “সুখী সমস্ত পরিবার একে অন্যের মতন, অসুখী প্রতিটি পরিবার নিজের নিজের ধরনে অসুখী।” (অনুবাদ – ননী ভৌমিক।) অথচ এখানে যে অবলোনস্কি পরিবার নিয়ে এই মন্তব্য সেই পরিবারটি মূল কাহিনীর প্রধান হয়ে ওঠেনি, অনেকটা হারু ঘোষের মত ব্যাপার, কিন্তু বাক্যটি যে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই; ‘কারেনিনা’ লেখার দেড় শ বছর পরও এটি আমাদের সমাজের জন্য একটি সত্যকথন।

কিন্তু সবসময় যে প্রথম লাইনে প্রটাগনিস্ট থাকবে না এমন নয়। অন্যতম বিখ্যাত প্রারম্ভ হল গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘নিঃসঙ্গতার এক শ বছর’ – “বহু বছর পর, ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়িয়ে কর্নেল অরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার মনে পড়ে যাবে সেই দূর বিকেলের কথা, যেদিন তার বাবা তাকে বরফ চেনাতে নিয়ে গিয়েছিল।” (অনুবাদ – আনিসুজ জামান) ফায়ারিং স্কোয়াডে অরেলিয়ানোর মৃত্যু হয় কি হয় না সেটা জানতে তার জন্য পাঠককে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে, কিন্তু এই লাইনটির মধ্যে এমন একটি জাদু আছে যা কিনা মহাসমুদ্র পারি দেবার জন্য জাহাজে ওঠার আহ্বান এবং একবার উঠলে সেই অভিযান থেকে ইস্তফা দেয়া সম্ভব না।

মূল নায়ক অথবা অন্যতম চরিত্র, কিংবা বর্ণনাকারীকে এভাবে শুরুতেই উপস্থাপনার মধ্যে একটা চমক আছে। হেরমান মেলভিলের ‘মবি ডিকের’ প্রথম বাক্যটি হল “আমাকে ইশমায়েল বলে ডাকতে পারো” (Call me Ishmael)।

এবার ঊনবিংশ শতাব্দীর টাল-মাটাল সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দুটি উদাহরণ দিই। জর্জ অরওয়েল তাঁর ‘১৯৮৪’ উপন্যাসে ডিসটোপীয় একমতবাদী রাষ্ট্রের কাহিনী শুরুই করেছেন এই চমকে দেয়া বাক্য দিয়ে – “এপ্রিলের দিনটি ছিল উজ্জ্বল শীতল আর ঘড়িতে তেরোটার ঘন্টা বাজছিল।” এরকম সূচনা পাঠককে প্রথমেই বলে দেয় সবকিছু ঠিক নেই। অথবা দেখুন কাফকার ‘বিচার’ (দ্য ট্রায়াল) – “জোসেফ কে.র নামে নিশ্চয় কেউ অপবাদ করেছিল, কারণ এক সকালে, কোনো ধরণের অপরাধ না করা সত্ত্বেও, সে গ্রেপ্তার হলো।” এখানেও এক ধরণের অশুভ পূর্বলক্ষণ, জোসেফ কে. সহজে এই প্রপঞ্চ থেকে বের হতে পারবে না।

অথবা একটি বই যে নিবিড় পঠন প্রক্রিয়ার ওপর নিরীক্ষা তা ইতালো কালভিনোর ‘যদি কোনো শীতের রাতের এক পথিক’-এর প্রথম বাক্যটি পড়েই বোঝা যাবে – “আপনি ইতালো কালভিনোর নতুন উপন্যাস ‘যদি কোনো শীতের রাতের এক পথিক’ পড়া শুরু করতে যাচ্ছেন।” কালভিনো পাঠককে সতর্ক করে দিচ্ছেন তাঁর এই পঠন যাত্রাটি রৈখিক হবে না।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর উপন্যাস শুরু করার ব্যাপারে এই নিয়ে বিস্তর ভেবেছেন বলে আমার মনে হয় না, কিন্তু তাঁর ছোট গল্পের সূচনা নিঃসন্দেহে ভাবনার খোরাক। ‘মণিহারা’ আরম্ভ করেছেন এইভাবে – “সেই জীর্ণপ্রায় বাঁধাঘাটের ধারে আমার বোট লাগানো ছিল। তখন সূর্য অস্ত গিয়াছে।” গল্পটির আদিভৌতিক পূর্বাভাষ যেন এখানেই নিহিত আছে, মণিমালিকার কঙ্কাল এখনই বোটের পাশ দিয়ে উঠে আসবে। আর আমার বড় ভাল লাগে ‘কঙ্কাল’-এর অনুবন্ধটি – “আমরা তিন বাল্যসঙ্গী যে ঘরে শয়ন করিতাম তাহার পাশের ঘরের দেয়ালে একটি আস্ত নরকঙ্কাল ঝুলানো থাকিত। রাত্রে বাতাসে তাহার হাড়গুলা খট্‌খট্‌ শব্দ করিয়া নড়িত। দিনের বেলায় আমাদিগকে সেই হাড় নাড়িতে হইত। আমরা তখন পণ্ডিত-মহাশয়ের নিকট মেঘনাদবধ এবং ক্যাম্বেল স্কুলের এক ছাত্রের কাছে অস্থিবিদ্যা পড়িতাম। আমাদের অভিভাবকের ইচ্ছা ছিল আমাদিগকে সহসা সর্ববিদ্যায় পারদর্শী করিয়া তুলিবেন। তাঁহার অভিপ্রায় কতদূর সফল হইয়াছে যাঁহারা আমদিগকে জানেন তাঁহাদের নিকট প্রকাশ করা বাহুল্য এবং যাঁহারা জানেন না তাঁহাদের নিকট গোপন করাই শ্রেয়।” গল্পের প্রটাগনিস্ট এখানে কঙ্কাল-বেশী নারী বা নারী-বেশী কঙ্কাল, তাকে রবীন্দ্রনাথ গল্পের অবতরণিকাতে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। রাতের বাতাসে তার হাড়ের খট্‌খট্‌ শব্দ আমাদেরকে ভয়ার্ত উন্মুখ করে তোলে তার রহস্য জানতে।

এবার গল্পপাঠে প্রকাশিত গল্প কয়েকটি থেকে কিছু উদাহরণ দিই। গল্পের বাস্তবতার মধ্যে যে একটি শ্লেষাত্মক দ্বান্দ্বিকতা আছে তা প্রথম বাক্যটির মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন ওয়াসি আহমেদ তাঁর ‘ডলফিন গলির কুকুরবাহিনী’ গল্পটিতে – “লেক সার্কাস ডলফিন গলির বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে যেদিন সিটি কর্পোরেশনের লোকজন ট্রাকে চড়িয়ে নিয়ে বিদায় হলো, ঘটনার নির্মমতা ও আকস্মিকতা সত্ত্বেও গলিবাসীরা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলো।” গলিবাসীদের এই বাঁচা চিরস্থায়ী নাও হতে পারে, লেখক এরকম একটি প্রচ্ছন্ন আহ্বান যেন এই বাক্যটিতে দিয়ে রেখেছেন ।

গল্পপাঠের এই সংখ্যায় ইন্দ্রানী দত্ত তাঁর ‘কুহক’ গল্প শুরু করেছেন এইভাবে – “সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার ঠিক আগে মানুষ একটা ছবি হাতে নেয়; ফ্রেম থেকে খুলে, হাতের মুঠোয় পাকিয়ে ফেললে গোটানো ক্যানভাসকে রিলে দৌড়ের ব্যাটনের মত লাগে।” পাঠক প্রথমে ‘ছবি’র ব্যাপারটা হয়তো অগ্রাহ্য করবেন, কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝবেন জীবনকে ক্যানভাসে এঁকে সেটাকে পুনরায় আত্মস্থ করার মধ্যে সমস্ত আশা-আকাঙ্খা ও আশাভঙ্গের নির্যাস, প্রথম বাক্যটি উন্মুক্ত করার জন্য লেখক আরো লিখছেন – “প্রতিটি শেষ হওয়া সম্পর্কের সঙ্গে একটা করে ছবি থাকে - আমার এরকম মনে হয়; ফ্রেমহীন ছবি সব - হয়তো পুরোনো সম্পর্কের ওয়াটার কালার - লাল রঙে চুবিয়ে তোলা, কিম্বা পরের সম্পর্কের ঝকঝকে প্রিন্ট- গ্লসি ফিনিশ; অথবা হয়তো গোটাটাই অ্যাবস্ট্রাক্ট - একটা অবয়ব হয়তো, আপাতদৃষ্টিতে যাকে মনে হয় নৃত্যরত মানুষ, ডানা ঝাপটানো রাজহাঁস, ছুটন্ত ঘোড়া - কেশর উড়ছে; অথবা জাস্ট অন্ধকার, পিচ ডার্ক শূন্যতা।” জীবনের এক একটা মুহূর্ত লেখক ক্যানভাসে নিক্ষেপ করেছেন, আবার সেখান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন – বাস্তব থেকে অধিবাস্তব, পুনরায় বাস্তবে।

আর এই সংখ্যার শাহনাজ মুন্নীর একটি গল্প ‘কাঁঠাল’। “পোয়াতি নারীর জিভ যেন চঞ্চলা বানের পানি; সময় অসময়ে কত কিছু যে খাইতে মন চায়! পোড়ামাটি, কয়লা, তেঁতুল, গম ভাজা আরো কত হাবিজাবি, সোয়ামী যার উজান দেশে কামলা খাটতে গেছে, সে একলা ঘরে মাটিতে বিছানো হোগলা চাটাইয়ে গড়াগড়ি যায় আর লকলকে জিভের জল টেনে ভাবে – ‘আহারে কেউ যদি এখন আমারে একটা কাঁঠাল খাওয়াইতো, তাইলে... ’।” প্রথম বাক্যটি থেকে গল্পটি পাঠককে ধরে রাখবে, বাস্তব থেকে রূপকথা, রূপকথা থেকে অধিবাস্তব, সেখান থেকে পুনরায় বাস্তবে ফেরা – এ এক মোহময় লোমহর্ষক আখ্যান। শাহনাজ মুন্নী প্রথম বাক্যটির প্রতি সবসময় মনোযোগী। তাঁর ‘জ্বীনের কন্যা’ নামে আর একটি গল্পের শুরু এভাবে - “এমন প্রবল বাদল ভোর, আলস্য বিছানা টানে, পায়ের অঙ্গুলি, এমন কি কেশের শীর্ষাগ্র পর্যন্ত প্রার্থনা করে আয় সুখ, নিষ্পেষণ, আয় কষ্ট, উষ্ণতা, আনন্দ; নারীটি কাঁদে, ঘুমের ভেতর, অস্পষ্ট কাতর কান্না, চৌকিতে আহত সপির্ণী দেহ মোচড়ায়, ডানপাশ থেকে বাঁ পাশ, বাঁ পাশ থেকে ডান পাশ, বিব্রত সূর্য খড়ের চালার ফাঁকে ম্লান চোখ রাখে, যেন ডাক দেয়, ‘ উঠোগো নূরজাহান, দিবসের প্রারম্ভ, হেমনগরের সোহরাবের বউ ঘুম ভেঙে উঠো এবার।’ ” এই গল্পটিও ধীরে ধীরে অধিবাস্তবে নিমজ্জনের আহ্বান।

কোনো গল্পের সামগ্রিক আকর দিতে প্রথম বাক্যটি ভিত্তিভূমি হিসেবে কাজ করতে পারে। এটা যে আবশ্যক এমন নয়, কিন্তু লেখাটিকে স্মরণীয় করতে বা পাঠককে লেখকের পরিশ্রমের চিহ্ন হিসেবে উপস্থাপনা করতে প্রথম বা প্রথম কয়েকটি বাক্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। শত শত গল্পের মধ্যে সার্থক একটি সূচনা একটি নির্দিষ্ট গল্পপাঠে পাঠককে আগ্রহী করতে পারে। গল্পপাঠের এই সংখ্যায় পাঠককে আহ্বান, একই সাথে এই প্রশ্ন - কোন উপন্যাস বা গল্পের শুরুর বাক্য (বা বাক্যগুলি) তাঁর মনে আছে?
--দীপেন ভট্টাচার্য

উর্দু কথাসাহিত্যিক ইন্তিজার হুসেইনকে নিয়ে একটি বিশেষ আয়োজন

প্রখ্যাত পাকিস্তানি সাংবাদিক, ছোট গল্প লেখক এবং ঔপন্যাসিক ইন্তিজার হুসেইন উর্দু সাহিত্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী গল্পকারদের একজন। জন্মে ছিলেন ব্রিটিশ-ভারতের বুলান্দশহরের দিবাইতে। ১৯৪৭ এ দেশভাগের পর পাকিস্তানের লাহোর-এ চলে যান। মান্টোপরবর্তী উর্দু ছোটগল্পের সবচেয়ে শক্তিমান লেখক হিসেবে ইন্তিজার হুসেইনকে বিবেচনা করা হয়।উর্দু ছাড়াও তিনি ইংরেজিতে লেখালিখি করেছেন। লিখেছেন ‘বস্তি’, ‘নয়া ঘর’ এবং ‘আগে সমুন্দর হ্যায়’ নামের তিনটি উপন্যাস। ‘লীভ্স’, ‘দি সেভেন্থ ডোর’. ‘এ ক্রনিকল অফ দি পীককস’ এবং ‘অ্যান আনরিটন এপিক’ তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত গল্প সংকলন। তাঁর লেখায় দেশভাগ পূর্ব জীবনের স্মৃতি যেমন ঘুরে ফিরে এসেছে তেমনি ধরা রয়েছে তাঁর জীবন-পাঠ যা একই সাথে সমকালীন এবং কালোত্তীর্ণ।

নিজের দেশে নানা সম্মানে ভূষিত ইন্তিজার হুসেইনকে ২০০৭ সালে ভারতীয় সাহিত্য আকাদেমি প্রেমচাঁদ ফেলোশিপে সম্মানিত করে। ২০১৩-তে ‘বস্তি’ উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনূদিত হওয়ার পর তাঁর নাম ‘ম্যান বুকার’ পুরস্কারের মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ বিবেচিত নামের তালিকায় সংযুক্ত হয়। ২০১৪-তে পান ফরাসী সরকার-এর ‘অর্ডে ডেস আর্টস এট ডেস লেটার্স ‘-এর সম্মান।

পেশাগত জীবনে তিনি পাকিস্তানের বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক ডন-এ কাজ করেছেন।অনুবাদ করেছেন চেখভসহ বিশ্বসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ নানা লেখা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে ছিলেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন একাধিক ছোটগল্প। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর বিখ্যাত দুটি ছোটগল্প হচ্ছে, ‘স্লিপ’ এবং ‘সিটি অব সরো’। এ ছাড়াও তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস বাস্তি'র একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে সাতচল্লিশ, উনসত্তর এবং একাত্তরের দিল্লি, ঢাকা এবং লাহোর। উর্দু সাহিত্যের এই শক্তিমান লেখক ২০১৬ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি মারা যান।প্রিয় পাঠক, গল্পপাঠের এই আয়োজনে আপনাদের জন্য ইন্তিজার হুসেইনের কয়েকটি অনূদিত গল্প রইল।

অনুবাদ : প্রতিভা সরকার
 
অনুবাদ : নাহার তৃণা
অনুবাদ :  মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ

অনুবাদ :  অমিতাভ চক্রবর্ত্তী

অনুবাদ :  সুদেষ্ণা দাশগুপ্ত

অনুবাদ :  মাজহার জীবন

অনুবাদ : রঞ্জনা ব্যানার্জী

ইন্তিজার হুসেইনের গল্প:
অনুবাদ : এলহাম হোসেন

ইন্তিজার হুসেইনের গল্প: শেহেরজাদের মৃত্যু
অনুবাদ : কুলদা রায়
জাদুবাস্তববাদী গল্প
গল্প
গল্পপাঠে নতুন
লেখার শৈলী
ডোনাল রায়ান
অনুবাদ : শুভ চক্রবর্তী
ইমতিয়ার শামীমের আলোচনা

বই নিয়ে আলোচনা
এই রাশিয়া সেই রাশিয়া
রঞ্জনা ব্যানার্জী
মার্গারেট মিচেলের ধারাবাহিক উপন্যাস : 
অনুবাদ : উৎপল দাশগুপ্ত



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ